আড্ডাপত্র

২৭ ফাল্গুন, ১৪৩১; ১২ মার্চ, ২০২৫;সন্ধ্যা ৭:১৩

গণঅভ্যুত্থানের কবিতা : পর্ব ২৯

আড্ডাপত্র

ফেব্রু ২৬, ২০২৫ | কবিতা, গুচ্ছ কবিতা

মুসা আল হাফিজ

মাদার অব এভ্রিথিং

আজকাল বৃষ্টি নেই।
রোদে পোড়া রাস্তা কাঁদে— পানি চাই
কিন্তু মেঘমালা বৃষ্টি ঝরাবে না!
মন্ত্রী পরিষদ পেরেশান;
তারা না চেনে বৃষ্টিকে, না জানে রোদের নামতা
হাসিনা আসলেন, হাসলেন।
বললেন—
বৃষ্টির কী দরকার?
পথে আছে সস্তার ছেলে-মেয়ে!
আমার আছে মহার্ঘ্য গুলি-গোলা
সোজা সল্যুশন!
এতো বেশি রক্ত ঝরাবো,
বোকা রাজপথের কোনো তৃষ্ণা থাকবে না!
সংবাদ সম্মেলন করতালিতে ফেটে পড়লো
: কী সুন্দর সমাধান!
তিনি রোদেরও মা, রক্তেরও মা
তিনিই সমাধান!

আফসার নিজাম

সাঈদবৃক্ষের অঙ্কুরোদগম

যার কোনো পিঠ নেই কেবলই মেঘনার চরের মতো প্রশস্থ বুক
দিগন্ত—বিস্তৃত পাকা ধানের ক্ষেতের মতো প্রসারিত হাত
খাতা কলম আর কবিতার পাণ্ডুলিপির মতো প্রজ্ঞাময় জ্ঞান
সেই উদ্দীপ্ত যুবক- ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় প্রত্যয় নিয়ে
চিন্তাময় সাহসে ভর করে দাঁড়িয়ে ছিলো সীনা টান করে
বিশ্বাস আর আত্মপ্রত্যয়ে সন্ত্রাসীলীগের সামনে শ্লোগান দেয়-
‘বুেকর ভিতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’
তখনি স্লোগানের শব্দ ভেদ করে ছুটে আসে
পুলিশলীগের হত্যাকারী বন্দুকের বুলেট
সহসাই উঠে দাঁড়ায় বাংলাদেশ
আবার ছুটে আসে ইন্ডিবুলেট বিদীর্ণ করে সাঈদের সবুজ বুক
তারপর মাটি ভেদ করে হাজার হাজার সাঈদবৃক্ষের অঙ্কুরোদগম হয়
প্রার্থনাময় সেজদা থেকে মাথা তোলে বাংলাদেশ
শেকল মুক্ত লাল সূর্য উদিত হয়— ‘আমরা স্বাধীন’।

মেজবাহ মুকুল

জাতির মেরুদণ্ড

হে জাতির মেরুদণ্ড
আজ এই বিবেকের অধিবেশনে
অগ্রিম অভিবাদন জানিয়ে তোমাদের
শেষ করছি একটি জাতির ভবিতব্য উপস্থাপনা
অভিবাদন গ্রহণপূর্ব অতন্দ্র প্রহরীর দৃষ্টিতে
শব্দের দ্যোতনা যদি বোঝো নিসর্গের কোলে
ধৃষ্টতায় ত্রিসীমানা ভেঙে মেঘলা আকাশ
নামছে জনপদ ঘিরে শুধুই অন্ধকারের রাজত্ব
দীক্ষার প্রহসনে যদিও যুবক বন্দি মুঠোফোনে
উম্মাদ বিনোদে ডুবেছ একাকীত্বের সংসারে
কেনো না যে মুয়াজ্জিন আযান দেয়ার কথা আগামী ভোরের
সে মীরজাফর বিকিয়ে জননী, কিনেছে বেগমপাড়া, ভরেছে সুইস ব্যাংক
এভাবে জনম জনম কোটি কোটিবার আমাদের খুন হয় বিপ্লব!
আর হে মেরুদণ্ড তোমাকে ঠেলে দিয়ে বিশ্বায়নের পেছনে
আমরা পালিয়েছি অন্ধ, বধির আর বোবার শহরে
যেখানে তুমি থাকবে, থাকবে না অধিকার!
তোমার ঘরে দাস গৃহস্থ, তুমি ঝাড়ুদার
তুমিই অনার্য, তুমিই মুচি, তুমিই চামার
তুমিই বারবি, তুমিই ভিউকার্ড, তুমিই গণিকা
তুমিই গিনিড়ব, তুমিই ফিনিড়ব, তুমিই জিম্মি
হে জাতির মেরুদণ্ড
অতঃপর অভিবাদন তোমাদের ভবিতব্য উত্তরণে
এক মহাঅমাবস্যার, কৃষ্ণগহ্বরের, চির দাসত্বের

