আইডেন্টি
আরবি হরফ দেখলে মনে হয়-
আরব জাতিরা তাদের হরফের ক্যালিগ্রাফি
ডান দিক থেকে
নেমে গেছে এরাবিয়ান সাগরে।
কাঞ্জি, হিরাগানা, কাতাকানায় উপস্থাপিত হয়
জাপানি জাতির জাতীয় জটিল জীবন।
আকাশ থেকে ধীরে ধীরে
শব্দের সিঁড়ি বেয়ে যেনো জলপরী নেমে গেছে
প্রশান্ত মহাসাগরে।
ইংরেজি আলফাবেট আন্তর্জাতিক হাইওয়ে
যাবতীয় ভাষার ভাষান্তরের সেতু।
মৃত বা বিলুপ্ত হিব্রু হরফে রয়েছে ইসরাইলিদের নৃতত্ত্ব
১১টি বর্ণ মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে
১১টি ডুবে গেছে বরফাবৃত ভূমধ্যসাগরে।
হিন্দি অক্ষর মনে হয় ভারতীয় ধুতি; সিঁথির সিঁদুর
স্তনের অহংকার নিয়ে
বোম্বের নায়িকার মতো নৃত্য করে ঢেউ-টিন
তরঙ্গ তুলে ভারত মহাসাগরে।
প্রাক-ভাষার পর প্রাচীন ভাষা তামিল জাতির
পূর্ব নারী, পূর্ব পুরুষের ভাষা, বৈশিষ্ট, বংশ পরিচয়
তামিল অক্ষর বহন করছে
নৃতাত্ত্বিক স্বাক্ষর-
ছড়িয়ে আছে পারিবারিক ভিটেমাটিতে।
বাংলা বর্ণমালায় চকচক করে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল রঙধনু।
আর আমার ব্যক্তিগত ব্রেইল পদ্ধতিতে
পাই তোমার ঘ্রাণ!
কি বলেন হে ভাষা আবিস্কারিক গ্লটোগনি?
টরন্টো, মে ৯, ২০২১
মাছ মন্ত্রি
মাছদের কি দিন আছে, রাত্রি আছে এবং সন্ধ্যা, সান্ধ্য আইন?
অথবা জুম্মা বার!
নতুন নামকরণের প্রেক্ষিকে প্রায় বিলুপ্তের পথে শুক্রবার
অনেক প্রজাতের মৎস্য এবং মৎস্যকুমারী বিলুপ্তির তালিকায়
যেমন ইলিশের মাংস!
কুম্ভঅশ্রুর মতো মাছের কান্নার জল কি নদীর জলকে বিভ্রান্ত
এবং বেদনাক্রান্ত করে!
মাছেদের রক্ত শীতল; মৎস্য-কাম-ধর্ম মন্ত্রিদের রক্ত ঠান্ডা।
মাছেরও সেক্স আছে; ঘুম আছে, নেত্রপল্লব নেই-
চোখ খুলে সাঁতার কাটতে কাটতে ঘুমায়
মাছমন্ত্রিরা ডুবে ডুবে জল খান।
তারা মাছের চেয়ে ভালোবাসে জলকেলী, জলপরী, জুম্মাবার।
মাছ এবং মৎস একই অর্থ
কিন্তু শুক্রবার আর জুম্মাবার বহন করে ভিন্ন অর্থ।
মৎস্য চাষের পাশাপাশি তারা জলপরী চাষের ফাইলেও
সুলিখিত সই করে।
কিন্তু জানেনা রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞাপনের ভাষাঃ
‘সুলেখাকালি কলঙ্কের চেয়েও কালো।’
টরন্টো, ৮ মে ২০২১
উদ্যানে বধ্যভূমি
বৃক্ষ নই, আমি আপনার একটি বোবা মেয়ে
অথবা আপনার বোবা বোনটিকে
পার্কে টুকরো টুকরো টুকরো টুকরো করে কাটছে-
আপনার মেয়ের মাথা, মন, হাত, পা, পেট, পিঠ-
রক্তে ভেসে যাচ্ছে উদ্যান
ভেসে যাচ্ছে লেকের জল।
আপনারা কি আমাদের হত্যা, আমাদের মৃত্যু
আমাদের অপ্রকাশিত চিৎকার শুনতে পাচ্ছেন না?
আমরা আপনাদের অক্সিজেন দেই,
আমাদের বাচাঁর কি অধিকার নেই?
[৭ মার্চে আমরাও স্বাধীনতা চেয়েছি,
আমরাও শুনেছি ভাষণ,
সেদিন আমরাও আন্দোলিত হয়েছিলাম,
সেদিন আমাদের পাতাগুলো পাখি হয়েছিলো,
পতাকা হয়েছিলো।
আমরাও ছিলাম বাংলাদেশের অংশ।
এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম!]
আজ সেই উদ্যানে আমাদের হত্যা করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে
আপনার মেয়ের ধর্ষণের চিৎকার
আপনার ছেলের বলৎকারের আর্তনাদ
শুনতে পাচ্ছেন না!!
