আড্ডাপত্র

১৫ পৌষ, ১৪৩১; ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪;রাত ১০:৫২

আড্ডাপত্র : প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা– ১৭

প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়

হেলাল হাফিজ

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয়।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার।
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে।
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।

[হেলাল হাফিজ বিশ শতকের বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি। অল্প লিখে যারা দীর্ঘ সময় ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন, হেলাল হাফিজ তাদের শীর্ষে। ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খোরশেদ আলী তালুকদার আর মাতার নাম কোকিলা বেগম। কবির শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে নিজ শহরেই। ১৯৬৫ সালে নেত্রকোণা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।স্কুলে পড়ার সময় থেকেই কবিতা লেখা শুরু। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন এই পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৯ সালের প্রথম দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন । সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরের ফিচার এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান কবি হেলাল হাফিজ। সে রাতে ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পড়ে সেখানেই থেকে যান। রাতে নিজের হল, ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল। সেখানে থাকলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হতেন। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর ইকবাল হলে গিয়ে দেখেন চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, লাশ আর লাশ। হলের গেট দিয়ে বেরুতেই কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে দেখা। তাকে জীবিত দেখে উচ্ছ্বসিত আবেগে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন নির্মলেন্দু গুণ। ক্র্যাকডাউনে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানবার জন্য সে দিন আজিমপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কবি গুণ। পরে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য দুজনে বুড়িগঙ্গা নদী পাড়ি দেন।
হেলাল হাফিজ এর কাব্যগ্রন্থ মাত্র দুটি। যে জলে আগুন জ্বলে (১৯৮৬) ; ও বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা (২০১৯)। ২০১২ সালে ‘কবিতা ৭১’ নামে তাঁর একটি দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থ বের হয়। সেখানে প্রথম কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের সময় ওই কাব্যগ্রন্থের ৫৪টি কবিতার সাথে যুক্ত হয় আরো কিছু কবিতা।
লেখলেখির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন– যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোণা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেদদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা, বাসাসপ কাব্যরত্ন – ২০১৯। এছাড়াও কবিতায় তিনি ২০১৩ সালের বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১