প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে..
মীননাথ
শান্তা মারিয়া
মীননাথ তাকালেন: যদিও সহজে
পেয়েছি স্বরূপ আমি, তবু আরো চাই
জ্ঞানের প্রথম শর্ত সরলতা; আমি
সেই সরলতা চাই। আরাধনা করে
ধন, পুণ্য, মানলোভী পূজারী ব্রাহ্মণ
যাগ যজ্ঞ নারী রত্নে আমার কী কাজ?
সাগরাভূমিকে ছেড়ে চন্দ্রদ্বীপবাসী
একাকী ধীবর এক দূর কতদূর
নিরঞ্জন অন্বেষণে চলে যেতে পারে।
মহাযোগ অষ্টসিদ্ধি চাই শূন্য মন
হৃদয় বিলয় করে কুম্ভক সমাধি।
সাধনায় অতিক্রান্ত কত দণ্ড পল
চুরাশি সিদ্ধার আমি সর্বশ্রেষ্ঠ আজ।
অতিক্রান্ত অবশেষে সিদ্ধার্থ জীবন
কিংবদন্তি উপকথা অচিন্ত্য অলীক।
তুষার আবৃত শৈল শেষের শয্যায়
অন্ধকার শূন্য যেন শূন্য তুচ্ছ সব
সাধন ভজন এই অকারণ জ্ঞান।
গোরক্ষ, দেখনি তুমি কোনদিন জানি
সাগর মেখলা এক ভূমির সৌরভ
পলিকন্যা গৌরিকার রূপ মোহময়।
মহাকাল পরাক্রান্ত সঞ্চিত সাধনে
একবার পাললীর সেই প্রেম দাও
একবার মোহনার সে রূপ দেখাও।
শান্তা মারিয়া নব্বই দশকের অন্যতম কবি। জন্ম ২৪ এপ্রিল, ১৯৭০, ঢাকায়।বাবা ভাষাসৈনিক কমরেড মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ; মা ফয়জুননেসা খাতুন। তিনি জ্ঞানতাপস ভাষাবিদ ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-এর পৌত্রী এবং খান বাহাদুর আফাজউদ্দিন আহমেদ এর দৌহিত্রী।
স্বামী সৈয়দ শাহিন রিজভি একজন কবি ও নাট্য নির্মাতা। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান জুলকার সৈয়দ সামির অর্ণ বর্তমানে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাংলা মটরে বসবাস করছেন।
মেধাবী ছাত্রী শান্তা মারিয়া ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এসএসসি (প্রথম বিভাগ) এবং ১৯৮৮ সালে এইচ এসসি (প্রথম বিভাগ) পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে ১৯৯৪ অনার্স ও ১৯৯৫ মাস্টার্স পাশ করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় নারী নেতৃত্ব বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
শৈশব থেকেই তিনি শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জ্ঞানবান্ধব পরিবেশের ভিতর দিয়ে বেড়ে ওঠেন। শান্তা মারিয়ার ডাক নাম ভ্যালিয়া। তার জীবনের একেবারে শুরুতে আড়াই বছর বয়স থেকে বিটিভিতে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীসহ বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করে খ্যাতি পান এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করেন।
তিন বছর বয়স থেকে মুখে মুখে কবিতা লেখা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে প্রথম শিশু-কিশোর কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। বইটির নাম ‘মাধ্যাকর্ষণ’। বইটি প্রকাশের পর জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কুর্ট ওয়াইল্ডহাইম, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ বিশ্বের অনেক দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা বইটির প্রশংসা করে চিঠি দেন। এরপর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে শিশুদের পাতায় এবং সোভিয়েত নারী ও উদয়ন পত্রিকায় সাক্ষাৎকারসহ কবিতা প্রকাশিত হয়। পরবর্তিকালে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় কবিতা প্রকাশ হয় নিয়মিত। ভারতের সন্দেশ ও যুগান্তর পত্রিকায় আশির দশকের শুরুতে শান্তা মারিয়ার কিশোর কবিতা প্রকাশিত হয়।
১৯৯৭ সালে ‘দৈনিক মুক্তকণ্ঠ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় অপরাজিতা পাতার বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১০ বছর। ‘দৈনিক আমাদের অর্থনীতি’-এর ছিলেন মফস্বল সম্পাদক। সহকারী সম্পাদক ছিলেন ‘দৈনিক আমাদের সময়’ পত্রিকায়। এছাড়াও তিনি ‘রেডিও আমার’ এর নিউজ এডিটর; ‘চীন আন্তর্জাতিক বেতার’ এর বিদেশী বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক এবং ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’-এ সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ
‘দৈনিক আমাদের সময়’ পত্রিকায় ফিচার এডিটর পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি চীনের ইউননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই। বইটির নাম ‘সকল দোকান বন্ধ ছিল’। প্রচ্ছদ করেছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। শান্তা মারিয়া’র এ পর্যন্ত ৪টি কাব্যগ্রন্থসহ মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১০টি।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : সকল দোকান বন্ধ ছিল (১৯৯৬); এবং একতারা বৃক্ষ (২০০০); আমরা বলে কোনো গল্প নেই (২০০৪; ওম মণি পদ্মে হুম (২০১৭) ।
শিশু-কিশোর কাব্যগ্রন্থ: মাধ্যাকর্ষণ (১৯৭৯)।
অন্যান্য গ্রন্থ: বিশ্বের সেরা রূপকথার গল্প, প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড(১৯৯৬, সম্পাদিত); আকবর দ্য গ্রেট (মোগল ইতিহাসের গল্প, ১৯৯৬); জ্ঞানতাপস ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (কিশোরদের জন্য জীবনীগ্রন্থ, ২০০৫); সাহিত্যে পরকীয়া ও অন্যান্য (প্রবন্ধ সংকলন, ২০১৭); চকবাজার টু চায়না(ভ্রমণ গদ্য ২০১৭); পলাতক জীবনের বাঁকে বাঁকে(কমরেড মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহর স্মৃতি গদ্য, অনুলিখন, ২০১৭)।
শান্তা মারিয়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটসহ মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে পেপার উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইনে কলামিস্ট।
কবিতা, গল্প ও ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। মানবাধিকারবিষয়ক লেখালেখিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশী বিদেশী কবিতা উৎসবে অংশ নিয়েছেন। টিভির জন্য বর্তমানে লিখছেন সিরিয়াল নাটক, ‘নীল দাঁড়কাক’ এবং ‘মজুমদার প্রাইভেট লিমিটেড’। মঞ্চের জন্যও নাটক লিখেছেন।
শান্তা মারিয়া ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। এ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন– যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, চীন। মিথোলজি ও ইতিহাসপাঠ শান্তা মারিয়ার প্রিয় নেশা।