আড্ডাপত্র

১২ পৌষ, ১৪৩১; ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪;রাত ৪:৫৯

জন্মদিনে কামাল আহসান এর দশ কবিতা

আড্ডাপত্র

ফেব্রু ১, ২০২১ | গুচ্ছ কবিতা, জন্মদিন

নারীবিদ্যার ঢেউ

চেনা গীত গাই-
স্বরূপে মজেন রাই;
চোখে নাচছে হাজার তারা এক তারাতেই ঠাঁই
নারীর ঘাটও খোঁজে সাধন; বজন খোঁজে সাঁই।

খুঁজে সেই ঘোর,
পেয়েছি শূলের তোড়;
পরানে আগুন নেবো তুখোর রোদের নেবো ভোর
সোহাগে মোড়ানো হাত, ভুলে যাবে নারীহীন দ্বোর।

দ্যাখো অপলক,
খোয়াব তোমার হোক;
যাদুর বাঁশিতে তোলো সুর- শিস দিলে গাঢ় শোক
তুমিও হেসেছো চেনা রাতে, ভুলে রূপের ঝলক।

সুর জানা নাই,
ডাক তবু রেখে যাই;
চোখ ধাঁধিয়ে চলার স্রোতে সতীর সাঁতার চাই
আসুক তুফান মূল নিয়মে, লেজের জোরে ঘাই।

তৃষ্ণা গুজে রাখা,
নজরে জনম আঁকা;
নারীর নরম ভোরে পাখি সব ভোলে নিজ শাখা
দ্বিধায় দুলছে গাছ- নারীহীন বৃন্ত হবে ফাঁকা।

আসে গীত হয়ে,
আলোর জনম নিয়ে;
নারীর নদীরা আনে স্রোত, গতি-ঘোর সাথে পেয়ে
তুফানের ভয়ে থাকো চুপ, ভাসো- দুখে সাঁতরিয়ে।

শীলার ঘাটের পাশে জাগ্রত ছায়া

তুমি নাকি দেবী হয়ে শীলার ঘাটের পাশে যাবে ঘুমে-
প্রেম নামে দেবে পারি ইতিহাস-রাঙা হাজার বছরে!
আজ তার পূর্ণ হয়েছে ষোল- কালের চলন চেনা চুমে
চারপাশে চলো নদী-রাতে- জলে গড়া সাহসের ঘরে।

এমন সুধার গীত চোখে পেয়েছো কখন খুলে বলো!
রাত যদি কেঁদে ওঠে দুঃখভারে, সজ্জিত শরম সাথে
পূর্ণিমায়, জাগরণ-স্বরে কথা কও সুখ-আঁকা কালো
তুমি নামে হবো স্রোত গাঢ় সুরে- নিঝঝুমে হাসা রাতে।

শান্ত্বনা, শীলাদেবীর ইতিহাসে, দেহ-সুখ ভালোবেসে
হেসেখেলে কাটছেতো দাহকাল, মুদ্রা গুছানো দুপুরে
তবু সুরে নিয়মেরা ভুলে ভাসে- হেয়ালির স্বপ্নে হেসে-
প্রণয়ের সাজে জাগি যতো, বোধেরা ততোই যায় দূরে।

সুতা কেটে দিয়ে তুমি তবে দিলা চোখে ঘুড়ির খবর-
জীবন আগুন চেনে আর চেনে জ্বালা- সুখের সবর।

সকাল

নেমেছে সকালে- মিলিত গীতের ধারা হেসে, মহান নগরে
থেমেছে ঝিলিক দেয়া পা- পরাস্তে, চেনা রাত আলো হাতে
থলের মতোন দিন কাঁধে নিয়ে বাজি ধরে শখ- রৌদ্র দরে
পায়ের দাগের টানে ফিরে আসে বাড়ি- বুকে বিদ্ধ রাতে।

বিনীত বোধের কোলে শুয়ে আড়াল করেছি গুহা, শুদ্ধমায়া
প্রাচীন নীলের ডাকে ভাসে- দু’চোখ ছড়িয়ে রেখে আকাশে
পুড়ে পুড়ে খাঁটি হলো সবটুকু থির-বনভূমি, ভুল আশ্বাসে
বাঘের ক্ষুধার মতো কাল- চুষে নেয় চেনা খুলি, উগ্র ছায়া।

গানের রয়েছে আলো- কূল ভেঙে ছুটে চলা চারুর বাতাস
বিলের শালুক নাচে তাপকে ঘিরে, বুকে তুলে নিদারুণ মাঠ
গাভীর লেজের মতো খোঁজে মাছি- হাটুরের পায়ে লাগা হাট
প্রিয়-মেঠোপথ আছে জানা, আছে চেনা প্রিয়-ঘুমের সুবাস।

