আমার কাব্য ঠিক কী কথাটি বলছে, সেটি শোনবার জন্যে আমাকে বাইরে যেতে হবে—যাঁরা শুনতে পেয়েছেন তাঁদের কাছে। সম্পূর্ণ ক’রে শোনবার ক্ষমতা সকলের নেই। যেমন অনেক মানুষ আছে যাদের গানের কান থাকে না–তাদের কানে সুরগুলো পৌঁছায়, গান পৌঁছয় না, অর্থাৎ সুরগুলির অবিচ্ছিন্ন ঐক্যটি তারা স্বভাবত ধরতে পারে না। কাব্য সম্বন্ধে সেই ঐক্যবোধের অভাব অনেকেরই আছে। তারা যে একেবারেই কিছু পায় না তা নয়—সন্দেশের মধ্যে তারা খাদ্যকে পায়, সন্দেশকেই পায় না। সন্দেশ চিনি ছানার চেয়ে অনেক বেশি, তার মধ্যে স্বাদের যে সমগ্রতা আছে সেটি পাবার জন্য রসবোধের শক্তি থাকা চাই। বহু ও বিবিধ অভিজ্ঞতার দ্বারা, চর্চার দ্বারা, এই সমগ্রতার অনির্বচনীয় রসবোধের শক্তি পরিণতি লাভ করে। যে-ব্যক্তি সেরা যাচনদার এক দিকে তার স্বাভাবিক সূক্ষ্ম অনুভূতি, আর একদিকে ব্যাপক অভিজ্ঞতা, দুয়েরই প্রয়োজন ।
[‘কবির অভিভাষণ’, রবীন্দ্র রচনাবলী, ২০০৬]
[…] একজন কবি শব্দের মাধ্যমে যে কোনো কারিগরের একটি চিত্র তৈরী করতে পারে। অথচ সে তার ছবি তৈরি করা ব্যতীত তার সম্পর্কে কিছুই জানেনা। কিন্তু তার শব্দের মাত্রা এবং ছন্দ এবং তার সঙ্গীত মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। সাধারণ মানুষ যারা নিজেরা কবির মতোই অজ্ঞ, যারা কেবল শব্দের ভিত্তিতেই কোন বিষয়কে বিচার করে তারা মনে করবে, এ কবির পাদুকা প্রস্তুতকারক কিংবা যুদ্ধ পরিচালনা কিংবা ইত্যাকার সব বিষয় সম্পর্কেই গুরুতর বক্তব্য একটা কিছু রয়েছে। এরূপ প্রবন্ধ হচ্ছে কাব্যের স্বভাবগত জাদুর ক্ষমতা, কবির এই বক্তব্যকে তুমি তার কাব্যিক বর্ণলেপ থেকে মুক্ত করে কেল, সাধারণ গদ্যে তাকে পরিণত কর, তাহলেই তুমি দেখবে, সে বক্তব্য কত মূল্যহীন। …এ হচ্ছে সেই মূর্খের মতো; যার যথার্থ কোন সৌন্দর্য নেই; যৌবনের কুটন্ত কুসুমই যার সৌন্দর্যের একমাত্র নির্ভর।
[প্লেটো, রিপাবলিক, অনুবাদ: সরদার ফজলুল করিম, ১৯৮২]
ক্লদ লেভি-ইসকে ছুটি দিয়ে আমরা আমাদের আলোচনা জারি করব। তবে ছুটি মানে নিতান্তই ছুটি, বাতিল কিংবা খারিজ নয়; আমরা আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তুকে দার্শনিক ভিত্তির ওপর স্থাপন করলেও এদের—চিন্তার, উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর উপরিতলের সংযোগের মাধ্যমে দৃশ্যমান বৃদ্ধবদ্ধতা নিশ্চিত করতে তেমন সচেষ্ট হব না। অতএব পরিকল্পিত আপাত নৈরাজ্যে পাঠক আপনাকে স্বাগতম!
১.
