আড্ডাপত্র

৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১; ২১ নভেম্বর, ২০২৪;দুপুর ২:৫৭

গণঅভ্যুত্থানের কবিতা : পর্ব ১

আড্ডাপত্র

অক্টো ৪, ২০২৪ | কবিতা, গুচ্ছ কবিতা

রক্তে বুনেছি

ফেরদৌস সালাম

আজ নয় আর ঘরে বসে প্রেমের কবিতা পাঠ
রুদ্র মিছিলে চৌচির আজ বাংলাদেশের মাঠ
রক্তে বুনেছি স্বৈরাচারের পতন অঙ্গীকার
মিছিলের তোড়ে ভেঙে যাবে সব আয়নাঘরের দ্বার।
অনেক খেয়েছো কাঠালের কোষ আর নয় আর নয়
লক্ষ সাঈদ বুক পেতে- চূড়ান্ত হিসেব হবে নিশ্চয় ।
যতোই পালাও দূর দেশে খুনী- হবেই বিচার
স্বাধীন ভূমিতে হাসবে মুগ্ধ চূর্ণ হবে স্বৈর অহঙ্কার।
একাত্তরে পাকিরাও- মুক্তি খুনে ছিল আত্মহারা
চেতনার নামে রাজখুনী তুমি হয়েছিলে দিশেহারা!
এই যদি হয় বঙ্গকন্যা ধিক তাকে শত ধিক
পতনে তাহার চারদিকে দেখো আলোকিত ঝিকমিক
হোক সংস্কার গণতন্ত্রে আজ ফিরেছে বাংলাদেশ
থাকবে না আর স্বৈরাচারের চুল পরিমাণ লেশ।
আমরা এখন সার্বভৌম- নই জাতি পরাধীন
বায়ান্ন থেকে চব্বিশ অবধি শুধবোই শহীদের ঋণ।

দীপ্ত বাংলাদেশ

জাকির আবু জাফর

স্বৈরাচারীর জগদ্দল আজ শেষ
নতুন স্বপ্নে হাসছে বাংলাদেশ।।
সংকট আর সংগ্রামে দৃঢ বল
অনড় অটল বিশ্বাসে উচ্ছ্বল।
আত্মগর্বা উচ্চকণ্ঠ-রব
মানেনি কখনো, মানবে না পরাভব।
বীর-বীরত্বে বিস্ময় অনিঃশেষ
হাজার যুগের মুক্ত বাংলাদেশ।
স্বৈরতন্ত্র কার্ফু অথবা ক্যু
দলে যায় সব দুর্দম লড়াকু!
উদার চিত্ত দৃষ্টিতে ক্ষুরধার
প্রতিবাদী মন জ্বলন্ত অঙ্গার!
রক্তে বারুদ চক্ষে অগ্নিরেষ
এইতো স্বদেশ এইতো বাংলাদেশ।
বুলেটের মুখে বুক করে টানটান
এমন সিংহ বাংলার সন্তান
জীবন বিলিয়ে স্বাধীনতা আনে তারা
তাদের কণ্ঠ রোধ করে বলো কারা!
বুকে জাগ্রত সত্যের উদ্দেশ
নতুন মন্ত্রে দীপ্ত বাংলাদেশ।
মৃত্যুকে যারা ছাপিয়ে ছুটতে জানে
তারাই কেবল বিজয় পতাকা আনে।
আজ দিকে দিকে সেই বিজয়ের রেষ
প্রাণ খুলে আজ হাসছে বাংলাদেশ।

