প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
শব্দিত পতন
মুহম্মদ নূরুল হুদা
অনন্তর অবয়বে শব্দিত পতন, শিরশির প্রজাপতি পাখার আওয়াজ,
মন্দ্রিত ভেরীর ডাক
ডুবে গেলো
পুঞ্জ
পুঞ্জ
ধুমট মোড়কে,
ভীষণ শব্দের পাঁকে ডুবে যাচ্ছি, আমি যেন ডুবে যাচ্ছি নিঃশ্বাসের
ফাঁদে।
নিঃশ্বাসের ফাঁদে ফাঁদে
ডুবে যাচ্ছি
ডুবে যাচ্ছি
ডুবে যাচ্ছি আমি—
আমার চৌদিকে শুধু
বেজে ওঠে
অলৌকিক হর্ণ
গুচ্ছ
গুচ্ছ
স্বরের নগর,
ধূসর অরণ্যে রণে চাঁদের চারণ,
অথবা চাঁদের বুকে মানুষের পা’র
বাতাসের কানে কানে সবুজ নিশান
কিম্বা
নিশানের কানে কানে বাতাসের স্বর।
আলোর পরীরা শোনো, রূপোর টাকার মতো চকচকে নাচের
মুদ্রা থেকে
এই মাত্র
ছিটকে পড়েছি আমি,
নির্ভার আমাকে নিয়ে
কেলি করে
শূন্যের শুকর,
কসমিক আলো জ্বলে,
এখানেও
অন্ধকার আধোমুখ কুঁয়োর দেয়ালে।
অনন্তর হিমহিম ট্রান্সমিটারেই শুনা যায় চাপা চাটা স্বর,
মাছের পিঠের মতো
ঝিলকিয়ে ওঠে কার
বুকের কাঁচুলি;
শব্দের জগৎ থেকে নির্বাসিত,
দৃশ্যের জগৎ থেকে নির্বাসিত,
এ আমাকে
কে তুমি নিচ্ছো টেনে
অস্তিত্বের অনড় অন্তলে,–
নিঃসীম কুঁয়োর নীড়ে তুমি কি সম্ভবা কোনো, জলের বিথার?
মুহম্মদ নুরুল হুদা ষাট দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। ঔপন্যাসিক, সাহিত্য-সমালোচক ও সংগঠন হিসেবেও তিনি তার দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি জাতিসত্তার কবি হিসেবেও পরিচিত। মুহম্মদ নুরুল হুদা কক্সবাজার জেলার পোকখালী গ্রামে ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ সেকান্দর ও মাতা আঞ্জুমান আরা।
তিনি ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি বাংলা একাডেমীর পরিচালক ও নজরুল ইন্সটিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।তিনি দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা, অনুবাদ, সম্পাদনা, শিশুসাহিত্য মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় শতাধিক।
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: শোণিতে সমুদ্রপাত (১৯৭২); আমার সশস্ত্র শব্দবাহিনী (১৯৭৫); শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি (১৯৭৫); অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী (১৯৮০); আমরা তামাটে জাতি (১৯৮১); শুল্কা শকুন্তলা (১৯৮০); নির্বাচিত কবিতা (১৯৮৫); যিসাস মুজিব (১৯৮৫); হনলুলু ও অন্যান্য কবিতা (১৯৮৭); কুসুমের ফণা (১৯৮৮); বারো বছরের গল্প (১৯৮৮); এক জনমে লক্ষ জন্ম (১৯৮৮); গালিবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা (১৯৮৯); আমি যদি জলদাস তুমি জলদাসী (১৯৯০); হ্যামিলনের রাজা (১৯৯০); তেলাপোকা (১৯৯০); জাতিসত্তার কবিতা (১৯৯২); প্রিয়াংকার জন্য পঙক্তিমালা (১৯৯২); মুজিববাড়ি (১৯৯৬); দেখা হলে একা হয়ে যাই (১৯৯৮); দরিয়ানগর কাব্য (২০০১)।
পুরস্কার ও সম্মাননা: তিনি একুশে পদক (২০১৫); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন। এছড়াও তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৩);
আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৫); আওয়ামী শিল্প সংবর্ধনা (১৯৮৭); কক্সবাজার পদক (১৯৮৯); মহাদিগন্ত সহিত্য পু্রস্কার, কলকাতা (২০০৭)।