প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে..
নারী
মনজু রহমান
দরোজায় টোকা দিলে তুমি উঠবে দুলে
জোসনাময় রাতে দোলনায় দুলবে রাতের কলি
তোমাকে ভুলতে পারিনে নারী, তুমি যে অমোঘ
তোমার আঙুলের ডগায় থাকে হাওয়র নর্তকী
কোমল যুগর জোড়ায় অবিশ্বাসের রঙিন চাদর
তোমাকে বিশ্বাস করে সরে যায় বৃক্ষের শীতল ছায়া
তবু দরোজায় টোকা দিই, তুমি আসো না ফিরে
চলে যাও কুয়াশার বনে
তোমাকে খুঁজে ফিরে রাবণের বাঁশি
তুমি কী সত্যই আছো?
তুমি ঘওে আছো জেনে যেভাবে ঘরে ফেরে রাখাল বালক
সেভাবে পাথার ভেঙে তোমার দরোজায় আসি
টোকা দিই নাম ধরে ডাকি
না রী ঘরে আছো?
কব্দ ফিওে ফিওে আসে
তুমি তো আছোই ঘওে, যেমন আলো
লুকিয়ে রাখে জোসনা, তেমনি
নিজেকে গোপন করে তুমি ডাক দাও–
হে পু রু ষ, হে রা খা ল বা ল ক
দরোজা রয়েছে খোলা, চলে এসো…
২.
কি হয়েছে আজ আমার এই মেঘলা দিনে, কি হয়েছে?
দুলছে শুধু দৃশ্যাবলী নর্তকী মন বাজুর বাহার জলের তলায় নূপুর ধ্বনি
দুলছে শুধু সন্ধ্যাতারা হীরক চোখের ধুম্রজালে অপূর্ব সব মুগ্ধ টুরিস্ট
দুলছে তোমার এক বেনী চুল কামের নেশা ঝরনা পাহাড় রবীন্দ্রনাথ
কি হয়েছে আজ আমার মেঘলা দিনে, কি হয়েছে?
অথচ আজ চাঁদের মেলায় বসবো বলে তোমার আমার কথা ছিল
সুখদ নাভীর অরণ্যের ঘুম, অচেনা সব কূপের শরীর ছুঁয়ে দেবার কথা ছিল
গোপন যত অমূল্যধন ইচ্ছা করেই ছোঁছোঁয়ির কথা ছিল, কই এলে কই?
তুমি কি আজ দূরের তুমি সন্ধ্যাবেলা ধুসর আলোয় পালিয়ে যাও শুধুই শুধু
তুমি কি আজ স্বপ্ন দেখার দৃশ্যতঃ এক সুখের ছবি তীব্র ফোটা তন্ময়তা
অথচ আজ স্বপ্নগুলো একটা করে খুলবো বলে তোমার আমার কথা ছিল
কই এলে কই? কি হয়েছে আজ আমার এই মেঘলা দিনে, কি হয়েছে?
মেঘের কোণে মেঘ জমে আজ ক্লান্ত তুমি?
আকাশজুড়ে কেবলি এক বেদনাময় শব্দ ঘোওে ভালোবাসি ভালোবাসি
টের পাও কী? টের পাও না?
……………………………….
মনজু রহমান সত্তর দশক থেকে ছড়া ও কবিতার সাথে যুক্ত। সত্তর দশকে তিনি ‘ইতল বিতল’ ও ‘ছররাছুট’ নামে দুটি ছড়ার কাজ সম্পাদনা করেন। তারপর তিনি অন্যান্য ছড়াকারদের মতো ফিরে যান কবিতার অনন্ত ভুবনে। ফিরে যান কবিতার ছোটকাগজ সম্পাদনায়। কবিতাবিষয়ক ছোটকাগজ তিনি ৪৩ বর্ষ থেকে সম্পাদনা করে আসছেন। তাঁর দশটি কাব্যগ্রন্থ ও একটি রাজনৈতিক ছড়াগ্রন্থ ‘সময়ের ছড়া’ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লেখেন খুব সচেতনভাবে। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসম বিষয়গুলো তাঁর কবিতায় প্রেমের আবরণে ফুটিয়ে তোলেন অত্যন্ত নিপুনতার সাথে।
মনজু রহমান এর জন্ম ৩ অক্টোবর ১৯৫৬, পূর্ব পালশা, বগুড়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন।বগুড়াতে জন্মগ্রহণ করলেও বর্তমানে বসবাস করছেন দেবী সিংপাড়া, রাজশাহীতে।
প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি। কাব্যগ্রন্থ সংখ্যা ১০টি। প্রকশিত কাব্যগ্রন্থ : জলের নূপুর (১৯৯৪); জয়তি, কতোকাল আলো দেখেনি মানুষ (২০০৯); কঙ্ক, ও আমার একবিন্দু জল (২০১১) ; উড়াই খয়েরি বোতাম (২০১২); চন্দ্রবিন্দু তোমাকে (২০১৩); বোষ্টমি সিরিজ (২০১৪); ও জল ও বৃক্ষ (২০১৫); পাগলি ফিরে যাচ্ছি (২০১৬); ডট বিন্দুর উত্তাপ (২০১৮); মধ্যরাতের কাব্য (২০১৯)।
ছড়াগ্রন্থ : সমায়ের ছড়া (২০১৯)।
সম্পাদনা : কবিতার কাগজ অ্যালবাম (১৯৭৬ থেকে চলমান, চলছে ৪৩ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা)। ছড়ার কাগজ : ইতল বিতল; ছররাছুট (১৯৭৬-১৯৭৮); গল্পের কাগজ অনড়–৪ সংখ্যা (যৌথ, [১৯৭৭-৮০); যুগল জানালা (যৌথ, ১৯৭৮) ; টোঙ (যৌথ)
সংগঠন: বগুড়া চাঁদের হাট, বগুড়া ছড়া সংসদ, বগুড়া কবিতা সংসদ, বগুড়া লেখক গোষ্ঠী, কবিকুঞ্জ, পরিচয় সংস্কৃতি সংসদ, রাজশাহী।
সন্মাননা : বগুড়া লেখকচক্র পুরুস্কার ১৯৯১; কবি কাজী রব স্মৃতি পুরুস্কার ১৯৯৯; কণ্ঠসাধান আবৃত্তি সন্মাননা ২০১৩; অপরাজিত লিটল ম্যাগ সন্মাননা-২০১৫; ছায়া সাহিত্য সন্মাননা- ২০১৬; শব্দকলা কবিতা পদক রাবি-২০১৭; অন্তমিল পুরুস্কার বগুড়া-২০১৮; প্রদীপ্ত সাহিত্য পুরুস্কার, রাজশাহী ২০১৮; চিহ্ন লিটল ম্যাগ সন্মাননা; রাবি-২০১৯।