[মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ফুরসুন্দি লক্ষীপুর গ্রামে। তিনি মরহুম শাহাদত আলী ও মরহুমা সাজেদা খাতুন এর দ্বিতীয় পুত্র। পৈতৃক নিবাস খড়কী, যশোর।
তিনি লেখাপড়া শুরু করেন যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৬০ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে যশোর সরকারী মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে আই.এ। ১৯৬৫ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন।
স্কুলে পড়া অবস্থাতেই ছড়া, কবিতা, গল্প এবং গান রচনা শুরু করেন। পিতা ছিলেন শিক্ষানুরাগী আর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান একাধারে কবি, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানÑ তাঁদের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন লেখালেখির অনুপ্রেরণা। মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান রচিত কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্যের প্রায় প্রতিটি সিনেমাই বাণিজ্যিকভাবে সফল। তার মধ্যে ‘ঘরসংসার’, ‘বৌরাণী’, ‘সানাই’, ‘বদনাম’, ‘সৎভাই’, ‘ঈমান’, ‘ছুটিরঘণ্টা’, ‘নিশানা’, ‘অবদান’, ‘তওবা’, ‘জোকার’, ‘সহযাত্রী’, ‘প্রতিঘাত’, ‘বন্ধন’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘মর্যাদা’, ‘আদেশ’, ‘আতœবিশ্বাস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের সাহিত্যনির্ভর যত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তার অনেকগুলেতোই তিনি গান রচনা করে সুনাম কুড়িয়েছেন। এরমধ্যে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শুভদা ও বিরাজ বৌ উল্লেখযোগ্য। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শাস্তি’। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বিষবৃক্ষ’ ও ‘সৎভাই’ উল্লেখযোগ্য।
বিচিত্র বিভাসে উদ্ভাসিত তার সাহিত্য চর্চা। কবিতা, গীতিকবিতা, চলচ্চিত্র কাহিনি, নাটক, সংলাপ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পনেরোর অধিক। তিনি গীতিকবি হিসেবে সর্বব্যাপী পরিচিত হলেও কবিতা চর্চা করে চলেছেন কৈশোর থেকেই। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, কোথায় লুকোব মুখ (১৯৮১), চন্দ্রবীক্ষণ ও নগ্নপদ্য (……. ), কবিতার ভাসান আমার (২০১৪), বাংলাশায়েরী (২০১৬)। অনুবাদ কাব্য, গালিবের শের-শায়েরী (……. )।
মরমী গীতিকাব্যÑ ‘ঘোর’ (——-), প্রেম-সুখ-অসুখের পদাবলী (—–), দেহ খেয়ায় দেবো পাড়ি (২০১১)। নির্বাচিত গানের সংকলন হৃদয়ের ধ্বনিগুলি প্রকাশ পায় ২০১৭ সালে। তাঁর বহুল পঠিত প্রবন্ধগ্রন্থ, বাংলা গান বিবিধ প্রসঙ্গ (২০১১) ও বাংলা গান রচনা কৌশল ও শুদ্ধতা (২০১২) পাঠকের মনে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে।
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এর রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেট ও ফিল্ম এ প্রচারিত গানের সংখ্যা দুই সহস্রাধিক এর বেশি।
রেডিও ও টেলিভিশনে তাঁর লেখা প্রচারিত নাটকের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। একজন গুণী অভিনেতা হিসেবেও তিনি সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শতাধিক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। নাট্য নির্দেশনায়ও রয়েছে তাঁর পারঙ্গমতা। অর্ধ শতাধিক রেডিও, প্রায় একশো মঞ্চনাটকে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। রেডিও ও টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন নিয়মিত।
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান দেশের প্রথমসারির অনেক টেলিভিশন চ্যানেলের সূচনা সংগীত রচনা করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- একুশে টেলিভিশন, এটিএন বাংলা, এনটিভি, বাংলাভিশন। এছাড়াও তিনি চ্যানেল এস, যুক্তরাজ্য ও সাফ গেমস-এ সূচনা সংগীত রচনা করেন।
