গীতিকবিতা :: ১
জন্মভূমিকে মুক্ত করতে
স্বাধীন সোনার বাংলা গড়তে
অধিকারহীন মাটি-মানুষের
দুঃখ করতে দূর-
টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে
এলে তুমি মুজিবুর।
তুমি) এই বাংলায় এসেছো বন্ধু মহৎ স্বপ্ন নিয়ে
সব বাধা-ভয় দূর করে দিতে তোমার মহিমা দিয়ে
জানি) হবেই তোমার ছয়দফা দাবি-প্রতিবাদে ভরপুর ।
তুমি) অসীম সাহসে পরাধীনতার শিকল ভাঙবে বলে
মার্চের এই পুণ্য লগনে এসেছো মায়ের কোলে
তুমি) বজ্রকণ্ঠে দিতে এলে বুঝি-চিরসংগ্রামী সুর।
গীতিকবিতা :: ২
আমাদের প্রিয় বর্ণমালার বর্ণেরা কথা কয়-
ইতিহাস আর কাব্য-গাথায় আছে তার পরিচয়।
চর্যাপদের সহজিয়া গানে মাটির গন্ধ ভাসে,
ভাষার মিছিলে প্রতিবাদী এই বর্ণেরা ছুটে আসে,
রক্তে রঙিন বর্ণমালায়- স্বাধীনতা লেখা হয়।
গীতাঞ্জলির অক্ষরগুলো মহিমা ছিনিয়ে আনে,
সংগ্রামী সুর ঝংকার তোলে অগ্নিবীণার তানে,
বাহান্ন আর একাত্তরও- চির-ভাস্বর রয়।
গীতিকবিতা :: ৩
সবুজ-শ্যামল এই বাংলায়
অপরূপ শোভা আছে,
এই রূপ দেখে দু’ চোখ জুড়ায়
আনন্দে মন নাচে।
বাংলার নদী-সাগরের ঢেউ
গানের ছন্দে ছোটে,
ভোরের আকাশে লাল রং মেখে
খুশির সূর্য ওঠে,
সবুজ প্রকৃতি চিরচেনা রূপে
প্রতিদিন আসে কাছে।
দিগন্তজোড়া বাংলার মাঠে
সোনালি ফসল হাসে,
শান্ত বাতাস শিহরণ তোলে
লতায়-পাতায়-ঘাসে।
ঝর্ণার গানে পাহাড়ের মন
দোদুল দোলায় দোলে,
উদাসী বনের ঘুম ঘুম চোখে
সুখের কাঁপন তোলে,
ফুলের গন্ধে ওড়ে মৌমাছি,
পাখি গান গায় গাছে।
গীতিকবিতা :: ৪
দূর বনে সাঁঝ নামে আবিরের রাগে
প্রকৃতির এই রূপ বড় ভালো লাগে।
পাখিরা ফিরেছে নীড়ে নেই কোলাহল
সন্ধ্যা তারার চোখে আলো ঝলমল,
শান্ত বাতাসে মনে শিহরণ জাগে।
মাটির প্রদীপ ঘরে মিটিমিটি জ্বলে
সন্ধ্যা-রাতের সাথে হেসে কথা বলে।
ফুলের সুবাসে যেন চোখে আসে ঘুম
সরসে পরশ মেখে দিয়ে যায় চুম
শিমুল রাঙায় বন ফাল্গুন-ফাগে।
গীতিকবিতা :: ৫
কান পেতে শোন্, বইছে লগন
শোনরে পেতে কান,
পরাণ খুলে শুনতে হলে
শোনরে জলের গান।
বাতাস এসে ভালোবেসে দিচ্ছে মিষ্টি সুর,
ঢেউয়ের তালে সাত সকালে মাতাল সমুদ্দুর
ভরা ভাদর করছে আদর- ডাকছে প্রলয় বান।
রোদের তাপে বুক যে কাঁপে মরু-তৃষ্ণা তার
