আড্ডাপত্র

২৫ ভাদ্র, ১৪৩১; ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪;রাত ২:৩১

আড্ডাপত্র নিয়ে কিছু সরল আলাপ

আড্ডাপত্র

অক্টো ১১, ২০২০ | লিটলম্যাগ

আড্ডাপত্র
সম্পাদক : মনসুর আজিজ
৩১তম সংখ্যা, অষ্টম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা
পৃষ্ঠা: ১৬৮
মূল্য: ১০০ টাকা

পাঠ মূল্যায়ন: তাজ ইসলাম

ডিজিটাল সময়ে এসে সাহিত্যচর্চার নামে অসংখ্য গ্রুপ দৌরাত্ম্য, অনলাইন ওয়েবম্যাগের আধিক্য। অনলাইন সাহিত্যচর্চার অবাধ সুযোগের সময়ে লিটলম্যাগ চর্চা এক ধরনের দুঃসাহসিক কাজ। যাদের মন-মননে সাহিত্য সেবা জেঁকে বসেছে তারা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেন। মনসুর আজিজ সেই দুঃসাহসিক সাহিত্য যোদ্ধাদের একজন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ করে যাচ্ছেন তার লিটলম্যাগ আড্ডাপত্র। আড্ডাপত্রকে ” রাইটার্স অব বাংলাদেশ” র মুখপত্র ও বলা যায়। বিরতিসহ আড্ডাপত্র পদার্পণ করেছে ৮ম বর্ষে। ৮ম বর্ষের ১ম সংখ্যাটিকে তাই সাজিয়েছেন মোটাতাজা কলেবরে। কবিতা মূলত শিল্প সাহিত্যে মাতৃস্থান দখল করে আছে যুগ যুগ ধরে। আড্ডাপত্রের এসংখ্যাও তার সূচনা করেছেন কবিদের কবিতা দিয়েই। সম্পাদক তার যাত্রা শুরুর গান গেয়েছেন চার চরণ কবিতা দিয়ে।এটিই সম্পাদকীয়। তারপরই কবিদের কবিতা। প্রথমেই একক কবিতা ৭-২২ পৃষ্ঠায়। শুরু মৃণাল বসু চৌধুরী’র কবিতা দিয়ে। এরপর পর্যায়ক্রমে কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, আইউব সৈয়দ, আবদুস শুকুর খান, তমিজ উদ্দীন লোদী, শাহীন রেজা, মাঈন উদ্দিন জাহেদ, আমিন আল আসাদ, রাহমান মাজিদ প্রমুখ।
তারপর ওমর শামস’র প্রবন্ধ।

ওমর শামস লিখেছেন ” ইক্কুস: শামসুর রাহমান ও জীবনানন্দ দাশ ” শিরোনাম এ প্রবন্ধ।
” গ্রীক ভাষায় ইক্কুস মানে ঘোড়া। ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা রাজা- বাদশাদের শহর হবার কারণে ঢাকায় ঘোড়া ছিলো। শামসুর রাহমান আবাল্য ঘোড়া দেখেছিলেন। এই আলোচনাটি ঘোড়া বিষয়ক দুটি কবিতা-” এই ঘোষণার মাধ্যমেই প্রাবন্ধিক এগিয়ে গেছেন দুই কবির দুই কবিতা নিয়ে। একটি শামসুর রাহমান‘র ‘ সেই ঘোড়াটা’ অপরটি জীবনানন্দ দাশ‘র ‘ আজকের এই মুহূর্ত’ তারপর তিনি তার ঢঙ্গে চালিয়ে নিয়েছেন আলোচনা। যা পাঠকের মনকে তৃপ্ত করতে সক্ষম।
যুগল কবিতা শুরু কবি জাহিদুল হক’র কবিতা গ্রন্থনায়। এ মিছিলে আরো আছেন কবি শাহাবুদ্দীন নাগরী, মিলু শামস, অনু ইসলাম, মামুন অপু। তাদের বরাদ্দ ২৬-৪৬ পৃষ্ঠা।

বিশ্ব সাহিত্যের আলোচিত নাম এমিলি ডিকিনসন। তার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে আলোচনা করেছেন আফরোজা পারভীন। আফরোজা পারভীন’র ” এমিলি ডিকিনসন: আপন গহীনে বন্দী এক নির্জন কবি” শীর্ষক লিখাটি পাঠে পাঠক জ্ঞানের জগতে ধরা দিবে আমেরিকার উল্লেখযোগ্য কবিদের একজন এমিলি ডিকিনসন‘ র কাব্যের নানা সূত্র।

এরপর আবার ৫২ থেকে ৬৭ পৃষ্ঠায় একক কবিতায় আছেন একঝাঁক কবি। তারা হলেন মনজু রহমান, জেবুননেসা হেলেন, সব্যসাচী সেনগুপ্ত, আনোয়ার রশীদ সাগর, সীমান্ত আকরাম, আকিব শিকদার, রুদ্র হাসান খানসহ আরো কজন কবি। এই কবিদের একজন সামিনা বিপাশা।
বিপাশার আহবান –জানালাটা খুলে দাও না শুভ্র…/..সঙ্কোচ ভুলে, আবারও আকুল হয়ে উঠি…. আকুল করা পঙক্তিগুলো পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে ভালো লাগত। সীমাবদ্ধতার জন্য তা সম্ভব না।

