প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
রঙিন পেনসিল
সৈয়দ আতীকুল্লাহ
রঙবেরঙের সব পেনসিল।
ভরে তুলেছো ড্রয়ারগুলো
তোমার গোটা চারেক ড্রয়ার।
বাকিটুকু জেনেছিলাম কি আশ্চর্য
অনেক পরে। অনেক পরে জেনেছিলাম।
জেনেছিলাম হরেক রকম চমৎকার
পেনসিলে সব হিসেব রাখা হচ্ছে অবিরত
কোথায় ক্ষত কতোখানি, কতো গভীর
কোথায় হঠাৎ উঠলো বিকট এক দেওয়াল
ইট পাথরে ভ~তের গড়ন, শ্যাওলা, গড়িমসি
হচ্ছে বিষম খোঁজাখুঁজি কেমন গলদ্ঘর্ম
হিসেব রাখার কাজেই তাদের
যা কিছু ব্যবহার। হাতে তোমার
যখন তখন একটি পেনসিল
হলুদ সবুজ ঘোর বাদামি লাল বা নীল।
জেনেছিলাম ছদ্মবেশী দারুণ ভালোবাসার
পুরোভাগে ছিলেন যারা চৈত্রে সাবালিকা
ছিলেন যারা বারোমাসই পাপের সহচরী
কুরূপা ও সুরূপাদের তোমার মনে আছে।
মনে আছে তাদের কথা
তাদের যাওয়া আসা
দিব্যি মনে আছে তোমার। এবং সা¤প্রতিক
স্মৃতির মানে ক্রমাগত
বর্শাফলক শরীরময়
হাজার খানেক বিষাক্ত ঘা
হাজার রকম ভাবে
দিনে রাতে ঘটায় কেবল বিপুল অপচয়
ঘা ও পুঁজের পাহারাদারি
তোমার কড়া জেনেছিলাম, হায় প্রেমিক
ড্রয়ারেতে জমতে তোমার রঙিন পেন্সিল।
কবি পরিচিতি:
কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহ’র জন্ম ১৯৩৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার আঠারোদানায়। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ শামসুদ্দোহা। গল্পকার, অনুবাদক ও সাংবাদিক হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।।
টাঙ্গাইলের রামগতি শ্রীগোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেক থেকে ১৯৫০ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১৯৫৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কবি গল্পকার সাইয়িদ আতীকুল্লাহ পেশায় ছিলেন সাংবাদিক ও ব্যাংকার। তিনি ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত জনতা ব্যাংকে চাকুরি করেন। তিনি ছিলেন ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যাজেনার।তিনি দৈনিক সংবাদ-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৫২-র ভাষা আন্দোনে অংশগ্রহণ করে কারারুদ্ধ হন।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করন। কবিতায় ও ব্যক্তি চরিত্রে তার ছিল একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ। তিনি সাংবাদিকতায় যেমন নিপুণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছেন, সাহিত্যেও তেমনি তীক্ষ্ণ জীবনবোধ ও সমাজবাস্তবতার পরিচয় দিয়েছেন। কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ১৯৭৪ সালে তিনি ছোটগল্পের জন্য বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
কাব্যগ্রন্থ: আমাকে ছাড়া অনেক কিছু (১৯৭৭); আঁধির যত শত্রুমিত্র (১৯৮০); অদম্য পথিকের গান (১৯৮২); এই যে তুমুল বৃষ্টি (১৯৮৪); সবখানেই চড়া রোদ (১৯৮৫); শাসন নেই, ধমক নেই (১৯৮৭); একই টেবিলে দশজন (১৯৮৭); যদি কিছু পাই (১৯৮৭); রোজ তোমাকে বেরুতে হয় (১৯৮৭); এই যে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখো (১৯৮৯); চেয়ে দেখি কত কিছু (১৯৯৪)।
সমগ্র: ২০১৮ সালে কবি গোলমা কিররিয়া পিনু’র সম্পাদনায় সুবর্ণ থেকে বের হয় সাইয়িদ আতীকুল্লাহ’র কবিতা সমগ্র । মূল্য ১০০০ টাকা।
অনুবাদ কবিতা: সেগডেন হ্রদ; সোনঝেনিৎসেনের কবিতা (১৯৮০); খায়রিল আনোয়ারের নির্বাচিত কবিতা (১৯৮৪)।
গল্পগ্রন্থ: বুধবার রাতে (১৯৯৭)
পুরস্কার-সম্মাননা: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৪); সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯); পদাবলী পুরস্কার (১৯৮৩); আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৫)।
মৃত্যু : তিনি ১৪ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।