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে দেবদাস, চন্দ্রনাথ ও শুভদা ছবিতে গান রচনা করে তিনবার শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে‘জাতীয় পুরষ্কার’ এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিক কতৃক প্রবর্তিত ‘বাচসাস’ পুরস্কারলাভ করেন। উল্লেখ্য ১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’ ছবিতে তৃতীয় বারের মতো জাতীয় পুরস্কারের জন্যে তাঁকে নির্বাচিত করা হলে তিনি কাগজে বিবৃতি দিয়ে জানান যে আর কখনোই এ পুরষ্কার গ্রহণ করবেন না। পুরস্কার কতৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তরুণ গীতিকারদের পুরষ্কার দিয়ে উৎসাহিত করতে। এরপরে আর কখনো তিনি ‘শ্রেষ্ঠ গীতিকার’ হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার গ্রহণ করেননি। এছাড়াও দেশ বিদেশে শতাধিক পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য চাঁদের হাট পুরষ্কার, বেতার পুরষ্কার, মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার, চ্যানেল আই পুরষ্কার, ডেইলি স্টার-স্টান্ডার্ড চার্টার্ড প্রদত্ত আজীবন সম্মাননা (লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড ২০১০), সুরবিতান সম্মাননা (যশোর ১৯৯৫), কিংশুক সংগীত সম্মাননা (যশোর ১৯৯৬), সারগাম সম্মাননা পদক (ঢাকা ২০০৩), বিনোদন বিচিত্রা প্রদত্ত সম্মাননা (ঢাকা ২০০৩), গীতিকাব্য চর্চা কেন্দ্র প্রদত্ত সম্মাননা (ঢাকা ২০০৪), নিবেদন বিশেষ সম্মাননা (ঢাকা ২০০৭), শ্রীপুর সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা (২০১৬)।
সংগঠক হিসাবেও মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এর খ্যাতি দেশ জুড়ে। যশোরে মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাহিত্য মজলিশ’ যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তাঁর সাহিত্যগুরু কবি ও অধ্যাপক আজীজুল হক। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ‘বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদ’ ও প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, ‘বাংলাদেশ সংগীত পরিষদ’। বাংলাদেশ আবৃত্তিকার সংঘের সদস্য মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান গান রচনার কলাকৌশল, আবৃত্তি, উচ্চারণবিষয়ক প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন সাহিত্য একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
শুদ্ধ গানের কবিতা রচনা ও চর্চার প্লাটমর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলা গান রচনা কৌশল ও শুদ্ধতা’। ফেসবুককেন্দ্রিক এই গ্রুপের প্রধান এডমিনের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। নিরলসভাবে শিখিয়ে চলেছেন শুদ্ধগানের কবিতা রচনার কলা-কৌশল। যার ফলে সারা দেশের তরুণ গীতিকবিগণ নিজেদের সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
১৯৬৬ সালের ১২ জুন তিনি জিন্নাত আরা জামান এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কবি। দুই কন্যা সন্তানের জনক তিনি। বড় মেয়ে সানজিদা শারমিন জামান (স্নিগ্ধা), দর্শনশাস্ত্রে এম.এ. ছোট মেয়ে সুহানা শারমিন জামান (পৃথা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম.এ. পাশ করেছেন। বর্তমানে লন্ডনের বাসিন্দা ও সেখানে শিক্ষকতা করছেন। মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান অনেক বছর যাবৎ ঢাকার হাতিরপুল ফ্রী স্কুল স্ট্রীটে পরিবারসহ বসবাস করলেও বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে স্থায়ী হয়েছেন আড্ডাপত্রের সাথে আড্ডালাপে জানবো তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের কথা, সৃষ্টির কথা।]
আড্ডাপত্র : আপনার লেখালেখির শুরুটা কিভাবে হলো?
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান : লেখালিখির শুরুটা কবে হয়েছে বলা কঠিন। সম্ভবত তৃতীয়/ চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই। ক্লাসের খাতাতেই অন্ত্যমিল করে করেই ছোট ছোট পদ্য লিখতাম। একদিন একক্লাস শেষ হলে, স্যার চলে যেতেই সবাই খুব হই-চই করছিলো। আমি খাতায় লিখলাম, স্যার আসছে রে চুপ / পিঠে পড়বে ঢুপ। এর মধ্যেই পরের ক্লাসের টিচার এলেন। সবাই শান্ত হয়ে বসে গেলো। হঠাৎ আমার পাশের ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়ে স্যারকে বল্লো, ‘স্যার, ও আপনাকে নিয়ে পদ্য লিখেছে’। আমি তখন খাতা লুকাতে ব্যস্ত, কিন্তু স্যার এগিয়ে এসে বললেন, দেখা তো কী লিখেছিস। অনন্যপায় হয়ে, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে খাতাটা দিলাম। স্যার পড়ে, হেসে উঠে বললেন, ‘কীরে, তুই তো কবি হয়ে গেছিস’। এই বিশেষ ঘটনাটা এই জন্যেই মনে আছে যে, এরপর থেকে স্যার ক্লাসে আসলেই এই বলে খুঁজতেন, কইরে কবি কই? স্যারের কারণেই অন্য ছেলেরাও আমাকে ‘কবি’ বলতে শুরু করে। ক্রমে সারা স্কুলেই কথাটা ছড়িয়ে পড়ে। সবার মধ্যে অনেকেই হয়তো ব্যঙ্গ করে ডাকতো। কিন্তু ওই নামের আড়ালেই আমার নিজের নাম প্রায় আড়াল হয়ে যায়। এ নিয়ে দু’একজনকে স্যারের কাছে মারও খেতে হয়েছে। পড়া না পারলেই মারতে মারতে বলতেন, পড়া শোনার নাম নেই, পদ্য লিখে ব্যড়ায়Ñ ইত্যাদি।
আ.প : গান লেখার অনুপ্রেরণা কেমন করে পেলেন?
