প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে..
তিন বছরের এই আমি
প্রবীর বিকাশ সরকার
তুমি তাকালে যেই আমার দিকে আমের বউলে এখন
সংক্রামিত হল তোমার স্তনের প্রাণ ধীরে ধীরে প্রথমে
তারপর আমার ভেতর, হৃদয়ে, এই অসুখে জেনেছি আমি
মায়ের কাছে কতটুকু ছেলে তার আর তোমার কাছে;
তুমি তাকালে আমার দিকে; আহা এত সুন্দর তুমি
চুল বাঁধোনি খোঁপায় সমস্ত চুল গুটিয়ে এনে তবুও;
গতরাতের বাসি আতর এখনো শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে
তবু আমি বসে আছি সদ্য ভোরের সামনে, কী প্রশান্তি।
এই অসুখে জেনেছি তুমিও অলস, দিন যায় না তোমারও
নির্দিষ্ট দিনের কতদিন বাকী, আমি ছাড়বো এই বিছানা
তুমি সেইদিন খুব সেজে আসবে আমার ঘরে সকালে
চুমু খাবে আমার দুর্বল ঠোঁটে, আলোহীন আলোয় আহা!
সেদিন জানবো আরো মায়ের কাছে কতখানি ছেলে তার
আর তোমার কাছে তিন বছরের এই আমি কতখানি।
প্রবীর বিকাশ সরকার একাধারে কবি ছড়াকার, অনুবাদক, ঔপন্যাসিক, সম্পাদক ও গবেষক। তিনি ২০ ডিসেম্বর ১৯৫৯ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। দুই বছর বয়স থেকে বাবার চাকরিসূত্রে কুমিল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস। এখানেই শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথম পর্বটা কেটেছে।
স্ত্রী নোরিকো মিয়াজাওয়া এবং কন্যা টিনা মিয়াজাওয়াকেে নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন জাপানের টোকিওতে।
লেখালেখির শুরুটা ১৯৭৬ সালে ছড়া লেখার মধ্য দিয়ে। পড়াশোনা করেছেন ভিক্টোরিয়া কলেজে। এরপর ১৯৭৮সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ১৯৮৪ সালে এমএ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালীন জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতির শিক্ষার্থী হিসেবে জাপান প্রবাসী হন। উচ্চশিক্ষা শেষ করে চাকরি এবং বিয়ে দুটোই ওখানে। ১৯৮৭-২০০৬ সাল পর্যন্ত একটানা বিভিন্ন আধুনিক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে প্রি-প্রেস প্রযুক্তিবিদ হিসেবে চাকরি করেন ও কাজ শেখেন। ১৯৯১ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ জাপান শাখা’ গঠন করেন। একই সালে জাপানে প্রথম মুদ্রিত তথ্যভিত্তিক বাংলা কাগজ ‘মানচিত্র’ প্রকাশ করেন। মাসিক হিসেবে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে জাপানে ও ঢাকায়। ১৯৯৪ সালে ‘আড্ডা টোকিও: একটি সৃজনশীল পাঠচক্র’ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে পরিকল্পক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে ‘বাংলাদেশ লেখক-সাংবাদিক ফোরাম জাপান’ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। একই সালে গঠন করেন ‘জাপান-বেঙ্গল এসোসিয়েশন’।
১৯৯৯ সাল থেকে টোকিও, কানাগাওয়া, সাইতামা, ইবারাকি প্রভৃতি জেলার আঞ্চলিক বিচারালয়ের তালিকাভুক্ত জাপানি-বাংলা ভাষার দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন। ২০১১ সালে জাপানে রবীন্দ্র সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন তিনি। তিনি অতিথি গবেষক হিসেবে জাপানের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়(২০০৪-৫ ) ও গিফু মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্র, জাপান (২০২০) কাজ করেছেন।
