প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
ফেরারী
দিলারা হাশেম
ফেরারী আসামীর মত
আতঙ্ক ভয় আর সন্ত্রাসে
জীবন কাটিয়ে দেই আমি।
অপরকে ভয় পাই
নিজেকে ডরাই তারো চেয়ে বেশী।
বিশ্বাসের মৃত্যু লগ্নে
জন্ম নিয়েছে এক
অতিকায় ভীতির রাক্ষস
যে আমাকে তাড়া করে
ফেরে নিশিদিন।
আমার স্বপ্নকে সে ছেয়ে দেয়
ফেলে আসা, ভুলে যাওয়া
হতাশার ছবি দিয়ে।
অনুভবে সে কেবলি
উঁকি দিয়ে ঠেলে ওঠে
গোপন চিন্তার যত
কুৎসিত লুকানো লুঠ নিয়ে।
বিবেক চাবুক মেরে
ভুলুণ্ঠিত করে দিলে তাকে
আমি হই ক্লান্তিতে
শবাধারে শতাব্দীর রক্ষিত
মমির মতন।
যন্ত্রণায় পিছু টানে
তবুও জীবন।
নব জাতকের মত
মমতার ছবি হয়ে
গোধূলিতে গৃহমুখী
কাফেলার ছায়া হয়ে
ব্যাকুল প্রেমের দুটি বাহু হয়ে।
আতঙ্কে ফিরে আসি
নিজের ভেতর।
পরোয়ানা নিয়ে দেখি
সেখানে দাঁড়িয়ে সেই
নিষ্ঠুর দানব।
হা হা হাসি হেসে বলে-
সব মেকী, সব ফাঁকি।
আমি হই পলাতক
ফেরারী তখন।
…………………………
১লা অগাষ্ট ১৯৭০, করাচী
দিলারা হাশেম ষাট দশকের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ও কবি। তিনি ২৫ আগস্ট, ১৯৩৬ সালে যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বজলুর রহমান খান ও মাতার নাম শওকত আরা। তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক(সম্মান)১৯৫৭ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তার প্রথম উপন্যাস ঘর মন জানালা ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। যা পাঠক ও সমালোচক মহলে বিপুল সমাদর পায়। পরবর্তীতে গ্রন্থটি রুশ ও চীনা ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং ১৯৭৩ সালে এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগে কাজ করছেন।
কাব্যগ্রন্থ: ফেরারি (১৯৭৭); মানবীর সুখ দুঃখ (২০০৩)।
উপন্যাস: ঘর মন জানালা (১৯৬৫); একদা এবং অনন্ত (১৯৭৫); স্তব্ধতার কানে কানে (১৯৭৭); আমলকীর মৌ (১৯৭৮); বাদামী বিকেলের গল্প (১৯৮৩); কাকতালীয় (১৯৮৫); মিউর্যাল (১৯৮৬); শঙ্খ করাত (১৯৯৫); অনুক্ত পদাবলী (১৯৯৮); সদর অন্দর (১৯৯৮); সেতু (২০০০); শেষ বিকেলের আলো; শেষ রাতের সংলাপ; টুইন টাওয়ার; রাহুগ্রাস; সিংহ ও অজগর; স্বগত সংলাপ; হামেলা; মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমগ্র (২০১১)।
গল্পগ্রন্থ: হলদে পাখির কান্না (১৯৭০); সিন্ধু পারের উপাখ্যান (১৯৮৮); নায়ক (১৯৮৯)।
অনুবাদ: সোনারঙের দিনগুলি (১৯৬০, ২য় সংস্করণ- ২০১৬, মূল লরা ইঙ্গলস্ ওয়াইল্ডার)
পুরস্কার ও সম্মাননা: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৬); শঙ্খচিল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪); উত্তর শিকাগো ‘কালচারাল এ্যান্ড লিটারারি ইঙ্ক’ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭); অলক্ত পুরস্কার (২০০৪); মুক্তধারা জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯)।