দেখা বাক রেজাউদ্দিন স্টালিনের ‘সব জন্মে শত্রু ছিল যে” নামীয় কবিতার বইটি পাঠশেষে সে-সম্পর্কে কী প্রতিক্রিয়া কিংবা পাঠানুভূতির উদয় হতে পারে পাঠকের মনে।
প্রথমত, কাব্যগ্রন্থটি অসংযমী চিন্তাকাঠামোর রচিত। তার কারণ এই কাব্যগ্রন্থের কবি প্রেরণা দ্বারা পরিচালিত। প্রেরণার ওপর কোনো সংযম চলে না, এই কথা কে না জানে।
দ্বিতীয়ত, যে ধরনের আমিত্ব এই কাব্যগ্রন্থে পাওয়া যায় তা বহুধাবিভক্ত। এই বহুধাবিভক্ত আমিত্বকে পরস্পর-বিরোধী বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতেও দেখা যায়।
তৃতীয়ত, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের অনুকরণের মধ্যে কবির কল্পনা স্ফূর্তিলাভ করেছে। যা প্লেটোর বয়ানকৃত সত্য থেকে তিনপ্রস্থ দূরে। নির্মোহভাবে বললে বলা বায়—একটি সুনির্দিষ্ট, সুচিন্তিত দর্শন-অভিমুখী নয় তার জীবনের অন্তর্গত সত্যের অন্বেষণ। তবে একধরনের আপাতবিক্ষিপ্ত দার্শনিক জিজ্ঞাসার মুখোমুখি কাব্যের ‘আমিত্ব’ দাঁড়িয়েছে সেটা অনুধাবন করা যায়। তবে সুখের কথা হচ্ছে, কী বলা হচ্ছে তার চেয়ে কীভাবে বলা হচ্ছে-র ওপর শিল্প নির্ভরকরে বেশি। ফলে অনেকেই বলেন, বা বলতে চান, শিল্প হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যা, অবিশ্বাসযোগ্য সত্য নয়। সম্ভবত এই কারণেই কবিতার ইতিহাসের একটি বড় অংশ তার প্রকরণের ইতিহাস। তাছাড়া দার্শনিকভাবে দেখলে বলতে হয়, একজন নৃত্যশিল্পী থেকে নাচকে পৃথক করা না গেলেও কবিতা থেকে কবিকে স্পষ্টতই পৃথক করা যায়। এইসব বিবেচনায় রেখেই আমরা পরবর্তী আলোচনায় প্রবৃত্ত হব।
[ক]
কবিতা সম্পর্কে প্রচুর Operational definition জারি আছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটা বেশ প্রচলিত, জনপ্রিয়ও বটে। তবে সবর্জনগ্রাহ্য কোনো সংজ্ঞার কথা আমরা জানি না। কারণ কবিতা একটি ‘ব্যক্তিগত মানবিক জ্ঞান’। তবে এই ‘ব্যক্তিকতার’ মধ্যেও একধরনের ‘নৈর্ব্যক্তিকতা’ থাকে। এই নৈর্ব্যক্তিকতা যদিও ব্যক্তি নির্ধারণ করে, তবুও সুনির্দিষ্ট কিছু নৈর্ব্যক্তিক গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়েই কিছু কবিতা কাল থেকে মহাকালে পাড়ি দেয়, বাকিরা পপাৎ ধরণীতল। কবিতার কিছু Operational defination এই নৈর্ব্যক্তিক গুণাবলিকে ধারণ করে। যেমন—
● শব্দ-শক্তি বিবেচনা কাব্যের অন্যতম শর্ত।
● কাব্য হচ্ছে প্রতীকী ভাষায় মনের ভাবকে প্রকাশ। রাইট ওয়ার্ডস ইন রাইট অর্ডার।
● পোয়েট্রি ইজ কমুনিকেটেড বিফোর ইট ইজ আন্ডারস্টুড।
● অভিধানের ভিতর যে শব্দগুলো আছে, সেইসব অচল শব্দ দিয়ে সচল জীবনকে ধারণ করার নামই কবিতা।
● কবিতা হচ্ছে মানুষের আনন্দ-বেদনা, প্রেম-কাম, হিংসা-ঘৃণা, বিদ্রোহ-বিপ্লবের শব্দশিল্প ভাষ্য।
● প্রকৃত কবিতা অবিশ্বাসকে স্থগিত করে দেয়।
● কবিতা এক অভিব্যক্তি।
● কবিতা হল পাঠকের সঙ্গে বইয়ের সংঘর্ষ, বইয়ের আবিষ্কার।
