আড্ডাপত্র

২৮ পৌষ, ১৪৩১; ১২ জানুয়ারি, ২০২৫;বিকাল ৪:০০

গণঅভ্যুত্থানের কবিতা : পর্ব ১৬

আড্ডাপত্র

জানু ১২, ২০২৫ | Uncategorized

আমরা মানুষ আমরা এসেছি

আবদুল হাই শিকদার

আমরা মানুষ আমরা এসেছি অনাদি অতীত উদয়ের পথ ধরে
আমরা এসেছি হাজার হাজার বছরের ধুলি পায়ে
আমরা এসেছি নিযুত কালের পুঞ্জিত ব্যথা হয়ে
আমরা এসেছি মেসোপটেমিয়া গিলগামেশের মতো
আমরা মানুষ আমরা এসেছি দাস বিপ্লব করে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি পলাশীর গোঙরানী
আমরা এসেছি মজনু শাহের দহন
আমরা এসেছি শ্রীরঙ্গপত্তম
আমরা এসেছি ১৮৫৭’র বজ্রের গর্জন
আমরা এসেছি গালিবের ক্রন্দন
আমরা মানুষ আমরা এসেছি আন্দামানের কারাগারগুলো ভেঙে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি কোটি তিতুমীর ছেলে
আমরা এসেছি জালিয়ানঅলা থেকে
আমরা এসেছি বীর শমসের গাজী
আমরা মানুষ আমরা এসেছি চুরুলিয়া থেকে আগুনের ফুল হয়ে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি লৌহ কঠিন শের আলীর দৃঢ় পাঞ্জা
আমরা এসেছি ক্ষুদিরাম সহোদর
আমরা এসেছি সূর্য সেনের সাথী
আমরা এসেছি রজব আলীদের মাতৃমুক্তিপণ
আমরা এসেছি তেজতপ্ত ফরায়েজী দুদু মিয়া
আমরা এসেছি চির বিদ্রোহী সাঁওতাল পরগনা
আমরা মানুষ আমরা এসেছি রোকেয়ার সন্তান

আমরা মানুষ আমরা এসেছি একুশে ফেব্রুয়ারী
আমরা এসেছি রফিক শফিক বরকতময় হয়ে
আমরা এসেছি মতিউর বীরশ্রেষ্ঠ
আমরা এসেছি নূর হোসেনের বুকে পিঠে পোস্টার
আমরা এসেছি আসাদের শার্ট গায়ে
আমরা মানুষ আমরা এসেছি মুক্তিযুদ্ধ টগবগ করা খুনে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি নীল নদী সাঁতরিয়ে
আমরা এসেছি ঘন অরণ্য আমাজন পার হয়ে
আমরা এসেছি ব্রহ্মপুত্র যমুনার তীরে তীরে
আমরা এসেছি শ্যামল কোমল মেঘনার কূলে কূলে
আমরা এসেছি ভাঙন-উন্মাদ পদ্মার ঢেউ হয়ে
আমরা মানুষ আমরা এসেছি গাঙ্গেয় দেশে মরমিয়া মানচিত্র

