প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে..
কীর্তনখোলা
হেনরী স্বপন
জোনাকী দুপুর ঘুঙুর দুপায়ে হাঁসগুলো
খরগোশ কবি–মৃত্যুর ঝিনুক
পুনর্জন্ম ট্রামে . . .
বাদামি বসন্ত নিতম্বিনী ; রক্ত গালিচায় মৌনধ্যানে।
অবসর দিন। তৃণের মৃত্যুর কথা থাক।
সবুজ গোধূলি রঙধনু গারুড় পারদ।
কীর্তনখোলার ভরাগাঙে কাঁকড়া সঙ্গমি ;
সাত রঙে ঝাঁপ দিয়ে—
মৎস্য কন্যাদের রূপকথা ভেজাঅঙ্গে
উঠে আসে মনোরমা মাসিমার ডাক।
বেগম সুফিয়া, দেবেন দাদুর বয়সে রৌদ্রের
খরতাপ। ভোরের উঠোনে
মনসামঙ্গলে পয়ারসন্ধ্যার ফুল ঝরে।
আকাশ ইলশেগুঁড়ি। মেঘকেশ
ধানক্ষেতে বিবস্ত্র মূর্ছায় ১৯৭০-এর জলোচ্ছ্বাসে।
অতল অদ্ভুত প্রতারণা ; নগ্নিকা বয়স
অলৌকিক দোতারার সুর
অজস্র ঢেউয়ে . . .
… … … … … … …
- হেনরী স্বপন-এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “কীর্তনখোলা” একফর্মার। একটিই মাত্র কবিতা দিয়ে সাজানো হয় কাব্যগ্রন্থটি। কবিতার নামও “কীর্তনখোলা”।আমরা এই দীর্ঘকবিতার প্রথম অংশটুকু এখানে তুলে ধরলাম। তবে এই দীর্ঘ কবিতায় প্রবেশপর্বে পাঁচপঙক্তির আরেকটি কবিতা আছে। সেটি হলো–
কুশলের দিন নেই। মৃত্তিকা উর্বর নারী ; রুগ্ন গাঙচিল।
অদ্ভুত জমাট ; মাঝি ডিঙার বৈঠায় ভাঙ্গে বালু ঘোলা জল।
ধুঁকে ধুঁকে ক্রোধেও ঘুণের কাঁচাহাড়। গাঙ ঝিনুক মেললে ;
ক্লেদঅশ্রু লোনা ; আজো গোঁয়ার বর্গীর ভয়ে ব্যঙ্গ প্রতিদিন ;
ছিন্ন উজানির হাঁকে ; বিচ্ছেদ আক্রোশে কূলপ্লাবী—কল্পলতা।
[সম্পাদক]
নব্বই দশকের অগ্রগণ্য কবি হেনরী স্বপন। নব্বইয়ের যে কযয়কজন কবি পরবর্তীকালে তাদের লেখায় নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন, হেনরী স্বপন তাদের একজন। কবি পরিচয়ের বাইরে তিনি প্রাবন্ধিক ও শিশুদের ছড়া লেখক এবং ‘জীবনানন্দ’ ছোটকাগজের সম্পাদক।
জন্ম ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারী। পিতা জন হাওলাদার, মাতা লীলাবতী হাওলাদার। স্ত্রী : মারিয়া লাকী সরকার ও একমাত্র কন্যা : কসটিকা চিনতী। মেয়ের বিয়ে হয়েছে, সে তার বরের সঙ্গে সুদূর আমেরিকায় বসবাস করছেন। মেয়েরও একটি কন্য সন্তান আছে। কবি এখন তার সেই নাতনীর জন্য নিয়মিত ছড়া রচনা করছেন। ইতোমধ্যে তার ছড়ার সুনাম ছড়াসাহিত্যের জগতে অন্যমাত্রা যোগ করেছে।
কবি হেনরী স্বপন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের প্রাইমারি ও হাইস্কুলে এসএসসি পাশের পর বরিশাল কলেজে পড়াশুনা করেছেন। এখানকার স্থানীয় একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন বহুবছর। বর্তমানে চাকরি ছেড়ে ফুলটাইম লেখালেখি করছেন।
কবি বলেন, প্রাইমারিতে পড়ার সময় স্কুলের ফাদার রিগবির কাছ থেকে পাওয়া পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়া কবির প্রথম বই ছিল মিনি সংস্করণের একটি ‘পকেট বাইবেল’। ছেলেবেলায় ওটি পড়ার মধ্য দিয়েই তার পড়াপড়ি জীবনের শুরু হয়েছিল আর, লেখালেখিটা শুরু হয়েছিল, হাইস্কুলে পড়ার সময়টাতেই। তবে লেখালেখি পুরোদস্তুর শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। বরিশালের ছাত্র ইউনিয়নের “জয়ধ্বনি” ভাঁজপত্রে প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়েছে ওই ৮৫’তেই। এরপর ঢাকা থেকে প্রকাশিত খ্রিস্টান কমিউনিটির সাপ্তাহিক ‘প্রতিবেশি’ পত্রিকায় নিয়মিত ছড়া/কবিতা প্রকাশিত হত। তবে, ১৯৯০ সালে তখনকার সর্বাধিক জনপ্রিয় দৈনিক ‘বাংলার বাণী’র সাহিত্য পাতায় ‘ছায়াসঙ্গী’ শিরোনামের একটি কবিতার মাধ্যমে তার আত্মপ্রকাশ।
বর্তমানে কবি বরিশালে দৈনিক মতবাদ এর মাসিক ‘ইতিবৃত্ত’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সংগঠন, পত্রিকা এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সম্পাদনা, লেখালেখি ও সাহিত্যকর্মের জন্য গ্রহণ করেছেন নির্বাচিত কিছু সম্মাননা ও পুরস্কার।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
কীর্তনখোলা (একফর্মা কাব্যপুস্তিকা ১৯৯৪); মাটির বুকেও রৌদ্রজ্বলে (একফর্মা কাব্যপুস্তিকা ১৯৯৪); বাল্যকাল ও মোমের শরীরে আগুন (১৯৯৮); জংধরা ধুলি (২০০১); কাস্তে শানানো মোজার্ট (২০০৪); ঘটনার পোড়ামাংস (২০০৯); হননের আয়ু (২০১১); উড়াইলা গোপন পরশে (১৪১৮); শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১৫); মৃত মনিয়ার মতো (২০১৮); আলপথ দূরে (২০২০)।
গদ্যগ্রন্থ : ছোটকাগজের ক্রান্তিকাল ও অন্যান্য (২০১৬)।
সম্পাদনা : ‘জীবনানন্দ’ (লিটলম্যাগ)