প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে]
কে কথা বলবে?
কামরুল হাসান
তার জন্য ক’জন যুবতীর বুকে কোমল ঢেউ হয়েছিল উদ্বেল
ঘুমহীন রাতের রুমালে ঘন ঘন কান্না মুছেছেন স্নেহার্দ্র জননী।
তাকে অনেকেই বধ্যভূমিতে ঝাঁঝরা করতে মেতেছিল খুব
পূর্ণিমায় স্নান করিয়ে সংসারের চৌকাঠে ফেরাতে ছিল কেউ কেউ
অনেকে অচল সিকির মত তাকে হ্রদজলে ছুঁড়তে চেয়েছিল
মূল্যবান সংগ্রহ ভেবে কারো কারো নিজস্বে রেখে দেবার ইচ্ছে ছিল।
পাখি ও পুষ্প ভিন্ন আর কারো সাথে গড়ে ওঠেনি তার অমলিন সখ্য
নদী ও নীলিমা ভিন্ন আর কেউ শোনেনি তার গহন প্রলাপ।
তার শোকগুলো তুলে রাখবার জন্য পাতারাই এগিয়েছে বুক
মেঘেরা খুলেছে অলৌকিক কোমল দেরাজ,
বৃক্ষের কানে কানে শ্রুতিবদ্ধ রেখেছে তার সমস্ত কবিতা
বনের সবুজ টেপ বেজে উঠলেই কথা বলবে কামরুল হাসান।
[কামরুল হাসান কবি, ভ্রমণগদ্য লেখক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। লেখালেখিতে সতর্ক, সিরিয়াস ও কিছুটা আড়াল পছন্দ তার। আশির দশকের উজ্জল কবিদের একজন তিনি। জন্ম ২২ ডিসেম্বর, ১৯৬১। শৈশবেই পিতাকে হারান।বেড়ে ওঠেন মামাবাড়ির শিক্ষাবান্ধব, উদার পরিবেশে।শরীয়তপুরের মাঠে-ঘাটে কাটে উদ্দাম শৈশব ও কৈশোর। ছাত্রজীবনে মেধাবী ছিলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকায় স্থানলাভ করেছিলেন। চিকিৎসক হবার আকাঙ্খায় ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। আবেগের বশবর্তী হয়ে মেডিকেল পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সরকারি বৃত্তি নিয়ে চলে যান ভারতে। সেখানকার বিখ্যাত আইআইটি খড়গপুরে অধ্যয়ন করেন এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে । পরবর্তী পড়াশোনা ব্যবসায় প্রশাসনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ। সহধর্মিণী লুবনা হাসান ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী চার সন্তান নিয়ে তার কলকাকলিময় সংসার!
কর্মজীবনের শুরুতে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ বিমানে, প্রকৌশল প্রশিক্ষক হিসেবে। মন টেকেনি সেখানে। এরপরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছেন প্রথমে প্রশিক্ষক ও পরে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপক হিসেবে। বহুবার চাকুরি বদল করে উপলব্ধী করেন কর্পোরেট জগতে তিনি বেমানান। তখন যোগ দেন শিক্ষকতায়। পড়িয়েছেন দেশের বেশ ক’টি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ষোলো বছর ধরে অধ্যাপনা করছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে।
লেখালেখির শুরু স্কুলের উঁচু ক্লাসে। স্কুলজীবনে গোগ্রাসে পাঠ করেছেন বাংলা সাহিত্যের বিপুল ভাণ্ডার। গত পঁচিশ বছরে প্রকাশিত হয়েছে ১২টি কাব্যগ্রন্থ। গত কয়েক বছর ধরে লিখছেন চতুর্পদী। কবিতার পাশাপাশি লিখছেন ছোটগল্প, প্রবন্ধ। অনুবাদও করছেন সমানতালে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় কলামগ্রন্থ ‘প্রহরের প্রস্তাবনা’। ভ্রমণপিপাসু কামরুল হাসানের প্রথম ভ্রমণকথা ‘বিলেতের দিনলিপি’। উজবেকিস্তান ভ্রমণের উপর লিখিত ‘আমির তিমুরের দেশে’ বের হয় ২০১৮ সালে। অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের উপর লেখেন ‘মহাদেশের মতো
এক দেশে’ এবং ভারত ভ্রমণের উপর লিখেছেন ‘সিমলা মানালির পথে’।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : সহস্র কোকিলের গ্রীবা (১৯৯১); প্রান্তসীমা অনন্তদূর (১৯৯২); ছুঁলে বিদ্যুল্লতা, না ছুঁলে পাথর (১৯৯৩); পাখি নই আশ্চর্য মানুষ (১৯৯৪); দশদিকে উৎসব (১৯৯৭); বৃক্ষদের শোভা দেখে যাব (২০০০); রূপচৈত্রের অরণ্যটিলায় (২০০৪); পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি আমার গ্রামে (২০০৭); ঈশ্বরের নিজ গ্রহ (২০০৯); ঘুমপ্রহরের মোমকূহক (২০১০);
নির্বাচিত কবিতা (২০১২); খিলানের নিচে আলো (২০১৪); সহ¯্র চরণের ধ্বনি (২০১৬); বাছাই ১০০ কবিতা (২০১৭);
ছোটগল্প : মধ্যবিত্ত বারান্দা ও অন্যান্য গল্প (২০০৫)।
প্রবন্ধ : প্রহরের প্রস্তাবনা (২০১৫)।
ভ্রমণকাহিনী : বিলেতের দিনলিপি (২০১৭); আমির তিমুরের দেশে (২০১৮); মহাদেশের মতো এক দেশে (২০১৯); সিমলা মানালির পথে (২০২০)।
অনুবাদ : Poems of Mujib Erom (2014); The Blind God (2020);
সম্পাদনা : Postmodern Bangla Poetry 2003 (2003); (with Tushar Gayen and Samir Roychowdhury)