আমরা মানুষ আমরা এসেছি বুলেটে বুলেটে ক্ষতবিক্ষত দেহ
আমরা এসেছি অথৈ তুফানে রক্তের স্রোতে ভেসে
আমরা এসেছি ক্রুর বারুদে শত শত লাশ হয়ে
আমরা এসেছি সন্তানহারা কারবালা বুকে করে
আমরা মানুষ আমরা এসেছি আবু সাইদের বেশে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি ক্ষুব্ধ ক্রদ্ধ দেশ
আমরা এসেছি মানুষের আহাজারি
আমরা এসেছি দু’কূলপ্লাবী অশ্রুর বন্যায়
আমরা মানুষ আমরা এসেছি শ্রেণীহীন সমারোহে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি রক্তপিপাসু হায়েনাকে রুখে দিতে
আমরা এসেছি বিষবৃক্ষের জঙ্গল উপড়াতে
আমরা এসেছি জল্লাদদের তন্ত্রের উচ্ছেদে
আমরা মানুষ আমরা এসেছি পিশাচের দাঁত ফ্যাসিবাদ উৎখাতে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি পাথরে খোদিত ইতিহাস অক্ষয়
আমরা এসেছি ফিলিস্তিনের অগ্নিগর্ভ বালু
আমরা এসেছি কালো আফ্রিকা দুঃখের দাবানল
আমরা এসেছি নিযুত জন্ম মানিনিকো পরাজয়
আমরা মানুষ আমরা এসেছি কোটি কোটি ক্রোধ হাতে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি রেসকোর্স প্রান্তর
আমরা এসেছি কালুর ঘাটের ইথারের হুংকার
আমরা এসেছি মীর মরদান খাপ খোলা তরবারী
আমরা এসেছি অমানুষ সংহারে
আমরা মানুষ আমরা এসেছি প্রীতি ও প্রেমের বিশ্ব উৎপাদনে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি কুরআনের পাখি হয়ে
আমরা এসেছি গীতার মর্মগাথা
আমরা এসেছি তওরাত বাইবেল
আমরা এসেছি ত্রিপিটক আর যবুরের কথামালা
আমরা এসেছি আকাশ কাঁপানো কালবৈশাখী ঝড়ে ঝড়ে পাখা মেলে
আমরা এসেছি জুলুম রুখতে দুর্বার আবাবিল
আমরা মানুষ আমরা এসেছি দশদিগন্ত থেকে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি লাখো শহীদের স্বপ্ন জড়ানো প্রাণে
আমরা এসেছি সুষম সমাজ মানুষের কল্যাণে
আমরা এসেছি শোষণমুক্ত স্বদেশের সুঘ্রাণে
আমরা মানুষ আমরা এসেছি- শুধু মানুষেরা এই কথাটুকু জানে

আমরা মানুষ আমরা এসেছি মানুষের বাণী প্রাণে
আমরা এসেছি বিমানবিক আন্ধার বিতাড়নে
আমরা এসেছি আবার পৃথিবী যেন মানুষের হয়
আমরা এসেছি শঙ্কাবিহীন শান্তির বরাভয়
আমরা এসেছি ছাড়ো উদ্বেগ বিজয় সুনিশ্চয়
আমরা এসেছি পায়ে পিষে পিষে দীনতা ও হীনতাকে
আমরা মানুষ আমরা এসেছি হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা উদ্ধারে

২৩ জুলাই, ২০২৪

রাজাকার, রাণী কার

শাকিল রিয়াজ

অতীত আমার নিয়েছো কাড়িয়া
আগামী কাড়িবে ক্যামোনে
রক্ত ফোঁটায় অক্ষর এঁকে
গল্প লিখেছি এ মনে।

ইতিহাস তুমি দখল করিয়া
সাজিয়াছো মহারাণী
ভাবিছো ভবিষ্যতের চোখেও
টেনে দিবে লাল ছানি!

লক্ষ পড়ুয়া রাজাকার হলো
বুদ্ধিটা জানি, কার
প্রশ্নটা আর রাজাকার নয়
প্রশ্নটা, রাণী কার?

ঘুম লুটে নাও বুলেট গুলিতে
স্বপ্ন লুটিবে কী মতে?
স্বপ্ন আমার বহুগুণ হয়
তোমার সঙ্গে দ্বিমতে।

সামনের পথে বিছিয়ে রেখেছো
পেছনের বেড়িকেড
টপকে যাওয়ার জন্য আমরা
ধরেছি এবার জেদ।

সূর্যের দিকে ধাবিত আমার
নভোযান করো বন্ধ!
আমার রৌদ্র আমাকে পোড়াক
তুমি কে বলার ভণ্ড?

আমার মেধায় আমি চেনা হবো
দাদুর মেধায় নয়
এটাও একটি কারণ দাদুরা
যুদ্ধে এনেছে জয়।

