শরপুঁটির টুপটুপ টোকা
∆
ক্রমশ এগোচ্ছে
তামাটে চোখের নীল পাতায়
বহুদিনের খণ্ড খণ্ড মরুর পাত
পলির স্রোতে ডানা মেলে একমুঠো উর্বরতা
অশান্ত ঝিরিপথে শাঁইশাঁই ছাড়ছে নিকোটিন
সবুজ বক্ষস্থলে শরপুঁটির টুপটুপ টোকা যেন
কাঞ্চনময় বিলে উর্ব্ধে ওঠে নদী
তার পাড়ভাঙা শব্দে পদ্মার মুখ
কাঁপতে কাঁপতে মহাজাগতিক তৃষিত ঠোঁট
উদ্যত হয়ে শিমুল তুলোর গায়ে জল ছাড়ে
বিস্ময়কর আভা কানায় কানায় কুসুমবাগে
পত্রালির গুঞ্জন সুখের বৃত্তে পাক খেলে
প্রেমময় তটদেশের ভাঁজে ভাঁজে
সুদীর্ঘ কাছে আসার তান জোয়ারে ভাসে….
ভাঁটাফুল ও শ্রাবণ নদী
∆
জলে ধুয়ে যাওয়া প্রতিটি মুখের ছায়ায়
স্বপ্ন ও থাকে; আশাও থাকে
তবে ক্ষুধা নামক তারুণ্য কখনোই থাকে না।
সবুজ মাঠে যেমন সবুজ ঘাস থাকে
তাও একসময় নগ্ন হয়ে মিশে যায় মাটিতে
ঠিক তেমনি তারুণ্য হারিয়ে
স্বপ্ন, আশা ও সুখ মরে যায়।
একদিন চোখের মাঝখানে মৌমাছির মতো
ভনভন করে কেঁদে ওঠে জীবন
বকুলতলা নামক একটি নির্জন ছায়ায়
মেঘের খেলনাপাতিতে হারিয়ে
জড় পদার্থের মতো
ফলবান বৃক্ষদেবী রয়ে যায় নিষ্পত্রে
চারুশিল্প ভাঁটাফুলের কদম ছুঁয়ে
জীবনকে গর্ববতী করতে না পারায়
শ্রাবণের নদী বয়ে বেড়ায় – অনন্ত দুঃখে।
বড়ইফুলী কাঁথা
∆
সুতোনলী সাপের মত মগবিল ফেটে চৌচির
চিকন ও সরু সরু তাঁরবেড়ি গেঁথে আছে
পায়ের আদলে
দুধরাজের পয়দা হওয়া মিষ্টি মিষ্টি মিহি জীবন
মাকড়সার জালের মত সেলাই হচ্ছে
দুখানি ঠোঁটের গল্পে
কচি বুকখানা ফিসফিসে হাঙ্গর ডাকে
নীল নোনা মলাট কক্ষে
কুচুরমুচুর বিলাতী স্বপ্নের পা
বাঘবন্দি খেলায় দুঃখের মাচানে তুলে রেখে
ঘরের ঠুঁনি ধরে হুক্কা টানে মায়ের নাকের নথ
বড়ইফুলী কাঁথার ভাঁজে ধোঁয়াগুলো
কন্ঠে জল নামায়
সে ফোঁটা একেকটি লাল ফুল
সে ফোঁটা একেকটি আগুনের নাহান
তার রঙ সুরখ লাল, চোখে জ্বালা বাড়ায়
এভাবে একখানা জীবন দুলতে দুলতে
সুখগুলো না ছুঁতে না পেরে
অবাক নয়নে, নয়ন দেখে…..
উদ্ভিদবিদ্যা
∆
বিভোর আয়ু জীবন
তার মগজের শিরাতে এক অবুঝ শিশু হামাগুড়ি খেলে
প্রাণচঞ্চলে থরথরিয়ে বেড়ে ওঠা বুক ছাতিম
মাথার ওপর অগত্যা টাক পড়ে
সোনালি আঁশের সবল মুরলি বাঁশি
সরু আলপথে ঠেকে
ঝিকঝিকিয়ে গজায় চোখের ভেতর বিরান মাঠ
চিকন ও কচিকচি ঘাসের কেশরগুলো
দুদণ্ড বাড়তেই, সন্ধ্যা নামে চল পথে
একেকটি পথের পথ বিজুলি শিখার মত দাউ আগুন
রাতভর জেগে দৈন্যদশা কাতর কাচে
যত রকম ফুল ফোটে
সবগুলো বুদবুদ হয়ে ওড়ে যায় তারা দেশে
কালো মলাটের পাতাগুলো উল্টালেই
ভেসে ওঠে এক প্রস্থান ক্ষেতখামার
তাতে বীজের প্যাকেট খুলে সূর্য তাতানো প্রহরে
মুখ উঁচিয়ে প্রাণ হাসে
বিচিত্র এই ধরার অল্প অল্প কুসুমগুলো
শেকড় গজিয়ে – লোভ বাড়ায়
এটা উদ্ভিদবিদ্যার অাশ্চর্য সোহাগ
মানুষ এসব সোহাগ খেয়ে বাঁচে
দেহলতা বাড়ায়
তবুও বুড়ো হলেও গোলাপকুঁড়িতে নজর টানে।
শিল্প
∆
দারুণ এক শিল্পের পাঠকক্ষে
বসিয়েছি তোমাকে
তুমি প্রতিনিয়ত নৃত্য করো হাঁটু গেড়ে বসে
নীরবতার আহার্যে – আমি তুষারের মতো গলে
জগতটাকে দেখি
যার ভেতরে কেউ যেন পুঁতে রেখেছে শস্য
দুজনের চাষের জমিতে
সম্পূর্ণ জেগে ওঠে – অস্তিত্ব
দোষ কী বল এই মহানুভবতার?
‘জীবনকে খাচ্ছি, গিলছি
আবার সমুদ্রের তলদেশে ছাড়ছি ও।’
সময়ের অপচয় করে – গলায় ফুলের মালার
বদনাম একদম নিতে চাই না
প্রাণের উচ্ছ্বলতা চাই
ঘুমকাতুরে জীবন চাই না।