নিষ্ঠুর ইলেকট্রনিক করাত দিয়ে আমাদের বুক চেড়া হচ্ছে
ফারা হচ্ছে চিবুক, চোখ।
উদ্যানের বধ্যভূমি থেকে আমাদের বোবা আর্তনাদ
আমাদের নীরব চিৎকার কি বিশ্ববিদ্যালয় শুনতে পায় না!
আপনারা কি আপনাদের সন্তানদের কষ্টকান্না
শুনতে পাচ্ছেন না?
আমাদের চিৎকার
আমাদের আর্তনাদ
হাহাহার…
হত্যা….
মৃত্যু…
টরন্টো, মে ৬, ২০২১
কাগজ
কাগজ আবিস্কারের আগে এবং
আদম-হাওয়া জন্মের পর
সময়টা ঘুমানো জন্য যথার্থ ছিলো।
অন্তর্বর্তী দিনরাত্রিতে
একটি ফেরেশতা আত্মহননের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো,
যদিও আত্মহত্যা একটি বাজে কবিতা।
যদিও তখন কবিতার জন্ম হয়নি।
সেই কাহিনী কোথাও নেই।
যেহেতু কাগজ ছিলোনা।
কাগজ পয়দা হলো চীনে
চীন বংশোদভূত কাগজের নামকরণে ফার্সি শব্দ!
কি অদ্ভূত জন্মরহস্য।
ইভাদম সৃষ্টির আগে পাখি ছিলো অথবা ছিলো না,
গাছ ছিলো না কিংবা ছিলো।
সৃষ্টির সূত্রপাত জানা অনিবার্য।
এখন লিখে রাখবো তোমার সব কথা, পাপ-কথা,
পাপের কাহিনী।
টরন্টো, মে ৬, ২০২১
বেদনার মতো সুন্দর
বাঁ-হাতি ভারতীয় মেয়েটি কাঁদছিলো-
কিছুটা বেদনার মতো সুন্দর।
আমি ভাবছি- মানুষের তিন হাত
ডানহাত, বামহাত এবং অজুহাত,
ডান হাতের চুলকালে টাকা আসে আর বাম তালু চুলকালে উল্টো।
এলোমেলো ভাবছি, বা দিক থেকে বা-হাতিদের আরবি লেখা কি সহজ?
বামপন্থী নাস্তিকেরা এখন মেমন-ইনুর মতো
হাজী, নামাজি এবং পাজি।
যারা ছিলো ডানহাত; তারা এখন নানা
অজুহাতে হস্তরেখাবিদ।
ভাবছি- হাতের প্যাঁচ আর হাতের পাঁচ,
সেনাবাহিনীর লেফট-রাইট-লেফট,
ছক্কার পর উড়ন্ত বল লুফে ধরলো সাকিব আল হাসান।
মেয়েটি কাঁদছে।
গ্রন্থিত সমস্যা সমুহ মাকড়সার জাল:
প্রথমত: দরজা খোলা, দ্বিতীয়ত: গাড়ি চালানো, তৃতীয়ত: লেখালেখি, চতুর্থত: গিটার বাজানো, পঞ্চমত: বিপরীত ভাবনা এবং আরো অনেক।
সেজন্য ১৩ আগস্ট।
মেয়েটি কাঁদছে, সার্বজনীন বেদনার মতো
তাই তার জন্য সামান্য ক’টি শব্দ, সামান্য শান্তনা:
লেডিস অলওয়েজ রাইট!
ক্যাঙ্গারুরা বাঁ-হাতি,
এবং তুমি।
তুমিও হতে পারো এঞ্জেলিনা জোলি।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি আঁকতে পারে তোমার সৌন্দর্য
তুমি হতে পারো বিল গেটসের
গার্ল ফ্রেন্ড; রক্ষিতা নয়।
টরন্টো, মে ০৬, ২০২১।
কবর
আমরা দু’জন হংস মিথুন
এক আকাশে উড়ে বেড়াই
এক পাতিলের অন্ন ভোজন
মেঘের মতো ঘুরে বাড়াই।
এসো এসো ভালোবাসি-
এক বিছানা শেয়ার করি।
এক সাথে রাত কাটাই এবং
পরস্পরকে কেয়ার করি।
মানি না এই আইসুলেশন
প্রতিবাদে রাগ করি,
নাও জড়িয়ে স্বর্ণলতায়,
এক আনন্দ ভাগ করি!
এসো কাছে নিবিড়তায়
হৃদ-পরাণে রাখতে চাই,
জীবন শেষে আমরা দু’জন
এক কবরে থাকতে চাই।
টরন্টো, মে ২, ২০২১
মেন্দিফুল
আমাদের মা কবরে একা একা শুয়ে শুয়ে নীরবে কাঁদেন,
নির্জন রাতে বাতাসে মেশানো কান্নার করুণ বিটোফেন
এবং মেন্দিফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ।
কবরে যাবার প্রাক্কালে গয়নার মতো
নিজের নামটা খুলে মা
আমার মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে বল্লেন:
‘বোন, এই একই নাম তোমারও।
তোমাকেই দিয়ে গেলাম, আজ থেকে তোমার নাম-
বাংলাদেশ।
আমার মায়ের মতো বাংলাদেশ
আমার মেয়ের মতো বাংলাদেশ!