প্রতিবাদের ঝড়
খোরশেদ আলম

বীর নেমেছে বীর জেগেছে
গড়ো নতুন দেশ
সবাই পাবে নতুন করে
বাঁচার পরিবেশ।

শহর গাঁয়ে মিছিল ছোটে
প্রতিবাদের ঝড়
বীর বাঙালি বীরের জাতি
ইতিহাসটা পড়।

ছাত্র সমাজ আমজনতা
এক হয়েছে আজ
দেশ বাঁচাতে লড়াই করো
করো দেশের কাজ।

অনিয়মের ভাঙরে তালা
দুর্নীতিবাজ ধর
সোনার দেশে সবাই মিলে
বাঁধবো সুখে ঘর।

আমি বাঙালি বাংলা আমার

শাহিন রিজভি

কিছু কি বলার নেই
কিছুই কি নেই করবার
আমরা কি কেবল লজ্জার ইতিহাস
আমরা ইচ্ছাকৃতদাস!
আমার সন্তানেরা, আমার ভাই, আমার বোনেরা
তোমাদের বক্ষের নির্মল নদী দ্বিখণ্ডিত আজ
তোমাদের চোখ থেকে স্বপ্নের মেঘেরা
রক্ত হয়ে ঝরে
তোমাদের কন্ঠ বারবার চেপে ধরে স্বৈরাচার
মীর জাফরের ছায়া বয়ে চলে জাফর সমাজ।
কে তুমি তোমরা কারা
তোমাদের মস্তকে বসে আছে এ কোন
লিঙ্গ বিহীন নতুন হিটলার।
বেশি তো কিছু চাইনি আমি
একটা স্বচ্ছ আকাশ, এক ফালি রোদ,
এক পশলা বৃষ্টি শরীর জুড়াবার
কৌশল বুঝি না
মাকে মা বলেই ডাকি বাবাকে জড়িয়ে ধরি বুকে
এই মাটির উপর হাত রেখে বলি
আমি বাঙালি, বাংলা আমার।

বিচার চাই

নাসিরুদ্দীন তুসী

বুকে জ্বলছে দ্রোহের আগুন
চোখের জলে ভুলবো শোক?
গণহত্যার হুকুমদাতা,
গোলামগুলোর বিচার হোক!

অধিকারের আওয়াজ তুলে
মরলো কেন হাজার ভাই?
আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা
হায়নাগুলোর বিচার চাই!

অভিশাপ

আবুবকর সালেহ

সবুজ হচ্ছে শান্তি ও স্বস্তির উঠান
আর রক্ত ঝরানোর নির্দেশ প্রতিহিংসার
পেরিয়ে এসেছি ষোল বছরের এক তোঘলোকি অধ্যায়
যে সময়ের শিরায় শিরায় বহমান ছিলো
নৃশংস হত্যাকাণ্ড, প্রতিহিংসার
সুলভ জিঘাংসা ।
ছিলো দুঃস্বপ্নের দিনরাত
ছিলো নানান ছদ্মবেশী আবরণে আত্মগোপনে
থাকা নিরীহ অস্তিত্ব
ছিলো পাহারাদার হায়েনা
উর্দি পরা ঘাতকের নির্মমতা
আরও ছিলো পৈশাচিক হুমকি।

এই প্রিয় স্বদেশ
যেখানে হতো মৃত্যুর উৎসবে বেশরম অনুষ্ঠান
ভয়ে আতঙ্কে কেঁপে কেঁপে উঠতো
লোকালয়ের নিরবতা
জল্লাদ নেত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতায়
কাঁদতো সতীত্ব হারানো পবিত্র গণভবন।

সেই তো দেয়ালে দেয়ালে লিখে দিয়েছে হত্যার শ্লোগান
এঁকে দিয়েছে নিষিদ্ধ আল্পনা
নির্ঘোষ শব্দ উচ্চারণ করেছে মৃত্যুর নির্দেশ
কলঙ্কের নির্লজ্জতা।

কী অদ্ভুত নির্লিপ্ততা
শীতল রক্তের এক নির্মম জল্লাদিনী
যে হত্যা করেছে গণতন্ত্র
গলা টিপে মেরেছে অর্থের সাবলীল প্রবাহ
আবালবৃদ্ধবনিতার স্বস্তির অবলম্বন ।
তার নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
তার বাণীতে বাণীতে ধ্বংসের বাণিজ্য
তার হিংস্র নখরে ছিন্নভিন্ন
আমাদের পরম গৌরবের জ্বলজ্বলে মানচিত্র।

তুমি সাইকোপ্যাথ
তুমি অশুভ দানবী
তুমি মোদীত্ববাদের এক নিরাভরণ ক্রীতদাসী
তুমি কদর্যতার জাতিকা
তুমি মানুষরূপী
এক অদ্বিতীয় অভিশাপ।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১