আড্ডাপত্র

২৭ কার্তিক, ১৪৩১; ১২ নভেম্বর, ২০২৪;ভোর ৫:০৬

গণঅভ্যুত্থানের কবিতা : পর্ব ৮

আড্ডাপত্র

অক্টো ১৮, ২০২৪ | কবিতা, গুচ্ছ কবিতা

ঝরা পাতার নৃত্য

সায়ীদ আবুবকর

পুকুরের পানির মতো এ নিস্তরঙ্গ মৃত্যুর শহরে আচমকা এ-কি
জীবনের উন্মাদনা! যে ছিলো অচল, ছুটছে সে উল্কার গতিতে।
যে ছিলো নিথর, উড়ছে সে ঈগলের অধীর ডানায়। কী হলো হঠাৎ
এই ভূতের শহরে, বয়সের ভারে নুব্জ বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা ফিরে পেয়ে
হারানো যৌবন, ছুটছে ক্ষিপ্রবেগে যেন ষাঁড়; তরুণ ও তরুণীরা যেন ঝড়,
ভেঙেচুরে ফেলছে সব হারকিউলিসের মতো— মুখ থুবড়ে পড়ছে স্ফিংস,
কারুনের বালাখানা, ফারাওয়ের মসনদ। এভাবে হঠাৎ করে কোথা থেকে
নেমে এলো জীবনজোয়ার মরে কাঠ হয়ে পড়ে থাকা শুকনো পদ্মায়?
আমি হতবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখি আদনান, ফারহান, শাকিল ও
আবু সাইদের রক্তে লাল হয়ে ঈগলের মতো উড়ছে আকাশে আমাদের
প্রাণের পতাকা আর বিশ কোটি বাঙালি ছুটছে ঊর্ধ্বশ্বাসে, কে জানে কোথায়।

থরথর করে কাঁপছে স্বৈরাচার; শুকনো বোঁটায় ঝুলতে থাকা পাকা
সিঁদূরে আমের মতো দুলছে দুঃশাসন যৌবনের ঝড়ে। এ-কি জীবনের
উন্মাদনা দিকে দিকে! যে ছিলো নিষ্প্রাণ, আজ সে জীবন্ত, যে ছিলো নিশ্চল,
আজ সে ঝটিকা হয়ে ছুটছে অশ্বের মতো। তাই দেখে মৃত্তিকায় পড়ে থাকা
ঝরা পাতারাও জীবন্ত ফড়িং হয়ে নৃত্য জুড়ে দেছে একসাথে উন্মত্ত বাতাসে।

তরুণ হৃদয়

রফিক হাসান

যৌবন জোয়ার এলে হেরে যায় বুলেট
লাঠি, ভাঙা ইট টুকরো পাথর বৃষ্টির কাছে
টিয়ার শেলের গ্যাস পুড়ে যায় নিমিষে
অকেজো মেশিন গান রাইফেল বন্দুক

দাঁড়ালে সাহস নিয়ে ভেঙে পড়ে মসনদ
নুয়ে যায় মাথা কামান বারুদ গোলা
সব হাতিয়ার মানে পরাজয়
সামনে ছড়ালে সতেজ তরুণ হৃদয়
ঘুচে যাক মানুষে মানুষে যত ব্যবধান
অসির বদলে হোক বেশী বেশী মসি ব্যবহার

জেগে ওঠো বাংলাদেশ

আনোয়ার রশীদ সাগর

শ্রাবণের ঝরঝর ধারায় চেয়েছিলাম একটি প্রেমের কবিতা লিখতে।
নদী বলেছিল,বেশী ঝরিও না ধরায়-জলের ঢেউ উঠলে বন্যায় গর্ভবতী হয়ে যেতে পারি।
হেঁসে হেঁসে উড়িয়ে দিয়ে মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁদতে হয়েছিল।
কবিতা লেখা আর হয়নি,প্রতিটা কবিতার শব্দে রক্তমাখা জল, ভাসিয়ে নিয়ে যায় লাল দুনিয়ায়।
বিপ্লবী বার্তা শোনায় শহীদ সন্তানেরা, প্রেমের কবিতায় লেখা হবে বায়ান্ন বা একাত্তরের মতো জ্বলন্ত প্রেমকবিতা।
কবিতা লেখতে গেলেই ভেসে ওঠে সাঈদের মুখ, মুগ্ধের জল বিলানো দৃশ্য, তাবাসসুমের শপথ ;
ছোপ ছোপ রক্তমাখা শার্টগুলো জেগে ওঠে কবিতায় কবিতায়, মাঠেঘাটে, অফিস, আদালতে যেখানেই চোখ রাখি বাবা-মা’ র আর্তনাদ দেখি।
কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের বুভুক্ষু চিহারা,অনাহারী রিকসা-অটোচালকের না খাওয়া স্লোগান পথে প্রান্তরে ;
এটা কী সেই প্রেমের কবিতা?
নদী রক্তমাখা ওড়না মাথায় জড়িয়ে বলছে,
রাখো তোমার প্রেম, রাখো তোমার নির্বোধ চাহনি, জেগে ওঠো -জাগিয়ে তোলো বাংলাদেশ।