রফিকউজ্জামান : গানের কবিতা লেখা শুরু হয়েছে ক্লাস এইটে পড়ার সময়, ক্লাসের গায়ক বন্ধুদের চাপে। তাদের সুরকার হবার বাসনাতেই। তারা আমাকে গান লেখার জন্যে চেপে ধরে। এর মধ্যে স্কুল বার্ষিকীতে এবং পত্রিকায় ছোটদের পাতায় আমার কিছু পদ্য ছাপা হওয়ায়, ওদের ধারণা হয় যে, আমি চেষ্টা করলেই পারবো। ওরা সব বিখ্যাত গান গেয়ে গেয়ে, আমাকে বোঝাতে থাকে যে, এইটা হলো মুখড়া, এইটা অন্তরা ইত্যাদি। আমি প্রথম সেই সব গানের সঙ্গে মাত্রা মিলিয়ে মিলিয়ে নিজের মতো, যা মনে আসতো তাই লিখে দিতাম। কোথায় কোথায়, কিভাবে অন্ত্যমিল করতে হবে সেটাও বুঝে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য আর প্যারডি না বানিয়ে, নিজের মতোই লিখতাম। ওরা সুর করে স্কুলের অনুষ্ঠানে গাইতো। সেটা অবশ্য ক্লাস নাইন-টেন’র দিকে।
আ.প : একটি ভালো গানের কবিতার জন্য কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
রফিকউজ্জামান : গানের কবিতাটাকে অতিঅবশ্যই কবিতা হয়ে উঠতে হবে। যেমন রসেরই হোক, বা অন্য কোনো ধারার। গানের কবিতা তো কথামাত্র নয়, বিবরণও নয়। যেমন ধরুন, আমার ৭০ দশকের শুরুর দিকের একটি দেশের গানের কবিতাÑ
ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেলেও তবু
রয়ে যায়) গন্ধ যেমন চন্দনে
শত দুখেও সুখের ছোঁয়া
বুকে লাগে মায়ের স্নেহের বন্ধনে
তেমনি আমার এ দেশ বাংলাদেশ।
(সুর: খন্দকার নুরুল আলম, শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন)
একাত্তর পরবর্তী ভাঙা-চোরা পোড়া মাটির এই দেশের কথা বলতে গিয়েই, এই ভাবে শুরু করা হয়েছে। এই লেখার পরবর্তী অংশে চিরন্তন বাংলাদেশের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে রূপের বর্ণনা আছে তাও শুধু চিত্র নয়, চিত্রকল্পময়। মূল কথা হলো, কবিতা হয়ে উঠতেই হবে আগে।
আ.প : আগে অধিকক্ষেত্রে কবিরাই গীতিকবিতা লিখতেন। কিন্তু এখন কবিদের মধ্যে গানের কবিতা লেখায় অনীহা কাজ করে। এর কারণ কী হতে পারে?
