প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
আবুল হাসান
আবুল হাসান
সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র, মায়াবী করুণ
এটা সেই পাথরের নাম নাকি? এটা তাই?
এটা কি পাথর নাকি কোনো নদী? উপগ্রহ? কোনো রাজা?
পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?
মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তীক্ষ্ণ তমোহর
কী অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর?
আমি বহুদিন একা একা প্রশ্ন করে দেখেছি নিজেকে,
যারা খুব হৃদয়ের কাছাকাছি থাকে, যারা এঘরে ওঘরে যায়
সময়ের সাহসী সন্তান যারা সভ্যতার সুন্দর প্রহরী
তারা কেউ কেউ বলেছে আমাকে-
এটা তোর জন্মদাতা জনকের জীবনের রুগ্ন রুপান্তর,
একটি নামের মধ্যে নিজেরি বিস্তার ধরে রাখা,
তুই যার অনিচ্ছুক দাস।
হয়তো যুদ্ধের নাম, জ্যোৎস্নায় দুরন্ত চাঁদে ছুঁয়ে যাওয়া,
নীল দীর্ঘশ্বাস কোনো মানুষের !
সত্যিই কি মানুষের?
তবে কি সে মানুষের সাথে সম্পর্কিত ছিল, কোনোদিন
ভালোবেসেছিল সেও যুবতীর বামহাতে পাঁচটি আঙ্গুল?
ভালোবেসেছিল ফুল, মোমবাতি, শিরস্ত্রাণ, আলোর ইশকুল?
কবি আবুল হাসান ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে। তার পিতা আলতাফ হোসেন মিয়া ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার।
ষাট দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আবুল হাসান। মাত্র ২৮ বছরের জীবনকালে রেখে গেছেন মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থ ও অগ্রন্থিত বেশ কিছু কবিতা। এছাড়াও রয়েছে গল্প ও কাব্যনাটক। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত লেখা নিয়ে রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। মেঘের আকাশ আলোর সূর্য অগ্রন্থিত কবিতা নিয়ে বের হয় একটি কাব্যগ্রন্থ। ১৯৬৬ সালের পাণ্ডুলিপি। ভূমিকা ও সম্পাদনা আবদুল মান্নান সৈয়দ। স্মৃতিচারণ করেন ষাটের বন্ধুকবি নির্মলেন্দু গুণ ও মহাদেব সাহা। সংগ্রাহক ও সংরক্ষক: শেহাবউদ্দিন আহমদ।মোট ৪৪টি অগ্রন্থিত কবিতা স্থান পায় এতে। এছাড়া বিদ্রাপ্রকাশ বের করে আবুল হাসান রচনা সমগ্র।
আবুল হাসান ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক ও বরিশালের বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বি.এ শ্রেণিতে ভর্তি হন, কিন্তু পরীক্ষা শেষ না করেই ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তাবিভাগে যোগদান করেন। পরে তিনি গণবাংলা (১৯৭২-১৯৭৩) এবং দৈনিক জনপদ-এ (১৯৭৩-৭৪) ও গণকণ্ঠে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আবুল হাসান অল্প বয়সেই একজন সৃজনশীল কবি হিসাবে খ্যাতিলাভ করেন। মাত্র এক দশকের কাব্যসাধনায় তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেন। আত্মত্যাগ, দুঃখবোধ, মৃত্যুচেতনা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, নিঃসঙ্গচেতনা, স্মৃতিমুগ্ধতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবুল হাসানের কবিতার মূল বিষয়। ১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হন। প্রথম কাব্রগ্রন্থের প্রথম কবিতায় নিজেকে শিরোনাম করে কবিতা রচনা একটি বিরল ঘটনা বলা যায়।
১৯৭৪ সালের ১৯ নভেম্বর জার্মানির বার্লিনে চিকিৎসার জন্য যান এবং ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিরে আসেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাব্যগ্রন্থ:
রাজা যায় রাজা আসে (১৯৭২, খান ব্রাদার্স);
যে তুমি হরণ করো (১৯৭৪, প্রগতি);
পৃথক পালঙ্ক (১৯৭৫, সন্ধানী);
গল্প:
আবুল হাসান গল্প- সংগ্রহ (১৯৯০)
কাব্যনাট্য: ওরা কয়েকজন (১৯৮৮)
পুরস্কার:
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫);
একুশে পদক (১৯৮২, মরনোত্তর)।