কবি কামাল আহসান একজন আধুনিক বাংলাদেশি কবি ও কথাসাহিত্যিক। তিনি ১৯৭৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার উত্তর কেশবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বাংলা সাহিত্যে নব্বই দশকে যে ক’জন মেধাবী কবির আবির্ভাব ঘটে তাদের মধ্যে কবি কামাল আহসান অন্যতম। জীবনে বিশ্বাস যার স্রষ্টার প্রতি, কবিতার ছন্দে ছন্দে সেই বিশ্বাসের স্ফুরণ পাখনা মেলেছিল। এছাড়া সত্য, সুন্দর, পরকাল, নবি-রাসুল, দেশপ্রেম ও প্রেম-ভালোবাসার মতো ইতিবাচক বিষয়-আশয়ই ছিল তার লেখার মূল অনুষঙ্গ।
তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘প্রণয়দষ্টিতা’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আহসান জেনে গেছে বরফের ছল’ প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে। তারপর দীর্ঘ বিরতি। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষ মানুষ বলে সুনাম ছড়াবো’ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে এবং কাব্যগ্রন্থ ‘বিমুগ্ধ সন্ধ্যার গান’ ২০২১ সালের একুশে বইমেলায় যখন স্থান পায়, তখন তিনি আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। কবির জীবদ্দশায় তাঁর নিজ হাতে তৈরি করা শেষ পাণ্ডুলিপি নিয়ে আরেকটি কাব্যগ্রন্থ ‘রঙের রাধিকা’ প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালে। একক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন যৌথ কাব্যগ্রন্থে তাঁর বেশকিছু কবিতা স্থান পেয়েছে। কবির লেখা অসংখ্য কবিতা এখনও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে, যেগুলো ধীরে ধীরে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তিনি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত ছিলেন। এছাড়া তিনি শেকড় সাহিত্য পত্রিকা ও বেশ কয়েকটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার সাথে জড়িত ছিলেন।
আড্ডপত্রে আজ অকালপ্রয়াত কবি কামাল আহসান এর দশটি নির্বাচিত কবিতা প্রকাশ করা হলো।-সম্পাদক।
কামাল আহসান – এর গুচ্ছকবিতা
রাতের চলচ্চিত্র
তারাভরা রাত কেটে যাবে ফুরাবেনা স্বপ্নেরসাধ;
আমার ছবিটা আকাশে ঘুরতে ঘুরতে, ঘুরতে ঘুরতে;
বালকের সফল ঘুড়ির মতো ফিরবে তোমার ঘরে।
মাঝরাতের ঘুমেরা প্রহসন করবে; জাগাবে নজর
খাটহীন তোমাকে উন্মাতাল আর সর্পিল অন্ধকার।
শুকিয়ে যাওয়া কলাপাতার মতো নেতিয়ে পড়বে;
বেগুনী আগুনের আলপনা টানবে তোমার তোমাকে,
পাবেনা সুরের স্রোত, পাবেনা স্বরের নামতাদি কোন,
ডানাভেজা পাখির মতো জাগবে চোখেরা একা;
পুরুষের বুকের মতো ঘাসঘনো সলাজ ছবিতা।
ভাবনারা ঘেমে গেলে থেমে যাবে আসমানের রসিক হাসি,
কোন রাতেই আমাকে আর ভাবতে পারবেনা পরবাসি।
তার চেয়ে বলো আষাঢ়কে ভালোবাসি; বৃষ্টিরা আহার,
পরোয়া করবো দুজনার রাত; গুণধর ঘুমের বাহার।
ভোরের পাখিরা ডাকলে জাগবে তুমি; পুকুরের ঘাট করবে
আহবান, পাল্টে যাবে চলন তোমার; বৃক্ষময় তুমিতে আবার,
হেঁটে যাবে বাগানের ভোরের মতন গেয়ে জলগান।
কামনার কৈফিয়ত জমিয়েছো রাতজাগা বুকে?