প্রবীর বিকাশ সরকার জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদের হাট এর সদস্য হিসেবে সাহিত্যচর্চার শুরু ১৯৭৬ সালে।তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হলো:
কাব্যগ্রন্থ: সেই ঘরে সুন্দর (১৯৮৪)।
ছড়াগ্রন্থ: ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ (রাজনৈতিক ছড়া- ১৯৯৫, মানচিত্র, জাপান); অবাক কাণ্ড (শিশু-কিশোর ছড়া- ২০০২, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী)।
উপন্যাস: তালা (২০০৫ স্বরব্যঞ্জন); রাহুল (২০১৬, চৈতন্য); অপরাজিত (২০১৭, সাহিত্য বিকাশ); অপরাহ্ণে বৃষ্টি (২০২০, অনুপ্রাণন প্রকাশন)।
প্রবন্ধ সংকলন : জানা অজানা জাপান (১ম খণ্ড-২০০৮ মানচিত্র, ঢাকা); জানা অজানা জাপান (২য় খণ্ড- ২০০৯, মানচিত্র, জাপান); জানা অজানা জাপান (৩য় খণ্ড-২০১৫, অনুপ্রাণন প্রকাশন); জানা অজানা জাপান (২০০৮, হিন্দি সংস্করণ, দেশ প্রকাশন, দিল্লি); জাপানের নদী নারী ফুল (প্রবন্ধ / দশদিক, জাপান, ২০০৯); রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক (ইতিহাস বিবেকবার্তা, জাপান, ২০১১); Rabindranath Tagore: India-Japan Cooperation PerspectivesÕ (Essay Collection / India Center Foundation, Japan, 2011); জাপানে গণিকা সংস্কৃতি (প্রবন্ধ / চৈতন্য, সিলেট, ২০১৫); জাপানে রবীন্দ্রনাথ (ইতিহাস সংকলন / হাতেখড়ি, ঢাকা, ২০১৬); রবীন্দ্রনাথ ও জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক’ (প্রবন্ধ / আত্মজা পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০১৬); জাপানে রবীন্দ্রনাথ (প্রবন্ধ / বলাকা প্রকাশন, ঢাকা, ২০০১৭); জাপানি ব্যবসায়ীদের মননে রবীন্দ্রনাথ (প্রবন্ধ / আত্মজা পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০১৮); সূর্যোদয়ের দেশে সত্যজিৎ রায় (প্রবন্ধ / আত্মজা পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০১৯); রবীন্দ্রনাথ ও জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক (প্রবন্ধ / একত্রিত ৩ খণ্ড, আত্মজা পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০২০) ।
স্মৃতিকথা: অতলান্ত পিতৃস্মৃতি (২০১৯, অনুপ্রাণন প্রকাশন)।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মাসিক ‘মানচিত্র’ ( ১৯৯১-২০০২); জাতীয় শিশু-কিশোর সংবাদপত্র ‘কিশোরচিত্র’ (২০০৭ থেকে, বর্তমানে প্রকাশনা স্থগিত)।
সংগঠন: সাংস্কৃতিক এবং প্রকাশনা সম্পাদক (১৯৮৭-৯০), বাংলাদেশ সোসাইটি জাপান; গঠনের প্রধান উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক(১৯৯০) বঙ্গবন্ধু পরিষদ জাপান শাখা; প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, (১৯৯৪), আড্ডা টোকিও: মননশীল পাঠচক্র; প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (১৯৯৮), সাংবাদিক-লেখক ফোরাম জাপান;
পুরস্কার ও সম্মাননা: অধুনালুপ্ত চট্টগ্রামের দৈনিক জমানা পত্রিকা থেকে শ্রেষ্ঠ ছড়ার জন্য পুরস্কার (১৯৭৯); কলকাতার ছন্দচয়ন পত্রিকা থেকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা (২০০৫); বাঙালি কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য টোকিও বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটি কর্তৃক সম্মাননা (২০০৬); নিহনবাংলা ডট কম বিশেষ সম্মাননা (২০১৫); গুনমা, সাইতামা এবং তোচিগি প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষ সম্মাননা (২০১৯); বিবেকবার্তা বিশেষ সম্মাননা(২০১৯)