রফিকউজ্জামান : কবিরাই গীতিকবিতা না লেখার বর্তমান সময়ের প্রধান কারণ একটিই, তা হলো, অত প্রতিভাবান কবির সংখ্যা এখন খুবই কম। তাছাড়া ছন্দে অন্ধ কারো পক্ষেই, গানের কবিতা তো দূরের কথা, কবিতা লেখাই উচিত নয়। তিরিশ-চল্লিশের কবিরা কিন্তু ছন্দে অন্ধ ছিলেন না। কিন্তু তাদের ইচ্ছে ছিলো, বলা যায় তাড়না ছিলো, ইউরোপীয় আদর্শে গদ্যাক্রান্ত হবার। গোটা বাংলায়, তখন কবিদের উদ্দেশ্য ছিলো, রবীন্দ্রবলয় থেকে বের হয়ে ভিন্ন ধারা সৃষ্টির। তাই তাঁরা, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মতো, কবিতার পাশাপাশি, গানের কবিতা লিখতে উৎসাহী ছিলেন না। একই সঙ্গে, রবীন্দ্র আমলের বড় কবিরা একই সঙ্গে, যেমন কবি ছিলেন, তেমনই সঙ্গীতজ্ঞও ছিলেন। যে প্রতিভা পরবর্তীতে কারো মধ্যে ছিলো না। এর মধ্যেই গানের ক্ষেত্রে শ্রেণীবিভাজন এসে যায়। লেখা, সুরসৃষ্টি করা এবং গাওয়া, তিন প্রতিভার হাতে চলে যায়। ফলে কবিদের মনে এই সংশয়ও ঢুকে পড়ে যে তিনি যা লিখবেন, সুরসৃষ্টিকারী তা উপলব্ধি করতে পারবেন কি-না? যদিও প্রেমেন্দ্র মিত্রের হাতে আমরা কিছু গানের কবিতা পেয়েছি, যা সুর¯্রষ্টাগণ ঠিকভাবেই উপলব্ধি করেছেন এবং চমৎকার গানের জন্ম হয়েছে। তবে এখন যারা কবিতাই লেখেন বলে দাবি করেন, তাদের অধিকাংশেরই ছন্দজ্ঞান নেই। মহা নামী এমন কবিও আছেন, যাদের শতকরা নব্বই ভাগ লেখাই কবিতা হয়ে ওঠে বলে মনে হয় না আমার কাছে। তাদের পক্ষে তো, গানের প্রকরণ মেনে কিছু লেখা সম্ভবই নয়। অথচ বড় ও প্রকৃত কবিদের হাতে, এই বাংলাদেশে, আমরা এখন বেশ কিছু প্রকরণসিদ্ধ গানের কবিতা পেয়ে ধন্য হচ্ছি। সেই সব লেখায়, পরাবাস্তবতাÑ উপমাÑ রূপকÑ চিত্রকল্প সবই থাকছে।
আ.প : আগে চলচ্চিত্রের গানও বাণী প্রধান ছিলো। এখন বিনোদন প্রধান বলা যায়, বাণী নেই বললেই চলে। এর কারণ কী হতে পারে বলে মনে করেন?
রফিকউজ্জামান : চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রটা একেবারেই আলাদা। সেখানে নির্দিষ্ট চরিত্রের ব্যক্তিত্ব, নির্দিষ্ট পরিবেশ, নির্দিষ্ট মানসিকতা দেয়া থাকে। সেই চরিত্রের যোগ্যতা মেনেই তার পক্ষে যা বলা সম্ভব, তেমন ভাষাভঙ্গী ব্যবহার করতে হয় চলচ্চিত্রের গানে। তবে আগে বেশকিছু নির্মাতা এমন ছিলেন, যারা জনরুচির কাছে আত্মসমর্পণ না করে, বরং জনরুচিকে উন্নত করার দায়ও গ্রহণ করতেন। একেবারে সস্তা বিনোদন দেবার অতি-বেণিয়াসুলভ মনোভাব তাদের ছিলো না। তা ছাড়া, ভালো সৃষ্টির জন্যে সময় দেবার প্রয়োজনও তারা বুঝতেন। তখন পরিচালকসহ গানের কবি ও সুর¯্রষ্টা একত্রে বসতেন। একেকটা গানের জন্ম হতো অনেক ভাবনা-চিন্তা শেষে। ধরুন, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়Ñ’ গানটি। এটি একজন খবরের কাগজের ফেরিওয়ালার ঠোঁটে চিত্রায়িত হয়েছে। অথচ, এক পলকের জন্যেও তা বেমানান মনে হয়নি। এখন সবাই না-কি ব্যস্ত। কোনো একটি বিশেষ গানের কথা উল্লেখ করে, পরিচালক, প্রযোজক বা সংগীতপরিচালক, টেলিফোনেই বলে দিচ্ছেন, ‘এমন একটি গান লিখে দেন’। চরিত্র কে? চরিত্র কী করে? কোন অবস্থায় বা পরিবেশে সে গাইছে, এসব কিছু জানার প্রয়োজন নেই। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। সেই বিশেষ গানের ভাব নিয়ে, কথা একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমার, ‘একজনমে ভালোবেসে ভরবে না তো মন / হাজার হাজার বছর কেন হয় না এ জীবন’, এই পঙক্তি ব্যবহার করা বা ভেঙ্গে একটু বদলে দেয়া কতো গান যে শুনেছিÑ বলে শেষ করা যাবে না। যার ফলে, গানে আর কোনো কবিতা থাকছে না। ক্রমেই নিম্নগামী হতে হতে, এটা এখন এতোই সস্তা হয়ে গেছে যে, বহু ক্ষেত্রে কোনো গীতিকবিই লাগছে না। প্রযোজকের স্ত্রী, শ্যালক-শ্যালিকা বা তিনি নিজেই কিছু একটা লিখে ফেলছেন। সহজ হওয়া আর সস্তা হওয়া যে এক নয়, সেটা বোঝাবেই বা কে? বুঝবেই বা কে?