খিলিপানের সুনামের মতো প্রেম হবে মেহমান।
তোমাকে নিয়ে খেলছেন যিনি নিজ খাজনায়,
আরাধনা শুকায়নি তার দাড়িয়ে অপূর্ণ রোদে;
সকালের বেদনায় সব অন্ধ অবয়ব জন্ম নেয়।
নারী ওগো, মা আমার প্রথম শব্দঘর বেদনার,
বোনেরা খেজুর পাতার ঘরেও মমতার সম্ভার।
দশমাস আঁচলভিটায় ঘুমেরা নড়ে পরম কামনায়,
ভুল মোহনায় তবু কেনো আগুন জ্বালাও জলে?
ঘুমহীন নজর পাঠাও চেনাজনা দুর্বল সিনেমায়।
তাপের আদর
সকাল হলেই ভাঙ্গাচোরা স্বপ্নের সাথে দেখা হয়।
শ্রম ও শ্রমিকের কারোরই নয়,
নয় ভাসমান সংসারের চন্দ্রনিলয়,
নয় কারখানার নিশ্চিত অবক্ষয়,
নয় চাহুনির বিরামহীন বিনিময়।
নয় ভুল সুরে আর লয়ে- যারা ঘামের গন্ধকে বিলায়,
গ্রামিন খালেরা যেমন আজ স্মৃতিতে ও ছবিতেই বয়।
নয় প্রেমিক প্রেমিকার আত্মগোপন ভিনপথ, কুবলয়;
আঁধার ঘিরে হারিয়ে যাওয়া পথহারা নাগরিকের দায়।
আজ অনুজ্জ্বল পৃথিবীজুড়ে প্রেতাত্মার ডিনার হয়;
দিনভর কাঠুরিয়ার শুকনো কাঠেরা ভিজে কঁচি হয়,
রাতের কালো টেবিলে নাচে গণতন্ত্রের বিশেষ বিজয়।
সকাল হলেই নাচের সকল মুদ্রারা অতৃপ্ত টাকাতে রূপ নেয়,
আগুনে রাখলে হাত তাপেরা আরো আরো আদর পাঠায়।
আয়নার সাথে শত্রুতা
আমরা যখন আয়নার থেকে দূরে থাকি; ছলনায়,
ফসলের মাঠ দূরে রেখে চলি যখন মহাসড়কে,
মানুষের ছায়া আমাদের পিছু নেয়; খুব অন্যায় নয়।
চেনাজানা অভিনয়ের মাঝখানে হেসে উঠি মঞ্চে;
হল ভর্তি দর্শক কাঁদতে চেষ্টা কেরও ফেরত যায়,
আঙ্গুলের অশ্রু মুছতে মুছতে কেটে যায় টিকেট সময়।
সমুদ্রের ওপাড়ে জলের আয়নারা কথা বলে;
হাসির ফোয়ারা লেপটে পড়ে; আমাদের অন্দর ঘরে ধরি,
মানুষের মুখের মতোন কাচের জানালার থেকে সরি আনমনে,
লোহার গরাদে জিহবা আটকে গেলে মাগো বলে চিৎকার করি,
সমুদ্রের থেকে পানা চাইতে ঘুড়ির মতোন তুলি চোখ আসমানে।
মানুষেরা আজ সব দেখতে জেনেছে; চেনেনি নিজের হাত,
পৃথিবীর সব আয়নায় দিন দেখা যায়; দেখাতো যায়না রাত।
ঘরের আয়না খুঁজে নিজ পা দেখেন না যে নারী,
তার সাথে কবি এবং কবিতার আজন্মের আড়ি।
আগুনের ক্যানভাস
ক্যানভাসের ছায়া জুড়ে জ্বলে উঠেছিলে তুমি,
একজীবনের দশহাত দিয়ে আঁকবো তোমায়;
দুচোখ রাতের; তোমার মতোন কালের মরুভূমি।
কিছুটা যাদুর রঙ, কয়েকশো মাতাল তুলি আছে দশহাতে হায়!
