প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
হেঁটে যাব
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
পৃথিবীর সহোদর আমি পৃথিবী আমার
কেন এই পাসপোর্ট কাঁটাতার কাঁটাতার খেলা
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাব
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাব
উত্তর দক্ষিণ থেকে পূর্ব পশ্চিমে
ঈশান নৈর্ঋত থেকে বায়ু অগ্নিকোণে
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাব
এশিয়ার কান্না শোনো, ক্ষুধা জর্জর আফ্রিকা,
অনাবাদী জমি নেই, কুমারী জমিন?
ব্রাজিলের কানাডার অস্ট্রেলিয়ার ঘাসবন
স্বপ্নের গমখেত হতে চেয়ে ডাকে আয় আয়
কর্ষণে কর্ষণে কাম দাও ঘাম নুন জলে
দু’হাতে ফসল নাও তুলে,
পৃথিবী আমার আমি খুঁজে খুঁজে কুমারী জমিন নেবো
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাব।
পৃথিবী আমার আমি প্রয়োজনে ছেড়ে দেব বিশটি শহর
ব্রাজিলের বনে, কানাডায়, ’ মেরিকায়
অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপে রাশিয়ায়।
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাব
কেন এই পাসপোর্ট কাঁটাতার কাঁটাতার খেলা
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাব
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাব।
……………………………………………….
প্রথম কাব্যগ্রন্থ: বদ্ধমাতাল রোদে
প্রকাশক : অস্তিত্ব, ঢাকা
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭
প্রচ্ছদ : মাহবুব কামরান
মূল্য : কুড়ি টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬৪
কবিতার সংখ্যা : ৫০
……………………………….
জাহাঙ্গীর ফিরোজ সত্তর দশকের অন্যতম প্রধান কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ৬ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার করটিয়ার বীর-পুশিয়া গ্রামে।তার পিতার নাম একেএম মকবুল ও মাতার নাম জাহানারা বেগম। স্ত্রী শিরিন আখতার রুমা। তিনি একপুত্র ও এক কন্যার জনক।পুত্র মুনতাসির ফিরোজ সাদমান
ও কন্যা নাবিলা ফিরোজ কঙ্কাবতী।
জাহাঙ্গীর ফিরোজ করটিয়া সরকারী প্রাথমিকবিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী, চাঁদপুর হাসান আলী (জুবেলী) স্কুলে পঞ্চম থেকে
নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। জামালপুর হাই স্কুলে থেকে ১৯৭০ সালে মাধ্যমিক ও জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে একবছর
অধ্যায়ন করে করটিয়া সা’দাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ১৯৭২ সারে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৭৫ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি পিআইবি, দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক বর্তমানে দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা করে বর্তমানে অবসর জীবন যাপন ও লেখালেখি করছেন।
সত্তর দশকের শুরুতেই তিনি কবিতা লিখে অগ্রজ ও অনুজ কবি মহলে বিশেষ অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন। বাংলা ও ইংরেজির প্রধান কবিদের কবিতা অনর্গর মুখস্ত বলতে পারার বিশেষ এক ক্ষমতা অর্জন করেছেন এই কবি। লেখকজীবনে বোহেমিয়ান, নিজের লেখায় অগোছালো এই কবির কাব্যগ্রন্থ মাত্র দশটি। তিনি বলেন, যা লিখেছেন তার তিন ভাগের দুই ভাগই ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে। একভাগ মাত্র গ্রন্থভূক্ত হয়েছে।
প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থঃ ১. বদ্ধ মাতাল রোদে (১৯৮৬); ২. যে ছিল প্রাণের জরুরি (২০০১); ৩. চাকরিজীবীদের কোন স্পার্টাকাস নেই (২০০৩); ৪.অনুবিশ্বের
মেঘমালা (২০০৩); ৫.ছেঁড়া টুকরো মেঘ (২০০৪); ৬.লালনের পাখি উড়ে যায় (২০০৬); ৭.মৌরিবনের বাতাস (২০০৮); ৮. সাগরের গর্জন থেকে নুন রক্তে আসিল (২০১৫); ৯. সন্ন্যাসীর বাঁশির আগুন (২০১৯); ১০. ধাঁধাময় জগৎ সংসার (২০২০)।কবিতাসমগ্র (২০১৫)।
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ ১. শামসুল হক সাহিত্য পুরষ্কার ; ২.অরণি সাহিত্য পুরষ্কার; ৩. ময়মনসিংহ প্রসক্লাব সাহিত্য পুরষ্কার। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে তিনি আরো বহু পুরস্কার লাভ করেন।