আ.প : আপনি অনেক চিত্রনাট্য লিখেছেন। এখন চলচ্চিত্রে ভালো গল্প দেখা যায় না। এর কারণ কী?
রফিকউজ্জামান : চিত্র নির্মাণ হলেই না চিত্রনাট্যের প্রয়োজন হবে। এখন তো চলচ্চিত্রের নামে কিছু বড় নাটক তৈরি হচ্ছে। কিছু আবার হচ্ছে, হুবহু নকল কোনো বিদেশি চলচ্চিত্রের বাংলাকরণ। চিত্রনাট্য তো সেখানেই আছে। সেটা বুঝে বা না বুঝে অনুকরণ চলছে। সেখানে আমি, কী কাজে লাগবো?
আ.প : কলকাতার আর্টফিল্মের ধাচে আমাদের দেশেও কিছু সিনেমা তৈরি হচ্ছে। সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরতে গিয়ে প্রকারান্তরে অশ্লীলতা ও মাদককে তুলে ধরা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
রফিকউজ্জামান : আর্ট বা শিল্প কী, সেটা তো আগে বুঝতে হবে। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ন্যুড, আর পর্ণগ্রাফির একটি ফ্রেমে দেখা যাওয়া নারী কি এক? যৌনতা যদি শারীরিক মিলন ছাড়া আর কিছুই না বোঝায়; তা হলে তা শিল্প হবে কী করে?
অনেকেই বলেন, বাস্তবকে তুলে ধরছি। কিন্তু কেনো? কী তার উদ্দেশ্য? বাস্তবে তো আপনি মলত্যাগও করেন। সেটা কেনো দেখান না? শিল্প ঘৃণার্হ বা অশ্লীল হয় না। যা দেখা যায় চলচিত্রে, তাকে অতিক্রম করে, যদি দর্শকের মননে, ভিন্নমাত্রার কোনো আলোড়ন তোলা না যায়; তাহলে দর্শক তো যৌনদৃশ্যেই আটকে থাকবে। পর্ণগ্রাফিতে যেমন থাকে। আর, মাদকের প্রসঙ্গ তো সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। প্যাকেটের গায়ে, ‘ধূমপান মৃত্যুর কারণ’ লিখেও যেমন ধূমপান বন্ধ হয় না, তেমনই মাদকের ব্যবহারের কুফল কি তা বোঝানোর আগেই মাদকসেবী যে কেমন স্ফূর্তি অনুভব করছে, সেটার দিকেই তরুণ সমাজের দৃষ্টি বেশি আকর্ষিত হয়। অবক্ষয়প্রাপ্ত সমাজে ফলাফলের চেয়ে, তাৎক্ষণিকতার আকর্ষণই বেশি। এটা না বুঝলে, যৌনতা ও মাদকের প্রচারই সার হবে।
আ.প : আপনি খুব চমৎকার ছবি আঁকেন। আঁকাআঁকিটা কি চালু আছে; না ছেড়ে দিয়েছেন?
রফিকউজ্জামান : ছবি আঁকা। হ্যাঁ একসময় প্রায় নিয়মিত আঁকতাম। এখনো ঝোঁক উঠলে মাঝে মাঝে আঁকি। তবে এটা একটা ব্যয়বহুল কাজ। রঙ, মিডিয়াম, ক্যানভাস তুলি ও অন্যান্য সামগ্রীর দাম প্রচুর। আমার সামর্থ অতি সীমিত। তাই অনেক সময়ই ইচ্ছে থাকলেও হয়ে ওঠে না। তাছাড়া, সমসাময়িক চিত্রকলা সম্পর্কে ধারণাও এখন সীমিত হয়ে গেছে। নিয়মিত দেখা বা পড়াশোনা করা হয়ে ওঠে না। তবুও মাঝে মাঝে যা মন চায়, আঁকি।
আ.প : আপনি একজন কবি, গীতিকার, চিত্রনাট্যকারÑ সব পরিচয় ছাপিয়ে কোন পরিচয়টি দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন?