আমাদের হাতে গড়া সব লোভাতুড় রোদ আর কামুকী সকাল
মহুয়ার চোখ পোড়ে ঝালে- মলুয়ার দেশ জুড়ে আঁধার-মহাল।

চাষযোগ্য মন

জমিনের ভর রাখো বুকজুড়ে, কেগো আগন্তুক!
স্ব-খেদ তুফানে এসে দিনভর খেলো নয়া ঘোরে
জীবন বিকিয়ে দেয়া নিলামের করযোগ্য তোড়ে-
বিরল বিরহে ফোটা সাদা ফুলে নামাও অসুখ।

দূরের তুফানে গড়া ঘূর্ণিজল- মোহকর রসে
দুচোখে প্রণয় গড়ো ওমে ধরো বিধানের ধন
ঋতুর রতিকে ভাবো দীপ্তঝড়, কল্পীর মতোন
শীতের কামড় খেয়ে নাড়ো ডানা নিরীহ বয়সে।

প্রাচীন চাহনি নিয়ে হাঁটো লাজে, ফেলে আসা সুখে
রোদের দু’হাত খুলে জ্বালা দাও বুকে, ঘুরে ফিরে
বানান ভুলের ছলে লেখো প্রিয় নাম- শান্ত স্বরে
বালুতট ডোবে জলে পাথরের আনকোরা দুঃখে।

সাদাসিধা চাষি নিয়ে কেন করো তামাশা এমন!
রেখে যাবো- পৃথিবীর পথ জুড়ে চাষযোগ্য মন।

পুরুষ

আরো একটু ছড়িয়ে যেতে চাই বলেইতো
নিজেকে জড়িয়েছি পাকা ডালিম সদৃশে আরো
বিরামহীন বিনয়ী ও সবুজ চিৎকারের বাগানে, গাছে।

বিনম্র মাটির সন্তানের রূপে জেগে গেছি ফের
নুয়ে পড়েছি বুকের পাশে শ্রদ্ধা-প্রলম্বিত আহবানে
রাজবংশ-যাচিত নাবালকের পরিমার্জিত সঙ্গিতে।

বাতাসের সওয়াল সামলে নিয়েছি আত্মার আগুনে
ধার করা নদীসম আলোর গতিকে করেছি মুখস্থ
বানান করতে শিখেছি ভোরের প্রারম্ভিক পিতৃ-রোদ।

পুরুষ শব্দকে আমি পিতার মতোই ভালোবেসে
বিমুগ্ধ জ্যোতিতে পেয়েছি পুত্রের রাজ-সাজ
তাজ বিলি করা আয়োজন-ঘনো স্নেহের নগরে।

চোখ

মহুয়ার ঘ্রাণে চোখ জ্বলে ওঠে ঘাম-পোশ ফুঁড়ে
আলোর বিকেল নিয়ে কিছু চোখ সুর-ঝাঁপি খোলে
জোছনা কাঁপানো বিল নড়ে ওঠে চাঁদের অধরে
আদরের শেষ ধাপে কাঁপে চোখ- চাহনি অতলে।
আলোয় জড়ানো চোখ খোঁজে রাত আশায় দিনের
নজরের বানে পোড়ে শতো আয়ু আকুল মীনের।

লাল বালতিতে জমা দুধের ফেনার মতো সাদা
বোনের কাজল চোখে উড়ে মেঘ- বর্ষনের ধারা
চোখে নিয়ে পার করে ভাদ্রপদী- কুলিনের রাধা
একাকিনী দেয় পারি, গোসলের ঘ্রাণে জাগে পাড়া।
কালো কিছু চোখ থাকে ধবধবে চাহনি যাহার
নজরে তুফান আঁকে প্রণয়িনী চোখ তানিয়ার।

পাহাড় খুঁজছে যাকে সে সাগর খুঁজছে আকাশ
জানা হলো চোখ নিয়ে আমাদের ঘোর-বসবাস।

উড়ে যাওয়া রাতের সুরভি

যুবতীর চোখ ছুঁয়ে উড়ে যায় কিছু যুবা-রাত
সুরভি ছড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর লালিমা নজরে
মখমলী আসমানে করবে যে প্রিয় করাঘাত
সুরাহি ভরার রাতে কাঁদে তার পিপাসা অঝরে।

বাসের চাকার মতো রাতভর ধরে রেখে হাসি
কিছু চোখ রাতের সজনী হয়ে আঁধার কুড়ায়
রাখে ধরে গ্রহনের চাঁদ, সুরভি’কে ভালোবাসি-
চাঁদের বিভোর ডাকে জোছনার বয়স ফুরায়।

যুবতী-নামের পাশে জাগে রাত, আকাশ ঘুমায়
কালো রঙ খোঁপার মায়ায়; জানালায় জাগে
কিছুটা আঁধার, চেনা নদী আর জানা মোহনায়
তবু ঢেউ, তোলে নাই কেউ পাললিক অনুরাগে।