প্রতিদিন প্রতিবিপ্লব

আনোয়ার রশীদ সাগর

মধ্যরাতের অতলে দীর্ঘশ্বাসের স্তুপ,
ছুরির ছায়ায় ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে;
বিষন্ন পাখিরা প্রজাপতি প্রতিজ্ঞায় মৃত্যু কামনা করে প্রতিদিন।
প্রিয় পাখি, পাখা ঝাপটায় বিকলাঙ্গ হয়ে মধ্য রাতেই।
ঝড়ো নিঃশ্বাসে নিঃস্ব হয় স্বপ্নময় জ্যোৎস্না,
রমনীর রমণে পৌরাণিক নদী মগজশূন্য হয়ে কাঁদে নীরবে।
হৃদয়জ নীরিহ প্রার্থনা আকাশ ছুয়ে ছিটকে পড়ে
অকল্যাণকর ও পৈশাচিক নরকে।
কালোত্তীর্ণ হয় নিদারুণ নিষ্ঠুরতার অবিচার ও অনাচার।
রক্তপিপাসু নক্ষত্রই যেন নৃত্যময় দেশপ্রেমিক।
আমরা প্রতিদিন অশ্লীল কাব্যিকতা নিয়ে স্রোতের অনুকূলে গা ভাসাই,
গা ভাসিয়ে ভাসিয়ে মধ্যপন্থী হয়ে
শয়তানের ক্যানভাসে অর্ধসমাপ্ত ছবি আঁকি;
এঁকে এঁকে আঁধারকে আলো বলে বলে,
নিত্যনতুন পরিভাষা প্রণয়ন করে করে
প্রেরণা যোগায় কালো ঘোড়াকে।
ক্রীড়নক,
সূর্যের শরীর কেটে কেটে
জিকির করে এবং
চাতুর্য প্রদর্শন করে করে বলে
আপোসকামী হও শিল্প ও সাহিত্যে।
এভাবেই কষ্টগুলো নদী হয় আমাদের সংগ্রামী বাগানে।
আপোসকামীরা রঙিন কামিজ বা ব্লাউজ পরে
দ্যুতি ছড়ায় মনস্তাত্ত্বিক মিথ্যার মিথে। পাখিরা উড়ে উড়ে শূন্য বাগানে,
নদীর কিনারে, ঘুরে ঘুরে আঁধারের কেন্দ্রবিন্দুতে লোমহীন হয়ে,
শৃগালের মুখে হারায়।

অবরুদ্ধ বর্ণপ্রভা

মাসুদ চয়ন

চলো অন্ধকারে নিমজ্জিত হই আরও..
পৈশাচিক আলোক তোড়ণ গনগনে আভা নিয়ে পড়ে থাকুক পৃথিবীর পথে পথে..
চলো ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে ডুবে যাই ব্ল্যাকহোলে…
পিচঢালা পিশাচ নগরে উৎসব চলুক চিরকাল ধরে…
আমাদের রক্ত রঞ্জিত আত্মহূতির মিছিল হিমালয়ে হিম হয়ে জেগে থাকুক
অন্ধকারের চিরন্তন সারবস্তুরা আহাজারি করুক..
অবাধ্যতার পৈশাচিক উৎসবগুলো আর না থামুক…
চলো মরে গিয়ে বেঁচে থাকি রাত ফসিলের
নীড়ে..

গোধূলি…

রীতা জেসমিন

ধূসর লালচে আকাশ
আকাশের বুকে
একাদশী চাঁদ আর শুকতারা
হাজার মাইলের ব্যবধানে তুমি
আমার একান্ত আকাশ।।
গাংচিল আর বকের ঝাঁক
উর্ধ্বশ্বাসে নীরে ফিরছে
বট বৃক্ষে চড়ুই, শালিক
সম্মিলনে কিচির মিচির।
সমস্ত প্রকৃতি গোধূলি লগ্নে
প্রার্থনারত জ্বীন, ইনসান
গুল্মলতা,বাহারীপাতা,
পুস্পরাজি,শুভ্র কাশবন
স্তব্ধ বিশ্ব, শুকতারা,আর একাদশী চাঁদ।
স্তব্ধ তুমি, স্তব্ধ আমি
গোধূলির ধাঁধানো রুপে
স্তব্ধ আমাদের যুগল আখিঁ।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০