আড্ডাপত্র

১১ পৌষ, ১৪৩১; ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪;বিকাল ৪:৩৭

আবেদীন জনী’র পাঁচটি কিশোরকবিতা

আড্ডাপত্র

অক্টো ১৭, ২০২০ | কিশোর কবিতা

ফিরে আসি প্রিয় গাঁয়ে

উঠোনের পাশে তুলতুলে ঘাসে শিশুদের মাতামাতি
কচি কচি মুখে হাসিভরা ঠোঁটে জ্বলছে প্রাণের বাতি।
মনে পড়ে ওই মুখগুলো দেখে রঙিলা ছোট্টবেলা
কেটেছে আমার প্রতিটি বিকেল খেলে খেলে কত খেলা।

বুনোফুলগুলো কোমল পাপড়ি মেলে আছে শাখে শাখে
ওরা যে আমায় রূপে আর ঘ্রাণে মায়ায় জড়িয়ে রাখে।
ফড়িংয়ের নাচ, প্রজাপতি ডানা দেখলেই ভরে মন
চপল বাতাসে বাজে তালে তালে তালপাতা ঝনঝন।

জোনাকপোকার আলোয় আলোয় ঝিলমিল নিশিঘোর
ঘাসফুল আর শিশির ফোঁটায় সোনারোদ মাখা ভোর।
কেউ যদি ভোরে সবুজ মাঠের পথ ধরে হেঁটে যায়
কত যে আদরে পায়ের পাতায় ঘাসফুল চুমু খায়।

খেতভরা সোনা-ফসলের হাসি চেয়ে দেখি অনিমেষ
ভাবি মনে মনে কৃষকের শ্রমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
নিমের শাখায় শালিক ঘুঘুর কী মধুর ডাকাডাকি
ঝোপের কিনারে সতর্ক চোখে বেজিদের তাকাতাকি।

পাশের বাড়ির লম্বু ছেলেটা দুষ্টু- বাউন্ডুলে
মাঝে মাঝে তার আড়বাঁশি বাজে, সুরে সুরে উঠি দুলে।
স্নিগ্ধ বাতাস বুকে মাখি বসে বট-পাকুরের ছায়ে
পাই কত সুখ তাই বারবার ফিরে আসি প্রিয় গাঁয়ে।

ভাষা

এই যে আমরা কথা বলি, হাসি, সুরে সুরে গাই গান
কত যে আদরে ডেকে বলে মায়- কাছে আয় সোনা চান
চিঠির পাতায় কত কথা লিখি স্বজনের বরাবর
মায়ের ভাষায় ভাব বিনিময়ে ভরে যায় অন্তর।

ভাষা আমাদের দেয় কত কিছু- সেসব রাখি না খোঁজ
ভাষা থেকে আশা, ভাষা দেয় আলো জীবনের পথে রোজ।
মনের বাগানে জ্ঞানের কুসুম ভাষাই ফোটায় আগে
স্বপ্নের কচি সবুজ পাতারা ভাষার পরশে জাগে।

ভাষা না থাকলে কবিতা ও গান হতো না কখনো লেখা
কোথায় পেতাম শব্দ, ছন্দ, নিটোল সুরের দেখা?
ভাষাহীন এই পৃথিবীটা হতো নীরব নিরস মূক
ভাষা থেকে পাই বাঁচার সাহস, বুকে নেই ধুকপুক।

আমাদের ভাষা বাংলা ভাষাটা মায়ের কাছেই শেখা
ভাইয়ের রক্তে এই ভাষাটির ইতিহাস আছে লেখা।
পৃথিবীর বুকে চির অক্ষয় একুশে ফেব্রুয়ারি
ভুলব না কভু সন্তান হারা জননীর আহাজারি।

সে জাতি অধম, যে জাতির নেই নিজেদের কোনো ভাষা
ভাগ্যের ফুল ফোটে না তাদের, আহা কী সর্বনাশা!
ভাষার লড়াই একুশ থেকেই সাহসের সঞ্চয়
সেই সাহসেই বাংলা স্বাধীন, একাত্তরের জয়।

কারো বুকে সুখ, কারো বুকে থাকে দুঃখের নীল নদী।
কীভাবে এসব করত প্রকাশ ভাষা না থাকত যদি?
ভাষা আছে তাই কত সুখ পাই আমরা দিবস-যামী
ভাষা আমাদের গরবের ধন, জীবনের চেয়ে দামি।

দীপ জ্বেলে যাই

আমরা হলাম লাল-সবুজের স্বপ্নডানার পাখি
আমরা এখন এই জগতের সকল খবর রাখি।
অজানাকে জানার নেশায় ছুটে বেড়াই হেসে
আকাশ পাতাল সাগর পাহাড় কিংবা মেরুর দেশে।