আঁকতে গেলে আঙ্গুলগুলো হাত আর হাতগুলো আঙ্গুল হয়ে যায়।
আগুনের ঘুম নেই; থাকেনাতো ঘোড়ার বিছানা,
রাত গলে যাক ঘুমের পাতিলে; প্রণয়ের কনা।
পাকঘরের দেয়াল জুড়ে মহিমাময় কালের কালি,
লাউ ডগায় গড়েছি তুলি; ক্যনভাসে ভাসে হেয়ালি।
সড়কের শব্দের মতোন রাতভর আঁকি এক মুখ,
জগতের আঙ্গুল এক হলো সব, না ভুলে অসুখ।
তোমায় আঁকতে জাগছে অসুখ রাতের সফেদ মুখ,
ঘুমের আঙ্গুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে ডাকতে ভীষণ সুখ;
একজীবনের সব দেয়ালে আঁকছি সুখ আর দুঃখ।
ধুলিয়ার জন্য প্রার্থনা
কবি আবুল হাসানকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম,
কোথায়? কি নামে জাগে আপনার ডাকঘর?
বলেছিলো, এসব আদতে থাকবার নয়;
তরঙ্গও পেতে পারে রানারের বয়ে চলা পত্রের ভার।
কয়েক মুহূর্ত লাগতে পারে বলে, এক মুহূর্ত হাসলেন কবি।
কবিরা হাসেন নদীর ভাঙ্গন থেমে যাওয়া ধুলিয়া ইউনিয়নের মতো,
বাউফলের সুন্দর সীমানার মতো, নিরাপদ জনতার মতো তিনি হাস্যরত।
রুদ্রের কাব্যের মতো এই গ্রামের জনতা সকল;
আকাশের ঠিকানায় মোনাজতরে পাঠায়।
নেতাদের নদী নেই; আছে ভোটের আবেদন বগলে,
সংসদে গান হয়; রাজনীতিক তবলা বাজায়।
প্রেমের কবিতার মতো সবুজের সমারোহে তরতাজা;
গ্রাম রয়েছে গ্রামের ওপাশের চাঁদকাঠির গ্রামে,
ধুলিয়ার মেঠোপথেরা রুপালী ইলিশের সখা;
নদীর মাছেরাও নামে, ভাঙ্গন রোধের প্রার্থনায় নেমে ঘামে।
আমরা তাদের জিহবা পোড়ানো দেখতে পাবোই!
এজরা পাউন্ডের ক্রধের রঙেই বলছি!
নজরুলের সফল বিল্পবের মতো শক্ত করেই লিখছি,
মাবুদের নিকট বেহেস্ত-দোযখ দেখতে চাইবো দুটোই।
নেতাদের ফলাফল দেখবো! ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে শিখছি।
পাড়ভাঙ্গা ধ্বংসের পাশে দাড়ালেন- আবুল হাসান, কামাল আহসান।
তুমি কি তাদের জিজ্ঞেস করবে পাপের ডাকঘর,
অপরাধ কত সুনসান? জিজ্ঞেস না করেই কবুল করো হে মহা মহিয়ান।
ধুলিয়ার ভোট সব কেড়েছে মাফিয়ার প্রতারক;
ঢাকায়; বসবাস করেন ‘ তাহারা ‘ উপর তলায়,
কবি রেগে বললেন, আমার কবিতা যোগ করো!
মাবুদের কাছে মোনাজাত করার বেলায়।
রাজনীতি আজকাল জনতা ও কবিতা কিছুই চেনেন না, হায়! হায়!
