ওড়ো চাঁদের সমান্তরালে
তোমার মুখশ্রী
আভা- গার্দীয় ছবির মতো শিল্পময়
কিংবা অগুস্ত রঁদার ভাস্কর্যের মতো অনবদ্য
সুলভ স্বপ্নের পথে জাদুলণ্ঠন হাতে কে যায় ও
অস্পষ্ট মুখ স্পষ্টতর করার মানসে
অথচ তোমার মুখাবয়ব জাদুবাস্তবতার অনুষঙ্গ হয়ে দোলে
নীল খামের চিঠির মতো বিগত স্মৃতিরা
অনাহুত অতিথির মতো এসে ঢোকে
দেখি ভাস্কর্যের মুখ স্ফটিক দানার মতো জ্বলে
চাঁদরাতে তুমি উড়ে যাও অপরূপ চাঁদ ভেঙে ভেঙে
ভাস্কর্যময় তুমিও যেন এক চাঁদ , ওড়ো চাঁদের সমান্তরালে ।
ডানা
আমাদের পোষা পাখিগুলোর কোনো ডানা ছিল না একথা সত্যি নয়
ডানাগুলো গুটিয়ে ছিল
অর্গল খুলে দিলে তারা উড়াল দিলো
অনভ্যস্ত , ভীত ও সচকিত তারা বসে থাকলো গাছে গাছে
অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর তারা উড়ে গেলো
দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে মিলিয়ে গেল তারা ।
মানব সন্তানদের দৃশ্যত কোনো ডানা নেই
তবু ক্রমশ তাদের অদৃশ্য ডানা গজায়
সময় এলে তারাও উড়ে যায়
বাৎসল্যের সমূহ বাঁধন ছিঁড়ে তারা যায় নতুন নীড়ের খোঁজে
শুধু ফসকা গেরোর মতো স্মৃতি পড়ে থাকে ।
অদৃশ্য দানব ঘোরে
ভিজে গেছে চারপাশ । তবু গোমট আকাশ
থামায়নি কান্না তার । যেন আয়না ভেঙে গুঁড়ো ।
কঁকিয়ে চলেছে এক ক্লান্ত পাখি যেন কোনো বুড়ো
পিঁচুটি সরিয়ে মুছে অশ্রু তার । দু:সহ বাতাস
আনে অজানা বিম্বিত ভার । যেনবা সহসা থেমে
গেছে মানুষের ছায়া । চারিভিতে অকূল পাথার ।
শঙ্কা , ত্রাস নামে যেন ফুসফুসে অন্ধকার
সবকিছু পাথরের মতো স্থিত । দিন যায় স্বেদে , ঘেমে ।
গুঙিয়ে গুঙিয়ে যায় দিন । হলুদ পাতার মতো মরে আসে।
অদৃশ্য দানব ঘোরে অন্যতর হিহিংস্র সন্ত্রাসে ।
হাতে তার অপূর্ব খঞ্জনী
কে যায় আঁধার রাতে ,সোনার মোহর হাতে নিয়ে
নদী সিকস্তির পার থেকে উঠে আসে সুরধ্বনি
শীতের পরশ গায়ে , কে আসে র্যাপার গায়ে দিয়ে !
অন্ধ গায়ক যায় , হাতে তার অপূর্ব খঞ্জনী ।
স্মৃতির ভেতর থেকে লাফ দেয় মরানদী সাঁকো
অঘ্রাণের হিম-হিম হাওয়া , ঘাসের মদির ঘ্রাণ
তুমিতো ছিলেই স্থিত, এখনো কি শীতে স্থিত থাকো ?
আমাদের সেইসব দিন ,রাত্রি , নিশ্চিন্ত সপ্রাণ ।
শীতের অরণ্য থেকে উঠে আসে ‘স্মৃতিকণ্ডুয়ন’
শীত হাওয়ায় ধ্বনিত হয় সব আনন্দপ্রবণ ।
ধোঁয়াশা
তোমার মুখ আঁকবো বলে যে রঙ-তুলি কিনেছিলাম
তা-ই হারিয়ে ফেললাম ঝড়ে
যখন আবার রঙ এবং তুলি খুঁজে পেলাম
তখন তোমার মুখই গেল হারিয়ে ।
সেই থেকে আমি হাতড়ে ফিরছি তোমার মুখ
অথচ কেবল ধোঁয়াশাই থাকলো
তোমার মুখের জায়গায় স্থির হয়ে থাকলো শুধুই শূন্যতা ।