ভিস্তিওয়ালা মুগ্ধ
আমিনুল ইসলাম
পানি লাগবে পানি! আমি এক ভিস্তিওয়ালা;
আমাকে চিনতে পারছেন না? আমার নাম মুগ্ধ।
একদিন সম্রাট হুমায়ুনকে বাঁচিয়েছিলাম আমি।
অবশ্য তখন আমাকে আলাদা নামে ডাকা হতো ;
সে গল্প নাহয় আরেকদিন হবে।
এখন শুধু জরুরি পানি দেওয়া।
পানি লাগলে বলুন! পানি!
আমার কাছে অঢেল পানি আছে;
বুড়িগঙ্গার কালো রঙের পানি নয়,
হাতির ঝিলের অপেয় তরল নয়,
গন্ধযুক্ত সাপ্লাইয়ের পানিও নয়–
বিবেকহীন লোভে দূষিত ওয়াসার,
চোখের ফিল্টারে পরিশোধিত—
আমার কৈশোর হৃদয়ের ভালোবাসা নিংড়ানো এই পানি;
মাফ করবেন, আমার হাতে কিন্তু কোনো গেলাস নেই,
শুধু বোতল—একজন—এক বোতল;
যারা ন্যায্য ঘাম ঝরিয়ে তষ্ণার্ত,
যারা ছটফট করছেন বিদ্ধ হয়ে ঘরের পথভ্রষ্ট শক্তির বুলেটে,
এই পানি কেবল তাদের জন্য;
আমাদের প্রথম সাক্ষাতের দিন–
আমি পান করাবো তাকে,
যমুনা থেকে অনেক দূরে আমাদের প্রথম ভ্রমণের দিন–
আমি পান করাবো তাকে;
আমাদের অন্তর্বর্তী বিচ্ছেদ শুরুর দিন–
আমি নিজহাতে পান করাবো তাকে,
এইসব ভেবে রিজার্ভ রেখেছিলাম এই পানি;
রিজার্ভের ভাবনা শিকেয় তুলে রেখে
আজ নিজের হাতে বিতরণ করছি সেই পানি!
টাকা দেওয়া লাগবে না ভাই,
অন্যকোনো বিনিময়ও নয় বোন!
টুকে রাখা হবে না কোনো হিসাবও,
শুধু আওয়াজ দিন– আওয়াজ!
যদি কথা না বের হয় গলা দিয়ে,
যদি মুখ চেপে ধরে দানব হয়ে ওঠা ভাইয়ের থাবা,
শুধু একবার ইশারা করেন;
টীয়ার গ্যাস,
বুলেট,
হেলিকপ্টার থেকে ছড়ানো মৃত্যুবৃষ্টি
সবকিছু উপেক্ষা করে
আমি নিজহাতে পৌঁছায়ে দেবো
প্রাণ নিংড়ানো এই পানি! আর কারো পানি লাগবে— পানি!
বুনোঝড়
শাহনাজ পারভীন
ঝড় সব সময় সমুদ্র থেকেই উঠে আসে তেমনটি নয়,
কখনো কখনো ঘনবন বা বুনোবন থেকেও ঝড় উঠে আসে দাপটে।
ঝড় যে শুধু প্রকৃতিতেই আছড়ে পড়ে ঠিক তেমনটি নয়
বরং কখনো সখনো তার তাণ্ডবীয় গজব নেমে আসে মানুষের প্রিয় জানালা, নির্ভরশীল ঘর,
নীরব ছাদ আর মায়াবী আঁচল ফেড়ে মাতৃত্বের নির্ভয়ারণ্য বুকের গভীরে।
সামুদ্রিক ঝড় যেমন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে জানান দিয়ে আসে
বুনোঝড় তেমনভাবে জানান দেয় নি কাউকে
সে নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নীরবে নেমে আসে কার্তুজের নলে,
রাজপথের শান্তিপূর্ণ মিছিলে,
নির্ভরতার আশ্বাস মাখা বিশ্বাসী ইউনিফর্মপরিহিতজনে
অভয়ারণ্যের মতো ক্যাম্পাসের পবিত্র লন
আর সারি বাঁধা সাজানো বাগানে।
মেঘবৃষ্টিহীন পুরো আকাশটা হঠাৎই ছেয়ে যায়
ঘন কালো মেঘ আর বাজ পড়া মুহূমুহূ গর্জনে
মানুষের আয়েশী উঠোন, মগজ,
শান্ত পুকুরের স্বচ্ছ জলে,
রক্তমাখা লক্ষ পাখির পালকে।
তীর বেগে ঝরতে থাকে বল্লম, বর্শা,
ধনুকের ফলা, ছররা গুলি সঠিক নিরিখে
বিদ্ধ হতে থাকে একেকটি মায়ের কলিজায়,
বাবার আয়ুরেখায়, জাতির ললাটে অবারিত।
হঠাৎই রাজপথ থেকে উড়ে আসা বুনোঝড়
বাংলাদেশের হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে
প্রতিটি নির্দোষ মানুষের চোখ, কান আর বিবেক।
অতঃপর নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো বিবিসি, আল-জাজিরাসহ আরও শত শত টিভি চ্যানেল,
গণভবন আর বঙ্গভবনে।
মজলুমের জয়োল্লাস
ফরিদুজ্জামান
রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল হলে আইনের শাসন তিরোহিত
দশদিকেতে ভেঙে পড়ে দেখে আয়না বিমোহিত।
বিচার নামের প্রহসনে যদি কাঁদে আম জনতা
জালেম রাজের বেহাল দশায় নেমে আসে অধীনতা।
উল্টোধারার বিচার হলে জনগণের দুঃখ নামে
ফুঁসেওঠা রুদ্ররোষে বিপ্লব আসে ধরাধামে।
রাজন সভার অধিপতি অধঃপতন ললাট অতি
সদল বলে আত্মগোপন কিংবা পালায় মহামতি।
উজির নাজির আমীর ওমরা পতিতেরই মুখ গোমরা
গুলির ঘায়ে কলজে ছিঁড়ে শহীদ ছাত্র প্রাণভোমরা।
ধুরন্ধরের কূটচালেতে লুটেরাদের ফাঁদটা জানি
ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাই পাপীর বিধির বিধান সবাই মানি।
ক্ষেপলে তবে বীর জনতা উপড়ে ফেলে অধীনতা
মজলুমেরই জয়োল্লাসে মুক্তির স্বাদে স্বাধীনতা।
অভিনয় শিল্পী
আশরাফ চঞ্চল
চোখের সামনে ভাইয়ের বুকের তাজা রক্ত বয়ে যাচ্ছে
বাঁচাও বাঁচাও বলে বোনের আর্তচিৎকার পুরো পৃথিবী কেঁপে উঠছে
তথাকথিত মানুষরূপী এক
ডাইনির অত্যাচারে পুরো বাংলা ভরে গেছে বিলুপ্তপ্রায় ক্ষুধার্ত শকুনে!
হতবিহ্বল মানুষের অশ্রুতে বুক ভেসে যাচ্ছে
বিবেকবান মানুষ লজ্জা আর
ঘৃণায় বাকরূদ্ধ
গুটিকয়েক কুলাঙ্গার স্বার্থের মোহে হায়েনার মত নিরীহ ছেলেমেয়েদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ছে
পুলিশ নামক কতক নরপশুদের গুলিতে ঝরে যাচ্ছে শত সহস্র তাজা প্রাণ!
সন্তানহারা মা বাবা
ভাইহারা বোন
বোনহারা ভাইয়ের বুকফাটা চিৎকারে বাংলার আকাশ বাতাস যখন কম্পমান
তখন দেশদরদী নামধারী
পাক্কা জাতের অভিনয় শিল্পী
ঠোঁটের কোণে অদৃশ্য রক্তমেখে ডায়াসের সম্মুখে এসে কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলল-
‘প্রিয় দেশবাসি
আপনারা গুজবে কান দিবেন না অপশক্তি ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত আছে!’
আমরা কেউ কেউ হয়ত অন্ধ
কেউ হাটকালা
কেউ বধির
কিন্তু
পুরো জাতি গুটিকয়েক ধুরন্ধরের ন্যায় বন্য শূয়র নয়!
(মনে রাখবা, আমার দেশের সোনার ছেলেরা শুধু ন্যায্য অধিকার চেয়েছিল
তাতেই তুমি রাজাকার বলে গালি দিবা
মায়ের অবস্থান থেকে ডাইনিপনায় মেতে উঠবা
তা তারা কখনোই ভাবতেই পারেনি!
দেশবাসি জানল
তুমি কতবড় অভিনয় শিল্পী!)
ইসমাইল বিন আবেদীন
ফিরে এলো স্বাধীনতা
সবুজ ভূমিতে বার বার কেন নেমে আসে বলো গভীর অন্ধকার,
সেই আঁধারকে পাড়ি দিতে গিয়ে পার হতে হয় রক্ত নদীর ধার!
ক্ষমতা ক্ষমতা বলে বলে কেন পিপাসিত থাকে হিংস্র শাসক দল?
ইতিহাস বলে ক্ষমতা হারালে আশ্রয় হয়, খোঁয়াড়-আস্তাবল।
জেনে রাখো তবে, মানুষী ক্ষমতা মানুষেরই হাতে থাকে না তো চিরকাল!
জাগলে জনতা ভেঙে দিতে পারে বিষদাঁতসহ শোষকের বেড়াজাল!
বাহাদুরি আর ক্ষমতা থাকে না নারাজ হলেই সর্বশক্তিমান,
কেড়ে নিতে পারে ক্ষমতার গদি ধুলোয় মিশিয়ে অতীতের অবদান।
স্বৈরাচারীরা ক্ষমতার মোহে এই কথাগুলো বেমালুম সব ভুলে,
চালিয়েছে গুলি সাঈদ, সিয়াম, মুগ্ধের মতো শত শত ফোটা ফুলে!
তারপর হতে ছাত্র-জনতা গর্জন তুলে রাজপথে এলো নেমে,
আয়নাবাজির অহংকার ও দাম্ভিকতাও নিমেষেই গেল থেমে।
হাজার প্রাণের রক্ত দানেই আবারো স্বদেশ স্বাধীনতা পেল ফিরে,
তরুণ ঈশান, তোমাদের দান রবে অম্লান এ হৃদয়ের গভীরে!
দুঃশাসনের পতনের পর ঘোর কেটে এলো ফিরে আলোর সকাল,
সময় হয়েছে দীপ্ত শপথে সরাতেই হবে ময়লার জঞ্জাল!
ভেদাভেদ ভুলে একই সুর তুলে এগুতে হবে যে এখনও অনেক দূর,
আমাদের দেশ আমাদের হাতে হয় যেন আরো মজবুত মাবরুর!