বুলেটে জড়ানো মানবতা
লাল ক্রমশই আমার প্রিয় রং হয়ে উঠে—
তোমরা যখন বুলেটে জড়িয়ে নাও মানবতা!
মানবতার ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে দিয়েছ বারুদের গন্ধ।
আমাদের শিশুদের কফিনে লেগে থাকে রক্তের দাগ।
ধরণীর তনু ক্ষত বিক্ষত হয়—
তোমরা যখন বুলেটে জড়িয়ে নাও মানবতা!
তোমাদের জাগরণী গানেও তখন
পৃথিবীর বুকে বাজে বিষাদের সুর।
তৃতীয় বিশ্বের এক যুবক আমি বুকে জ্বলে অবিরত ক্রোধের আগুন!
তোমরা যখন বুলেটে জড়িয়ে নাও মানবতা!
পারমানবিক বোমা ছুড়ে তোমরা পৃথিবীর বুক বিদীর্ণ করেছ
হিরোসিমা নাগাসাকির ক্ষত শুকোয়নি এখনো।
আমাদের রক্ত খরস্রোতা নদীর মত বয়ে যায় আগামীর পথে।
স্বজনদের হারিয়েও আমরা নির্ভীক থাকি।
তোমরা যদিও বুলেটে জড়িয়ে নাও মানবতা।
আমরা কান্নার কাছে হার মানি না কোন কালে।
আমাদের চেতনা সবুজ ঘাসের মত জেগে উঠে অবিরত
তোমাদের পরাস্ত করতে।
আমাদের অজস্র সাহসের রেণু— পরাস্ত হয় না কখনো।
তোমরা যদিও বুলেটে জড়িয়ে নাও মানবতা!
বেদনার হেমলক
জীবনের প্রতি সিঁড়ি বেদনার হেমলক বেষ্টিত
এক শত চুয়াল্লিশ ধারা জারি করা হলো
আমার চিন্তার আঙ্গিনায়
উদ্বেলিত মোড়কের ভাঁজে পড়ে চিন্তার পদার্থ
তবু জীবনের মায়া ছাড়তে পরি না
তাই কল্পনার জালে সপি আমার অস্তিত্ব
মাঝ পথে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের মত।
প্রযুক্তির নিষ্ঠুর ছোবলে পুড়ে নিঃশেষ হয়েছে জীবন খড়ের গাদার মত।
মর্তলোকের গর্তে পড়া অবচেতন মনের তীর
চিচিংফাঁক হয়ে বাস করে রাতের মগজে
সমস্ত পৃথিবী চষে বেড়ানোর পরেও অজানা থেকে যায়
বুকের পাঁজরে ভাঁজ করে রাখা রঙিন চিঠির খাম।
আমি জেগে উঠি প্রতি ভোরে প্রভাতি সুর্যের মত
আমি জেনে গেছি আজ আমার ভেতরেই প্রয়োজন
আগাম তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
যেখানে বিবেকের প্রতিটি সেল অস্ত্র ধরবে।
রাসায়নিক সংকেত নেই
লোহার মত আমার রাসায়নিক সংকেত নেই
অদ্ভুত কাফেলা দেখে আমি সংকেতহীন হয়ে গেছি
চারদিকে নিস্ফলা মন জ্যোতিহীন আলোর পিরিতি
পৃথিবীর ঔরসজাত সন্তানেরা মুণ্ডুহীন অজগর।
কারো কাছে জাত পাত ঢের গুরুত্বের দাবি রাখে
মানবতার উচ্ছ্বাস বুঝেনি কোনো মন কখনো
বিরহ বিহগ চোখ উজানের উন্মেষ পরখে
শতাব্দীর সিংহ ভাগ কেটে যায় উড়নচণ্ডী হয়ে।
অতিথি পাখির মত আজো দুনিয়াকে দেখতে চায়
এ বিরহের চোখগুলো। হৃদয়ে সান্নিধ্যে থাকতে চেয়ে
উর্ধশ্বাসে চষে বেড়ায় দিগন্ত পড়শী পল্লিগুলো।
উপজাতির মতই বিমর্ষ হৃদয়ে ফিরে আসে
এই সাজানো ফুলের নির্মল বাগান বাড়িতে।
অনুগ্রহ করে কেউ সাংকেতিক নাম দিলে
হয়ত টিকে যাব আমি এই পৃথিবীর মানচিত্রে!
তবু মানবতা ছাড়া কোন সাংকেতিক চিহ্ন চাই না
কোন জাত-পাত ধর্ম অধর্মের অজুহাত দিয়ে
থামিয়ে দিতে চাই না নিজের ভেতরের সত্তাকে।
পাঠের তৃষ্ণা
পাঠের অরাধ্য তৃষ্ণায় ভেঙে গেছে লজ্জার হাট
কস্তুরি ধোয়া জ্ঞানের নহরে ফসফরাসের গন্ধ!
এলোমেলো পরে থাকা কাগজের শরীরগুলোকে
সযত্নে তুলে রাখি আমার মনের আলমারিতে।
সস্তা জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটেছি বহুকাল
উদাম হয়েছি কিঞ্চিৎ ঝড়ে!
মন বাড়িয়ে ছুঁতেই অহঙ্কারের ঝাঁজে দগ্ধ
হয়েছি অগ্নি তীরের মত।
অর্ধ নগ্ন বইগুলোকে অবহেলায় রেখে ছয়-চারের
মহা উৎসবে মেতেছে জাতির বিবেক!
তবু আমি এক বোঝা জ্ঞানের কিতাব নিয়ে
একপেয়ে ধ্যানীবক হয়ে বসে আছি দিগন্তের মাঠে।
সন্ত্রস্ত মানচিত্র
নেকড়ের কামড়ে ক্রমশ নিস্তেজ বিজয়ের চিহ্ন
আহত পতাকার আত্ম চিৎকারে সন্ত্রস্ত মানচিত্র
হায়েনার বিষাক্ত নখরে বিক্ষত সবুজাভ সুনীল পীঠ।
আঠারো কোটি চোখে একযোগে আগুন জ্বলছে
দুষ্ট বাতাস থামাও, না হয় বয়ে যাবে অগ্নিগিরি!
আমাদের মত সেচ্ছায় রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া ভার
ইতিহাসের বাঁক ঘুরেছে আমাদের রক্তস্রোতে।
তবে কি আর একটি রক্তনদী দেখতে চাও
আর একটি কালো রাত চাও গোলাপের গায়ে!
আর একবার দেখতে চাও রক্ত চোখা ফণা—
আমাদের লাঠিয়াল বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য এখন কামান চালাতে জানে
চেতনার ট্রিগার ধরে বসে আছে ছত্রিশ কোটি হাত।
আমাদের নারীরাও এখন আর রুমালের ফেরিওয়ালা নয়—
প্রেমিকের পাশে থাকে বুলেট হাতে নিয়ে।
বুদ্ধিদ্বীপ্ত মাথায় আমাদের যাতায়াত
চেপে ধরা টুটি থেকেই বেরিয়ে আসে
অস্পর্শা অনুজেরা বারুদের মতন
তিনশো ষাট কোটি আঙুলের ইশারায়
ধেয়ে আসে বিপ্লবের ঝড়!
প্রতিটা চোখের রেটিনায় ভেসে বেড়ায়
একশো একটা রণতরী!
কাকে মৃত্যুর ভয় দেখাও—
মৃত্যুই পালিয়ে বেড়ায় আমাদের ভয়ে।