এই সময়ে যারা শুদ্ধ গানের কবিতার চর্চা করেন তাদের মধ্যে মহসিন আহমেদ অন্যতম। একসময় গীতিকবিতা সাহিত্যের কাগজে প্রকাশ পেলেও এখন আর সেই ধারা দেখা যায় না। আড্ডাপত্র যারা শুদ্ধ ছন্দ-মাত্রায় কবিতা লেখেন, তাদের সেই গানের কবিতাকে কবিতা হিসেবে তুলে ধরতে চায়। আজ তুলে ধরা ডেইলিস্টার-স্যান্ডার্ড চার্টার্ড লিরিক বিজয়ী গীতিকবি মহসিন আহমেদ এর দশটি গীতিকবিতা। পড়ুন আড্ডাপত্রে।
♦ এক
কবিতা তোমাকে প্রথম দেখেছি সবুজের উদ্যানে
বৃষ্টির আহবানে
প্রথম শুনেছি রবি ঠাকুরের গানে
বৃষ্টির আহবানে।।
কোনখানে তুমি নেই
তুমিই গড়েছ সাগরের বুকে সুনিবিড় মায়াদ্বীপ
মমতার পরশেই
সেই ) মধুর মমতা সারা নিশিদিন আমাকেও কাছে টানে।।
তুমি আছ তাই আজ
স্বপ্নরঙিন দুচোখ আমার অপলক চেয়ে দেখে
জোছনার কারুকাজ
সেই ) জোছনার ভিড়ে হারিয়েই বুঝি পথ হারাবার মানে।।
♦ দুই
শরৎ এসেছে ফোটেনি তো ফুল
জাগেনি তো কাশবন
শিউলি-ভোরের সাথে তাই অাজ
হলো না অালিঙ্গন।।
তোমার পায়ের ব্যাকুল ধ্বনির সাথে
ফুটেছিল ফুল শরতের কোনো রাতে
আজ) তুমি নেই বলে পেলাম না অামি
শিশিরের চুম্বন।।
পদ্ম-পুকুরে শাপলা মেলেনি ডানা
তুমি নেই বলে মেলতে কি তার মানা?
আজ) ভরা ভাদ্রেও স্নিগ্ধ বাতাসে
ভরলো না এই মন।।
♦ তিন
যে রাতে প্রদীপ জ্বলেনি আমার ঘরে
সে রাতেও কিছু মুগ্ধতা নিয়ে
ফুটেছে হাসনাহেনা
যদিও সেদিন কথা দিয়ে আসলে না ।।
কী যে ব্যাকুলতা ঢেউ তুলেছিল
বিগলিত বাসনাতে
হাসনাহেনার সুবাস ছড়ানো রাতে
সেই রাতটুকু ছিল যে আমার
ভালোবাসা দিয়ে কেনা ।।
এমন মধুর মায়াবি রাত্রি
অনাদরে কেটে গেল
মুগ্ধ পাপড়ি ঝরে গেছে এলোমেলো
কী যে হাহাকার বুকে ছিল তার
একবারও দেখলে না ।।
♦ চার
নির্ঘুম কোনো চাঁদ জ্বলা রাতে
হৃদয়ের প্রয়োজনে
এসো মল্লিকা বনে ।।
চাইলে এখানে কোমল জোছনা
অঙ্গে জড়িয়ে আরও
অপলক চোখে নিতে পারো ;
জোছনার সাথে পাপড়ির অভিসারও
রাতটাকে তুমি বেঁধে নিতে পারো
সুনিবিড় বন্ধনে ।।
তোমার ঠোঁটের কোমল আদর
হয়ত বা নেবে সেও
মধুর পরশে রূপালি জোছনা ;
উঁকি দিতে পারে হৃদয়ের উঠোনেও
তখন হয়ত মুখরিত হবে
সুরভিত চন্দনে ।।
♦ পাঁচ
তুমি আসবে কি ?
