প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে
বোধ
তপন বাগচী
শুধুই তোমার নাম এঁকে যায় সময়ের দীর্ঘ চাতাল
আমাকে তাড়িয়ে ফেরে শিল্পের জরা
প্রাপ্তির বেশি বঁধু এতোটা অধরা
সৃষ্টির মোহে কবি বেহেড মাতাল।
এই হাসি এই গান, বুকের রক্তমাখা এই রঙতুলি
ছুঁয়ে যায় যথারুচি ঠোঁট, চোখ, বুকের মহিমা
বাকি থাকে অভিমান, প্রণয়ের বীমা
কী করে পূর্ণ করি সময়ের ঝুলি?
এই যে কথার মালা, মধুময় প্রিয় সংগীত
কিছু পায় আলোছায়া, কিছু থাকে বোধের অতীত।
…………………………………………….
তপন বাগচী নব্বই দশকের অন্যতম কবি। কবি পরিচয়ের বাইরে তিনি প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, গীতিকার ও গবেষক হিসেবে সমধিক পরিচিত। গবেষণার আগ্রহের বিষয় সাহিত্য, ফোকলোর, ইতিহাস ও যোগাযোগ। জন্ম: ২৩ অক্টোবর ১৯৬৮; কদমবাড়ি (মাতুলালয়) মাদারীপুর। পিতা তুষ্টচরণ বাগচী; মাতা জ্যোতির্ময়ী বাগচী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় এমএ এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পিএইচডি। বিষয়– ‘বাংলাদেশের যাত্রাগান: জনমাধ্যম হিসেবে সামাজিক প্রভাব’।
লেখালেখির শুরু স্কুলজীবনে। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আল মোয়াজ্জিন পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়, ১৯৯০ সালে দৈনিক বাংলার বাণীতে।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:
কবিতাগ্রন্থ: নির্বাচিত ২০০ কবিতা (২০২০), চিরবিরহের মোহ (২০১৪), যাত্রাসংগীত (সুবীর সরকার সহযোগে যৌথ, ২০১২), প্রেমের কবিতা (২০১১), নির্বাচিত ১০০ কবিতা (২০১০), সকল নদীর নাম গঙ্গা ছিল (২০০৭), অন্তহীন ক্ষতের গভীরে (২০০৫), শ্মশানেই শুনি শঙ্খধ্বনি ( জুন ১৯৯৬), কেতকীর প্রতি পক্ষপাত (জানুয়ারি ১৯৯৬)।
গীতিকবিতাগ্রন্থ : বঙ্গবন্ধু থেকে মালালা: মন্দ্রিত সুরধ্বনি (২০১৯), কূলের আশায় কুল হারাইছি (২০১৮), তপন বাগচীর মরমি শতগান (ড. অমিতাভ বিশ্বাস সম্পাদিত, ২০১৮), দিয়েছি এই বুকের আসন (২০১৬), কলঙ্ক অলঙ্কার হইল (২০১৬), আমার ভেতর বসত করে (২০১৪)।
ছড়া-কিশোরকবিতাগ্রন্থ: মুজিব-নামে রক্তদামে (২০১৯), ছড়ার বড়া মিঠেকড়া (২০১৯), পরিবেশ পড়ি বেশ (২০১৮), কবি ঠাকুর ছবি ঠাকুর (২০১৭), মেঘের ভেলা ছায়ার খেলা (২০১৭), ছন্দোবদ্ধ ভাবের পদ্য (২০১৩), চোখের পাতায় বুকের খাতায় (২০১২), সকালবেলা স্মৃতির ভেলা (২০১১), সমকালে তমকালে (২০১০), মঙ্গা আসে ঘরের পাশে (২০০৯), রাতের বেলা ভূতের খেলা (২০০৯), ঢাকা-লন্ডন ইমেইল ছড়া (রব্বানী চৌধুরী-সহযোগে, ২০০৭), খাচ্ছে ছুটি লুটোপুটি(২০০৭), স্বপ্নেবোনা তূণীর সোনা (২০০৬), চরকাবুড়ি ওড়ায় ঘুড়ি (১৯৯৫), রুখে দাঁড়াই বর্গী তাড়াই (১৯৯৪)।
কিশোরগল্পগ্রন্থ : ফণিদার যত ফন্দিফিকির (২০১৯), মাটির নিচে নদীর ধারা (২০১৭), পুরাণের তিন নদীর গল্প (২০১৫) সাতদিনের সাতকাহন (২০১১), শুভর শখের গোয়েন্দাগিরি(১৯৯৩)।