গ্রামবাংলায় রেখে আসা মার্বেলের মতো এক টুকরো কৈশোর
নামতা পড়া প্রতিবেশি কিশোরী
কূয়োপাড়ে মেন্দিফুলের পাগলকরা অদ্ভূত মাদকতা
তেরো হাজার কিলো মিটার দূর থেকে
মায়ের গন্ধের সাথে মিশে থাকা সেই তীব্রতা অনুভব করি!
ছেড়ে আসা শহর, স্বজন
ফেলে আসা মানুষগুলো সুবাস হয়ে বাস করে অন্তরে-
তারা শৈশবের মতো সুন্দর,
তারা মেহেদি পাতার মতো সহজ।
এবং তাদের ভেতরেও মেন্দি পাতার মতো লালজীবন!
টরন্টো, মে ০১, ২০২১
হাদিয়া
লোকটি শিল্পবোদ্ধা, শিল্পপতি। গ্যালারির মালিক।
সেখানে ঝুলে আছে পিকাস্যুর সাথে নিজের সেলফি!
নিঁখুত তাঁর রেপলিকা তৈরির হাত।
তিনি কফি খেতে প্রায়ই বিদেশে যান,
প্যারিস তাঁর অত্যন্ত প্রিয় শহর।
কখনো চন্দ্রবিন্দু ছাড়া ‘তার’ লেখা ঠিক নয়;
তাঁর উপর সম্মানসূচক চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা
আমাদের আংশিক দায়িত্ব,
আংশিক কর্তব্য।
জাদুঘর আর মিউজিয়ামকে তিনি মনে করেন এক নয়; ভিন্ন।
শিল্পপতির অবিশ্বাস্য সংগ্রহশালা, গ্রন্থশালাও।
ধরা যাক, তাঁর নাম- ‘ক’
তিনি বিখ্যাত এক নারী শিল্পী ‘খ’-এর কাছে
ছবি কিনতে গেলেন,
পছন্দ করলেন এক পরীর প্রোট্রট, আংশিক আবৃত।
তা দেখে দালীর ঘড়ির মতো গলে গলে
‘ক’ ফ্রেমের বাইরে চলে গিয়ে ‘খ’কে বললেন:
আমি অনাবৃত মূল মডেলকেই চাই,
কিনতে চাই।
তাহার সাকিন কই; তার হাদিয়া কত?
টরন্টো, ৩০ এপ্রিল, ২০২১
এবং ম্যাগনোলিয়া
প্রচুর প্লাসিটিকের বৃ্ষ্টি পড়ছিলো তোমার নাভিতে
কাঁপছিলো ভেজা কাক।
দিঘির জলাশয়ে শাপলা নিজেকে জাতীয় ফুল ভেবে
ফুলতে থাকে, দুলতে থাকে, খুলতে থাকে।
মিকাঈলের মেঘফুল ঝরছে
চিরল পাতা চুয়ে চুয়ে
চু
য়ে
চু
য়ে
চুলের জল
টুপটাপ, টুপটাপ, টুপটাপ
বর্ষাউত্তীর্ণ দুপুর তোমার পায়ের ছায়ায় ভিজতে থাকে।
গা ঝাড়া দিয়ে কাকটি উড়াল দিলো রোদের দিকে।
তখন আমার ব্যাকইয়ার্ডে বৃষ্টির ঘ্রাণে ভিজতে ছিলো-
ফুল বিউটিফুল ম্যাগনোলিয়া।
টরন্টো, ৩০ এপ্রিল, ২০২১
তুলসি
মেয়েটি দুধে ধোয়া তুলসি পাতা ছিলো,
আমরা বরং গুণবতী ঔষধি তুলসির গুণাবলী
আর তুলসিমীথ নিয়ে থাকি।
তুলসি অর্থ যার তুলনা নেই, অতুলনীয়; সুন্দরী এবং সুগন্ধী।
তুলসি-চা অনেক উপকারী। ভালবাসি সেই সুগন্ধী চা।
তুলসি গাছ পবিত্র বৃক্ষরূপে পূজিত হয়।
নিত্যং যস্তুলসী দত্ত্বা পূজয়েন্মাঞ্চ মানবঃ।
লক্ষাশ্বমেধজং পুণ্যং লভতে নাত্র সংশয়ঃ।।
-(ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড ২১.৪৫)
সেবিকা তুলসিকে কৃষ্ণের সঙ্গে সঙ্গমে ক্রীড়ারত দেখে
রাধিকা অভিশাপ দিয়েছিলো-
তুলসি বৃক্ষরূপে জন্মগ্রহণ করবে; করলো
জন্ম হলো বৃন্দাবনে
এবং বিবাহ হলো আরেক অভিশপ্ত শঙ্খচূড়ের সঙ্গে।
তুলসি আমাদের রক্ষা করে, রক্ষিতা!
টরন্টো। এপ্রিল ২৮, ২০২১