প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
অভ্যাস
কাজী রোজী
(কবি আবুল হাসানকে নিবেদিত)
সম্পূর্ণ অভ্যাসের হাতেই বুনতে চেয়েছিলাম
একটি জাল
যা তুমি আগেই ছিন্ন করেছ
সম্পূর্ণ অভ্যাসের চোখেই দেখতে চেয়েছিলাম
একটি মন
যা তুমি আগেই অন্ধ করেছ
সম্পূর্ণ অভ্যাসের তুলিতেই আঁকতে চেয়েছিলাম
একটি স্বপ্ন
যা তুমি আগেই ভগ্ন করেছ
সম্পূর্ণ অভ্যাসের তাড়নায় ছুঁতে চেয়েছিলাম
একটি বুক
যা তুমি আগেই আঁকড়ে ধরেছ।
কাব্যগ্রন্থ: পথঘাট মানুষের নাম
প্রকাশক : রিমঝিম বৃষ্টি, ঢাকা
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ১৯৮১
প্রচ্ছদ : আবদুর রউফ
উৎসর্গ: তসবি গোনা মায়ের হাত
শাসন ভাঙা বাবার চোখ
রক্ত ধোয়া সুমির মুখ
মূল্য : ৭ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৪৮
কবিতার সংখ্যা : ২৭
কাজী রোজী ষাট দশকের অন্যতম কবি। তিনি সাতক্ষীরা জেলায় ১৬ আগস্ট ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কাজী শহীদুল ইসলাম ও মা কাজী বারীরা শহীদ।স্বামী সিকানদার আবু জাফর। তার একমাত্র কন্যা সুমি সিকান্দারকে নিয়ে কবি ঢাকায় বসবাস করছেন।
কাজী রোজী সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক ও গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনে দীর্ঘদিন তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করে ২০০৭ সালে অবসরে যান। তিনি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত মাসিক সচিত্র বাংলাদেশ এর সম্পাদক ছিলেন।
তিনি ১০ম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সাথে যুক্ত ছিলেন।
কাজী রোজী ষাট দশক থেকে লেখালেখি করে আসছেন।বেতার-টিভির জন্য লিখেছেন গান, মঞ্চের জন্য নাটক। তাঁর রচিত নাটক ‘কুসুম বেত্তান্ত’ ভারতের উড়িষ্যায় সাত্ত্বিক নাট্টসম্প্রদায় মঞ্চস্থ করেছে।‘কুসুম বেত্তান্ত’ শিল্পকলা একাডেমী ও মহিলা সমিতি মিলনায়তনেও মঞ্চস্থ হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হলো:
কাব্যগ্রন্থ: পথঘাট মানুষের নাম (১৯৮১); নষ্ট জোয়ার (১৯৮৫); ভালোবাসার কবিতা (যৌথ, ১৯৯৭); প্রেমের কবিতা (যৌথ, ১৯৯৮); কাজী রোজীর কবিতা (২০০০); আমার পিরানের কোনো মাপ নেই ; লড়াই (২০১৬); বাতাসের বৈঠা (২০১৭); কবিতা সমগ্র-১ ও ২ (২০১৮); মুজিবর বাঙালির স্বপ্নঘর (২০১৯); শেখ মুজিবুর বাঙালির বাতিঘর (২০২০)।
গল্পগ্রন্থ: মধ্যিখানে সিঁথিকাটা পুরুষ গো (২০১৯)।
জীবনীগ্রন্থ: শহীদ কবি মেহেরুন নেসা(২০১১)।
প্রবন্ধ-গবেষণা: রবীন্দ্রনাথ : রসিকতার কবিতা (২০১১)।
পুরস্কার ও সম্মাননা: তিনি কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে— লা-ফার্টিনা সম্মাননা ক্রেস্ট (১৯৮২); বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক (১৯৯৭); নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র পদক (২০০১); সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমী পদক (২০০২); মহাদিগন্ত সাহিত্য পদক (২০০৮); সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩); অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩)।