পাখি সমগ্র..
পাখি তুমি এতো মধুর ডাকো
তন্ময় হয়ে যাই সুরে শিহরণে
প্রজননে প্রশমনে
তোমার পালক চাই রোমশ বুকের বালিশ
জোড়াডিমে তা দিয়েছো
লুকিয়ে লুকিয়ে একা সবটুকু জানি
ওপাড়ার তেঁতুলের ঝোপ ঝাড়ে
বানিয়েছো গোপন কুঠুরি
ঝড় এলে শুয়ে থেকো
পরিমিত দোলনার ঠিক মাঝখানে
সুমধুর স্বরলিপি কিচিরমিচির মেপে
তরতর ছুটে গেছো বাতাসের ভাঁজে
শুনেছো কী শিশিরেরা
তোমার বিচার চেয়ে মিনতি জানালো গাঁয়ে
পাতার খোলস ভাঙ্গা টুনটুনি
মুঠোময় ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করো
দেবো নাকি ছেড়ে ?
শোন কথা আছে নদী
আজ অবধি বলিনি বালির কাছে ঘুণাক্ষরে
সন্ধ্যার স্নিগ্ধ কসম
রাত কভু আসবে না আমাদের হলুদ উঠোনে
ফড়িঙের ঝিঁঝিঁদের
ডাকতে শেয়ানা সব একসাথে চুপ হয়ে যাবে
ঘাসের গন্ধ যারা ধুয়ে নিতে জানে
তারাসব সুন্দরের অতীত অতিথি
পাতারং মুছে মুছে
কুড়ালির যুবতিরা কায়ক্লেশে করাত চালায়
তোমার কণ্ঠে যদি
সেরকম চিহ্ন শোনা যায় কাঠুরিয়া বুঝে নেবে তাও
চুম্বনের চিহ্ন চাই
ঠোঁটের প্রলেপ মুছে উত্তপ্ত লোহার জিভ জ্বলুক ভীষণ
খাঁচায় রাখি না পাখি
উড়ে যদি ফিরে আসে সেটুকুই প্রেম
ম্যানগ্রোব বনানীর
নুনধোয়া অধরের ডিম ডিম ঘ্রাণ চাই রোজ
স্বর্ণলতার বিভা
জ্বালাক চোখের মণি আবার বসিয়ে নেবো সিংহসাহস
তখন আমার নামে
অনেক নালিশ জমে কাচারিতে জ্বলবে চেরাগ
সুরের আবেশ ঢেউ
ফেনা ফ্যানা দরিয়ার জমে যাবে সবখানি পানি
জানি, সেই সুর তানই
আবার প্রেমিক হবে এসরাজে মশগুল মাছি
আমার পাখিরা উড়ে
আকাশের নীল ফেড়ে পরতে পরতে
এ কেমন অলোকার
অলীক পাতাল জুড়ে তোমাকে শেকলে বাঁধি
এ আমার অন্তরীক্ষ
আমি তাকে সারামন সুরের তন্ত্রী পেতে চাই
আয় তুই অক্টোবর…
আয় অক্টোবর
তোকে নিয়ে বেড়াতে যাবো
ভোরে দুপুরে অপরাহ্নে
সন্ধ্যায় রাত্রির সায়াহ্নে
হালুয়াঘাট থেকে ডবলমুরিং
লামা আলীকদম চুনারুঘাট
কুলাউড়া কুষ্টিয়া কুড়িগ্রাম কুমিল্লা
কুর্মিটোলা কামারহাট মধ্যবাজার
ভাই ভাই মাইক সার্ভিস…
আয় অক্টোবর
তোকে নিয়ে লাইনে দাঁড়াবো
প্রেস ক্লাবের পাশে
খোলা বাজারের ট্রাকে
নগ্নতা ঢাকার জন্য
নূন্যতম বস্ত্রের সন্ধানে
শরীরের মাপে এক টুকরো
জমিনের বিনিময় খুঁজে
তোকে নিয়ে পাহাড় পেরুবো…
আয় অক্টোবর
সাগরে ডুবুডুবু খেলি
নুনের প্রলেপে মুছি
হতমানে অপমানে
লুকোনো সে মুখ
কার্তিকের কাক থেকে
একফাঁকে দিই ছুট
সেফটিপিন সেপ্টেম্বর
খুলে চল এবার পালাই…
তাল পেকে সাদা হয়ে
পড়ে আছে উঠোনের আড়ে
কুকুরেরা লেগে আছে খুব
মানুষ ওদের কাছে
আবার শিখতে গেছে
সুনিপুণ ডুব!