অধিকারের জমাট মোহনায় যোগ হলো কবিদের মোনাজাত এবং আদায়।
কবির ছায়া
কবির ছায়ারা রৌদ্রতেজ অতিক্রম করে যায়।
চাঁদের শুভ্রতাকে করে প্রত্যাখ্যান ভরা জোছনায়;
তারপর হেসে ওঠে ধুলিময় ধরণীর দিকে চেয়ে।
ঘরভরা বোনদের মতোন আকাশ জুড়ে থাকে
পরিপাটি নক্ষত্রের ঝুড়ি;
প্রিয়ার ঠোঁটের মতো খুব কাছে থাকে পূর্ণাঙ্গ চাঁদ;
পাশ ফিরে ওড়াবার মতো কাব্যের ঘুড়ি।
কবির ছায়ারা থামেনা কোথাও –
পায়ে হেঁটে ঘুরে আসে সব ফেরেস্তার সৌরালোক,
তবু হারায় না নিজে সুবহে কাজেব; সুবহে সাদেকে।
কবির ছায়ারা মাড়িয়ে যায় ভুল কুটনীতির হাত,
নুয়ে পড়ে পৃথিবী কবিদেহের উজ্জ্বলতার নিচে;
হাসে নববধূর আঁকা হেমন্তের মিহি বাঁকা মাঝরাত।
দিবসের ডাকে ভোর বানাতে লজ্জা পায় সূর্য-
জোছনাভেজা রাতে একা জাগে শুল্কপক্ষের চাঁদ,
রৌদ্রময় দিন আর জোছনার ছায়াকে নাড়িয়ে চলা;
এই হলো সংসারবিহীন পরিপাটি এক কবির বরাত।
রূপালি চিকিৎসক
রুপালি তার সাদা চুড়ি খুলে বলেছিলো, পাল্টে ফেলবো সব।
তুমি ফিরে পাবে সুস্থতা আর আমি সাদার থেকে মুক্ত হয়ে আবার লাল হবো;
গাঢ় লাল হবো রোজ রোজ তোমার পূর্বাকাশের মতো।
এই দেখো আমার দুহাতে আগুন জ্বলে পারমানবিক চুল্লির অধিক,
পৃথিবীর প্রথম পোড়ানো কাঁচা কাঠ আমি।
তোমার অসুখে তাই আমি ঘাসফড়িংয়ের মতো সবুজে-হলুদে নীল রঙের খুশি।
আমার শরীর থেকে হাতে ছিন্ন করো, তুমি সুস্থ হবে,
পায়ের নখের থেকে মুছে ফেলো গতিহীন আলপনা,
পাতা একেঁ দাও, তুমি সুস্থ হবে; তুমি হবে সাবলিল আরাধনার নহর।
আমার মাথার উপর শ্রাবনের ধারা বর্ষন করো,
চুলগুলো হোক কালবৈশাখীর কালো মেঘ, তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।
রাতের থেকেও অঢেল স্রোতে স্পর্শ করলে
আমাকে তুমি পাবে পৃথিবীর প্রথম বসন্তের নারী,
তুমি সুস্থ হয়ে যাবে আইউব নবীর মতো করে।
অসুস্থ তুমি একবার এই বিবি রহিমাকে মেনে; তারপর ছুঁয়ে দেখো আমাকে!
পঞ্জিকাবর্ষের সিধুঁর ছোঁবে না তোমাকে।
পাবে ভবিতব্যের গনগনে মুখোরিত প্রথম থেকে পৃথিবীর সর্বশেষ রাত।
যে রাত মানেনা অন্ধকার, পরোয়া করেনা জোছনা।
নারীর চন্দ্রগ্রহনে আঁকা থাকে লালসাদা পূর্ণতা তার।
তুমি সুস্থ হয়ে যাবে, শুনবে পলাশ ফুলের ঝরে পড়ার সুগন্ধি গান,
শরীরে পাবে ভোরের জলে ভেজা আগুনের মোহনিয় তাপ।
গ্রহনে সাহস লাগে যতো; দিতে লাগে তারও অধিক,
যা চিকিৎসকের কলমে নেই; নেই কোন ঔষধের জেনেরিক অক্ষরে,
পরীক্ষা পত্র আর প্রেসক্রিপশনের কোন পৃষ্ঠায় লেখা নেই এইসব ধার্মিক সাহসের নাম।
কালো সিথির ছোঁয়ায় আজ তোমাকে দেবার রয়েছে সাম্যের সব রস,
নাও প্রিয়, সুস্থ হও, চন্দ্রমাসের পনেরো গেলে থাকবে না আমার সাহস।
সাপের গুহার সোহাগ নিয়ে
তোমার আকাশ নীল বর্ণ আমার আকাশ কালো,
রাত বাগানের লতার মতো নেভাও চাঁদের আলো।
২.
