মানুষের মূল্য
আমি এখন গোশল করব– কাল শুক্রবার। ভোররাতে মিথ্যার শুকর হামাগুড়ি দিতে দিতে লুটিয়ে পড়ে পায়ের কাছে। নব্য প্রেমিকার বাজুর কাছে মৃদুস্পর্শে লালটকটকে ঝুলে থাকে আলতো ভালোবাসা। বিনিদিতা আমাদের পাড়ার মেয়ে–পুকুরের ঘাট কিংবা শ্মশানের উত্তর দিকের মাদ্রাসা মুখো ত্রিদিপ দস্তিদার কামলা খাটে মাঝিদের বৌয়ের জোয়ানী রোদে…
অবিশ্রান্ত আমাদের চলে যাওয়া মাঠের পর মাঠ বুনে যায় মানুষ কিংবা বৃক্ষের জীবন। জীবনের মানে বলতে তুমি বোঝ চলে যাওয়া অতীতের পিছু পিছু ছোটা…আমি অন্য কিছু, নতুনের পথ আর বাবলীদের বাড়ির পাশের মেয়েটা আমার হারীয়ে যাওয়া অতীত, মনে পড়তেই বুকের ভিটাই ধ্বস নামে…
ভেজানো সন্ধ্যায়–আমরা হাটি অজানা পথে…অনেকটা দূরে হাটের দিকে–যেখানে বিক্রিত মানুষের মূল্যকম।
তীক্ষ্ণ পাঁজরের আশ্চর্য হাড়
নায়ক-তুমি ডাক দিলে সন্ধ্যা লাগি লাগি কোন এক বিকেলবেলা…বাড়িতে ভোঁতাভোঁতা পয়গাম আর চেতনায় নতুনের আবিষ্কার নেশা-তুমি শেখালে নিজেকে জানতে এবং সাজাতে শ্মশানফুলের বাগান। মুঠোভর্তি করে রেখেছি তোমার দেওয়া লাল চিঠি-বাবাকে একবার তোমার ছবি দেখিয়ে বলেছিলাম বাবা ইনিকে-তুমি জানো না আমাদের নেতা-শেখ মুজিবুর রহমান।
ক্ষয়দীপ্ত ছায়া তোমার ছিল না-রাষ্ট্রীয় ঘোড়ায় তুমি সওয়ার না হয়ে নিজের মনোবলকে পৃথিবীর একমাত্র হাতিয়ার করে হেঁটেছো পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ পথ …তোমার মুখের দিকে তাকালেও ক্ষুধার্ত মানুষের হরিণখালী দেয় দৌঁড় আর তোমার পিয়ানো কিংবা আমআটির সুর এখনো দিকভ্রান্ত ধেঁয়ে আসে আমাদের ধানশালিকের মডেল…
শতবর্ষী তুমি-আনন্দমুখর হরিণের কাওয়ালী আমাদের বিদ্ধ করে না হারানো শৈশব। মুজিবুর রহমান আমার কুসুমিত শয্যায় জ্বেলে রাখা বাতির বর্ণালী প্রতিধ্বনি। স্বপ্ন দেখানো একটি প্রহরবেলায় তুমি মসৃন উত্তপ্ত কড়াইয়ে তেলেভাজা আগামীর মহানায়ক আর তীক্ষ্ণ পাঁজরের আশ্চর্য হাড়।
চাবুক
বিচিত্র তোমার চলে যাওয়া–দৃশ্যত চেয়ে থাকা
আলোর বিকিরণ–হাতে করে শতাব্দীর আয়না
সম্মুখে ধরে–বাবাকে কিংবা মা বা অন্যকে
বললে বুঝতে–দারিদ্র্যের চাবুক কেমন করে লাফায় নিজের পিঠে…
কুকুর
মাটির ঘর–দু’একটা জানালা বাকি– পাশেই বেয়াড়া কুকুরের থাকার ব্যবস্থা। দিনকতেক হল দাদাজান আমাকে কুকুরের পরিচয় জানালেন–কুকুরটা হননপ্রিয় বটে -রৌদ্রে গা এলিয়ে ঘুমায়। সে কখনো আমাদের থেকে নিবাসন চাই না। মোহনীয় দৃষ্টিতে সারাক্ষণ আমাদের দিকে চেয়ে থাকে…
এক নজর অন্ধকার রাতে কুকুর ক্ষুধা পেটে–ভয়াবহ কাণ্ড ঘটিয়ে দিল–পাশের বাড়ির রত্না নামের যে মেয়েটা বাইরে থাকে তাকে ডগি জড়িয়ে ধরল। মেয়েটিও বারবার ছুটে যায় কুকুরটির কাছে–তীব্র চুম্বনের টান রত্নাকে পাগল করেছে…
এই অনন্ত জাগরণ রক্তে রক্তে মিশে গেছে ডগি+রত্নায়।