রফিকউজ্জামান : আসলে, আমি মনে করি, আমি যা কিছু করেছি, আমার ভিতরের কবিই তা আমাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছে। ষাটের দশকে, যশোরে, প্রচুর নাটক লিখেছি, পরিচালনা করেছি এবং অভিনয় করেছি। আজকের রবীন্দ্র অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন, এহসান চৌধুরী ও আমি নিয়মিত নাটক লিখতাম। প্রতি রবিবার (ছুটির দিন) সকালে আমরা নতুন নাটক লিখে রিহার্সাল করে, দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চস্থ করতাম, বি. সরকার রঙ্গমঞ্চে। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সালের শেষ পর্যন্ত এটা চলমান ছিলো। তারপর সবাই যশোর ছেড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। শেষবার মঞ্চে উঠেছিলাম, সম্ভবত, ৮০’র দশকে ঢাকায়, ‘কথক’ নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনায়, প্রাগৈতিহাসিক নাটকে। তাও মাত্র একটি মঞ্চায়নে। যাই হোক, যা কিছুই করেছি, ওই ভিতরের কবির তাগিদেই। এখন প্রধানত, গানের কবিতাই লিখি। এটাই এখন আমার পরিচয় হয়ে গেছে।
আ.প : লেখালেখি নিয়ে এখন কী ভাবছেন?
রফিকউজ্জামান : জীবনে কখনো খুব ভেবে-চিন্তে কিছু করিনি। যখন যেটা করতে ইচ্ছে করেছেÑ সেটাই করেছি। ছোটবেলা থেকেই পদ্য লিখতাম। তবে আমাদের বাড়ি শহরে হলেও, গ্রামের প্রতি ছিলো আমার তীব্র আকর্ষণ। গ্রামের প্রতি এই আকর্ষণের মূল কারণ ছিলো, ঝিনাইদহ মাগুরা অঞ্চলের গঞ্জ-গ্রামের জারি-সারি-পালা গানের আসর। কবিয়ালদের লড়াই, ভাবগান, গ্রাম্য মেলা, যাত্রার আসর ইত্যাদি। রূপবান, মালেকা বানু, গাজী-কালু-চম্পাবতীর পালা ইত্যাদি কতো কী যে সারারাত জেগে দেখেছি। হালিম বয়াতি, মোসলেম বয়াতি, দারোগ আলীর জারি, বিশেষ করে বিজয় সরকারের গান আসরে বসে শোনার অভিজ্ঞতাই আলাদা। এ ছাড়া ওই অঞ্চলের চাষিদের মধ্যে প্রচলিত এক ধরণের গান, যাকে ওই অঞ্চলে বলা হতো, বারাসিয়া, যা আমি অন্য কোথাও শুনিনি, শব্দটা অভিধানেও পাইনি, অথচ যা শুনলে বুকটা হুহু করে উঠতো। ধু ধু দুপুরে ধানে নিড়ানি দিতে দিতে কেউ একজন টানা টানা উচ্চস^রে গেয়ে উঠতো। দেখা যেতো দূরের বা কাছের কোনো এক মাঠ থেকে আর একজন সুর ধরে গেয়ে উঠতো। এই ভাবে দেখা যেতো বিভিন্ন মাঠ থেকে সুর মিলাচ্ছে আরো কয়েকজন। এসব গানের ভাব ছিলো মূলত নারীর একাকীত্বের বেদনা কেন্দ্রিক। পরবর্তীতে এসব বুকের গহিনে কোথাও ঢাকা পড়ে যায়। মাঝখানে, আমার উপর ভর করেন এস এম সুলতান। বহুদিন আমি তাঁর তল্পিবাহক ছিলাম। ছবি আকার নেশাটা সেখান থেকেই। তিনি একসময় আমাদের শেখাতে শুরু করেন। আমি হাতে কলমে শিখেছি খুবই কম। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম আর বুকে ধরে রাখতাম। পরে নিজে নিজে আঁকতাম। ১০/১২টা আঁকা হলে সুলতান ভাইকে দেখাতাম। খুব উৎসাহ দিতেন তিনি। আসলে আমার জীবনের ঘটনাক্রম সাজিয়ে লেখা সম্ভব নয়। কখনো ভেবেছি, ছবি আঁকাই আমার কাজ, কখনো মনে হয়েছে, নাটক লেখা ও নাটক করাই আমার কাজ। কিন্তু কবিতা কখনো ছেড়ে যায়নি আমাকে। আর গানের কবিতা তো পেয়েই বসেছে। একসময় আমি যাত্রাও করে বেড়িয়েছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে। তখনও, যাত্রার বহু ভুল সংলাপ সংশোধন করে দিতো আমার ভিতরের কবি। তাই, ভবিষ্যতে, যদি বেঁচে থাকি, তবে কী যে করবোÑ তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে নতুন লিখিয়েদের লেখা নিয়ে যে একমাত্র কাজটা আমি পরিকল্পনা করে শুরু করেছি, সেটা শেষ নিঃশ্বাস অবধি চালিয়ে যেতে চাই।
আ.প : তরুণ গীতিকারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
রফিকউজ্জামান : ‘গীতিকার’ শব্দটি আমি বলি না। ওই শব্দটা থেকেই অনেকের ধারণা এসে গেছে যে, কবিতার দায় তার কাঁধে নেই। আবেগমথিত যা ইচ্ছা লিখে দিলাম, সুর যিনি সৃষ্টি করবেন, তিনি টেনে টুনে মিলিয়ে নিতে পারলেই হলো। তরুণ লিখিয়েদের জন্যে একটা কথাই বলে আসছি দীর্ঘদিন ধরে, তা হলোÑ গানের কবিতাকে শেষ পর্যন্ত কবিতা হয়ে উঠতেই হবে।
