প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে
ক্ষোভ নিয়ে মুখোমুখি // গোলাম কিবরিয়া পিনু
এই মুহূর্তে আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি লোভ
রাজলোভ নেই
নারীলোভ নেই
এখন এই অসময়ে ক্ষোভ ছাড়া কিছু নেই।
খরতাপ সহ্য করে এতদূর এসেছি
এইখানে
তবুও গলিত পীচের সঙ্গে সখ্য হয়নি
হতে পারে না।
একটা খুপরী কক্ষে রাত্রি কাটাই,
সারারাত মশা তাড়াই,
যুদ্ধ করে শান্তি হারাই,
কাঙ্খিত বাতাসের পরিবর্তে পাই লুহাওয়া,
এত বিরুদ্ধ প্রতাপে কাটাতে হচ্ছে প্রহর
স্নায়ুর উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে।
আমি যখনি পথে বেরোই
তখনি–
কাঁধে ঝুলতে থাকে ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে
একটা পাটের ব্যাগ
যার ভেতরে মা’র দু’চোখের জল-কৌটো
যার ভেতরে বাবার অবসরপ্রাপ্ত সুখ
যার ভেতরে ফিরে আসা ব্যর্থ প্রেমিকার চিঠি
যার ভেতরে কোষবন্ধ অসহায় ঘাসের মৃতদেহ;
আর কতকাল এ ব্যাগ কাঁধে ঝুলে নিয়ে
উপপথ, ঘুরপথ, অলিগলি, প্রশস্ত পথে হেঁটে বেড়াবো?
আমার চোখের সামনে স্ননের বোঁটার মত
ক্ষুদ্র উদগম
নষ্ট হয়ে যাচ্ছে–
বৈরী মাটিতে, বৈরী হাওয়ায়
স্বর্ণরেণুও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
এভাবে নষ্ট হতে থাকলে
অস্তিত্বের সমস্ত এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে নামবে উঁই পোকা
তার আাগে ক্ষোভ নিয়ে দাঁড়াতে চাই
এই মুখোমুখি।
—————————-
[গোলাম কিবরিয়া পিনু, মূলত কবি।কবিতা ছাড়া তিনি প্রবন্ধ, ছড়া ও অন্যান্য লেখাও লিখে থাকেন। গবেষণামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। গোলাম কিবরিয়া পিনু-এর জন্ম ১৬ চৈত্র ১৩৬২ : ৩০মার্চ ১৯৫৬ গাইবান্ধায়। গাইবান্ধা শহরে মূলত শৈশব-কৈশোর কেটেছে। পড়েছেন গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এর পর মাধ্যমিক–গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে। এর পর গাইবান্ধা সরকারি কলেজ হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা : স্নাতক সম্মান (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য) এবং স্নাতকোত্তর; পিএইচ.ডি. ।
১৯৮৩ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঢাকায় বসবাস করেন। লিখছেন তিন দশকের অধিককাল। এর মধ্যে কবিতা-ছড়া-প্রবন্ধ ও গবেষণা মিলে ২৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর-সহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও তাঁর রয়েছে ভূমিকা। বর্তমানে বাংলা একাডেমির জীবনসদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ-এর সদস্য। এখনো ক’টি সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন সংগঠন থেকে পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। পেশাগত প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য প্রয়োজনে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, বলিভিয়া, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
ফেব্রু য়ারি, ২০১৮ পর্যন্ত একটি আর্ন্তজাতিক মিডিয়া বিষয়ক সংস্থা ‘ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড’-এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করেছেন। এর আগে এফপিএবিতে উপপরিচালক (এডভোকেসি), ফোকাল পয়েন্ট ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া এফপিএবি থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘সুখী পরিবার’-এর সম্পাদক হিসেবে ১৯৮৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিসিসিপি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও যুক্ত ছিলেন। পেশাগতভাবে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকতা, কলামলেখা, সম্পাদনা ও এডভোকেসি বিষয়ক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : এখন সাইরেন বাজানোর সময়- ১৯৮৪, সোনামুখ স্বাধীনতা- ১৯৮৯, পোট্রেট কবিতা – ১৯৯০; সূর্য পুড়ে গেল- ১৯৯৫; কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে- ১৯৯৭; আমরা জোংরাখোটা- ২০০১; সুধাসমুদ্র – ২০০৮; আমি আমার পতাকাবাহী- ২০০৯; ও বৃষ্টিধারা ও বারিপাত- ২০১১; ফসিলফুয়েল হয়ে জ্বলি- ২০১১; মুক্তিযুদ্ধের কবিতা -২০১২; ফুসলানো অন্ধকার- ২০১৪; ২০. উদরপূর্তিতে নদীও মরে যাচ্ছে- ২০১৪; নিরঙ্কুশ ভালোবাসা বলে কিছু নেই- ২০১৫; কবন্ধ পুতুল নাচে- ২০১৬; ঝুলনপূর্ণিমা থেকে নেমে এলো- ২০১৮।
লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা হলো– বাংলা কবিতা উৎসব সম্মাননা কোলকাতা, হলদিয়া, ভারত- ১৯৮৮; ‘বাংলার মুখ’ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসব সম্মাননা, বালুরঘাট, পশ্চিমবঙ্গ- ১৯৯৭; সৌহার্দ্য’৭০ সম্মাননা, কোলকাতা- ২০০৩, এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার- ২০১০; বগুড়া লেখক চক্র সম্মাননা ২০১৬; কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার (ভারত)- ২০১৬; এবং মানুষ সম্মাননা -২০১৮]
Facebook Comments