ক্লান্ত চলা শুকায় গলা পা চলে না আর
ইচ্ছেগুলো উড়ায় ধুলো- স্বপ্নটা খান খান।
গীতিকবিতা :: ৬
তোমার কান্না দেখে বরষায় থেকে থেকে
মেঘেরাও কাঁদে,
আঁধারের কালো খামে নীরবতা এসে থামে
ওই দূর চাঁদে
কেন) সাগর উথাল হয়- জানে কি তা কেউ
তুমি কাঁদো বলে তার বুকে এত ঢেউ
তোমার কষ্ট দেখে গানের বীণায়
শিল্পী করুণ সুর সাধে।
ওই) পাহাড় অধীর হয়- ওরা শোনে যেই
একা একা অলকায় তুমি ভালো নেই
তোমার দুঃখ দেখে জলের প্রবাহ
গড়িয়ে গড়িয়ে নামে খাদে।
গীতিকবিতা :: ৭
পাখিরাও বাসা বাঁধে
বাসা বাঁধে যারা যাযাবর,
আমিতো বাঁধিনি বাসা
আমার নেইতো কোনো ঘর।
ঘর বেঁধে কারে ঘরে রাখি
যে ছিল সে দিয়ে গেল ফাঁকি
মন ভেঙে প্রিয়জন
চিরতরে করে দিলো পর।
ভালো আছি কিছু নেই বলে
যা ছিল তা গেল যেই চলে
পথে পথে ঘুরি আমি
এতটুকু নেই অবসর।
গীতিকবিতা :: ৮
তোমার) মন ভালো থাকে যেই
হয়তো খুশিতে সেই
গুনগুন করে তুমি গান করো।
আমার সামনে আসো,
কখনো একটু হাসো
আবার কখনো অভিমান করো।
তোমার খুশিতে কেন আমি খুশি হই
গোপন মনের চোখে কেন চেয়ে রই
তবে কী আমায় তুমি
তোমার কিছুটা খুশি দান করো।
তোমার হাসিতে ওই বনে ফোটে ফুল
হৃদয় পাপিয়া গানে হয় মশগুল
তবে কী আবার তুমি
গোপনে প্রেমের সুধা পান করো।
গীতিকবিতা :: ৯
এ কেমন ঘুম তোর, এ কেমন ঘুম
মৃত্যুর দূত এসে তোর গালে ভালোবেসে
দিয়ে গেল চুম।
পৃথিবীতে আলো আছে ডোবে নাই বেলা
ঘুম নিয়ে তবু তুই করে গেলি খেলা
অসময়ে নিয়ে এলি কোন্ মৌসুম।
আঙিনাতে কালো ছায়া মুছে দেয় হাসি
তোর ঘুমে বেজে যায় বেদনার বাঁশি
চারিধার করে দিলি নীরব-নিঝুম।
গীতিকবিতা :: ১০
মনের কোণে ভালোবাসার বাসা আছে
বেঁচে থাকার আশা আছে;
বুক জমিনে সুখের ফসল তোলা আছে
স্বপ্ন রাখার গোলা আছে;
এই জীবনের রঙের মেলায়
দুঃখ-সুখের দোলা আছে।
বন জুড়েছে রঙ-বেরঙের কতো যে ফুল
অনুরাগে ভ্রমর ব্যাকুল,
সুখ এনেছে দখিন হাওয়ার মত্ত ফাগুন
লাগলো মনে প্রেমের আগুন;
মদির নেশায় উদাস পথিক-
বন পথে পথ-ভোলা আছে।
মন পুড়েছে ভালোবাসার বাসাও নেই
বেঁচে থাকার আশাও নেই,
বুক ভেঙেছে সুখের ফসল তোলাও নেই
স্বপ্ন রাখার গোলাও নেই;
মাথার উপর চির চেনা
আকাশ কেবল খোলা আছে।