রমণী ও অথর্ব পুরুষ
তুমি এলে
বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত জলরাশি হয়ে।
আমি শুনতে পেলাম সেই ভয়ঙ্কর এপার ওপার ভাঙা জলতরঙ্গের ঘূর্ণন গোঙানি
আর পাড় ভাঙার দড়াম দড়াম শব্দ।
এসে দাঁড়ালে দরজার কপাট খুলে
হতচকিত আমি নির্বোধ
শুধু চেয়ে আছি ।
বাঁধ দিয়ে পানি ঠেকানোর মতো সামর্থ্য আমার নাই –
ছিলো না কোনোকালে
তাই ছেড়ে দিলাম নিজেকে।
যা ইচ্ছে তা করো যেথায় ইচ্ছে ভাসিয়ে দাও
নইলে তোমার জলের বেগে আমাকে বেগবান করে কামুক করে তোলো।
রমণী আমার,
আমারও যে খুব জাগতে ইচ্ছে করে!
ইচ্ছে করে ঐ নরম সাদা উরুর মাঝখানে জমে থাকা পিচ্চিলতায় নিজেকে ডুবাতে।
কি বুঝলে জানি না-
দরাম করে কপাট দিলে
ঘৃণিত চোখে বিবস্ত্র হলে, নগ্ন দু’পায়ে হেলেদুলে এগিয়ে আসা দেখে মনে হলো-
আমার এতোদিনের নেতিয়ে পড়া পর্বতশৃঙ্গে যেনো ঘর্ষণ শুরু হলো
দুহাতে স্পর্শ করে দেখি সে বিদ্যুতায়িত হয়ে উত্তপ্ত
যেনো পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিবে ঝর্ণাধারা, ফুটন্ত হবে শীতল জলতরঙ্গ ।
দ্বিগ্বিদ্বিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটলাম তোমার পানে
তোমার ফোঁস ফোঁস শব্দকে অনুসরণ করে
দু’হাতে চেপে ধরি জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা অগ্নিকুণ্ডলি।
আমার হাত জ্বলে গেলো
ঠোঁটে রাখলাম ঠোঁট; পুড়ে দগ্ধ হলো।
চাইলাম সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে
যতো শক্তি ছিলো সাহস করে ধরলাম!
তোমার চুলের বেণী খুলে মুখ ডুবালাম
তুমি পেলে আমাকে
এতোদিন যেমন চেয়েছিলো।
কি জাদু করলে আর কি সোহাগে যে আমাকে নিলে আপন করে
আমি প্রেমিক হয়ে উঠলাম!
কেমন যেনো শিহরিত হলাম
এক ঝটকায় তোমার শরীরের উপর।
পারলে না আমার সাথে
আমি মালি হলাম ফুল, ফুলের পাপড়ি দু’হাতে, ঠোঁটের মধু শুষে নিলাম
তুমি আমাকে নিজের করে চাইলে
আমি আলিঙ্গন করলাম তোমাকে।
ভালোবাসার রূপ বদল
ভালোবাসা ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়
এতো বেশি ভালোবাসি যে-
ভালোবাসার ফুলশয্যায় রঙিন আবীরে
তোমাকে রাঙাতে চাই।
যত মাদকতা চলতে থাকা পাগলামী হৃদয় ছুঁয়ে যাবে
টিপটিপ বৃষ্টি ঝরবে মন বাগানে।
তুমি ক্ষুধাতুর স্পর্শ দিয়ে
আমাকে জাগিয়ে তোলো
আমি ভেসে যাবো তোমার জাদুমাখা আলিঙ্গনে
নেশাচর উম্মাদনার অতলে।
প্রিয়তম এ যে পরম সুখ, পরম পাওয়া
আমি তোমাকেই খুঁজি সোনালু ফুলে
হারিয়ে যেতে থাকি নিবিড় বাহুবন্ধনে
এক অনাবিল স্বপ্ন চয়নে।
তুমি আছো হিয়ার মাঝে যুগ যুগ ধরে
থাকবে অস্তিত্বে শিহরনে!
স্পর্শ
এসো প্রিয়
চলো কোজাগরী চাঁদের পূর্ণিমার আলোয়
সাঁতার কাটি নিশিথে সমুদ্রের নিনাদে
যেখানে জলের রাজ্যে জলপরীরা জাগে!
ভালোবাসা, সেতো এক মহা সুখ সাগরের নাম
তাকে কেন্দ্র করেই মিনকুমার আর মিনকুমারী জলকেলিতে নিত্য মিলনে মাতে!
সাগর সঙ্গমে আনন্দ উল্লাসে মাঝে মাঝেই তীরে দেখা মেলে,
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে
হয় চোখাচোখি-
আমিও বিভোর হই, চেয়ে থাকি!
অস্ফুট স্বরে বলি,
মিনকুমার এতো সৌন্দর্য তোমার!
