প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে..
টান
রহিমা আখতার কল্পনা
একটি শেকড় আজো কাটেনি শেকল
একটি শেকড় আজো ধরে আছে মমতার মাটি
আমি সেই মায়াময় শেকড়ে জড়িয়ে বুক
ভেজাই চিবুক
লোনা জলে ।
একটি বাসনা আজো খোলেনি দুয়ার
একটি বাসনা আজো কেঁদে ওঠে একাকিনী রাতে
আমি সেই গাঢ়তর বাসনা লুকাই একা
বেদনার শিখা
তবু জ্বলে ।
একটি হৃদয় আজো ছেঁড়েনি বাঁধন
একটি হৃদয় আজো ধরে রাখে স্মৃতিময় ছবি
আমি সেই অভিমানী হৃদয়ে তুলেছি ঘর
বেদনা আঁচড়
কাটে ঘরে।
একটু আগুন আছে পোড়ে না সকল
একটু আগুন আজো ঘিরে আছে কুয়াশার শীত
আমি সেই মোহময় আগুনে রেখেছি হাত
জমি ও জিরাত
সব ছেড়ে ।
একটি জোয়ার আজো ভাসায় ফসল
একটি জোয়ার আজো ঢেলে দেয় সুদিনের পলি
আমি সেই ফসলিম জোয়ারে ডুবিয়ে মুখ
সারাই অসুখ
জীবনের —
আলোতে অমাতে ঢেকে সব ক্ষত, বুনেছি নকশা সীবনের।
……………………………………………………………….
রহিমা আখতার কল্পনা আশির দশকের অন্যতম কবি । কবি পরিচয়ের বাইরেও তিনি একাধারে লেখক গবেষক, সম্পাদক, আবৃত্তিকার, উপস্থাপক এবং বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের এক সময়ের সংবাদ পাঠক। তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কর্মরত। জন্ম ৭ই আগস্ট ১৯৬২,কিশোরগঞ্জ জেলার নান্দলা গ্রামে।
পিতা : মোঃ আবদুল মোতালিব ভূঁইয়া (মরহুম)। মাতা : আনোয়ারা বেগম। সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে রহিমা আখতার কল্পনা তৃতীয়। স্বামী : জগদীশ চন্দ্র পান্থ। বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ। একমাত্র পুত্র অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী দেবাশিস কায়সার।
রহিমা আখতার কল্পনার এস.ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ থেকে ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। ইডেন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। তিনি ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লোকসাহিত্য বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ICCR (Indian Council for Cultural Relation) বৃত্তিপ্রাপ্ত পি এইচ ডি গবেষক তিনি।
রহিমা আখতার কল্পনা ‘ইছামতি কলেজ’ গালিমপুর, নবাবগঞ্জ-এ বাংলা সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে ১৯৮৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেন । ‘দোহার নবাবগঞ্জ’ ডিগ্রী কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করে ১৯৮৯ সাল বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে পত্রিকা উপবিভাগে উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।এর আগে তিনি একাডেমি কতৃক প্রকাশিত শিশুকিশোর পত্রিকা ‘ধানশালিকের দেশ’-এর নির্বাহী সম্পাদক ও সাহিত্য পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আশির দশক থেকে নিয়মিত লেখালেখি করছেন।তবে প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৭৫ সালে এস,ভি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একুশের বিশেষ ম্যাগাজিনে (কবিতা)। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ২৪টি। এর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ১২টি।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ :
বেনোজলে বেহুলার ভেলা (কাব্য ১৯৯৩, ঢাকা প্রকাশন); পাথর সরিয়ে দাও (কাব্য ১৯৯৪, সেভেন স্টার); পাখিদের পার্লামেন্ট (ছোটগল্প ১৯৯৬, শব্দাবলী প্রকাশনী); কেউ জানে না (কাব্য ১৯৯৯, ব্যতিক্রম প্রকাশনী ); বাংলা একাডেমি বাংলা সাহিত্যকোষ (সাহিত্য সমালোচনা-সংকলন, ২০০১, বাংলা একাডেমি); দাহপর্ব (কাব্য ২০০২, চিত্রা প্রকাশনী); এম.ওসমান গণি রচনাবলী (সম্পাদনা ২০০৫, বাংলা একাডেমি); গোলকায়ন রুখবে নারী (সম্পাদনা ২০০৬, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা); কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের পালাগান ও বর্তমান প্রেক্ষাপট (প্রবন্ধ ২০০৮, গণিত ফাউন্ডেশন); বাংলা একাডেমি লেখক অভিধান, ২য় সংস্করণ (সম্পাদনা ২০০৮, বাংলা একাডেমি); নির্বাচিত শতকবিতা (কাব্য ২০০৯, জিনিয়াস পাবলিকেশনস); টুকরো ছবির কবিতা (কবিতা সংগ্রহ ২০১০, আলপনা প্রকাশনী); কালো দিন সাদা রাত (কাব্য ২০১১, আলপনা প্রকাশনী); বাংলা কবিতার পঞ্চাশ বছর (সম্পাদনা, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ২০১১, অরণি); তিনশত বাংলা হাইকু (হাইকু কবিতা ২০১১, ম্যাগনাম ওপাস); এম ওসমান গণি-শামসুন্নাহার গণি স্মারকগ্রন্থ (সম্পাদনা ২০১২, ড. এম ও গণি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন); মানবকাহন (কাব্য ২০১৫ ভাষামুখ); আট প্রহরের গল্প (ছোটগল্প ২০১৫, জিনিয়াস পাবলিকেশনস); কবিতাসমগ্র (দশটি কাব্যের সংকলন,২০১৮, অনন্যা); সপ্তডিঙ্গা মধুকর ( ছোটগল্প, ২০২০, অনন্যা); মগ্ন জলের মন্দিরা (কাব্য, ২০২০ ) ইত্যাদি।
প্রকাশিত ক্যাসেট/সিডি : ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ শব্দরূপ ১৯৯২, (এই সিরিজ অব ক্যাসেটস ১৯৯৫ সালে ভারতের আনন্দ পুরস্কার অর্জন করে), ‘বিস্ফোরণের বৃন্দগান’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দল; ‘জাগো গো ভগিনীগণ’ (বেগম রোকেয়ার রচনা থেকে আবৃত্তি ও পাঠ)।
পুরস্কার ও সম্মাননা :
সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র সংসদ, গুণীজন সংবর্ধনা, (২০০৭); সত্যজিৎ রায় সংস্কৃতি ফোরাম গুণীজন সংবর্ধনা, শ্রেষ্ঠ কবি (২০০৮); সুকুমার রায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, সাহিত্য পদক (২০০৮); বিশ্ব মা দিবস পদক ও সম্মাননা (২০১১), ইঝই ফাউন্ডেশন, ক্যামব্রিয়ান কলেজ; মেঠোপথ সাহিত্য ও সংস্কৃতি পদক (২০১৩), তাড়াইল সাহিত্য সংসদ, কিশোরগঞ্জ।