আড্ডাপত্র

৩১ আশ্বিন, ১৪৩১; ১৬ অক্টোবর, ২০২৪;দুপুর ১:২২

ছন্দা দাশ এর গুচ্ছকবিতা

আড্ডাপত্র

নভে ১৬, ২০২০ | গুচ্ছ কবিতা

শোধ

কাস্তে হাতে ধরেছে স্বপ্নের আয়োজন
অথচ বেসুরো মুক্তির গানে ঝরছে
রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ
কানে তালা দিয়ে হেঁটে যায় জ্ঞানপাপী
কবি অবশেষে লিখে দেয় জন্মের পাপ।
দ্রোহের জ্বালা নিয়ে উঠে আসবেই
একদিন ক্ষুদিত কঙ্কাল।

অন্য অবকাশে

মন ছুঁয়েছে আকাশ মাটি
কি করে তাই রইবো বাটি
ঘর ছেড়ে যেই বাইরে এলাম
তুমুল জোরে বৃষ্টি
তখনি ঠিক পড়লো আমার
তোমার দিকে দৃষ্টি।

তখন তুমি গাইছিলে গান
গাইছে আকাশ মাটিতে টান
তখন আমার ভরলো হৃদয়
সুরের জালে মনটি
দখিন হাওয়ায় আসলো ভেসে
মধুর এমন ক্ষণটি।

লাগলো নেশা তোমার গানে
কাঁপলো হৃদয় মোহন টানে
পাগল করা নেশায় তখন
ঘরের বাঁধন টুটলো
সবছেড়ে তাই বাহির পানে
ছুটলো রে মন ছুটলো।

শিউলি

ভালোবাসার জন্য যারা কষ্ট পায়
আমি তাদের নাম দিয়েছি শিউলি।
শিউলিরা কি সবাই এমন হয়
জানতে চেয়োনা, তাহলে আমার
কবিতারা হবে বিবর্ণ ।

প্রতিরাতে কতো নক্ষত্র ঝরে পড়ছে
এক–দুই–তিন। রাতের প্রহর গুনতে
গুনতে চোখের পাতায় জমে দীর্ঘশ্বাস।
ওদের নাম কি জানো? দেবদাস।

পার্বতীরা তখন ভীরু চোখে দেখে
আকাশ।ওদের খবর কে রাখে?
পৃথিবীর সব পার্বতীরা শুধু শিউলি
হতে জন্মায়।

কিমাশ্চর্যম

একটি আকাশ ধরতে গেলে
আরেক আকাশ বৃষ্টি পোড়ায়।
এক আকাশের রৌদ্রে ভিজে
অন্য আকাশ ভেতর কাঁপায়।

এক পৃথিবীর দুইটি আকাশ
কিমাশ্চর্যম কিমাশ্চর্যম
এক মানুষের বুকের মাঝে
হাজার মানুষ করছে মাতম।

ভুতো মাস্তানের কথা

সে সময়ের কথা। প্রাইভেটে লেখাপড়া
করি আর দুটো টিউশনি;
এই ছিল প্রাত্যহিক জীবন আমার
তার বাইরে স্বপ্নে বিলাসী যাত্রা কখনো

ভূতের গলির ভাঙাচোরা মেসের একান্ন
নাম্বার রুমে যেখানে মাঝ দুপুরেও লাইট
জ্বালালে ফ্যাকাশে আলোয় পাণ্ডুরোগীর
মত দেখায় নিজেদের, যৌবনের অনেক দামি
সময় কাটিয়ে দিয়েছি এখানে,
স্মৃতিতে এখনো অম্লান।

আমরা মফস্বল থেকে আসা মিডেল ক্লাস
ফ্যামিলির তিন হতভাগ্য যুবক, আমি, ধূর্জটি
আর হরিপদ এই রুমের বাসিন্দা
মিডেল ক্লাস পরিবারের ছেলেদের নামগুলো
এমন না হলে যেন বেমানান মনে হয়।

ধুর্জটি নামটির সাথে ধুর্ত শব্দটি কেন আমার
মনে হয় তা অনেকদিন আমাকে ভাবিয়েছে
অথচ ধুর্জটি ছিল নিপাট, সাদাসিধে একজন
বালক। সংসারে এমন হয়না! সারাজীবন
বালক রয়ে যায়? তার আর বড় হওয়া হয় না।
নামের সাথে এত বৈশাদৃশ্য নিয়ে ধুর্জটি তার
একটা জীবন কাটিয়ে দিল।

হরিপদ নামের সাথে কেরানি জীবনের যেন
একটা গন্ধ থাকে। তবুও আলাদীনের চেরাগ
পেয়ে সে একদিন রবীন্দ্রনাথের সেই
আকবর বাদশাহ বনে গিয়েছিল। রাস্তায়
দেখা হলে সে এখন আর আমাদের চেনে না।
চোখ জোড়া যে আকাশের দিকে থাকে তার।

আমি অবশ্য কিছু হতে পারিনি। মাঝ
দুপুরে গলির কোলাহল থেমে গেলে
আমার ফুঁটো বেড়ার ফাঁক দিয়ে একজোড়া
দীঘল চোখের নদীতে ডুবতে গিয়ে আমি
ভূতের গলির ভুতো মস্তান আজ।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১