শেষ বিকেলের গান
ছয়.
কতবার যে চেয়েছি আমি
নিজের সঙ্গে কিছুটা কাল একলা থাকি
রঙতুলিতে ঘষে ঘষে নিজের জটিল মুখটি আঁকি।
অথচ আজ একলা হবার সম্ভাবনায় ভীত আমি
পা বাড়াতে দ্বিধায় কাঁপি, দু’পা হেঁটেই
একটু থামি;
পথের শেষে ঝরাপাতা-স্তুপের নিচে ডুবে আছে সেই বাড়িটা
কী গভীর এক অন্ধকারে বাস্তুভিটা,
ডাকছে আমায় আকুল হয়ে…
শঙ্কা, দ্বিধা, ভয়ে ভয়ে
এক’পা দুপা যাচ্ছি হেঁটে সেই বাড়িতে,
কেউ কি এসে জ্বালবে আগুন প্রবল শীতে?
সাত.
পৃথিবীতে জন্ম নেয়া মানেই হলো
যানবাহনের অপেক্ষাতে দাঁড়িয়ে পড়া।
অস্থায়ী এক ইস্টিশনে অপেক্ষাতে বাড়ছে বেলা,
উঠা-নামার চলছে খেলা
ধুলোর গ্রহে এই আমাদের পরম্পরা।
টোকেন হাতে দাঁড়িয়ে আছি কখন জানি ডাক এসে যায়
যাত্রাপথের নতুন অধ্যায়
শুরু হবে কার যে কখন কেউ কি জানে,
থামবে গিয়ে কে কোনখানে?
বাজলো ভেঁপু,
ভাসবে জাহাজ অচেনা এক অথই জলে।
কে জানে সে কোথায় যাবে,
পৌঁছে দেবে কোন মহলে।
নীল কুয়াশায় ঢেকে আছে আলোর রেখা,
জাহাজ ঘাটে হঠাৎ মেলে তোমার দেখা।
আট.
মৃদুমন্দ বইছে বাতাস, বাসন্তী বাও।
ইচ্ছে করে ডেকে বলি আমার পাশে
একটু বসে যাও;
ছুঁয়ে দেখো উষ্ণ কপাল, পুড়ছে দেহ
কতো ফাগুন পার হয়েছে,
এই দেহটি পায়নি তো প্রেম, আদর-স্নেহ;
বসবে পাশে, বলো?
স্পর্শে তোমার শীতল হবো, কিছুটা উজ্জ্বলও…
হাওয়া কি আর থামতে জানে?
যেতে যেতেই বলছে কানে কানে,
আমি থাকি নদীর ওপার, সময় পেলে এসো
এ-বৈশাখে জল চেয়ো না,
ঝড়কে ভালোবেসো।
নয়.
কমলা-রঙ আলো এসে বরইতলে আঁকে হাজার ফুল
হুক্কা টানে মঞ্জুরালী,
বিবির মুখে রসালো তাম্বুল।
দেহের চেয়ে দ্বিগুন বড়ো ছায়া পড়ে ফেলে আসা দিনে
কোন কড়িতে সময়গুলো, কে নিয়েছে কিনে?
মাথার ওপর কিচির-মিচির টুনটুনিরা ডাকে,
উঠোন ভরা চড়ুইপাখি জ্বালাচ্ছে বৃদ্ধাকে।
আঁড়ার ভেতর আইড়াকুপি
শোকের প্রলয় তোলে
বাঁশের মাথায় দুলছে তিলাঢুপি
মুখর বিকেল বাংলাদেশের পাখ-পাখালির গানে।
আমার ছায়া আর কোনোদিন পড়বে না এইখানে…
দশ.
এই যে সবুজ লেবুপাতা,
ভোরের নরোম শিশির পেল গল্প লেখার খাতা।
লিখে রাখে জীবনের সব অত্যুজ্জ্বল নাম;
কে এই শিল্পী? সৃজনশীল ঘাম
ঝরিয়ে রোজ আঁকে কতো অনবদ্য বোধ।
রোদের হন্তারক তীর এসে প্রতিদিন নেয় মধুর প্রতিশোধ।