আড্ডাপত্র

১ মাঘ, ১৪৩১; ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫;দুপুর ১:৪৬

জাহাঙ্গীর আলম এর দশটি গীতিকবিতা

আড্ডাপত্র

নভে ১৪, ২০২০ | গীতিকবিতা

গীতিকবিতা :: ১

জন্ম থেকে সুখি আমি
সবুজ দেশের রানী,
আমার বুকে সোনার মানুষ চলে অবিরাম
বাংলা আমার নাম।

মাঠের ধানে স্নেহের টানে
গন্ধ মেখে থাকি,
সবুজ লালে নায়ের পালে
বক্ষ পেতে রাখি।
সৃষ্টি সুখে হেসে আমি
সুখের পরশ আনি!
আমার বুকে সোনার মানুষ চলে অবিরাম,
বাংলা আমার নাম।

দিঘির জলে গাছের তলে
মিষ্টি ছায়া ফেলে,
সবুজ মাঠে পুকুর ঘাটে
দৃষ্টি রাখি মেলে।
স্বর্গ রূপে আঁকা আমি
আশার প্রদীপখানি!
আমার বুকে সোনার মানুষ চলে অবিরাম
বাংলা আমার নাম।

গীতিকবিতা :: ২

তোমার,
মাঠের সবুজে সোনালি ফসল
বাতাসে ছড়ায় ঘ্রাণ,
পথের দু’পাশে গাছের ছায়ায়
জুড়ায় সবার প্রাণ।
তুমি) ভুবনে স্নিগ্ধ সুখের স্বর্গ
শ্যামলী রূপ-লাবণ্যে
ওগো–রূপসী বাংলা কন্যে।

তোমার
কোমল মাটিতে কাশফুল ফোটে
নদীর কিনারা ছুঁয়ে,
আঁধার সরানো সবুজ চাদরে
সোনা রোদ থাকে শুয়ে।
তুমি) রূপালি চন্দ্রে দীপ্তি ছড়াও
নদী, সাগর, অরণ্যে।

তোমার,
মেঘের ভেজানো আকাশ রাঙিয়ে
রামধনু ওঠে ভেসে,
সবুজ জড়ানো পাহাড়ি ঝরনা
সাগরের জলে মেশে।
তুমি)দু’চোখে মিষ্টি স্বপ্ন সাজাও
আগামী দিনের জন্যে।

গীতিকবিতা :: ৩

যখনই,
দু’চোখে দেখেছি বাহারি পদ্ম
এ বুক জড়িয়ে ফোটেছে সদ্য
অপরূপ অনিমেষ-
তখনই হয়েছি সবুজ চাদরে
রূপসি বাংলাদেশ।

যখনই,
দেখেছি আমার অম্বর জুড়ে
জ্যোৎস্না রাতের গান,
বাতাসে ছড়ানো কোমল মাটির
হৃদয় জুড়ানো ঘ্রাণ।

যখনই,
দেখেছি আমার মুখের শব্দে
স্বপ্ন সাজানো কবিতা গদ্যে
ছড়ায় মধুর রেশ-
তখনই হয়েছি সবুজ চাদরে
রূপসি বাংলাদেশ।

যখনই
দেখেছি আমার অন্তর ছোঁয়া
সোনালি ধানের দোল,
ফাগুনে সাজানো মিষ্টি আমের
সুরভি ছড়ানো বোল।

যখনই,
দেখেছি আমার প্রাণের স্পন্দে,
হাজার নদীর সুরেলা ছন্দে
চেতনার উন্মেষ-
তখনই হয়েছি সবুজ চাদরে
রূপসী বাংলাদেশ।

গীতিকবিতা :: ৪

প্রতিদিন উঠে পুবের আকাশে সোনালি সূর্য হেসে
রূপসী বাংলাদেশে,
স্নেহের পরশে ফসলের মাঠে স্বপ্নেরা উঠে ভেসে
রূপসী বাংলাদেশে।

ছড়িয়ে রয়েছে বাংলার প্রাণ সবুজের কারুকাজে,
বউ-ক-থা কও দোয়েল শ্যামার ছোট্ট নীড়ের মাঝে।
অপরূপ রূপে ফুলের সুরভী কোমল মাটিতে মেশে
রূপসী বাংলাদেশে।

মায়াবী হয়েছে বাংলার রূপ সু-শীতল ছায়া ফেলে
ফুল-ফল-ধানে মাঠের সবুজে মিষ্টি মমতা ঢেলে।
পাহাড়ের বুকে ঝরছে ঝরনা পথের সীমানা ঘেঁষে
রূপসী বাংলাদেশে।

গীতিকবিতা :: ৫

দেহের বাতি জ্বলছে বুকে
খুঁজে দেখি নাই,
বাতির দেখা পেলে আমি
খুঁজে পেতাম সাঁই।

ঝড় বাদলে দিবানিশি
বাতি জ্বলে থাকে,
সময় তেলে মাটির দেহ
সচল করে রাখে।
ভবের মাঝে দেখতে বাতি
চারই দিকে চাই।

