মগ্ন সংলাপ
জীবন সখ্যের বর্ণিল পরশে আমি
মরেছি অনেকবার, জগতের চৌহদ্দি পেরিয়ে
নির্মাণ করেছি বোধিদর্পন, অস্পষ্ট সংবেদঃ
অতঃপর পুনঃবার অদৃশ্যের মুকুরে মন্থন
করেছি সুদৃশ্য ঘড়ির সকাল।
শুন্যের সকাশে পরিব্রাজন শেষে
এখনো সতত ক্ষুধা-তৃষ্ণা বুঝি;
নিদ্রা যাই,জেগে উঠি, প্রত্যক্ষন ছুঁয়ে ছুঁয়ে
স্বপ্ন আঁকি,স্বপ্ন ভাঙ্গি আর আপনার
সাথে করি মগ্ন সংলাপ।
অধিগত গ্রন্থের নিগুঢ় অধিপাঠ ছেনে
রোদের অন্তরে দেখি শৈত্যবাহ:
রাতকে উদোম ক’রে জোসনার
অভিধান পড়ি, মুদিত নয়নে দেখি
বেলুন সত্যের বায়বীয় দেহ।
লালসার জ্যোতি
রাতের শিওরে গেলে
বহু ঘটনার অবিকৃত গল্প শোনা যায়
সব তার ইনবক্সে রক্ষিত
গোপন গ্রন্থের ছায়ালিপি।
সমবেত আলোর ছটারা সে গল্পের শুধু
উপসংহার দেখে, টেকস্টের ভেতরে দেখে
লেপ্টানো কালির অভিধান।
পুঁথির বিদ্যারা ফালি ফালি লালসার
ঝলসানো জ্যোতি, বিকলাঙ্গ বিবেকের
অবরুদ্ধ দাস।
এসব দর্শনে এখন মানব দৃষ্টি
দগ্ধ হয়ে যায়
আমচোখ জনবোধ কোথাও খোঁজে না তাই
আঁধারে লুকোনো কোনো প্রাচীন অধ্যায়।
প্রশ্ন-প্রহেলিকা
নারী তো মৃত্তিকা-আদিত্বের চিহ্নরেখা
বহমান জীবনের মৌল সরোবর।
নিসর্গের স্নিগ্ধ শোভা,পাখিদের গান
আর জল-পবনের মৃদুমন্দ ধ্বনি —
প্রাণবিশ্বের এসব বিভূষ্য বিস্ময় মন্থন ক’রে
ঈশ্বর বানিয়েছে শিল্প-পরমার প্রিয় নন্দিনী,
ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়েছে স্বর্গের সম্মান।
বিস্রস্ত বিদ্যাও জানে — জননীর বাইরে কোনো জনন নেই,
নেই সৃষ্টির অস্তিত্ব এই শ্যামল ধরায়।
অতএব — শাস্ত্রাতীত এক প্রশ্ন-প্রহেলিকা
তবে কি জৈমিনি বেশে নারী ও ঈশ্বর অবশেষে
অদ্বৈত সত্তায় মিশে যায়?
লাশ হেঁটে যায়
রাস্তায় বেরিয়ে দেখি
সারি সারি লাশ হেঁটে যায়,
এদিকওদিক দেখে
নানা শব্দ শোনে
কিন্তু নির্বিকার!
আমার যাবার আর
বিকল্প ছিল না ব’লে
ওদের সঙ্গেই চলি,
মৃত মানুষর গন্ধ শুকি
চোখওয়ালা অন্ধের মতো
দৃষ্টির দুয়ারে দেখি
মানুষ ও লাশের মাঝে
লোভ ছাড়া আর কোনো
ব্যবধান নেই।
বুঝলাম
মানুষ লাশ হলেই কেবল
লালসার মৃত্যু ঘটে
কিন্তু জিয়ে থাকে
রেখে যাওয়া ক্ষোভ ও কষ্টের দাহ।
ত্রৈয়ী চক্রের খেলা
আমি তো শুধুই আমি নই তুমিও তেমন
নও একা তুমি,সে তিনি এবং তারাও কেউ
নয় কোনো বহিঃবৃত্তের চাকা:সত্তার স্বাতন্ত্র্য
আর ব্যক্তির বিকাশ — সেতো সমুচ্চ বিদ্যার বিদা
কিন্তু জেনো একই উৎসের জাতক সবাই
একই গন্তব্যের শেষ অনুগামী।জাতি গোষ্ঠী
এবং গাত্রবর্ণ আর দেহের গড়ন —
এসব মূলত কোনো ব্যবধান নয়।
সকলের ভেতরেই আছে রাঙ্গা নহরের ধারা
আছে বহ্নি পানি ও মৃত্তিকা গন্ধের মিলন।
ঘৃণা করো কাকে, কাকে ভালবাসো
কাকে বলো মহান আর কাকে তুমি হীন ব’লে ডাকো?মাটিকে জিজ্ঞেস করো,
জিজ্ঞেস করো জল হাওয়া বৃক্ষের কাছে —
তুমিই সবাতে আছো সকলেই আছে
তোমার ভেতর:আহা এ তো এক ভেদের বিষয়
যে ভেদ জানে কেবল ছায়া-কারিগর
জানে আলোর হাতুড়ি
আর নেহাই কামার!
কাম ক্ষুধা ক্রোধ আর প্রেম বিদ্বেষ
এ থেকে মুক্ত বলো কোনজাত মানুষ
কোন্ পরিবেশ? পুরোটা আকাশ নীল
নীল সাগরের জল,জীবন বাঁচিয়ে রাখে
আরেক জীবন,মৃত্তিকা দিয়ে যায়
শস্য এবং সব্জি ও ফল।
আসলে এ ধরা এক ত্রৈয়ি চক্রের চিক্কণ খেলা
সময়ের তিন ধাপ প্রত্যুষ প্রদোষ আর নিশিকাল বেলা।