আ.প : আড্ডাপত্র সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
রফিকউজ্জামান : আড্ডাপত্র একটি চমৎকার আয়োজন। যেখানে শিশুতোষ ছড়া থেকে শুরু করে, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, প্রবন্ধ এমন কি গানের কবিতাও স্থান পায়। গানের কবিতা আর কোথাও ছাপা হতে দেখি না। আড্ডাপত্র সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। যে কোনো সংখ্যা পড়লে মনে হয়, এ যেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মানুষদের একত্রে বসে, আড্ডা দেবারই ফসল। অথচ প্রায় সব লেখাই সাহিত্যের মানদÐে উত্তীর্ণ। এটা যে ফলদায়ীÑ তাতে দ্বিমত পোষণের কোনো অবকাশই নেই। এর আয়ু অনন্ত হোক।
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এর লেখা বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্রের গান :
চলচ্চিত্রের গান :
আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরীÑ সুর : সত্য সাহা, শিল্পী : আবিদা সুলতানা (ছুটির ঘণ্টা)
একদিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবোÑ সুর : সত্য সাহা, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন (ছুটির ঘণ্টা)
ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়Ñ সুর : আলাউদ্দিন আলী, শিল্পী : কুমার শানু ও মিতালী মুখার্জী (চরম আঘাত)
এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধুÑ সুর : আলাউদ্দীন আলী, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন (আত্মত্যাগ)
আমার ভাগ্য বড় আজব যাদুগরÑ সুর : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শিল্পী : এন্ড্রুকিশোর (সৎভাই)
আমার মতোন এত সুখীÑ সুর : আলাউদ্দীন আলী, শিল্পী : খালিদ হাসান মিলু (বাবা কেন চাকর)
আজ বড় সুখে দুটি চোখে জল এসে যায়Ñ সুর : আলাউদ্দীন আলী, শিল্পী : খালিদ হাসান মিলু ও মিতালী মুখার্জী (বেইমানী)
গানে গানে চেনা হলো Ñ সুর : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শিল্পী : সামিনা চৌধুরী (না-বলো না)
পৃথিবীর যত সুখÑ সুর : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন (সহযাত্রী)
তুমি এমনি জাল পেতেছো সংসারেÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সুবীর নন্দী (শুভদা)
বুঝি কান্নায় লেখা ছিলো ভাগ্যে আমারÑ শিল্পী : খোন্দকার নূরুল আলম, নীলুফার ইয়াসমিন (শুভদা)
প্রেম মূরতি ঘন শ্যামÑ সুর : শিল্পী : খোন্দকার নূরুল আলম, সাবিনা ইয়াসমিন (চন্দ্রনাথ)
জনম জনম ধরে প্রেম পিয়াসী- সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন (দেবদাস)
এই রাত ডাকে ঐ চাঁদ ডাকেÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : শাম্মি আখতার ও সুবীর নন্দী (কাজল লতা)
কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল- সুর : আলাউদ্দিন আলী, শিল্পী : কনকচাঁপা ও এন্ড্রুকিশোর (স্বপ্নের বাসর)
পাবার সময় হতে না হতেইÑ সুর : আলাউদ্দিন আলী, শিল্পী : কুমার শানু (বাঁচার লড়াই)
কী জাদু করেছো বলো নাÑ সুর : আলি আকরাম শুভ, শিল্পী : এন্ড্রুকিশোর ও কনকচাঁপা (আমার প্রাণের প্রিয়া)
আধুনিক গান :
যে সাগর দেখে তৃপ্ত দু’চোখÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : খুরশিদ আলম
দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্কÑ সুর : সত্য সাহা, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
তুমি এসেছ বহুদিন পর আমি কাঁদলাম, সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
আমি জলের কাছে প্রশ্ন করিÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : রুনা লায়লা