যুবতীর দুই চোখে আঁকা আছে পলল আকাশ
যুবকের রাত ছুঁয়ে আনো ভোর, জাগুক সুবাস।

হাজরা বাড়ির স্রোত

মৌসুমীর চোখে হাসে বিমোহিত ঘোর….
নজরে আকাশ গেঁথে কাছে ডাকে পিপাসা ডাগর
আঁচল-আড়ালে রাখা সোনামুখ তোর-
দূরে গিয়ে বারবার আসো ফিরে ফুলতোলা ভোর।

হেমন্তের মাঠে জাগা ধান-ছোঁয়া ঘাসে-
সবুজের ছাউনিতে খুঁজে পথ ফিরে সে-ই আসে
বিকেলের রোদে একা তার দেহ হাসে
অধরের মায়া ছুঁয়ে সব জ্বালা- সুর হয়ে ভাসে।

ফসলের মুখে হাসে জোছনার সুখ….
দোলা লাগে গ্রামজুড়ে, মনজুড়ে মৌসুমীর মুখ
পাখির ডানার মতো আরামে উন্মুখ
বায়ুর তুফান হাঁটে ছায়া ভুলে- অতীতের দুঃখ।

হাজরা বাড়ির স্রোত, দুই চোখে এঁকে শত নদী
এ বুকে তুফান হবে- চুপিসারে মিশে যাও যদি।

আয়ু

চেয়েছি চাঁদের কাছে কিছু আয়ু সাময়িক ধার
মেহমানি চোখ চায় রাঙা স্বাদে সাধু-গতি তার।

ভূগোলের দায় ভুলে কিছু চোখ শোকে খায় দোল
কিছু আয়ু কৃষকের- বিলে ভাসে ছলে বাঁধা খোল।

ধীবরের চোখে আয়ু, আছে আয়ু ভরা-নদী মিনে
জীবনের ছায়া নড়ে বায়ু ঘিরে- পাতা খসা দিনে।

জলের জ্বালায় তটে ছুটে আসে মাতাল জোয়ার
জুলেখার আয়ু হাসে কালো সুখে- রূপের পয়ার।

রেশম পোকার আয়ু বাঁধা থাকে মাকু চেনা দলে
বাজারের আয়ু কাঁদে ক্রেতাদের পাঠ করা ছলে।

তাঁতের গড়নে খোঁজে সাধু মান- ভুবনের গানে
ঘুমের আয়ুর টানে কাঁদে রাত আলোময় ধ্যানে।

আয়ু হলো আকাশের নীলে লেখা ঠিকানা বিশাল
আলোর ইশারা ঘেরা স্রোতে থাকা গতিময় পাল।

তৃপ্তিকর তৃষ্ণারা দু’চোখে

গরল নদীর রাত্রি-টান আফজাল মাঝিরাও বোঝে –
বোঝে জেলেনিও রাতের প্রহরগুলো আসে কোন পথে।

চৈত্রের খালেরা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ জানাতে জমায় বুকে পলি;
সেই তাপ রেখে বুকে কৃষকেরা ঘাসে-মাঠে বায়ুতে ঘুমায়
ভোর হলে কেউ-ই দেখেনা ইতিহাসে, ঘোলা নদির স্রোতে
খালের পাশের পথে বাড়ায়না সবল’পা, চলন্ত দু’হাত নেড়ে।

তবুও জানতে চায়, শুনতেই চায় জোয়ারের বাঁচা আর মরা-

বৈশাখে কেমন হবে তোমার চঞ্চলা স্রোতস্বিনীর উর্বর বুক?
কেমন ঋতুতে ভেঙে দাও তুমি কাতলাহারের বিমুগ্ধ ধ্যান!
লাঙলের ফলাডোবা কাদার গড়ন দেবে আহারের ডাক আর
পৌষের বিকেল ঘেমে ঘেমে দেবে তৃষ্ণাতুর মাঠে তৃপ্তিময় জল।

হালের গরুকে রেখে মিশে যাও শ্রদ্ধেয় কৃষক, ওগো সুহৃদ আমার
কাদার শরীরে মিশলে তুমিও- একদিন ফলনেরা জাগবেই ছন্দে,
বাংলার সন্তান তুমি, সোনার সংসারে তুমি বিজ্ঞ স্বামী- কারিগর
তুমিই পবিত্র শুধু এই ভূমিতে, আসবে মুকুট তোমার দুই হাতে।

সব নদী চেনে চর, জানে সব কুয়াশার বাঁকে থাকা বধির যন্ত্রণা
অলস নৌকায় চড়লে তুমি, জোয়রের চাষ দেবে বিফলে মন্ত্রণা।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১