প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে
আলোকবর্তিকা // বিমল গুহ
আগুন আকাশকে ছুঁতে পারে না
বিশ্বাস আকাশকে ছোঁয়
বাতাস পাহাড়কে নাড়াতে পারে না
প্রেম পাহাড়কে নাড়ায়
আকাশের দিকে তাকাতে তাকাতে চোখে রক্তগোলাপ ফুটে আছে
পাহাড়ের গায়ে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হবো কি– দাক্ষায়নী?
বিষাদগ্রস্থ মানুষের মুখ দেখলে আমার আগুনের কথা মনে পড়ে
আমি আলোকবর্তিকা হাতে তোমাকে খুঁজি
তোমার উদ্দীপ্ত ইচ্ছার কথা ভাবলে
তিল তিল জন্ম নেয় রক্তকণিকায় স্পন্দন
আমি নবসৃষ্টির রূপকার।
তোমার শরীর খারাপ
আমি দিনদুপুরে জ্যোৎস্নার কথা ভাবি
রাতে ঈশ্বরের বিছানায় শুয়ে কবিতা লিখি ক্লান্তি ও অবসাদের
অলৌকিক সুই ও সুতোয় তোমাকে সেলাই করি শিল্পের কাঁথায়।
আগুনের কাছে বিশ্বাস রেখে প্রার্থনা করি:
‘তুমি সেরে ওঠো’
অতীতের সব গ্লানি মুছে যাক স্নেহে,
প্রেমপালিতা হরিণী যখন তুমি কাছে এসে বসো, আমি
ত্রিকালদর্শীর মতো ভবিষ্যতের কথা বলতে বলতে
আকাশের নাভিমূল ছুঁই
তুমি মহাশ্বেতা।
——————————
[বিমল গুহ কবি, লেখক, গবেষক ও শিশুসাহিত্যিক। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের কবিতায় যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন কবি বিমল গুহ তাদের অন্যতম।বিমল গুহ ১৯৫২ সালের ২৭ শে অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রসন্নকুমার গুহ এবং মাতা মানদাবালা। পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়।
বিমল গুহ গ্রামের বাজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তার মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।এরপরে বাংলা সাহিত্যে ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন এবং যুক্তরাজ্যের নেপিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিমল গুহ ১৯৮০ সালে মিনা গুহ’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক। তার হলেন–ঈষিকা, উপমা ও মিথিলা।
পেশাসূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক ও কলেজ পরিদর্শক ছিলেন।বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
বিমল গুহ সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন ১৯৬৮ সালে যখন তিনি স্কুলের ছাত্র ছিলেন।তার প্রথম কবিতা “আকাশ” ১৯৬৯ সালে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ সাময়িকী “রেশমী” তে প্রকাশিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় নিয়মিত কাব্যচর্চা শুরু। ১৯৮২ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অহংকার, তোমার শব্দ’। এ পর্যন্ত তার ১৩টি কবিতাগ্রন্থ, ৭টি কিশোর কবিতাগ্রন্থসহ মোট ৩৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো : ‘অহংকার, তোমার শব্দ’ (১৯৮২), ‘সাকোঁ পার হলে খোলা পথ’ (১৯৮৫), ‘স্বপ্নে জলে শর্তহীন ভোর’ (১৯৮৬), ‘ভালোবাসার কবিতা’ (১৯৮৯), ‘নষ্ট মানুষ ও অন্যান্য কবিতা’ (১৯৯৫), ‘প্রতিবাদী শব্দের মিছিল’ (২০০০), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (২০০১, ২য় সংস্করণ ২০১২), ‘আমরা রয়েছি মাটি ছুঁয়ে’ (২০১১), ‘বিবরের গান’ (২০১৫), ‘প্রত্যেকেই পৃথক বিপ্লবী’ (২০১৫) , ‘কবিতাসংগ্রহ (২০১৬), `ও প্রেম ও জলতরঙ্গ (২০১৯) এবং ‘দ্বিতীয় বৃত্তে (২০২০)। কিশোর কাব্যগ্রন্থ: ‘মেঘ গুড়গুড় বৃষ্টি নামে’ (২০০০), ‘আগুনের ডিম’ (২০০১), ‘চড়াই ছানা’ (২০০২), ‘সাদা মেঘের ভেলা’ (২০০৮), ‘টুপুর ও চরকা বুড়ি’ (২০১৩), কিশোর কবিতাসংগ্রহ’ (২০১৪), ‘টুপার সারাবেলা’ (২০১৬)।
ভ্রমণ কাহিনী : ‘অন্য দেশে অন্য ভুবনে’ (২০০৮ ও ২য় সংস্করণ ২০১১), ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ (২০১৮)। গবেষণামূলক: ‘অহিদুল আলম : জীবন ও সাহিত্য’ (১৯৯৯), ‘আধুনিক বাংলা কবিতায় লোকজ উপাদান’ (২০০১)। ইতিহাসগ্রন্থ: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস’ (২০১৯)।
লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। ‘তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয় জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ তরুণকবি পুরস্কার’ (১৯৭৯), ‘কিংবদন্তির আমরা জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার’ (১৩৮৫ বঙ্গাব্দ), ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক পুরস্কার’(২০০০), ফরিদপুর নির্ণয় শিল্পীগোষ্ঠী স্বর্ণপদক(২০০৮), কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার(২০০৯), সূফী মোতাহের হোসেন সাহিত্য পুরস্কার-(২০০৯ ও ২০১৩), অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সাহিত্য পুরস্কার (১৪২২ বঙ্গাব্দ), অরণি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।]