● কবিতার রয়েছে হাজারদুয়ারি পথ। পথ অনেক হলেও গন্তব্য একটিই; অর্থাৎ কবিতা এমন এক মানবিক জ্ঞান যা ব্যক্তিগত—যেখানে শুধুমাত্র বুদ্ধি ও তর্কের দ্বারা সত্যের অনুসন্ধান সম্পন্ন হয় না। কবিতার খণ্ডাংশ, অভিজ্ঞতা কিংবা শ্ৰুতি দ্বারাও কবিতায় সত্য সম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে না; হৃদয়ের দাবিও তার আরাধ্য।
গ্রন্থভুক্ত কিছু কবিতা, উপর্যুক্ত শর্তাবলি বেশ ভালোভাবেই পূরণ করে। কাব্যগ্রন্থটির নাম ভূমিকার কবিতাটি এমনই একটি কবিতা-—
প্রথম জন্মে যে কথা তা’ সিংহের স্বরে
তারপর প্রতিটি জন্যে নৈরঞ্জনা নদী পার হওয়া
অশথের তলে অন্বেষণ অনুশাসনের
জগতের কর্তৃত্ব নিয়ে মুখোমুখি ধনুর্ধরদের
ছিলা ছিঁড়ে যায়
প্রমত্ত শুকিয়ে নদী শীর্ণ সহসা
ঝলসে যায় পূর্ব পশ্চিম অধঃ ও ঊর্ধ্ব
অদৃশ্য অক্ষশক্তি তার বাম হাতি হিংসবাহিনী
বাণ ছোড়ে এলোমেলো
লক্ষ্যভ্রষ্ট বল্লমের গতি
চন্দ্রাতপ শিরদেশে
অস্ত্রের আঘাত থেকে পুষ্প ঝরে পড়ে
সূর্যাস্তের আগে স্বর্গ থেকে পথ নেমে আসে
এক অগ্নিঝালর টাঙিয়ে রক্ষাব্যুহ হয়
চেনা যায় সব জন্মে শত্রু ছিলো যে
[পৃ. ২৬]
কিংবা, ‘চম্কে ওঠা কবিতা’র শেষাংশ—
জিজ্ঞাসারহিত আড়ষ্ট জিহ্বা দেখে চম্কে উঠেছি,
অন্ধ ও খঞ্জের শাসন,
আস্তিক ও অবিশ্বাসীর যুগল সংসার;
গ্লানি-গৌরব একই মাতৃক্রোড়ে।
মৃত্যু রক্ত পাপ ও পতন দেখে চমকে উঠি না
প্রতিটি জন্ম দেখে চমকে উঠি নির্ভয়ে নীরবে।
[পৃ. ২৮]
অথবা, ‘কলম’ কবিতার এই অংশটুকু—
কলমতো জানে,
আত্মার-অন্ধত্ব ভালো দৃষ্টিমানের চেয়ে;
ভাল বিবেকের চেয়ে বোধের অঙ্কুর।
যে অন্ধ সে অতৃপ্ত
আর যে তৃপ্ত সে মৃত।
[পৃ. ৩৪]
তবে নির্মোহভাবে দেখলে মনে হয়, রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় বক্তব্য প্রকরণের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করেছে, প্রকরণ বক্তব্যের ওপর নয়।
[খ]
কবিতার যে-কোনো আলোচনায় নন্দনের প্রসঙ্গ অনিবার্যভাবেই চলে আসে। পাঠশেষে মনে হয়, রেজাউদ্দিন স্টালিন ফুল ফোটার সৌন্দর্য যেমন অবলোকন করেন ঠিক তেমনি উপভোগ করেন কল চলার, সুড়কি ভাঙার সৌন্দর্যও । অর্থাৎ তাঁর নন্দন Ethico-Cognitive Parallelism প্রবণতাযুক্ত। শুধুমাত্র বিশুদ্ধ নন্দন তিনি আস্বাদন করেননি। তাঁর নন্দন কিছুটা হলেও মতাদর্শনির্ভর; কোথাও কোথাও বিক্ষুব্ধতা থেকে কিঞ্চিৎ ‘ইরোটিক’ প্রবণতা বা বৈশিষ্ট্যও সংযুক্ত হয়েছে।
তাঁর ‘বাংলার বৃষ্টিনামে’, ‘বঙ্গভাষা’, ‘তবুও ফিরতে হবে’ ইত্যাদি কবিতাতে যেমন চিরায়ত সহজাত-উপমহাদেশীয় নন্দনের খোঁজ পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি ‘অসংগতি’, ‘রক্ত-পদচ্ছাপ’, ‘সৌন্দর্যতত্ত্ব’ ইত্যাদি কবিতাতে মতাদর্শনির্ভর নন্দনও বিরল নয়।
আমাদের উপমহাদেশের সঙ্গে পাশ্চাত্যের নন্দনের বড় পার্থক্য ‘রস’-এর অবতারণায়। বিস্ময়কর হলেও এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, পাশ্চাত্যের সামষ্টিক মানসে রসের পরিচয় সেদিনকার ঘটনামাত্র। এখনও পর্যন্ত তাদের সাহিত্যিক সৃষ্টিকর্মে ‘রসের’ সাক্ষাৎ পাওয়া যায় যত না তার চেয়ে ‘উইট’ পাওয়া যায় বেশি। মজার ব্যাপার হচ্ছে রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় উইটের ব্যবহার না থাকলেও তিনি রসসৃষ্টিতেও তেমন তৎপর নন।
