পক্ষহীন শিঁরদাড়া
নিজেই তো আমি এক ভয়ানক বিষের পুকুর
আমাকে কামড়ে দিয়ে কোন কুকুর ছড়াবে বিষ?
রক্তের ভেতরে অভিবাস গ্রহণ করেছে দূর
এবং নিকট একসঙ্গে। ফেরেশতা-ইবলিশ
মুখোমুখি বসে পান করে ঋতুচক্রের জটিল
মদ। দুজনেই আনন্দে মাতাল হয়ে শুয়ে পড়ে
মহাকালের বিশাল বিছানায় এক অনাবিল
অহঙ্কারে। অবাধ্যকে তুলে রাখি আমি ভাঁজ করে
জামার পকেটে। আমাকে শাসাবে কোন উশৃংখল
সময়ের দশক অথবা শতাব্দীর স্রোতধারা?
ডান-বামের ধারক আমি, ধর্ম-অধর্ম প্রবল
প্রবাহিত আমার ভেতরে, পক্ষহীন শিরদাঁড়া।
মাথার ভেতরে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ পশু আর যীশু
দেখি আর হাসি সেও আমি, এক পাপহীন শিশু।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৮ এপ্রিল ২০২১।
এবারের যাত্রা
যাওয়ার তো একটা প্রস্তুতি লাগেই; টিকেট, ভিসা,
পাসপোর্ট, বাড়তি কয়েক সেট জামা জুতো, প্রিয়
কিছু বইপত্র; মোশান সিকনেসের বিবমিষা
থেকে রক্ষা পেতে একপাতা বড়ি অবশ্যই নিও
সঙ্গে করে, কে না এমন দরদী উপদেশ দেন?
এসবের বাইরেও সঙ্গে রাখি স্বপ্ন। জয় করে
ফেরার প্রত্যয় বুকের গভীরে রেখে পা ফেলেন
প্রত্যেকে, যখন বেরিয়ে পড়েন দূরের সফরে।
কিন্তু এ-যাত্রায় সেরকম কোনো প্রস্তুতি নিইনি,
এমন কী আনিনি কাঁধের ব্যাগটাও সঙ্গে করে।
প্রিয়তমার কবোষ্ণ ঠোঁটে আমি এবার দিইনি
বিদায় চুম্বন। প্রস্তুতি ছাড়াই যাচ্ছি যে শহরে
তার নাম-ধাম কিছুই জানি না। শুধু যেতে হবে
এইটুকু জানি, বেরিয়ে পড়েছি মহাকলরবে।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৭ এপ্রিল ২০২১।
ভেঙে পড়া পথ
ধুসর রাস্তাটি সরু হতে হতে সুতোর আকৃতি
ধারণ করেছে। খুব সাবধানে এখন পা ফেলি,
যদিও নিশ্চিত জানি এ-রাস্তায় স্বপ্নের স্ফিতি
ঘটবে না আর কোনোদিন, তবু কেন চোখ মেলি
স্বপ্নের প্রবল ঘোর নিয়ে রোজ, কেউ কি জানে তা?
হুড়মুড় ভেঙে পড়বে এ-পথ নিশ্চিত হয়েছি
বহু আগে। কারণ আমিই এই পথের প্রণেতা,
এর আগে একবার আমি এই পথে হেঁটে গেছি।
কখনো কখনো মানুষ নিশ্চিত জেনে যায় তার
পতনের ক্ষণ, ভেঙে পড়ার অমোঘ ঘন্টা শুনে
ফেলে বহু আগে। তবু রোজ সাজায় স্বপ্ন-সম্ভার,
হীরে-মতি তুলে আনে অতি সাবধানে গুনে গুনে।
শুনেছি মানুষ বেড়ে ওঠে তার স্বপ্নের সমান
ভেঙে পড়া পথে বসে গায় নতুন পথের গান।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৭ এপ্রিল ২০২১।