রাজপথ রক্তাক্ত দলীল

মুর্শিদ-উল-আলম

এই রাজপথ আজ স্বাধীন সত্ত্বার রক্তাক্ত দলীল
এখানে বেড়াচ্ছে ঘুরে ঘুরে পদ্মলাল রক্ত ফোঁটা
যুবতীর পৌঢ়কুঁজো ভঙ্গিতে চিত্রিত হয় আইয়ামে জাহেলিয়াত।
রক্ত ফোঁটার উচ্ছ্বাসে, গুম খুণের সন্ত্রাসে নীলকণ্ঠ
পথ ছুটে যায় মুক্তির প্রণয় মোহনার খোঁজে
আজ তার দ্বার প্রান্তে এসে দেখে
সামনেই হাজারো তারুণ্য নদ গতিমান
বেশুমার নিপীড়িত জনপ্রাণে ঘৃণার প্রলয়
দুর্নীতির নখে ছিন্নভিন্ন পরিবারগুলো হাত পাও নাড়ে
আর্তস্বরে ডাকে কোথায় যৌবনের ঢেউ!
রক্ত ফোঁটার উচ্ছ্বাসে আশার স্ফুরণ দেখে
সংগ্রামের রাজপথে যুবতীর কুঁজো করা পৌঢ়ভঙ্গি
রণ উন্মাদনা নিক্ষেপণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল ছুঁয়ে শহরের অলিতে গলিতে
তোমাকে প্রণতি জানাই মা আমার
তোমার এ মুদ্রা
যত্রতত্র ভয়ভীতি উপেক্ষা করে
নগরীর জমাট বিস্তৃত রুক্ষতাকে কুরে কুরে খাবে।

তুমি ও বাংলাদেশ

ফরিদ ভূঁইয়া

একবিংশ শতাব্দীর চব্বিশের কে সে তুমি?

রাষ্ট্রযন্ত্র যখন দানব পোষে, তার নিষ্ঠুর গুলির মুখে
ত্যাগের সুন্দর উদযাপনে দেখেছ নিরস্ত্র দু’হাতে
সত্যের সাহসী বুকে—জাগ্রত নতুন বাংলাদেশ!

বিংশ শতাব্দীর পরিক্রমা—
ভাষার বায়ান্ন
উর্দি ছেঁড়ার ঊনসত্তর
স্বাধীনতা সংগ্রামের একাত্তর
তারপর, আবারও উর্দি ছেঁড়ার নব্বই…

প্রতিবারে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আর অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন বাজির বীরের লড়াই—
আবু সাঈদের বুক সে বিশ্বাসে নতুন শোভায়;
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেখেছ সবাই
পর পর গুলিবিদ্ধ, তবু সে সটান—সাহসে সুঠাম বাংলাদেশ !

শোষিত বঞ্চিত মানুষের হয়ে
দুর্ভেদ্য জঞ্জালে চাপা পড়া সময়ের
পাষাণের শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে
তোমার জীবন দিয়ে অপার সাজালে—ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ…

স্বপ্ন হারা বাংলার আকাশে অন্ধকারে
চিরচিহ্ন তারা তুমি—জ্বলজ্বলে দিশা; নির্ভয় চিত্তের
এক জীবন বিলিয়ে অগণিত জীবনে ছড়ালে
অনিবার্য বিপ্লবের শৌর্যবীজ—রক্ত ফোঁটা ফোঁটা…

প্রজন্মের ঐক্যে সুমহান সাম্যে
সার্বভৌম নিরাপদ—আগামীর বাংলাদেশ
প্রজন্মের ঐক্যে সুমহান সাম্যে
সর্বময় নিরাপদ—আগামীর বাংলাদেশ।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল

সাবিত সারওয়ার

এবার পালাবি কোথায় পালা
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে তালা!
এবার পালাবি কোথায় পালা?

ছাত্র-জনতা মিছিলে নেমেছে ঢল
পাহাড়ের মত মাথা উঁচু অবিচল
পেটে পিঠে বাঁধ ছালা
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে তালা!
এবার পালাবি কোথায় পালা?

স্লোগানে মুখর মুষ্টিবদ্ধ হাতে
বোমা বুলেটেও ভয় নেই তবু তাতে
বুকে বারুদের জ্বালা
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে তালা!
এবার পালাবি কোথায় পালা?

ভাইহারা বোন করে ক্রন্দন
ছেলেহারা মার বালা
ঝংকার তুলে সাহস দিয়েছে
রাজপথে খুন ঢালা!
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে তালা!
এবার পালাবি কোথায় পালা?

সীমান্তপথ পাহাড় ও বন
অন্তরীক্ষে রণ ঝনোঝন
সাগর ও নদীনালা
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে তালা!

এবার পালাবি কোথায় পালা
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে তালা!

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০