আর মিনকুমারী সেতো সাগরের উপহার।
অবশেষে নিষাদে নিনাদে জেগে
সাগরের তীর থেকে কাকডাকা ভোরে
সমতলে তোমার স্পর্শ নিয়েই ফিরতে চাই
শুকনো পাতার মর্মর শব্দ মাড়িয়ে!
ডায়েরি
অনেক পুরোনো একটা ডায়েরি ধুলোভরা মলাট
একটু মুছতেই ভিতরের পাতাগুলো চকচক করে-
বেরিয়ে আসে প্রিয় সব শব্দমালা!
প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতির মতো
সযত্নে রেখেছি তাকে বুকের গোপন কুঠিরে
মাঝে মাঝেই উলোট-পালোট করি
স্মৃতিগুলো ভাবতে ভালো লাগে!
কতো শত কথা, ভালো লাগা, ভালোবাসা,প্রেম-
সবই ঠাঁই পেয়েছে ডাইরির প্রতিটি পাতায়
মর্মস্পর্শী কিছু লেখা কখনও হাসায় কখনও কাঁদায়,
স্মৃতি বড় মধুময়!
মানুষের কতো কি আছে!
আমার আছে শুধুই এই স্মৃতির পাণ্ডুলিপি
যাকে সম্বল করে পেন্ডুলামের মতো -,
এ ভূস্বর্গে ঘুরতে থাকি
ঘুরতেই থাকি!
প্রকৃতিকে ভালোবেসে
প্রকৃতির সাথেই যার উঠা বসা
নিবিড় প্রেমের টান
সেতো প্রকৃতিকেই দেখে নানা ঢঙে
মনের মানুষ খুঁজতে দিশেহারা হয়ে ছুটতে থাকে প্রকৃতির নানা প্রান্তে।
দূরে চোখ পড়তেই
সবুজ ফসলের ক্ষেতের শোভা তার মনকে আন্দোলিত করে
কাউকে মনে হয় রাখালের বেশে,
রাখালিয়া বাঁশির মন মাতানো সুর বেজে উঠে মনে
আন্দোলিত হয় মন বাগান ।
সুরের জাদুকরকে তার বড্ড আপন লাগে
মনে হয় খুব কাছের!
নীল আকাশ, খোলা চুল, নাকে নথ, পায়ে রূপার নূপুর
সবুজ ফসলের ক্ষেতের
বৈরী বাতাসে দুলতে থাকে সে
সুরের ঢেউয়ের সাথে,
তরঙ্গায়িত কলমি ফুলের বেগুনি রঙ আবেশ ছড়ায় দেহমনে!
এলোমেলো হাওয়ায় ছুটতে ইচ্ছে হয়
নিজেই সাজবে বলে সকল বুনোফুলে-
সখা যে আজ আসবে কাছে অনেক দিনের পরে!
ঘাসফুল এর নোলক নাকে সোনালু ফুলের দুল
আলোক লতার চুড়ি হাতে খোঁপায় কলমি ফুল
শাপলা ফুলের মালা গলে রঙেঢঙে হেসে খেলে
পুঁইয়ের লতা আলতা পায়ে চলে হেলেদুলে!
হেমন্তরাণীর মতোই কতো জাদুই না সে জানে-
প্রকৃতির অপরূপ শোভা অঙ্গে ধারণ করে
মাঠে-ঘাটে, খালে-বিলে উজ্জ্বল আকাশ নীলে
ঝিলিমিলি রঙে রাঙে
অপ্সরী হয়ে ওঠে মুহূর্তেই
সুরের জাদুকরকে হতে হয় বিমোহিত পুলকিত।
রূপের রাণী হয়ে
বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে নিজেকে উজাড় করে
সকল মুগ্ধতা উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে
কামনার হাতছানি তাকে নতজানু করে!
কবি পরিচিতি:
গুলশান চৌধুরীর জন্ম ১৯৭২ সালের ১০ই আগস্ট কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার বড়ুরিয়া গ্রামে। তিনি কুষ্টিয়া কুমারখালী সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে স্নাতক এবং আহসান উল্লাহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি এড সম্পন্ন করেন।
পিতা : চৌধুরী ইমাম বখস্। মাতা: সৈয়দা আতিয়া বানু।
স্বামী : গণিত প্রভাষক, বাংলাদেশ রাইফেলস মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ।
ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন কন্যার জননী।
প্রথম কন্যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও দ্বিতীয় কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। ছোট কন্যা বিজিবি প্রাইমারীতে পড়ে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : গৌরী কন্যা (২০২৩), পদ্মা বধূ (২০২৫) ঘাসফুল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।
পুরস্কার ও সম্মাননা:
“গৌরী কন্যা” র জন্য পেয়েছেন জাতীয় কবিতা মঞ্চ সেরা পুস্তক সম্মাননা।
গৌরী কন্যা র সনদ(২০২৩)। এছাড়া ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্র পত্রিকায় নিয়মিতভাবেই তার কবিতা প্রকাশিত হয়।