[গ]
তাঁর কবিতায় বিষয়বস্তু হিসেবে কবি, কবিতা, সৌন্দর্যতত্ত্ব, ভাষা, ইতিহাস, সাহিত্যের রাজনীতি, উন্নয়ন ভাবনা, অতীত-ঐতিহ্য, প্রকৃতি, সামগ্রিক মানবিক অর্জন, ধর্মতত্ত্বসহ সমকালীন বিভিন্ন অনুষঙ্গকে পাওয়া যায়। উপস্থাপিত বক্তব্য থেকে তাঁর সমাজ, ইতিহাস ও রাজনীতি-সচেতনতা এমনকি বিজ্ঞান- সচেতনতা ইত্যাদি গোচরীভূত হয়।
এইসব বিষয়বস্তুর কোনো কোনো অনুষঙ্গের ওপর তাঁর গভীর কিছু বলার অভিপ্রায় আছে বলেও মনে হয়। এই বলাবলি কল্পে কোথাও কোথাও তিনি অনেক কথা বলেও তেমন কিছু বলেননি, আবার কোথাও কোথাও তেমন কিছু না বলেই অনেক কিছু বলতে চেয়েছেন। যেমন ‘হয়ে ওঠে না’ কবিতাটিতে তেমন কিছু না বলেই গভীর কিছু বলার ইঙ্গিত প্রস্ফুটিত-—
পরীক্ষাগারে ভাইরাসের পর ভাইরাস
তাদের পতন হয় না চিরন্তন
সব প্রতিপদার্থ দৃশ্যমান হয়
বাতাস ধরা দেয় খালি চোখে
চুম্বক রাস্তায় টেনে আনে
সব আকাঙ্ক্ষা
কিন্তু হয়ে ওঠে না কিছুই
জন্ম কিংবা মৃত্যু
[পৃ. ১৪]
কিংবা, ‘প্রতিচ্ছেদ বিন্দু’ কবিতাটির শেষাংশতেও বিন্দুতে সিন্ধুর গভীরতা আছে বলেই মনে হয়-—
পৃথিবী ঘোরানোর অপরাধে যে পাদ্রী
আহ্নিক গতির মুখে আগুন দিয়েছিলো
সে এখন ইউরোপের সব জাদুঘরের কিউরেটর
অগ্নিমঞ্চের ওপর বসে
পাহারা দিচ্ছে ব্রুনোর দেহভস্ম
[পৃ. ১৬]
নারী তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে তেমনভাবে আসেনি, এমনকি প্রকৃতিও। অনেক কবি নারী ও প্রকৃতির ভেতর দিয়েই জীবন ও জগৎকে দেখতে চান। এদিক থেকে তিনি স্বকীয় ও প্রশংসাহ। তবে তাঁর নির্বাচিত বিষয়বস্তুর মধ্য দিয়ে দেশ, সমাজ, মানব ও নিজ সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রকটিত হয়েছে সেখানে কল্পনার তেমন কোনো অভিনবত্ব পরিলক্ষিত হয়েছে বলে মনে হয়নি।
[ঘ]
গ্রন্থভুক্ত কবিতাসমূহের অন্তরালে যে ‘আমিত্ব’ ক্রিয়াশীল সে পঠন-পাঠনে ঋদ্ধ বলেই প্রতীয়মান হয়। এই পঠন-পাঠন একইসঙ্গে শক্তিশালী ও দুর্বল অনুষঙ্গ হিসেবে কবিতাগুলোতে ক্রিয়া করেছে। বিভিন্ন মিথের সার্থক ব্যবহার নিঃসন্দেহে তাঁর কবিতায় সফল সংযোজন। তাঁর বিজ্ঞান-চেতনাও ইতিহাসের
বিভিন্ন বাঁকে ফেরানো ঘটনা থেকে আহরিত। কিন্তু তাঁর কিছু কিছু কবিতার পক্তি আমাদেরকে বেশকিছু কালোত্তীর্ণ কবিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যেমন—‘পথের নির্বাচন’ কবিতাটি শামসুর রাহমানের ‘সুন্দরের গাথা’ কিংবা ‘খাদ’ কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। কিংবা ‘অসংগতি’ কবিতাটির দু’টি লাইন—
বক্তৃতা দেন অন্ধ তিনি আলোর কেমন বর্ণ,
এসব শুনে লজ্জা পেলেন সূর্যছেলে কর্ণ ।
আমাদেরকে জীবনানন্দ দাশের ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতাটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়!
এইরকম আরো উদাহরণ হয়তো দেওয়া যাবে। মানবের যে কোনো সৃষ্টি দুধরনের—মৌমাছির মতো ও মাকড়শার মতো। মৌমাছির মতো ফুলে ফুলে বিহার করে মৌচাকে মধু জমালে তাতে সৃষ্টি ও নির্মাণ দুই-ই থাকে। আর মাকড়শার মতো নিজের বুকের রসের সৃষ্টিতে যন্ত্রণা থাকে অত্যধিক কিন্তু এতে মৌলিকত্বের মাত্রা যায় বেড়ে।
অবশ্য কাব্যগ্রন্থ পাঠশেষে এটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা চলে, এই আমিত্বের মনস্তত্ত্ব রোমান্টিক; স্বভাবতই তাঁর সাধনা আত্মপ্রকাশে। তাঁর দৃষ্টিতে সব অর্থসমৃদ্ধ প্রচেষ্টার মূল উৎস ব্যক্তির ব্যক্তিত্ববোধে। তাঁর উদ্বেগের পরিতৃপ্তি হল ব্যক্তির প্রকাশ-প্রচেষ্টার ওপর থেকে সর্ববিধ নিয়ন্ত্রণের বিলোপে। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর আত্মপ্রচার, যৌনঅনুভূতি ও সৌন্দর্যকাঙ্ক্ষাকে নিশ্চিত করতে চান। এইসব বিবেচনায় উপরিউক্ত বিষয়গুলোকে তেমন গুরুত্বসহকারে না নিলেও তেমন কোনো অনাসৃষ্টি ঘটবে বলে মনে হয় না। যদি এই আমিত্ব ক্লাসিক ঐতিহ্যের অনুকর্ষে মার্জিত হত তাহলে এটি অবশ্যই বড় ধরনের ধর্তব্যের বিষয় হিসেবে পরিগণিত হত।
২.
রেনেসাঁস-পূর্ব যুগে মানবের নোঙর ছিল ঈশ্বরে। জীবনে তখন আরাধ্য ছিল, ছিল কল্পনার আশ্রয় । রেনেসাঁসের মাধ্যমে সেই নোঙর প্রতিস্থাপিত হল জ্ঞানে। স্লোগান হল জ্ঞানই শক্তি। ঈশ্বর-অস্বীকারমুখী এই আরাধনার পদ্ধতি থেকে উৎসারিত হল নতুন মূল্যবোধ, সংস্কৃতি। এইসব প্রত্যয়ের সামষ্টিক প্রতিফলনই এনলাইটেনমেন্ট। এইসব এনলাইটেন্ট-মানুষেরাই পুঁজির দৌরাত্ম্যে পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। ফলে মোহভঙ্গ ঘটল মানুষের। মানুষ সকল নোঙর ছেড়ে দিয়ে হল আধুনিক। আধুনিক জীবনের গতিময়তা তাদের শিল্প- সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রচণ্ড অভিঘাত তৈরি করল। ফলে কোনো আধুনিক কবি দেখা পায় না কিটসের সৌন্দর্যের, মিল্টনের মহিমার কিংবা রাবীন্দ্রিক রোমান্টিকতার । এই রকম বাস্তবতাতেই রেজাউদ্দিন স্টালিনের সৃষ্টি ‘সব জন্মে শত্রু ছিলো যে’। এর সঙ্গে অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে উপনিবেশিক হিজিমনি (Hegemoney) ও সামরিক শাসন। তাছাড়া পশ্চিম ইউরোপ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে বাহিত আধিপত্যবাদী সাহিত্যিক মনোভঙ্গিও তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছে বলে অনুমিত হয়।
সম্ভবত এইসব কারণে যে নোঙর-তোলা গান তিনি গান—সময়ের যে চিত্র তিনি ভাষায় অঙ্কন করেন— সেখানে ব্যর্থতা, পরাজয়, বিকার-বিকৃতি ও রুণতাকে (morbidity) পরিহার করতে পারেন না। সাফল্য, বিজয়, স্বাভাবিকতা ও সুস্থতার প্রতি দৃষ্টিপাত যেন নেই বললেই চলে। এমনকি বিজ্ঞান-চেতনার ঝাণ্ডা তিনি ওড়ালেও ক্ষেত্রবিশেষে এর নেতিবাদী সমালোচনা করতেও ছাড়েন না। যেমন—
মাতাল বিজ্ঞান চন্দ্র পার,
সাধ্য নেই তার ক্ষত সারার ।
[উন্নয়ন, পৃ. ৪৬]
অবাক করবার মতো বিষয় হল, উনিশ শতকের বাংলার জাগরণ এবং বিশ শতকের বাংলার গণজাগরণ তাঁর চেতনায় অনুপস্থিত। মুসলিম সাহিত্য সংসদ (১৯২৬ সনের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত), বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন কিংবা শিখার (১৯২৭ সন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর নিয়মিত প্রকাশিত) কোনো উজ্জ্বল স্মৃতিই তাঁর বক্তব্যে প্রতিভাত হয় না। স্বল্পভাবে হলেও কল্লোল, কবিতা পত্রের আধুনিকতাবাদ (modernism) দ্বারা তিনি প্রভাবিত। তবে মজার ব্যাপার হল, এত কিছুর পরও তাঁর নন্দনতাত্ত্বিক অবস্থান ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নয়, ‘জীবনের জন্য শিল্প’— এই অবস্থানে। সম্ভবত Subjectivity একেই বলে!
[ক]
স্টালিন যে নোঙর-তোলা গান গান সেখানে একটি গল্প থাকে, তা যত খণ্ড বা অনুকৃতিরই হোক না কেন। একে আশ্রয় করেই তাঁর কবিতার ভাব মুক্তি পায়। যেমন—
এখন নিয়ম অনিয়ম হতে সময় লাগে না
আগুনের মধ্যে অনৰ্গল ধোঁয়া
বৃক্ষের বাকলে কেবলই জন্মাছে কাঁটা
ফলের কোষে কোষে বিষের বৈকুণ্ঠ
[‘সময়ের গল্প’, পৃ. ২৪]
এতকিছুর পরও তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না—
তবু দূরে আকাঙ্ক্ষার ডালে দু’একটি পাতার বিনয়
পথে পথে বৈশাখের পায়ের প্রশ্রয়
[‘সময়ের গল্প’, পৃ. ২৪]
এই যে তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে না যাওয়ার প্রবণতা, এই জন্যই হয়তো তিনি উত্তরাধিকারের প্রসব করা প্রশ্নের সামনে নতজানু ভবিষ্যৎ দেখতে পেলেও সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করেন—
এখন অদৃষ্টের অবান্তর দীর্ঘশ্বাস
আর উপনিবেশের সহজ উত্তর
মানতে কেউ বাধ্য নই
[‘বিভেদ বিন্দু’, পৃ. ২০]
শিল্প-সাহিত্যে ক্ষেত্রবিশেষে বিষয় রূপ-রীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। আবার কোথাও কোথাও এর উল্টোটাও যে ঘটে না তা নয়। তবে রেজাউদ্দিন স্টালিনের ক্ষেত্রে মনে হয় প্রথমোক্ত ঘটনাই বেশি সংঘটিত হয়েছে। তাঁর হতাশ নেতিবাদী অবস্থানের কারণে তিনি দেখেন—
বিজ্ঞাপনের বনে হরিণ ও বাঘের পাশে শৃগালেরা থাকে,
শ্বাপদ ও সিংহ থাকে পদে পদে, প্রতি পদক্ষেপে।
[‘আমাকে দাঁড়াতে দাও খোলা জানালায়’, পৃ. ২৯]
কিংবা—
হৃদয়ে লুকানো বাঘনখ দেখে চমকে উঠছি,
[‘চম্কে ওঠা কবিতা’, পৃ. ২৮]
অথবা—
প্রতিবার দীর্ণ হয়ে ফিরে আসি নিজের ভেতর
অসভ্য ইতর
[‘প্রত্যাবর্তন’, পৃ. ৫০]
আবার তিনিই বলেন—
প্রতিমার বিসর্জন সহ্য হয়, বিবেকের বিসর্জন মেনে নেয়া পাপ ।
[‘আমাকে দাঁড়াতে দাও খোলা জানালায়’, পৃ. ২৯]
অনেকেই হয়তো লাইনগুলোর কাব্যিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, বলতে পারেন নীতিবাক্য কিংবা বিবৃতি। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন তাঁর নির্বাচিত বিষয়বস্তু কীভাবে তাঁর উপমা কিংবা উৎপ্রেক্ষাকে নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। তাঁর কাব্যগ্রন্থের সার্বিক নন্দনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাঁর নির্বাচিত বিষয়বস্তু নন্দনকে বেশ গভীরভাবেই প্রভাবিত করেছে।
[গ]
অ্যারিস্টটল কবিদের কাব্যশক্তি খুঁজে পেয়েছিলেন কবিদের ম্যাটাফোর তৈরি ও ব্যবহারের সক্ষমতায়। কেননা তিনি ‘ব্যক্তিক মানবিক জ্ঞান’ ও ‘নৈর্ব্যক্তিক মানবিক জ্ঞানের’ পার্থক্য স্পষ্টরূপে অনুধাবনে সমর্থ হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ‘ব্যক্তিক মানবিক জ্ঞানে’ কীরূপে ‘নৈর্ব্যক্তিকতা’ নিহিত থাকে তা-ও হয়তো অনুধাবনে সক্ষম হয়েছিলেন। সম্ভবত এই metaphor-কে তিনি কাব্যের মতো ব্যক্তিক মানবিক জ্ঞানের নৈর্ব্যক্তিক অংশ বলে মনে করতেন। তা যা-ই হোক, আমরা রেজাউদ্দিন স্টালিনের দুয়েকটি ম্যাটাফোরের অন্বেষণ তো করতেই পারি। যেমন— ‘অপূর্ণ অপেক্ষায় ছিলাম’ কবিতায় আমরা দেখছি একটি ম্যাটাফোর—