মোশাররফ সাগর

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান

বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, যে বিপ্লবী
বুলেটে হয়তো তাঁর প্রাণ নাশ করা যায়,
তবে তাকে নিঃশেষ করা একেবারেই অসম্ভব
তাঁর দেহের এক একটা রক্তকণাস্ফুলিঙ্গের ন্যায় বিঁধে যায় জনতার চিত্তে!
তার বলিষ্ঠ আওয়াজ ধ্বনিত হয় অন্তর জুড়ে,
কাঁপন ধরে ধরণীতলে।
অতপর;
জনতার জনরোষে কম্পিত হয় পিচঢালা রাজপথ
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ধাবমান জনতার মিছিল,
তাদের মুষ্টিবদ্ধ হাত
রক্তচক্ষু চাহনি
অগিড়বঝরা শ্লোগান!
চুরমার করে দিতে চায় কালের অনিয়ম
অন্যায়
অত্যাচার।
একসূত্রে গাঁথা রক্তাক্ত জনতা আজ—
হিসাব নয় হিস্যা চায়,
বিচার নয় ন্যায়বিচার চায়।
এ যেনো এক মহাবিপ্লব; জনতার মহাজাগরণ!
জুলাইয়ের ইতিহাসখচিত গণঅভ্যুত্থান।
তারপর;
তারপর উদিত হয় ইতিহাসের নতুন সকাল
সোনারোদ এসে আলতো চুম্বন এঁকে দেয়—
কাঙ্খিত আগামীর গায়ে।

রায়ান নূর

একটি সকাল দেখবো

একটি সকাল দেখবো বলে
কতো রাত নির্ঘুম কেটে গেছে
শুকনো কাঠের মতো মন নিয়ে
এক বিন্দু শিশিরের আশায়
কতো কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়েছি
কাকের বিভৎস চেচামেচিতে
ভুলে গেছি কোকিলের ডাক
আর তুমি বলো আমি রাষ্ট্রহীন
আমার ঘর ছিলো না, অস্থায়ী ঠিকানা
আজো ভেসে বেড়াই তোমাদের শহরে
রাস্তায় রাস্তায়, অলিতে গলিতে
তখন তুমি মধ্যবিত্তের কুলুপ এঁটে
সবকিছু নির্ণয় করো ঘড়ি দেখে
সত্যিই কবিদের কোনো রাষ্ট্র নেই
ভালোবাসার মতো প্রেমিকা নেই
আছে কেবল কিছু কথামালা
আর দেহবণ্টনের কিছু ফয়সালা
তার কাছে খাবার নেই, আসন নেই
সেসবে কেবল নিমন্ত্রণের কড়চা
ভালো থাক পৃথিবীর রঙিন শতদল
আমি আছি কিরামান কাতেবিনের
নিখূত দলিল আর দস্তাবেজে
তুমি ভুলে যেও না, তোমরা ভুলে যেও না
মুনকার নাকির নিত্য প্রহর গোনে
আমাদের পৃথিবীর সন্ধ্যাতারার দিকে।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১