ভূমিকা ও অনুবাদ: কুশল ভৌমিক
সবাইকে চমকে দিয়ে এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন আমেরিকান কবি লুইস গ্লিক। পুরস্কার ঘোষণার সময় সুইডিশ একাডেমি তাঁর সম্পর্কে বলেছেন- ‘তাঁর নির্ভুল কাব্যভাষা ও দার্শনিক সৌন্দর্যবোধ ব্যক্তি সত্তাকে সার্বজনীন করে তোলে’। ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার সময় সুইডিশ একাডেমির নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন- ‘গ্লিকের ভাষ্য মধুর ও আপসহীন। তাঁর কবিতা পড়লেই বোঝা যায় যে, তিনি নিজেকে প্রাঞ্জল করতে সচেষ্ট।একই সঙ্গে তাঁর লেখায় পাওয়া যায় হাস্যরস ও তীক্ষ্ণ কৌতুকের সংমিশ্রণ ‘।
অথচ এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে লুইস গ্লিকের নাম শুরুতে তেমন আলোচনাতেই আসেনি। নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান নিজেও বলেছেন- ‘ লুইস যে খুব পরিচিত তা নন; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে।তাঁর লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদও কম হয়েছে’।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পরিচিতি কম থাকলেও গ্লিককে কোনোভাবেই গৌণ কবি বলা যাবে না। তিনি ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল (২০১৫), পুলিৎজার পুরস্কার (১৯৯৩), ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড (২০১৪), জাতীয় গ্রন্থ সমালোচক পুরস্কার, বলিঞ্জেন পুরস্কারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্যসংশ্লিষ্ট প্রায় সবগুলো পুরস্কারই পেয়েছেন। ২০০৩-২০০৪ সালে তিনি আমেরিকার পোয়েট লরেট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
লুইস গ্লিকের পুরো নাম লুইস এলিজাবেথ গ্লিক।জন্ম ২২ এপ্রিল ১৯৪৩, আমেরিকার নিউইয়র্কে। তবে তাঁর শৈশব কেটেছে লং আইল্যান্ডে। বাবা ড্যানিয়েল গ্লিক ও মা বিয়েট্রেস গ্লিকের দুই মেয়ের মধ্যে তিনি বড়। গর্ডার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিতা বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ ১৪টি, ২টি চ্যাপবুক এবং ২টি কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ। প্রথম কাব্য ‘ ফাস্টবর্ন’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থঃ দ্য ট্রায়াম্ফ অব একিলিস (১৯৮৫) এবং দ্য ওয়াইল্ড আইরিশ (১৯৯২)। তাঁর কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থঃ প্রুফস এন্ড থিয়োরিজ (১৯৯৪) এবং আমেরিকান অরিজিন্যালিটি (২০১৭)।
তবে একথা সত্যি তিনি বহুল পঠিত নন।নোবেল প্রাপ্তির পূর্বে তাঁর নাম বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে একেবারেই অপরিচিত ছিল এবং তাঁর কোনো কবিতাই বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়নি। তাঁর কবিতার অনুবাদ বাংলা ভাষায় সে অর্থে হয়নি বললেই চলে। কিন্তু তিনি যে গৌণ কবি নন তার প্রমাণ সাহিত্য অঙ্গনের প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারই তাঁর মুঠোবন্দি। এ কথা সত্যি, নোবেল পুরস্কারের জন্য গ্লিকের মনোনয়ন একটি দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত যা কিছুটা বিতর্কও সৃষ্টি করেছে। তবে বিতর্ককে একপাশে রেখে আমাদের উচিত কবিতার বিশ্বজয়কে উপভোগ করা।
৭৭ বছর বয়সী লুইস গ্লিক হলেন নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে ষোড়শ নারী। ১৯৯৩ সালে টনি মরিসনের পর সাহিত্যে নোবেল আরেকজন মার্কিন নারীর হাতে উঠলো।
আড্ডাপত্রের পাঠকদের উদ্দ্যেশ্যে নিবেদন করছি ‘হ্যাপিনেস (সুখ) এবং ‘দ্য ট্রায়াম্ফ অব একিলিস’ (একিলিসের জয়যাত্রা) কবিতা দুটি –
সুখ
∆
একজন পুরুষ ও নারী শুয়ে আছে সাদা বিছানায়
এখন সকাল- দ্রুতই জেগে উঠবে ওরা
বিছানার পাশে ফুলদানিতে জেগে আছে
একগুচ্ছ লিলি
এক্ষুনি ওদের গলায় চুম্বন দেবে মৃদু সূর্যের আলো
পুরুষটি অলস ভঙ্গিমায়
পাশ ফিরলো মেয়েটির দিকে
কোমল স্বরে নাম ধরে ডাকছে সঙ্গিনীকে।
দুলে উঠলো পর্দাটা!
জানালার গ্রিলে
একবার…
দু’বার…
ডেকে উঠলো পাখি
মেয়েটির শরীর জুড়ে পুরুষের তপ্ত নিঃশ্বাস।
আমি চোখ খুললাম – তুমি দেখছো আমাকে
আর ঘরময় ভেসে বেড়াচ্ছে সূর্য
একবার তাকাও আমার দিকে – তুমি বললে
আমি আয়নায় দেখতে পেলাম নিজেকেই।
কত শান্ত! কত স্থির আমরা!
একটা উত্ত্বপ্ত সূর্য অতিক্রম করলো আমাদের।
একিলিসের জয়যাত্রা
∆
প্যাট্রোক্লাসের গল্পের কেউ বেঁচে নেই
এমনকি একিলিস দেব-সমতূল্য
একিলিস ও পেট্রোক্লাস সমিল চেহারায়
একই বর্ম পরতেন তাঁরা।
একজন সর্বদাই নিয়ন্ত্রক
একজন ধূসর অন্যজনের তুলনায়
শ্রেণিবিন্যাস সর্বদাই প্রস্তুত
যদিও কিংবদন্তিদের বিশ্বাস করা যায় না
উৎস ও পরিত্রাতা তাকেও করতে হয় পরিত্যাগ
এই ক্ষতির সাথে কি তুলনীয় ভষ্মিভূত
সহস্র গ্রিক যুদ্ধজাহাজ?
তাঁবুতে বসে কাঁদছেন একিলিস
শোক বইছে তাঁর সমস্ত সত্তায়
দেবতাগণ বিস্ময়াভিভূত
দেখছেন– মৃতপ্রায় পরাক্রমশালী একিলিস
বিশেষত তাঁর সেই অংশটি
যে অংশটি ভালোবেসেছিল এবং মৃত্যুঞ্জয়ী ছিল না।
…………………
তথ্যসূত্রঃ বিশ্বের বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল এবং ওয়েবসাইট হতে প্রাপ্ত তথ্য ও সূত্র।