প্রবন্ধগ্রন্থ: নজরুল-সাহিত্যের কমালোচিত প্রসঙ্গ (২০১৯), সাহিত্যের এদিক সেদিক (২০১৩), সাহিত্যের কাছে দূরে (২০১৩), রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধ আখ্যান (২০১২), লালন মতুয়া লোকসংগীত সন্ধান (২০১২), সংবাদের ভাষা ও সাময়িকপত্র পর্যালোচনা (২০১২), সাহিত্যের মধ্যমাঠ থেকে (২০১২), রবীন্দ্রসাহিত্যে নতুন প্রেক্ষণ (২০১২), কিছু স্মৃতি কিছু ধৃতি (২০১১), সাহিত্যের সঙ্গ ও অনুষঙ্গ (২০১১), চলচ্চিত্রের গানে ডক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (২০১০), লোকসংস্কৃতির কতিপয় পাঠ (২০০৮), বাংলাদেশের যাত্রাগান : জনমাধ্যম ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত (২০০৭), মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ (২০০৭), রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ : চন্দ্রাহত অভিমান (২০০২); সাহিত্যের সাম্প্রতিক পাঠ (২০০১), নির্বাচন সাংবাদিকতা (২০০১), নজরুলের কবিতায় শব্দালঙ্কার (২০০০), তৃণমূল সাংবাদিকতার উন্মেষ ও বিকাশ (১৯৯৯)।
জীবনী: বিপ্লব দাশ (২০০১), রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৯৯৮)।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পদক (২০২০), স্টান্ডার্ড চার্টার্ড দ্য ডেইলি স্টার সেলিব্রেটিং লাইফ গীতিকাব্য পুরস্কার (৪বার ২০১৯, ২০১৬, ২০১৪, ২০১৩), নজরুল পদক (চুরুলিয়া, আসানসোল ২০১৯), নজরুল অ্যাওয়ার্ড (মেমারি, বর্ধমান ২০১৯), অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১৮), সুভাষ মুখোপাধ্যায় পদক (২০১৮), সাংস্কৃতিক খবর পদক (কলকাতা, ২০১৩), অনুভব বহুমুখী সমবায় সমিতি পদক (২০১৩), মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক (২০১২), নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার (কলকাতা, ২০১১), বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ফেলো, ঢাকা (২০১০), সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য পুরস্কার (২০০৯), কবি বাবু ফরিদী সাহিত্য পুরস্কার (২০০৯), ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা (২০০৯), মহাদিগন্ত সাহিত্য পুরস্কার (কলকাতা, ২০০৮), এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৮), জেমকন সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮), অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতি পদক (২০০৮), পাক্ষিক মুকসুদপুর সংবাদ সংবর্ধনা (গোপালগঞ্জ, ২০০৭), জসীমউদ্দীন গবেষণা পুরস্কার (১৯৯৬), মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার(১৯৯১)।
এছাড়া তপন বাগচীর ৫০ তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকার ‘দৃষ্টি’, নদিয়ার ‘কথাকৃতি’, আন্দামানের ‘বাকপ্রতিমা’ ও খুলনার ‘রিভিউ’ পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
তাঁকে নিয়ে গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেছেন ড. তরুণ মুখোপাধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ, নরেশ মণ্ডল, ড. আখতারুজ্জাহান, ড. অনুপম হীরা মণ্ডল, মনীষা কর বাগচী, হরিদাস ঠাকুর প্রমুখ।
বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমিতে গবেষণা উপবিভাগে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত।