আড্ডাপত্র

২৭ ফাল্গুন, ১৪৩১; ১২ মার্চ, ২০২৫;দুপুর ১২:৩০

গণঅভ্যুত্থানের কবিতা : পর্ব ৩৮

আড্ডাপত্র

মার্চ ১১, ২০২৫ | কবিতা, গুচ্ছ কবিতা

নাসির হেলাল

পাখ ছড়িয়ে

পাখ ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে বীর বুকে নিয়ে গুলি
মাটির মাঝে পড়লো শুয়ে দারুণ ঝড় তুলি।
গুলির পরে গুলি খেয়ে দাঁড়ায় ডানা মেলে
দেশ দুনিয়ায় এমন তরো কয়টা আছে ছেলে।

জীবন দিয়ে বার্তা দিলো স্বাধীন কেমনে হবে
বুলেট-বোমা খোলামকুচি ফুল ফুটবে তবে।
স্বাধীনতার চারাগাছকে রক্ত ঢেলে বাঁচায়
তাই তো তারা কথায় কথায় দেশ দুনিয়া নাচায়।

মুগ্ধ সাঈদ ইতিহাসে বীরের সেরা বীর
মুখ বাড়িয়ে হাজার শহীদ করছে এসে ভীড়।

আবদুল হাই ইদ্রিছী

মুখোশ পরা গুরু

শিক্ষক আমার শ্রদ্ধা এবং
ভালোবাসার লোক,
চেহারাটা দেখতে পেলে
জুড়ায় দুটি চোখ।

শ্রদ্ধা তাহার প্রাপ্য থাকে
আমার কাছে জমা,
কিন্তু যখন করেন তিনি
দুর্নীতি রমরমা!

তখন তাহার পরিচয়টা
দুর্নীতিবাজ হয়,
অপরাধী সাজেন তিনি
সমাজ করে ভয়।

গন্ধ ছড়ান চারিদিকে
থাকে না আর মান,
কেমন করে আমার কাছে
শ্রদ্ধা তখন পান?

শ্রদ্ধা করার জায়গা যদি
বিলীন হয়ে যায়,
কর্ম দোষে মানুষ তখন
ঘৃণাই শুধু পায়।

শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার
জায়গা হবে পাক,
মুখোশ পরা ঐ গুরুরা
দ্রুত নিপাত যাক।

শেখ নজরুল ইসলাম

ইয়ামিন ফুল

এই ফুলের নাম হোক ইয়ামিন ফুল
যে ফুলের সৌরভে ভেঙে যাবে ভুল
ফুলেল জীবন নিয়ে কোটি ইয়ামিন
মুগ্ধ, সাঈদ আলো রাঙাবে জমিন।

গোলাপ গাদার সাথে ইয়ামিন চাষ
ফুল থেকে মধু হোক ত্যাগী নির্যাস
জীবন বাজিতে গড়ে এদেশের ভীত
গানের পাখিরা গায় শহীদের গীত।

ইয়ামিন ফুল হোক হাতে উপহার
জুলাইয়ের রক্তে মুক্ত এ দ্বার
শহীদেরা মরে না যে জেগে রয় অযুত ফুলে
অমানুষ মরে যায় বাচেঁ শত ভুলে।

সোহেল আমিন বাবু

লিমেরিক

এক.

একটি পাখি হাজার পাখি বাঁচতে চেয়ে ডাকে
বাবা মায়ের কোল ছেড়ে আজ মিছিল হয়ে থাকে
ঐ পাখিরা সবুজ ছায়ায় থাকতে চায়
কিন্তু দেখি বাজপাখিদের তাড়া খায়
সুযোগ বুঝে চিল-শকুনও ঠোকর মারে নাকে।

দুই.

একটি পাখি হাজার পাখি তাড়িয়ে শকুন চিল
বিজয় নিয়ে ফিরবে ঘরে ঠাণ্ডা হবে দিল
ওই পাখিরা বাধনহারা
দেশের জন্য পাগলপারা
অবশেষে বন্দি দেশের খুলবে ওরা খিল।

রাসেল ইব্রাহীম

জুলাইয়ের গল্প

জুলাই মাস স্মরণীয়, স্মৃতি আমাদের মনে থাকবে গাঁথা;
শহিদ হয়েছে অনেক মানুষ, রাস্তাঘাট ছিলো রক্তে মাখা।
শুধু রঞ্জিত হয়নি আবু সাঈদের বুক, লাল হয়েছে দেশ;
মুক্তিকামী মিছিল দেখে, কাঁঠাল রাণী ছেড়েছে বাংলাদেশ।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, রাজপথে সবাই তুলেছে স্লোগান;
তরুণ প্রজন্মের সাহস দেখে, কেঁপেছে ফ্যাসিস্ট লীগের কামান।
রাজপথে ছিলো সবাই, তৃষ্ণার্ত যোদ্ধা চালিয়েছে যুদ্ধ;
এই পানি লাগবে-সেথায় বারবার বলে শহিদ হয়েছে মুগ্ধ।

হাসনাত- নাহিদ- আসিফরা রাজপথে ছিলো, সাহস ছিলো বুকে;
দল-মত নির্বিশেষে অটুট ছিলো সবাই, তাড়াতে বুবুকে।
হায়েনারা হন্যে হয়ে খুঁজেছে শিবির, খেতে ফ্রেশ রক্ত;
সাদিক ছিলো তাদের নাকের ডগায়, শিবিরের ঘাঁটি তো শক্ত।

গুলিতে চেহারা হারিয়েছে খোকন বর্মন, আর নেই তাঁর রূপ;
তাঁর দিকে তাকালে নতুন বাংলাদেশ দেখি, কী যে অপরূপ!
রিক্সায় ঝুলে ছিলো নাফিসের লাশ, শেষ বিদায় নিয়েছে ফায়াজ;
ফায়াজের মা করেছে পোস্ট- বিচার চাই, আজ জোরে তুলুন আওয়াজ।

আয়মান, সালমান ছিলো সোচ্চার, বাদ যায়নি নূর- রাশেদ-আসিফ নজরুল;
সম্মিলিত আন্দোলনে ফুটেছে আজ স্বাধীনতার এই ফুল।
যারা মানুষের পক্ষে ছিলো, পক্ষে ছিলো দেশের জনতার;
তারাই বাংলাদেশের প্রকৃত তারকা, তারকা আমার কবিতার।

‘বাবা হারানোর বেদনা’ শুনতে শুনতে হতাশ ছিলো জাতি ;
দেশমাতা ও প্রফেসরকে কটুক্তি করত, থামায়নি নাতি।
শাসক যখন স্বৈরাচার হয়, তখন মনে জাগে শুধু ভীতি;
সব স্বৈরাচার পালিয়ে যায়, এটা পলিটিক্সয়ের বাস্তব নীতি।

মনে রেখো,
একই ফুলের পাপড়ি সব— হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান এবং মুসলমান;
বিপদে আপদে বন্ধু মোরা, ছড়বো সম্প্রীতির সুঘ্রাণ।
চলার পথে থাকতে পারে মতভেদ, দেশের স্বার্থে আমরা এক;
সব স্বৈরাচার পালিয়ে যাবে, আসবে না তো আর কোনোদিন ব্যাক।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১