আট প্রহরে ছায়া রূপে
দুটি ধাপে বিধি,
অচিন বেশে দুজন কাঁধে
দিলেন প্রতিনিধি।
বাতির ঘরে আলোক ছাড়া
ধ্বনি শুধু পাই।

গীতিকবিতা :: ৬

নর ও নারীর প্রেমের-বাসরে সমতার চরাচর,
সেই শুরু থেকে যতনে দোঁহারে গড়েছেন ঈশ্বর।

এ বাঁধনে,
নিশি পেতে দেয় বুক জোছনার কাছে গেলে,
নেচে ওঠে রাঙা ফুল বাতাসের ছোঁয়া পেলে।
একে অপরের নিবিড় বাঁধনে চিরচেনা অন্তর।

এ মায়ায়,
লতা বেয়ে উঠে গাছে ভালোবাসা এঁকে দিয়ে,
জল খোঁজে পায় ধারা ঝরনাকে সাথে নিয়ে।
দুটি হৃদয়ের মিলনেই গড়ে জীবনের বন্দর।

গীতিকবিতা :: ৭

দু’চোখে তোমায় দেখে
এ বুকে তুলিতে এঁকে-
জীবন সাজনো ভুবন পেয়েছি সুখে থেকে সারাক্ষণ-
সুরভি ছড়ানো প্রেমের বাগানে ছুঁয়েছি তোমার মন।

আবির রাঙানো দুটি গাল মাঝে
গোলাপের রূপে বাঁকা ঠোট,
ক্ষণিকে আড়াল হয়ে গেলে তুমি
প্রাণের গহীনে লাগে চোট।
দু’হাত বাড়িয়ে রেখে
তোমারই আশায় থেকে-
প্রেমের আলোয় বুকের পাজরে গড়ে তুলে মায়া বন-
সুরভি ছড়ানো প্রেমের চাদরে ছুঁয়েছি তোমার মন।

রূপালি জোছনা সারা দেহ জুড়ে
কালো মেঘে ঢাকা খোলা চুল,
শয়নে-স্বপনে শুধু তুমি করে
গোছানো কাজেও করি ভুল।
তোমাতে প্রহর ঢেকে
জোছনা হৃদয়ে মেখে
মমতা জড়ানো সুখের ভেলায় করে মহা আয়োজন,
সুরভি ছড়ানো প্রেমের চাদরে ছুঁয়েছি তোমার মন।

গীতিকবিতা :: ৮

সময় নামের সোনার গাছে হলুদ পাতা মন,
তবু)সাধন প্রেমের মায়াতে সুখ খোঁজ সারাক্ষণ।

যে গাছে তোর ফুল ফোটে মন দুটি দেহের মিলে,
সে গাছই তো সাঁঝের বেলা যায় হারিয়ে নীলে।
রূপের আলোয় অরূপ রে সব সাধের বৃন্দাবন।

এক কূলে তোর দুই ভুবনে হাজার রঙের মেলা,
অষ্ট প্রহর জেনেও রে মন করিস নতুন খেলা।
যত্নে গড়া আয়না মহল নয় রে তোর আপন।

গীতিকবিতা :: ৯

লোক) বৈচিত্রের শিল্প ছড়ানো ঐতিহ্যের দেশে,
শিল্পী রঙিন আল্পনা আঁকে সুখের সীমানা ঘেঁষে,
কৃষ্টি জড়ানো সৃষ্টির মাঝে বাংলার পরিচয়,
আহা) এদেশের মতো দেশ কি কোথাও হয়।

এ-দেশি সুতির মসলিন দেখে সোনালি সূর্য হাসে,
রঙিলা বধুর হাঁড়ির ছোঁয়ায় পুকুরে শাপলা ভাসে।
মাঝিদের নাও প্রতিযোগিতায় বিশ্ব তাকিয়ে রয়।

এ-দেশি শীতল পাটি দেখে চাঁদ জোছনা ছড়ায় রাতে,
নকশিকাঁথায় রামধনু ফোটে নকশা কুশলী হাতে।
বারো মাসে তেরো পার্বণে মেলে পল্লীর বিস্ময়।

গীতিকবিতা :: ১০

অপরূপ রূপে হয়েছ জননী
সবুজে সুরভি ছড়িয়ে
ছয়টি ঋতুতে হৃদয় বেঁধেছ
মনের মমতা জড়িয়ে।

গ্রীষ্মের পরে বর্ষা সাজিয়ে
প্রকৃতির বুকে তুমি,
উষ্ণ সবুজে মেঘের ছোঁয়ায়
সুফলা করেছ ভূমি।
শরতে ঘাসের শরীর ধুয়েছ
ভোরের শিশির গড়িয়ে।

হেমন্তে মাঠে স্বর্ণ ফসলে
আল্পনা তুমি এঁকে,
সূর্য লুকানো কুয়াশা রেখেছ
শীতের চাদরে ঢেকে।
বসন্তে রাঙা ফুলের সুবাসে
দিয়েছ ভুবন ভরিয়ে।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১