মন ছুটে যায় এস্কিমোদের মেরুর বরফ-ঘরে
মহাকাশের ব্ল্যাকহোল এবং গ্রহ-গ্রহান্তরে।
এসব নিয়ে আমরা করি অনেক গবেষণা
আমরা ওড়াই আলোর নিশান, আমরা মুক্তমনা।

পাহাড় চূড়া জয় করে ছুঁই মেঘপরিদের ডানা
পাতাল ফুঁড়ে তুলে আনি বিপুল সোনাদানা।
মরুর পথে আগুন-রোদে আমরা কি যাই ঘেমে?
বালুঝড়ের তাণ্ডবতায় যাই না কভু থেমে।

এই পৃথিবীর যে প্রান্তটা পায় না রোদের তাপ
সেই সুদূরে জ্বালব আলো, আঁকব পায়ের ছাপ।
আমরা হলাম ভয় তাড়ানো দামাল ছেলেমেয়ে
অন্ধকারে দীপ জে¦লে যাই আনন্দে গান গেয়ে।

জুমপাহড়ের মেয়ে

কোমল সবুজ অবুঝ মনের জুম পাহাড়ের মেয়ে
পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে ফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছুটে চলে নেচেগেয়ে।
ঝরনার জল ঝরে সারাদিন একটানা ছলছল
জলের ছন্দে সেই মেয়ে আরো হয়ে ওঠে চঞ্চল।

তাকে দেখলেই প্রজাপতিগুলো আফসোসে যায় মরে
পাহাড়ি মেয়েটি এতোটা চপলা হলো যে কেমন করে!
এ গাছে ও গাছে ওঠানামা করে বানরের মতো বেয়ে
মগডালে বসে দুই পা ঝাঁকায় মনমতো গান গেয়ে।

মেয়েটির গানে মিঠে মিঠে সুরÑ বাতাসে বেড়ায় ভেসে
বেজির ছানারা নেচে ওঠে ঝোপে, বুনোফুল ওঠে হেসে।
কাচপোকাগুলো দারুণ খুশিতে ওড়ে-ঘোরে ফনফন
মিষ্টি মেয়েটি ভুলিয়ে রেখেছে জুম পাহাড়ের মন।

পাহাড়ের ঢালে জুমচাষ করে মেয়েটির বাবা-মায়
মৃদু সমীরণে সোনার বরন শস্যেরা দোল খায়।
চপলা মেয়েটি শস্যের খেত বিলি কেটে কেটে চলে
ঠোঁটের হাসিতে, চোখের তারায় কত যে স্বপ্ন জ্বলে!

রাত নেমে এলে মেয়েটি ঘুমায়, পাহাড়েও নামে ঘুম
ঝরনাটা শুধু বয়ে চলে একা ঝুর ঝুর ঝুম ঝুম।
রাত পোহালেই করে ডাকাডাকি বনমোড়গের জোড়া
জুম পাহাড়ের মেয়েটি তখন জেগে ওঠে আড়মোড়া।

তাকে দেখলেই ফুল হাসে বনে, পাখি নাচে গান গেয়ে
ভুলিয়ে রেখেছে পাহাড়ের মন চাঁদমুখী সেই মেয়ে।

লাল-সবুজের ছায়ায়

একাত্তরের রক্তের নদী আমরা হয়েছি পার
লাল-সবুজের ছায়ায় গড়েছি মায়াভরা সংসার।
এদেশ আমার জীবনের ভিত, পরানের ডোরে বাধা
এদেশেই করি স্বপ্নের খোঁজ, এদেশেই হাসা-কাঁদা।

এখানে বাতাসে শস্যের ঘ্রাণ অবিরাম ভেসে আসে
কত যে শস্য গোলা ভরে তোলে কৃষকেরা বারোমাসে।
বৃষ্টিতে ভেজা, কড়া রোদে পোড়া তামাটে মুখের হাসি
দেখি কতবার ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে রাশি রাশি।

এখানে আমার চারপাশে যারা– সবাই আপনজন
এ মাটির বুকে অপার শান্তি, ফুরফুরে দেহ-মন।
পাখির কাকলি, নদী ছলছল, মাঝিদের ভাটিয়ালি
এইসব ফেলে ভিনদেশে গেলে বুক লাগে খালি খালি।

মনে পড়ে শুধু জননীর মতো বাংলার প্রিয় মুখ
জন্মেছি এই ব-দ্বীপের বুকে-এই ভেবে পাই সুখ।
বাঙালির আছে বীরের খেতাব, নির্ভয়ে পথ চলি
বাংলা মায়ের সন্তান আমি-গরবের সাথে বলি।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১