প্রতীক্ষার পাথরে নুয়ে পড়া সময়ের পিঠ
কচ্ছপের মতো নড়ে উঠেছে আমার পায়ের নিচে
তবুও আমি নখের সুঁচে মাটির সাথে সেলাই করেছি ধৈর্য
[পৃ. ৪৮]
এমনকি দুয়েকটি সম্পূর্ণ কবিতাকেও একটি ম্যাটাফোর হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, যেমন ‘রঙধনু’। সুতরাং ম্যাটাফোর তৈরিতে কবিকে মোটামুটি সফল বলা যেতে পারে।
প্রকৃত প্রস্তাবে, পৃথিবীর অধিকাংশ শক্তিশালী কবির কবিতায় ভাবের বয়ান ও অনুভবের বিস্তৃতিটাই বেশি, তার আড়ালে গল্প কিংবা ম্যাটাফোর লুকানো থাকে। গল্প কিংবা ম্যাটাফোরকে যতই আড়ালে নিয়ে যাওয়া যায় কাব্যের গুণাবলি তত বিকশিত হয়। কিন্তু গল্প বা ম্যাটাফোর-নির্ভর কবিতাগুলো যখন আদলপ্রাপ্ত হয়, একটা চরিত্রকে বা ঘটনাকে আশ্রয় করে বিকশিত হয়, তখন এটি পাঠকের সঙ্গে তুলনামূলক শ্রেয়তর ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় গল্পকে তেমন গভীরে লুকানো অবস্থায় দেখা যায় না।
[ঘ]
গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলোর নামকরণ দেখে মনে হয়, শিল্পের প্রকরণ তাঁর অনেকটাই অনায়াসলব্ধ। ক্ষেত্রবিশেষে দুয়েকটি বিশুদ্ধ কবিতাও (শিল্পের জন্য শিল্প) দৃশ্যমান, যেখানে তিনি শুধুমাত্র Value দ্বারাই তাড়িত হয়েছেন। যেমন—‘সহমরণ’, ‘আরশিনগর’ ইত্যাদি। এইসব কবিতায় স্পষ্টতই Value দ্বারা Price সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। বর্তমানে দর্শন যেসব বিষয়ের ওপর কাজ করছে— যেমন ভাষা বিশ্লেষণ—সেই বিষয়ের ওপরও তিনি বক্তব্য-প্রধান কবিতা রচনায় সচেষ্ট হয়েছেন, এমনও দেখা যায়। তাঁর কাব্যের নামকরণ থেকে এটা মনে করা সঙ্গত হবে না যে, তিনি জন্মান্তরবাদে আস্থাশীল। বরং এর উল্টোটাই হয়তো বাস্তব। সাহিত্যের দ্ব্যর্থকতা বা অ্যাম্বিগুইটির স্বার্থেই সম্ভবত তিনি পরস্পর-বিরোধী কিছু Concept নিয়ে কাজ করেছেন। তবে তিনি একদম দার্শনিকের চিন্তা ও যুক্তি-কাঠামো সহযোগে কাজ করেছেন, এটা বলা যাবে না।
হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে ১৯৮৫ সালে যাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে—অর্থাৎ, যিনি কমবেশি ৩০ বছর যাবৎ গ্রন্থ প্রণয়নে অভ্যস্ত— তাঁর কাব্যগ্রন্থেও সম্পাদনার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রচুর বানানবিভ্রাট বিদ্যমান। কাব্যগ্রন্থে, এমনকি কয়েকটি ছড়াও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একটি বাদে বাকি
ছড়াগুলো পরিণত মনস্তত্ত্বের পাঠকের উপযোগী। কাব্যগ্রন্থটিতে এমন দুয়েকটি কবিতাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যার রচনায় কবির কোনো ধরনের ক্যাথারসিস হয়েছে এমন বলা দুষ্কর। কোনো কঠোর সম্পাদক যদি নির্মোহভাবে সম্পাদনা করে এর ফর্মাখানেক ফেলেও দিতেন তাহলে এর সার্বিক কাব্যমানের তেমন হেরফের হত বলে মনে হয় না।
৩.
