প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে..
প্রতীক
জাহিদুল হক
ভালোবাসা যেন এই ঘরবাড়ি শহর ইত্যাদি আমি কিছু কিছু চিনি
সিংহভাগ যদিও অচেনা, তুমি কোন বাড়িটিতে থাকো? স্বপ্নের কিঙ্কিণি
বাজে, সন্ধ্যাবেলা যখন ভ্রমণে বার হও আমি যেন পিছু লেগে থাকি
পুলিশের লোকের মতন। তুমি হেঁটে যাও, তোমার দু’চোখ সেই আঁখি
আমাকে দেখে না; তারা এভিনিউ দেখে, সুপার মার্কেট কিংবা কিছু পথ—
তোমার আংটির আলো প’ড়ে প’ড়ে সমস্ত শহর যেন প্রাচীণ ধ্রুপদ
স্থাপত্যের নিদর্শনে ভ’রে যায়;
আমি কিছু কারুকার্যে টোক মেরে যাই,
তখনই নূপুর বাজে, মনে হয় প্রকৃত জীবন ব’লে সত্যি কিছু নাই
এ-জীবনে; তুমিও প্রতীক : ভালোবাসা কিংবা এই তোমার আড়ারে থেকে
অনুসরণের কাজ। তোমাকে হারিয়ে ফেলি, বাড়িগুলো কুয়াশায় রেখে
তুমি চ’লে যাও। আমি তার দু-একটি চিনে একটি দরোজা যদি খুলি
হাজার দরোজা বন্ধ; আমার পকেটে কাঁদে উদ্যমের মলিন আধুলি।
[জাহিদুল হক পরিমিত শব্দের কবি।ষাট দশকের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। কবিতার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন উল্লেখযোগ্য কিছু গল্প ও উপন্যাস, আর লিখেছেন কিছু জনপ্রিয় গানও। প্রচার যন্ত্রের সাথে নিয়োজিত থেকেও নিজেকে প্রকাশের বাইরে রাখতেই পছন্দ করেন বেশি। শুক্তির ভিতর মুক্তার চাষই যেনো তার ব্রত। তিনি প্রভাবশালী রেডিও ডয়েচেভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার, দৈনিক সংবাদ এর সিনিয়র সহকারি সম্পাদক ও বাংলাদেশ বেতারের উপ মহা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্পাদনা করেছেন ‘বেতার বাংলা’। আসামের বদরপুরে ১৯৪৯ সালের ১১ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ডা. মোহাম্মদ নুরুল হক ভুইয়া ও মাতা জাহানারা খাতুন চৌধুরী। স্থায়ী নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার আকদিয়া গ্রামে। বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকার বনশ্রীতে। অবসর জীবনে লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কবি। চট্টগ্রামের নগেন্দ্র্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক (১৯৬৩) , ফেনি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৬৬) ও ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
জাহিদুল হক এর লেখালেখি শুরু ইশকুল ছাত্রাবস্থায়। প্রথম কবিতার প্রকাশ ১৯৬৫ সালে দৈনিক সংবাদ এর ঈদ সংখায়। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প গান মিলিয়ে জাহিদুল হকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি। তার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ১৬টি। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ– পকেট ভর্তি মেঘ (১৯৮১), তোমার হোমার (১৯৮৪), নীল দুতাবাস (১৯৮৫), সেই নিঃশ্বাসগুচ্ছ (১৯৮৯), পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা (১৯৯৪), এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা (১৯৯৬), এ উৎসবে আমি একা (১৯৯৭), জাহিদুল হক এর শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৭), নের্ভাল কোথায় যাচ্ছো (২০০৩), বারান্দায় আমি ও রাত্রিরা একা (২০০৭) এবং কেন করে তোল ঢাকাকে একাকী (২০০৯), নিরবাচিত কবিতা (২০১৭), অন্ধকার বৃষ্টিগুলো (২০২০)।
উপন্যাস– তোমার না-আসার বার্ষিকী (২০০৬), শোকার্ত বিবাহরা, প্রেমকে করেছি বাড়ি (২০০৭) এবং আমজাদ আলির মেঘবাড়ি।
গল্পগ্রন্থ– ব্যালকনিগুলো (২০০৩), আমার ভালোবাসার অটম (২০০৫)।
এছাড়া তিনি ১৯৭১ থেকে ২০১৫ এর মধ্যে শতাধিক আধুনিক ও দেশের গান লিখেছেন। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০২) ও লিরিক কবিতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগের বিশেষ সম্মাননা (২০১৭) লাভ করেন। ভ্রমণ করেছেন এশিয়া ও ইওরোপের প্রায় সবকটি প্রধান শহর।