আমাকে দেখার সেই চোঁখ তোমার কইগোÑ সুর : আলম খান, শিল্পী : রুনা লায়লা
বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলামÑ সুর : সত্য সাহা, শিল্পী : সুবীর নন্দী
পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝরনা বলোÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সুবীর নন্দী
আকাশের সব তাঁরা ঝরে যাবেÑ সুর : আলাউদ্দিন আলী, শিল্পী : মিতালী মুখার্জী
দিনে কি রাতে সাঁঝ প্রভাতেÑ সুর : আলাউদ্দিন আলী, শিল্পী : মিতালী মুখার্জী ও তপন চৌধুরী
জ্বলতে জ্বলতে ঝরে যায় তারাÑ সুর : অনুপ ভট্টাচার্য, শিল্পী : অনুপ ভট্টাচার্য্য
আকাশটা তো নীল চিঠি নয়Ñ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : মিতালী মুখার্জী
আমার জানালা আকাশ ছাড়াÑ সুর : শিল্পী : অনুপ ভট্টাচার্য্য
তোমার হাত পাখার বাতাসেÑ সুর : রাজেশ, শিল্পী : আকবর
দরদীয়া তুই যে আমারÑ সুর : আলী আকবর রূপু, শিল্পী : কুমার বিশ্বজিৎ
আমি যেন একরাত্রি যার সূর্য দেখার ইচ্ছেÑ সুর : সমর দাস, শিল্পী : নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী
আমার দু’চোখ যেই চমকে ছিলোÑ সুর : আলাউদ্দিন আলী, শিল্পী : অলকা ইয়াগনিক
আমি তোমার কাছে সবচেয়ে স্বাধীনÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : শাকিলা জাফর
বলো না কোন কথা বলো না এ নীরবতা ভেঙোনাÑ সুর : আলাউদ্দিন আলী, শিল্পী : অলকা ইয়াগনিক
আবার দেখা না হলে দোষ কি ছিলোÑ সুর : অনুপ ভট্টাচার্য, শিল্পী : অনুপ ভট্টাচার্য্য
অন্তরে কান্দন আমার চোক্ষে আমার জলÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : নার্গিস পারভীন
পোড়া চোখ কেন তুই অন্ধ থাকিস নাÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : নর্গিস পারভীন
সেই যে নিবিড়ি মাঠ পার হয়েÑ সুর : মাকসুদ জামিল মিন্টু, শিল্পী : মোহাম্মদ রফিকুল আলম
দেশের গান :
আমার মন পাখিটা যায়রে উড়ে যায়Ñ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : রুনা লায়লা
সেই রেল লাইনের ধারেÑ সুর : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেলেও তবুÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লালÑ সুর : আলী আকবর রূপু, শিল্পী : এন্ড্রুকিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ ও খালিদ হাসান মিলু
আমার বাউল মনের একতারাটাÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : রফিকুল আলম ও শাম্মী আখতার
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে যে পারে বইতেÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম,শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
আহা কাঙ্খে কলসীÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সুবীর নন্দী
কত হাজার বছর ধরেÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সুবীর নন্দী
পদ্ম পাতার পানি নয়Ñ সুর : আলী আকবর রূপু, শিল্পী : এন্ড্রুকিশোর
যদি মরণের পরে কেউ প্রশ্ন করেÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
যেখানে মাটির দাওয়ায় পিদিম জ্বেলেÑ সুর : অনুপ ভট্টাচার্য, শিল্পী : শবনম আবেদী
নদীর ধারেই পথ, পথ পেরোলেই গাঁÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : শাম্মী আখতার
তোমার বুকেই আমি জীবনে মরণে গরবিনীÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : রুনা লায়লা
আমাকে একটি দোয়েল বলেছেÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : রুনা লায়লা
আমি বেঁচে থেকে মাখবো ধুলোÑ সুর : অনুপ ভট্টাচার্য, শিল্পী : অনুপ ভট্টাচার্য
দোয়েলরে শিষ দিয়া তুইÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : আবিদা সুলতানা
একটি দোয়েল বনে ডাকলেÑ সুর : খোন্দকার নূরুল আলম, শিল্পী : মোঃ রফিকুল আলম