শিল্পের বেদিতে দাঁড়িয়ে শিল্পী যে মুখোশ পরেন যদি তা একেবারে নিশ্ছিদ্র হয় তাহলে তাঁর শিল্পকর্ম একেবারে দুর্বোধ্য বলে পরিগণিত হতে বাধ্য। যদি এই শিল্পকর্ম হয় কবিতা, তাহলে এটি হবে অতিশয় ব্যক্তিগত কবিতা। পাঠকেরা বুঝুন বা না বুঝুন এতে কবির তেমন কিছু আসে-যায় না। ফলে পাঠকেরা
অভিযোগ করেন, এটি তো দেখছি ডানদিক বা বাঁদিক থেকে পড়লেও একই রকম অবোধ্য। এর বাইনারি অপজিট হচ্ছে এমন মুখোশ পরা যাতে মুখোশের অন্তরালে মুখশ্রী সম্পূর্ণ দৃশ্যমান থাকে। বলাবাহুল্য এতে তেমন কোনো শিল্পমান কিংবা শিল্পশর্ত রক্ষিত হয় না। শিল্পের জন্য আদর্শ হচ্ছে এমন মুখোশ পরা যাতে পূর্ব-ব্যক্ত দুই অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থা রক্ষিত হয়। আমাদের আলোচ্য কাব্যগ্রন্থের কবির অবস্থান মাঝামাঝি অবস্থা থেকে মুখোশের অন্তরালে সম্পূর্ণ মুখশ্রী দৃশ্যমান হওয়ার দিকেই কিঞ্চিৎ হেলে পড়ছে বলে মনে হয়। আমাদের মনে রাখা উচিত, শিল্পের প্রকরণে অনায়াসলব্ধ অধিকারই নিখুঁত শিল্পের নিশ্চয়তা নয়। সুনিবিড় অভিনিবেশ সহযোগে সুদীর্ঘ অধ্যবসায়ই আধারকে আধেয়তে যথোপযুক্তভাবে স্থাপনের সহায়। এর মাধ্যমে যে শিল্পের সৃষ্টি তা নিশ্চিতভাবেই রূপ, রঙ, রস, গন্ধ, বর্ণ, এমনকি স্পর্শ-যোগ্যতা নিয়ে। আমাদের সম্মুখে হাজির হয়। ফলে শিল্পকর্মটি প্রাত্যহিকতা থেকে প্রাতিস্বিকতায় উত্তীর্ণ হয়। আমাদের আলোচ্য কাব্যগ্রন্থটি কি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে প্রাত্যহিকতা থেকে প্রাতিস্বিকতায় উত্তরণে সমর্থবান? পাঠকদের উদ্দেশে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বরং গ্যাটের দুটি লাইন স্মরণ করা যেতে পারে—
তত্ত্ব নিরস জেনো বন্ধু
প্রাণতরু শ্যামলে শ্যামলে।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
১.রবীন্দ্র রচনাবলী, সপ্তদশ খণ্ড, পৃ. ২৯৬, ঐতিহ্য, ঢাকা, ২০০৬ (তৃতীয় মুদ্রণ)
২. রবীন্দ্র রচনাবলী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৫৩৪, ঐতিহ্য, ঢাকা, ২০০৬ (তৃতীয় মুদ্রণ)
৩ প্লেটোর রিপাবলিক, অনু, সরদার ফজলুল করিম, অধ্যায় ২৫, পৃ. ৪৮৬, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮২
৪. ছবির দেশে কবিতার দেশে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা,
৫. ১৯৯৩ কবির নির্বাসন ও স্রোতের বিরুদ্ধে, শিবনারায়ণ রায়, মডেল পাবলিশিং হাউস, কলকাতা,১৯৯৮
৬. বাঙালী জীবনে রমণী, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রা. লি., কলকাতা, ১৩৭৪
৭. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও উত্তরকাল, আবুল কাশেম ফজলুল হক, জাগৃতি প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০৮
৮. ডাকটিকেট, ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১২
৯.গদ্য, রেজাউদ্দিন স্টালিন সংখ্যা, দ্বিতীয় সংখ্যা, ঢাকা, জানুয়ারি, ২০০০
১০. The Postmodern Condition: A Report on Knowledge, Jean Francois Lyotard, Manchester University Press, 1979