প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।]
বাংলা ভাষার অর্ঘ্যে
আবুবকর সিদ্দিক
হে প্রাণ
হে আমার প্রাণ
অনিদ্র স্নেহের দীপ জ্বেলে রাখো
অনির্বাণ আঁধার শিয়রে তুমি
তুমিই কি স্বদেশ আমার
নগনদী উদ্বেলিতা
দুগ্ধবতী জননী আমার
আমার আদিম উচ্চারণ
আবেগে রোমাঞ্চে।
হিরণ্য দৃষ্টির জন্ম সূর্যরাগে
তোমার সপ্রেম দুঃসাহসে।
আমার বুকের বিভা
হে আমার শোণিতবাহিনী
তুমি নও বশীভূতা আজো
অর্থ ও অনর্থের।
তুমি বৃতা অবিকার
একাকার প্রিয় অধিকারে
তোমাতে উঠেছে ফলে
রক্তমুখী একুশের দীপ্ত বীরগাথা
তোমাতে উঠেছে জ্বলে
শতফুল যৌবনের
উষ্ণাভ ইস্পাতপাতে।
শতায়ু সহস্র আয়ু অযুতায়ু
হে আমার অস্তিত্বের
ঐতিহ্য সম্রাট
হে আমার ইতিহাস অহংকার
আত্মার নিঃশ্বাস
আমার এ অণুপরমাণু
জীবনের কণাকণিকার গান
তোমার প্রেমের অর্ঘ্যে
প্রাণের প্রতিম
জীবন আমার।
আবুবকর সিদ্দিক কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সমালোচক হিসেবে খ্যাতিমান। ১৯৩৪ সালের ১৯ আগস্ট বাগেরহাটের গোটাপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মতিয়র রহমান পাটোয়ারী ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী এবং মা মতিবিবি ছিলেন গৃহিণী। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাগেরহাট জেলার বৈটপুর গ্রামে। পিতার সরকারি চাকরির সুবাদে ১৯৩৫ থেকে তিনি হুগলি শহরে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৪৩ সালে তার পিতা বর্ধমানে বদলি হয়ে গেলে তিনিও সেখানে চলে যান।
১৯৫২ সালে আবুবকর বাগেরহাট মাধ্যমিক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে সরকারি পিসি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৫৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি চাখার ফজলুল হক কলেজে শিক্ষকতা শুরু করলেও পরবর্তীতে বি এল কলেজ, পি.সি কলেজ, ফকিরহাট কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। এরপর দীর্ঘদিন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ঢাকার নটর ডেম কলেজ এবং কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
কাব্যগ্রন্থ: ধবল দুধের স্বরগ্রাম (১৯৬৯); বিনিদ্র কালের ভেলা (১৯৭৬); হে লোকসভ্যতা (১৯৮৪); মানুষ তোমার বিক্ষত দিন (১৯৮৬); হেমন্তের সোনালতা (১৯৮৮); নিজস্ব এই মাতৃভাষায় (১৩৯৭); কালো কালো মেহনতী পাখি (২০০০); কংকালে অলংকার দিয়ো (২০০১); শ্যামল যাযাবর (২০০০); মানব হাড়ের হিম ও বিদ্যুৎ (২০০২); মনীষাকে ডেকে ডেকে (২০০২); আমার যত রক্তফোঁটা (২০০২); শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০২); কবিতা কোব্রামালা (২০০৫); বৃষ্টির কথা বলি বীজের কথা বলি (২০০৬); এইসব ভ্রুণশস্য (২০০৭); বাভী (২০০৮); নদীহারা মানুষের কথা (২০০৮); রাভী।
ছড়াগ্রন্থ: হট্টমেলা (২০০১)।
গণসঙ্গীত: রুদ্র পদবলি; গণমানুষের গান।
উপন্যাস: জলরক্ষস (১৯৮৫) ; খরাদাহ (১৯৮৭) ; বারুদপোড়া প্রহর (১৯৬৬); একাত্তরের হৃদভস্ম (১৯৯৭, ২য় সংস্করণ ২০১০) ;
ছোটগল্প: ভূমিহীন দেশ (১৯৮৫); চরবিনাশকাল (১৯৮৭); মরে বাঁচার স্বাধীনতা (১৯৮৭); কুয়ো থেকে বেরিয়ে (১৯৯৪); ছায়াপ্রধান অঘ্রান (২০০০); কান্নাদাসী; কামাবর্ত; মুক্তিলাল অভ্যুদয়; কালোকুম্ভীর; মধুবন্তী; শ্রেষ্ঠগল্প; গল্পসমগ্র।
প্রবন্ধ: রমেশ চন্দ্র সেন; সাহিত্যের সঙ্গপ্রসঙ্গ কালের কলস্বর।
স্মৃতিকথা: সাতদিনের সুলতান।
পুরস্কার ও সম্মাননা: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) ; বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ পুরস্কার; বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ স্বর্ণপদক।; ঋষিজ পদক; আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার; বঙ্গভাষা সংস্কৃতি প্রচার সমিতি পুরস্কার (কলকাতা); খুলনা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার; বাগেরহাট ফাউন্ডেশন পুরস্কার; মুকুন্দ দাস-আলতাফ মাহমুদ সম্মাননা পদক; রাজশাহী সাহিত্য সংসদ পুরস্কার; আথতার জাহান রুমা স্মৃতিপদক; অতন্দ্র সাহিত্য পদক (কলকাতা); ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি গোল্ডেন এওয়ার্ড; জসীমউদদীন স্বর্ণপদক; জাগরেণের গান সম্মাননা।