প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে]
আঁতুড়ভয়
মুজিব ইরম
জন্মের আগেই জন্ম হলো ভয়। তাবিজ-কবজ দিয়ে সাজানো পুলি। ভাঙা লাঙ্গল আর ছেঁড়া জাল, ধোঁয়ার কুণ্ডলী হাসে দরজার কাছে। কান্নার কাছেই ছিলো পিতার আজান।
ছিলাম পরীর ডানা কেনো পিতা ঝরালে পালক —
ভুলেও থাকিনি একা। শিশু ছিলে— টাকরা-টুকরি যদি নেয় তুলে! বটের গভীর কাছে যে শিশুরা প্রেতের দোসর, শীতের হাওর জুড়ে মক্কল আগুন— ছিলো সব নিরাপদ দূরে।
রাত হলে বুড়ো সুরে হুতুম! হুতুম!! আগুনে দিয়েছে মা শস্যদানা আর সালন হলুদ। তবু ভয় যদি পায় প্রেতিনীর ছায়া!
পূর্ণিমা উঠানে মধ্যরাতে আলো খুঁড়ে একপাল অশরীরী ভেড়া। পুবের টিনের চালে ঢিল পড়ে, গাবগাছ দোষের প্রাচীর। এই ভয় ছিলো মাগো যদি পায় অশুভ আছর! পিতার বাজার থেকে কালিবাউশ হলো না কিনা। শেওড়া গাছের ভূত যদি সাথে আসে? কাটা হলো তেঁতুলের প্রাচীন ছায়া।
কী করে ফেরাবে মা গো! নই শিশু, ঝরে গেছে পরীদের ডানা। শানেবান্ধা ক্ষত নিয়ে সপ্তডিঙ্গা নগরে ভাসে।
মুজিব ইরম নব্বই দশকের অন্যতম শক্তিমান কবি। শুরু থেকেই আলাদা একটি কাব্যভাষার উপর বেড়ে উঠেছে তার কবিতা। কবিতা ছাড়াও তিনি উপন্যাস, গল্প ও শিশুসাহিত্যে অবদান রেখে চলেছেন। ইরম মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামে ১৯৬৯ সালের ২১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা করেছেন সিলেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন১৯৯৩ সারে। এরপর পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান’ (১৯৯৬); ইরমকথা (১৯৯৯); ইরমকথার পরের কথা (২০০১); ইতা আমি লিখে রাখি (২০০৫); উত্তরবিরহচরিত (২০০৬); সাং নালিহুরী (২০০৭); শ্রী (২০০৮); আদিপুস্তক (২০১০); লালবই (২০১১); নির্ণয় ন জানি (২০১২); কবিবংশ (২০১৪); শ্রীহট্টকীর্তন (২০১৬); চম্পূকাব্য (২০১৭); আমার নাম মুজিব ইরম আমি একটি কবিতা বলবো (২০১৮); পাঠ্যবই (২০১৯); পয়ারপুস্তক (২০২০)।
উপন্যাস: বারকি (২০১১); (মায়াপীর ২০০৯); বাগিচাবাজার (২০১৫)।
গল্পগ্রন্থ: বাওফোটা (২০১৫)।
শিশুসাহিত্য: এক যে ছিলো শীত ও অন্যান্য গপ (২০১৬); মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস: জয় বাংলা (২০১৭)।
এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে ধ্রুবপদ থেকে মুজিব ইরম প্রণীত কবিতাসংগ্রহ: ইরমসংহিতা (২০১৩); বাংলা একাডেমি থেকে নির্বাচিত কবিতার বই: ভাইরে মুজিব ইরম বলে (২০১৩) এন্টিভাইরাস পাবলিকেশনস, লিভারপুল, ইংল্যান্ড থেকে নির্বাচিত কবিতার বই: পয়েমস অব মুজিব ইরম (২০১৪); ধ্রুবপদ থেকে উপন্যাসসমগ্র: মুজিব ইরম প্রণীত আউটবই সংগ্রহ (২০১৬); পাঞ্জেরী থেকে: প্রেমের কবিতা (২০১৮), বেহুলা বাংলা থেকে: শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১৮); চন্দ্রবিন্দু থেকে ইরম পদাবলি (২০২০); অভিযান থেকে নির্বচিত ১ ফর্মা (২০২০); নীহারিকা প্রকাশন, ত্রিপুরা থেকে মু.ই (২০২০)।
পুরস্কার ও সম্মাননা: মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার (১৯৯৬); বাংলা কবিতায় সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক (২০০৯); কবি দিলওয়ার সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪; কবিবংশ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪); শ্রীহট্টকীর্তন গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার (২০১৬); মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘জয় বাংলা’র জন্য পেয়েছেন এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১৭); কবিতা ও কথাসাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন শালুক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯); এছাড়া পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার (২০১৭)।