বৃদ্ধাশ্রম
চোখ সেউতিতে আকাঙ্খাকাতর সেই
দুর্লভ টুকরো টুকরো ক্ষণ
স্মৃতিময় জলছবি এঁকে চলি নিত্যই
সম্পর্কের পাঁজরে শীতার্ত কাঁপন
লতাগুল্মে জড়ানো একান্নবর্তীর সমাহার
অলিখিত সুখৈশ্বঃর্যে ভরপুর সোনাধানে
একখানি জলটুঙ্গি বেদেদের আশ্রম
ছুটে চলা কৌতূহলী নিরাম্বু অবয়ব।
নেই পাশে রক্ত বুনন লোকালয়
দূর বহুদূর আকাশের চাঁদ হয়ে ডাকে আয় কাছে আয়
মন বলে এসেছি বুঝি ফেলে নয়নের জল
মাটি ও মা বৃদ্ধাশ্রম
এসেছি বুঝি ফেলে আঁচলে বাঁধা একছড়া
চাবির গুচ্ছো মন
এসেছি বুঝি ফেলে পাঁজরের কয়টুকরো হাড়
কেবলি জলেই জ্বেলেছি অনল
স্মৃতিময় আলনায় ঝুলানো পুরনো কাপড়
ঐ যে দূরে দাঁড়ানো মাতৃভূমি আমার
আমার একান্তই একেলা বৃদ্ধাশ্রম।
বৃষ্টিতে ভিজি না
বৃষ্টিরা ঝালমুড়ি চিনেবাদাম রংধনু খোঁজা মন
আমি দিব্বি দাঁড়িয়ে আমার সীমানায়,
অক্টোপাস বহু বাহুডোরে
আমি আর বৃষ্টিতে ভিজি না
ভিজে যায় এই মন।
থই থই পথঘাট রাস্তাও নদী হলে
ইজিচেয়ারে এই শরীর এলিয়ে আমি
হাজারো নিষেধের বন্ধন চারপাশে
বয়সের দোষ মন বোঝে না…
জলের স্রোত শুকিয়ে ধূ ধূ বালিয়াড়ি
চিরসবুজ পাতায় প্রজাপতি মন
দূরে দূরে ওড়ে নিভৃত বন।
চোখের প্রতিবিম্বে কাচপোকা টিপ
জুঁই হাসনাহেনা সুবাস
দু’বেণী দোলানো ভার্সিটি করিডোর
তোমার দূরন্ত ঠোঁটে ফোটে গোলাপ
পাপড়ি ছুঁয়ে থাকে অবুঝ মন।
বৃষ্টি তখন ইলশেগুঁড়ি
পাশাপাশি কাছাকাছি
বকুলতলায় আধো ভেজা শিহরণ…
শুধু আজ চোখের পাতা ভেজে
আমি আর বৃষ্টিতে ভিজি না।
ঘুমাতে বলো না
ঘুমোতে বলো না আমায়, ঘুমোতে বলো না আমায়
অনন্তকাল সে ঘুমেই তো ছিলাম
এক মুহূর্তের উদোম হাওয়া মেলে দিল আঁখি
ভুলে গেছি কলতান-কলরব, ভুলে গেছি নিশীথ নিবিড় নীরবতা
জপেছি মন্ত্র অহর্নিশি সে তো তোমারই….
যেমন করিছে পাঠ চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র তারা
বৃক্ষ-লতা-গুল্ম, ফুল-পাখি, পাহাড়-নদী সমুদ্দুর সারা।
ভুলে গেছি পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণ
ঈশাণ কোণে মেঘপুঞ্জি ধরা
ভুলে গেছি বসতভিটা
ভুলে গেছি সেই ঘুমের রাজা কুম্ভকর্ণের ঠিকানা
দু’চোখের পাতা এক হলেই কি ঘুম বলে তারে?
দিব্য চোখে বিম্ব প্রতিবিম্ব বিম্বিত
সে এক রূপের আধার অপরূপ তুমি
ব্যাকুল আমি বিশ্বমেলায় দেহ-মন অবয়ব হেঁটে চলে
পথভ্রষ্ট বা পাগল আমায় বলে কেউ
ঘনকৃষ্ণকায় সে সময় মন্ত্র আওড়াই
চলি আপন বলয়ে নিত্যই
আমার পিছু আমি ছুটে চলি
কখনও পাই তারে কখনও হারাই
কখনও হারাই ফিরে পেতে চাই।
জল নির্যাস
জলদ দেহে বায়ু-বাষ্পিত মন
আন্দোলিত শিহরণ অনুক্ষণ
জল বোধি জল স্থিতি আত্মার নিরীক্ষণ
জল আকুতি ব্যাকুল চৌহদ্দি এবং গৃহকোণ
জল মাতম খরায় চৌচির দুর্মর পীড়ন
জলহীন প্রখর দাহে মন উচাটন
জল তপস্যায় মত্ত তপোবন
পাঁজরের ভাঁজে ভাঁজ উন্মত্ত প্লাবন।
চোখের অতলান্তে কম্পিত আচরণ
ত্রাহি ত্রাহি রবে হাজার পাঁচালির ব্যঞ্জন
এ কেমন জল নির্যাস অহর্নিশি ক্ষণ!
জলযান জীবন
কেবলই ভেসে চলি জলে স্থলে আকাশ মেঘ সীমানায়
ভাসমান এ জীবন পেয়েছি কি বসতভিটা নিগূঢ় আচ্ছাদন
যাযাবর তো জেনেই চলে-চলমান গতি মরুময়তায়
সূর্য দাহে তপ্ত বালুকাময় যাপিত জীবন
আমি ছুটে চলি বলয়হীন উত্তাল অশান্ত জলরাশি
দূর বহু দূর গাংচিলের উড়ন্ত ডানায়
জলযান জানে কতটা গভীরে গেলে পাওয়া যায়
আকাশ মাটির ঠিকানা
জলমগ্নতায় আমার এ জীবন বৈভব
ছুটে চলা নাবিক ধূসর বিষম দরিয়া দেয় পাড়ি
কানায় কানায় পূর্ণ অজানা রোমঞ্চিত আগামী দিন
উদোম আকাশ, বাতাসের দিগ্বিদিক গতি-জেনেই গন্তব্য নির্ধারণ
পুলকে পলকে জল তৃষ্ণায় আরতি আরাধনায় শুষে নেয়
চৌচির কাঙ্গালি মাটি ঐ স্বর্গীয় জল।
জলের ঘ্রাণ বুকে নিয়ে দুরন্ত আমি কখনও জলযান
জলে ডোবা আঁখির পাতা প্রতিনিয়ত করে জলস্নান
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি ভেসে চলি জলে বহুরূপী ছলে …
সেই প্রথম জলস্নান আজ প্রলম্ভিত হয় শেষ স্নানে
হাজার প্রেমিক ভালোবাসায় ছড়িয়ে দেয় অশ্রুপুষ্প জলসম্ভার
আমার শেষ স্নান পূর্ণতায় তোমার সঙ্গ মধুর অঙ্গ
ডুবে থাকা শ্রাবণে শ্রাবণ আলিঙ্গণ।
নিত্য জলের আকুতি ভাসিয়ে নেয়া
আমার এই ক্ষুদ্র ভাসমান জলযান জীবন।
রৌদ্রের ঘ্রাণ
দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে আলোকবর্ষ দূর
নির্ঘুমা স্বাতীদের নিষ্পলক চেয়ে থাকা
ক্ষণিকালয়ে ক্ষণস্থায়ী এ জীবন
কত যে অমূল্য রতন
বেঁচে থাকার দুর্মর আকর্ষণ
রৌদ্রের ঘ্রাণ নিয়ে প্রকৃতির ঘুম ভাঙে
চোখ মেলে ফুল-পাখি-প্রজাপতি
তুমি আর আমিও
মেঘ ঠেলে ঠেলে নৈসর্গিক রোদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তোমারই জন্য নৈবেদ্যের ডালা সাজাই
পাপ-পুণ্যের বিচার-আচার সে তো অনিমেষ
আমার যাতনার চিলেকোঠায় তোমারই ভাবনা অশেষ
অমোঘ ভালোবাসার অমল বার্তার আশায়
অহর্নিশ ঘটমান এ জীবন।
মুহ্যমান আমি মোহিত করেছে
সে তুমি মোহন
খেরোখাতায় আঁকাআঁকি নিত্যই
রৌদ্রের ঘ্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকে এ জীবন।