এসব দেখতে নেই
চল শালা পালাই পালাই
এই ভ্যাপসা আশ্বিণা দিনে
শীতের আদর মাখা
আয় তুই অক্টোবর
তোর বুকে পা রেখে
ডিসেম্বরে যাই…
কথাবিস্ফোরণ
অনেকদিন দাঁতে চেপে চেপে রেখে
কথারা এখন ভীষণ শক্ত পাথর হয়ে গেছে
ইচ্ছে করলেই বলতে পারছি না
জমি খুঁড়ে খুঁড়ে পুঁতে রাখছি বীজ
শস্যসবুজ হয়ে উঠুক মাটি ভেদ করে
কিছু কিছু কথা নিশ্চিত গ্রেনেড
কোন কোন কথা ক্ষেপণাস্ত্র
গেরিলার আক্রমণ হার মানে কথার কাছে
এমন অনেক কথা চাপা পড়ে আছে
অনেক দিন বুকে পুষে কিছু কথা
এখন পাখির সাজে উড়ছে আকাশে
হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসে উদ্ভবে উদ্ভাসে
অযুত নিযুত কথা সঙ্গোপন চাষে…
কথা আছে নগ্ন সাধুর মুখে
কাকের কণ্ঠ চেরা কোকিলের স্বরনালী
কথা আছে ফিরোজিয়া ঝিলিমিলি
প্রিয়নদী সোনাধান হাসিমুখো রূপশালী
পারমাণবিক বোমার চাইতে বিধ্বংসী
লক্ষ নাগাসাকি ধ্বংস করার মতো তেজস্ক্রিয়
প্রমত্ত সিডরের চেয়ে কোটিগুন প্রলয়ঙ্করী
শাদা শিমুল কথাগুলো এখন বলতে পারছি না
ঠোঁটে আশ্চর্য ফেভিকল আঙুলে আঙ্গুলে শেকল
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে করারোপ বর্ণে বর্ণে বর্ণিল শোষণ
পুঁতে রাখছি কথার করলিপি অক্ষরের মাইন
তোমার পদাঘাত থেকেই শুরু হবে বিস্ফোরণ…
তরল অনুভুতি…
আবিষ্কার করি তাঁকে
লুকোনো কুঠুরি ভেঙ্গে গোপনীয়তায়
কোথাও কী দেখেছি এমন
মগ্ন মোনাজাত মাধুর্য পাড়ায়
এখানে অবারিত সুন্দর
আছে ঠিকই কিন্তু লবণে চরম ফের
নিজস্ব আলিফ নিয়ে
মুখর পেশপাড়া জবর দখলে আছে জের
তখন আমার একুশ বছর
তেরো দেখলেই অংকে তেত্রিশ
আর বুকের পাঁজরে
ঘনঘন জ্বালাধরা চিড়চিড় চিরল হরফ
একটা পুরনো পত্রিকার কভারে
সে হাসছিলো মোহময়ী ভঙ্গিতে
কায়দা পুরো না শিখে
যে মেয়ে আমপারা ধরে বেত্রাঘাত খায়
ঠিক তার বোকাবোকা
চাহনির ভেতরে অনেক সোওয়াব
মোল্লার বালিশের নিচে
এমন কাউকে দেখে হুরপরী লাগে
যেন ফেরেশতা এইমাত্র নিয়ে এলো
আমাদের চমকিয়ে দিতে
মধ্যগামী যুবকের
গরম নিঃশ্বাসে নীল রঙ লুকিয়ে থাকে
যদিও এইসব তরল অনুভুতি
কারো চিন্তায় পেরেকবিদ্ধ নয়
আর আমি তারে দেখি
প্রথমবার প্রকম্পিত নদী দুকূল ছাপানো
দ্বিতীয়বার দেখি
পর্বতারোহী – প্রত্যাশার পরিণত প্রত্যয়
চোখে মুখে গ্রীবায়
সানুনিত সরল মুদ্রায়
মধ্যপদলোপী একুশ আমার
তৃতীয়বার থেকে
একান্ত সে আমার অন্তর্গত গভীর সুড়ঙ্গ
মৃদুমন্দ তাল লয়ে
তালুর ঐশ্বর্য গুণে অনন্যা অপ্সরী
এরপর অংক খাতা
ভরে যায় চশমায় অনিন্দ্য রঙিন
প্রতিটি আঙ্গুল অজস্র ঠোঁটের ঘ্রাণে
শীতলতা বিলিয়ে বেড়ায়
তুমি হাসলেই
বৃষ্টি লজ্জায় গলে গলে ঝরে পড়ে যায়
তেরোশত নদী
একাকার কাঁদাজলে আকাশ ভাসায়
আমার আলিফ একা
দীর্ঘতর হতে হতে হারে হিমালয়
আমি নই শুধু আঙ্গুলেরা
তোমার স্পর্শ পেয়ে রোজরাতে হাসে…
বোকাপেন্ডুলাম…
ক’টা বাজে ? এই প্রশ্ন এখন নিষিদ্ধ
একটু আগেই বারোটা বাজার সংকেত পেলাম
সব সংকেত প্রতীকের মতো ঝলসায় না
কিছু কিছু সময় তাওয়ার আগুন
সিদ্ধ আটার রুটি গায়ে পোড়াতেল ঢালা
আমাকে পরোটা বানালে
তুমি গরম গরম খেয়ে নিয়ো প্রিয় অনাহার
এ বাড়িতে আমার সঙ্গে
সতেরোটা ঠাকুর থাকে দক্ষিণা ফকির
ঘোড়া আর গাধাদের ঝুলি ঝনঝন করে
ঘাস হবে অরগানিক
গরু ও গুরুদের ভেজালমুক্ত ভুষি
ভালো না লাগলে মুরগি টেলিভিশন ঘুরিয়ে দেখুক
মিকি মাউস দেখে আমার বিড়ালটা ধরতে চেষ্টা করে
মুখে বললেই হবে না কানের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হবে
তারে তার ছিঁড়ে সার্কিট সেট করে সরাসরি সম্প্রচার
এফ এম রেডিও – জলদি বর্ণমালা শিখে এসো
এরপর শেখাবো অজুর নিয়ম
এখন হাততালি আর মোনাজাত বেচাকেনা হবে
ঘড়িরা স্বাধীন পাখি স্বতন্ত্র স্বভাবে ঘোরে
আবোল তাবোল
আমাদের হাতগুলো একসাথে ঘুরতেই জানে না
আমরা কেউ সত্যি বলতে পারছি না এখন কটা বাজে
সময় তুমি ক্ষতবিক্ষত নোনাগন্ধী
আমার পিছু পিছু বোকাপেন্ডুলাম…