মেধাবী গল্পকারদের গল্পও আছে আড্ডাপত্রে।গল্পকারগণ হলেন– আবু সাঈদ জুবেরী, জাহিদ সোহাগ, হাসান রুহুল, জয়দীপ দে, সাইফ বরকতুল্লাহ, শৌফিক বাবু।
আড্ডাপত্রের সাথে আড্ডালাপে মগ্ন হয়েছেন প্রখ্যাত গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। আলাপে আলাপে বলেছেন লেখালেখির শুরুর কথা, বলেছেন গান লেখার অনুপ্রেরণার কথা, উৎসাহও উৎসের কথা। কথায় কথায় বলেছেন শিল্পীর হৃদয়ের গভীরের কথা।আড্ডালাপ মানে এই সাক্ষাৎকারটি পড়ে পাঠক জানতে পারবে গীতিকার জীবনের অনেক অজানা কথা।

গীতিকবিতা লিখেছেন তপন বাগচী, মাশরুর মাজিদ, নীহার আহমেদ, রজিব এলিনও আরো অনেকে। মুস্তাহিদ ফারুকী, আশফাকুর তাসবীর আঞ্চলিক কবিতায় কলম চালিয়েছেন। এই পত্রিকায় উল্লেখিত দুজনই আঞ্চলিক কবিতা রচয়িতা। তবে আশফাকুর তাসবীর আঞ্চলিক কবিতার শুরুটা আঞ্চলিক হয়নি। যেমনটা সফলভাবে শুরু করেছেন কবি মুজতাহিদ ফারুকী। “ও কাহা টাউনো যাবা নাহি” ফারুকী। তা সবীর বলেন” পহেলা বৈশাখের বৈকালে/ মনে হল প্রমিত শব্দ দিয়েই যাত্রা করলেন তিনি।

সম্পাদক পুনরায় যুগল কবিতার ঢালি সাজিয়েছেন যথাক্রমে মজিদ মাহমুদ, পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, ফরিদ ভূইয়া, মোস্তফা হায়দারসহ বেশকিছু কবির কবিতা দিয়ে। গুচ্ছ কবিতা লিখেছেন কবি খসরু পারভেজ, আশরাফ জুয়েল, অদ্বৈত মারুত ও অন্যরা।
মাইনুল ইসলাম মানিক সম্পন্ন করেছেন তিনটি বই আলোচনা। কিশোর কবিতা যারা লিখেছেন তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন রেবেকা ইসলাম, কামাল হোসাইন, সিদ্দিক আবু বকর প্রমুখ। কামরুল হাসান ভ্রমণ করেছেন হায়দ্রাবাদ। আড্ডাপত্রে পরিবেশিত হল তার ভ্রমণ কাহিনী। ছড়াতেও এসেছে নবীন প্রবীণের সমন্বয়। লিখেছেন জাহাঙ্গীর আলম জাহান, জসীম মেহবুব, সৈয়দ আমির আলী, তাজ ইসলাম, সেলিম এমরাজ, শামীম খান যুবরাজ ছাড়াও শক্তিমান আরো কজন ছড়াকার।

মনসুর আজিজ সম্পাদক। তিনি নিজে অনুবাদ করেছেন তিউনিশ কবি আইনেস আব্বাসীর কবিতা ” সুরমা চোখের কান্না”। কবিতাটি আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন আলী জুনাইদি। বাংলায় কাব্যরূপ দিয়েছেন মনসুর আজিজ।
কবিতার নানা শাখা প্রশাখা বিস্তৃত এই লিটলম্যাগে। কবি ও কবিতা জায়গা পেয়েছে ভিন্ন নামে। একক কবিতা, যুগল কবিতা, গুচ্ছ কবিতার হিস্যা আছে এখানে। আছে গীতিকবিতা, কিশোর কবিতা, ছড়া নামে কবিতার জায়গা বরাদ্দ। কবিদের জয়জয়কার। ছড়া ও কবিতা মিলিয়ে প্রায় শতাধিক কবির কবিতা গ্রন্থিত হয়েছে এই ম্যাগে।

রাইটার্স অব বাংলাদেশ’র সাহিত্যপত্র ” আড্ডাপত্র ” সম্পাদক মনসুর আজিজ। ২০২০ মার্চ-এপ্রিল’র ১ ম সংখ্যা। মোট সংখ্যা ৩১। ১৬৮ পৃষ্ঠার ডাউস সংখ্যাটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা। সাহিত্য সংশ্লিষ্ট সকলের সংগ্রহে রাখার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। সংগ্রহ করতে পারেন সবাই।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০