আড্ডাপত্র

৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১; ২১ নভেম্বর, ২০২৪;বিকাল ৫:৩১

কাজী জহিরুল ইসলাম এর গুচ্ছকবিতা

আড্ডাপত্র

অক্টো ১৩, ২০২০ | গুচ্ছ কবিতা

সাহস

মার্কিন তরুণীদের স্ফীত বুকে বেড়ে ওঠে
অমিত সাহস দ্বিধাহীন।
কুঁজো হয়ে হাঁটে যারা, প্রাচ্যনারী, ওড়নায় লুকিয়ে সাহস,
সারির পেছন থেকে করে আফসোস।

যারা রাজপথে, উঁচু মাথা, বুকে প্রস্ফুটিত সাহসের লিলি,
ওরা আজন্ম স্বাধীন।

সাহসের পদ্ম শুধু স্বাধীন পুকুরে মেলে ডানা।

কুঁজো নারী, যতোই লুকিয়ে তাকে রাখো,
দ্বিধার কাপড়ে তুমি ভয়ে ভয়ে ঢাকো

তোমার গোপন ফুলে ওরা দেয় বারবার হানা।

মল্লিকা ফুল

মাঝে-মধ্যে খুব সকালে
ঘুম ভেঙে যায়।

জরাজীর্ণ তিনটে দালান
পার হয়ে যে
কদিন আগেই উঠলো গড়ে
কী যেন কী
রিয়েল এস্টেট কোম্পানিটির হলুদ বাড়ি,
ওদের ছাদে মল্লিকা ফুল
ফুটবে বলে দৃষ্টি মেলি।

এই শহরে এখন আমি অপাংক্তেয়
সহস্রাব্দের বেকার যুবক,
আমার মতই অর্থনীতি
প্রাচীন ঢাকার এই বাড়িটির
জীর্ণ ঘরের পলেস্তারা
যাচ্ছে খসে;

ওখান থেকে দৃষ্টি ফেরাই
তাকাই আমি সদ্য গড়া হলুদ বাড়ির
স্নিগ্ধ ছাদে
আবার যদি মল্লিকা ফুল পাপড়ি মেলে
ভোর না হওয়া
ভোরের আলোয়।

এখন আমার মাঝে-মধ্যেই
ঘুম ভেঙে যায় খুব সকালে।

হয়ত আমি কিছু একটা স্বপ্ন দেখি,
হয়ত আমি ঘুমের ভেতর
নতুন কোনো গল্প লিখি,

হয়ত আমার গল্পে কোনো মল্লিকা ফুল
ভোর না হওয়া ভোরের আলোয়
পাপড়ি মেলে।

ঘামগ্রন্থ

সমুদ্রের অববাহিকা ছিল না
ছিল না নরোম কাদা
সুপক্ক যবের ঢেউ এ-মানবগ্রহে লিখেছেন যারা
তাদের রচিত ঘর্মাখ্যান শোনাব এখন।

তাদের হাতুড়ি সঙ্গীত এখনও বাজে মাখঞ্জা শৃঙ্গমালায়
সহস্র বর্ষের ঘামে, রক্তে ও ক্রোধে বারবাটন
গলে গলে উর্বরা, নরোম কাদা।
এখানে ছিল না নগর, দালান সারি সারি
এই বিটুমিন রাস্তা, উঁচু-নিচু, মসৃণ, পাহাড়ি
লিখেছেন আমার প্রয়াত দাদা, পরদাদা।

সেইসব ঘামগ্রন্থের মলিন, ভেজা পৃষ্ঠাগুলো
আমি পড়ে শোনাব এখন।
গ্রন্থের অক্ষরগুলো ভেজা ঘামে, রক্তে;
ক্রোধ আর সাফল্যের বাক্যে রচিত সকাল;
ব্যর্থতার যতিচিহ্ন দীর্ঘতর করেছে রাতের অন্ধকার।

হাতুড়ি ও লাঙ্গলের আঘাতে আমার পূর্বপুরুষেরা
ভেঙেছে নিস্ফলা পাথরের ঘুম।
স্বপ্নের উজ্জ্বল অশ্রুবিন্দু তৈরী করেছে সুবর্ণ কাদা
যার নিচ থেকে টেনে তুলেছি তোমাকে
হে সোনালী যবের সন্তান।

এখন আমিও অশ্বত্থ

বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি
মৃত্যু আমাকে গ্রহন করেনি
বার বার আমাকে টেনে ধরেছে জীবন
কোথাও তখনও কিছু ছিল বুঝি বাকি
বুঝি এখনও আছে।

প্যাটিওর ইটের ফাঁকে গজিয়ে ওঠা আগাছার ভয়ার্ত চোখ আমি দেখেছি
যদি আর একটি দিন বেঁচে থাকা যায়
জীবনের দিকে বাড়িয়ে দেয় সন্ত্রস্ত পত্রগুচ্ছ
যদি ভোরের আলো এসে আরও একটি নতুন দিনের গান শুনিয়ে যায়…

এই তৃষ্ণা আমারও ছিল
আমিও তখন মানুষের পায়ের নিচে গজানো আগাছা
দুপুরের রোদে নুয়ে পড়ার আগেই উঁচু হয়ে দেখে নিতাম অশ্বত্থের উঁচু ডাল।

কত কতবার পথচারীর পায়ের নিচে পড়ে ছুঁয়েছি মৃত্যু
ছুঁড়ে দেয়া বোতলের উচ্ছিষ্ট থেকে গড়িয়ে পড়া জলে কতবার বেঁচে উঠেছি,
তবু ভোরের আলোর গায়ে ভর দিয়ে দেখেছি অশ্বত্থের উঁচু ডাল,
কী অবিরাম বাতাসে দোলে তার নিরাপদ পাতা।

এখন আমিও অশ্বত্থ
আমিও ঝড়ের চেয়ে মজবুত
তবু বার বার মনে হয় সব ডাল নিয়ে ভেঙে পড়ি মৃত্যুর গুহায়।

বিকেলের হাঁটা

লকডাউন থেকে উঠে আসা যুবতীরা
সকল জানালা খুলে
সহাস্যে হাঁটছে কানিংহাম পার্কে।

গ্রীষ্মের বাতাসে ঝালরের মতো
দুলছিল দেহের নির্জন পর্দাগুলো;
রোদের পাখিরা
তখন চঞ্চুর আঘাতে আঘাতে
খুলে ফেলে সিন্দুকের গোপন দরোজা।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০