তোমার ছোঁয়ায় স্বর্ণ পদক; অনেক দামি সে,
আমার জনম মাটির মায়ায়; প্রণয় নেবে কে?
৩.
ধূলিয়ালোকের নরম মাটির গড়া নরম হৃদয়,
চন্দ্র নিলেন পদতলে প্রেমিক দিলেন বিদায়।
৪.
দম্ভের ঘরে ছাউনি যেমন শূন্য পানির মাছ,
নারীর নি:শ্বাস পুরুষ শূন্য; মাটি শূন্য গাছ।
৫.
নেতা তুমি শাক দিয়েই ঢাকছো বাসি মাছ,
প্রজারাতো ভরছে উদর ভাবছে খাবার খাস।
৬.
তোমার দিবস পানসেচোখা বিকেল অর্বাচীন
অহংকারটা ঢুকলে মনে; আবেগ অঙ্গহীন।
৭.
তোমার- আমার কারোই নেই নিজস্ব আকাশ
সাপের গুহার সোহাগ নিয়েই করছি স্বর্গবাস।
৮.
সবুজের আর হলুদ ঘাসের যতো রঙের তফাত
মাঝপথে তার আঁকা থাকে রাজনীতিকের হাত।
স্পোকের মুখে চাকা তালিয়া বাজায়
গতিদের মায়াগুলো খালের জলের মতো নদীমুখে যায়,
পড়ে থাকে খালপাড়; থাকে সব জোয়ারের যুবতী আশায়।
০২.
প্রতারক সেতুর ছায়ায় জনতার দুই পা এক হয়ে যায়,
রাজার মিছিল নামে জননদ আর জল দরজায়,
পেয়াদারা কোট গায়ে হাতহীন তালিয়া বাজায়।
০৩.
কালের শেফালি ফুল; মালিদের হাত কেটে মালারে গড়ায়,
থিনারে সড়ক ঘষে; জনতার পিঠ থেকে চাহিদা সরায়।
০৪.
কালের কাফন দেখে মৌসুমের কাঁপে দুই হাত; তোড় লাগে পায়,
দুই চোখ নেচে ওঠে সাদার ছায়ায় ঘন্টা বাজার আগে বুঝি ছুটি হয়ে যায়।
০৫.
স্পোকেরা ঘুরে ঘুরে টিউবেরে শতবার করে আলোকিত,
সড়কেরা কাঁদে রোজ; চাকাদের দম্ভ দেখে দেখে গাড়ি চমকিত।
০৬.
রাজা-মন্ত্রীর মিছিল হবে; রাজপথ কাঁদে ভুল গানে,
তেলবাজেরা খাবার জোটায় টকশো বিলাস দর্পনে।
পুকুর
ভুল শরতের মেঘ ভেসেছে, ঝড়ের বাড়ি কই?
শান্ত চাতাল মাতাল একা; দুধহীনাদের দই।
ঘামকৃষাণী পাল্টালো রঙ সতেজ ধানের শোকে
ফসল পাকার গোপন গন্ধ জমলো না তার বুকে।
লাঙ্গল- গরু প্রতিবাদী; জোয়লরা সব পোষ্য
পতিতাদের কোন আঙ্গুল হয় না নেতার শিষ্য।
গদির ছায়ায় হাসে নেতা; গুম এনে দেয় ঘুম,
এমন নেশার খোঁজ পেলে কে শরাবে দেয় চুম!
দেহ ব্যবসায় ঋতু থাকে রাজনীতিকের নাই,
বাংলা নামের পুকুরে তাই জুলুম মারছে ঘাই।