নীলিমার নীল ছুঁতে-
জোছনা গলানো মধুচন্দ্রিমা রাতে
হৃদয়ের আঙিনাতে ।।
প্রজাপতি হয়ে গোলাপের বুকে আসোনা তুমি
বর্ণালি রাতে হাত রেখে হাতে
প্রেমের ডিঙায় ভাসোনা তুমি
এসোনা দুজন মিশে যাই আজ
তারার আলোর সাথে ।।
পায়ের পরশে ঘাসের শিশির ঝরে না যেন
গোলাপের ঘ্রাণ নিতে এসে আজ
মাতাল ভ্রমর সরে না যেন
এসোনা দুজন ডুবে যাই আজ
জোছনার পেয়ালাতে ।।
♦ ছয়
যখন ) তোমার হাতের মমতা জড়ানো
গোলাপের ঘ্রাণ আসে
তখন ) নির্ঘুম চাঁদ গলে গলে নামে
আমার পথের পাশে
শিশির জড়ানো সবুজ দুর্বাঘাসে ।।
বর্ণালি এই রাত –
চাঁদের তুলিতে জোছনা মাখিয়ে
সাজালো তোমার মায়াবি কোমল হাত
সেই হাতে বোনা নকশিকাঁথায় প্রণয়ের ছায়া ভাসে ।।
স্বপ্নিল এই মন –
তোমার জন্য রাতের গভীরে
করেছে মধুর গল্পের আয়োজন
সেই মধুক্ষণ জড়িয়ে নিয়েছি বিশ্বাসে নিশ্বাসে ।।
♦ সাত
রাত ওগো রাত…
বাড়িয়ে দাওনা শিশির জড়ানো
তোমার কোমল হাত,
মুছে দাও সব নিয়মের কারুকাজ
ভেঙে দাও তুমি লজ্জাবতীর লাজ।।
নির্ঘুম রাত কাটে না আমার..
দেখে) মল্লিকা বনে জোছনার সাথে
পাপড়ির অভিসার
তৃষাতুর ঠোঁটে যে গোলাপ ফোটে
এসোনা দু’জন ভেঙে দেই তার ভাঁজ।।
কামনার পাখি ছুঁয়েছে আকাশ..
তবু) শুনলে না তুমি মায়াবী রাত্রি
আমার দীর্ঘশ্বাস
সময়ের কাঁটা থমকে রয়েছে
সোনালি বকুল কুড়ানো হলো না আজ।।
♦ আট
পাথরের বুকে ফুটিয়েছ যেই ফুল…
সেই ফুলটাকে ঝরতে দিয়ো না তুমি
তাকে)এমন অকালে মরতে দিয়ো না তুমি।।
ভাঙনের পরে জেগে উঠে জানি
দুঃখবিলাসী কূল
সেতো) না বুঝে তোমার ভেঙেছে হৃদয়
না বুঝে করেছে ভুল
ভালোবাসা দিয়ে গড়ে নাও তাকে
কখনোই ভুল করতে দিয়ো না তুমি।।
তোমার জন্য দুটি চোখে যার
নিবিড় শ্রাবণধারা
তাকে) ভুল বুঝে আর কষ্ট দিয়ো না
কোরো না বাঁধনহারা
হৃদয়ের কাছে নাও টেনে নাও
কোনদিন আর সরতে দিয়ো না তুমি।।
♦ নয়
যেখানে নদীর দু’ধারে হাজার
পাখিদের মেলা বসে
সেখানেই থাকি এই আমি
স্মৃতির পাতায় যতো বার খুঁজি
অন্য কোথাও নেই আমি।।
পাখিদের গানে পাতার কাঁপনে
খুঁজে পাই যতো সুখ
ভোরের আলোয় স্বপ্ন কুড়াতে
হয়ে থাকি উন্মুখ
ফসলের বুকে যে সুবাস পাও
বুঝে নিও তুমি সেই আমি।।
সেখানেই আমি বসতি গড়েছি
হাজার বছর ধরে
খেলা করে মন সারা নিশিদিন
শ্যামলিমা প্রান্তরে
এখনো রয়েছি আগের মতন
তখনো ছিলাম যেই আমি।।
♦ দশ
শ্রাবণের চোখে খাঁ খাঁ রোদ্দুর আগুন চাই নি আমি
প্রশ্ন আমার একটাই শুধু
শ্রাবণেও কেন মরুঝড় ধু-ধু
কাদম্বরীর খোঁপায় কেয়ার গন্ধ পাই নি আমি।।
ধীরেধীরে সব মুখর সময় এভাবে হারিয়ে যাবে
বর্ষাবিলাসী চাতকিনীটাও সীমানা ছাড়িয়ে যাবে
এমন তো কোনো বিষাদের গান এখনো গাই নি আমি।।
বৃষ্টির যত জমানো আবেগ নিরবে ঝরাতে এসে
সেই জলটুকু দু’চোখে আমার গোপনে গড়াতে এসে
এমন স্রোতেই ভাসালো যেখানে কখনো যাই নি আমি।।