প্রখ্যাত লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক রশীদ হায়দার আর নেই। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ফুলার রোডে মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাওন্তী হায়দারের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
রশীদ হায়দার নামে পরিচিত হলেও তার পুরো নাম শেখ ফয়সাল আবদুর রশীদ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন হায়দার। ডাক নাম দুলাল। তিনি ১৯৪১ সালের ১৫ জুলাই পাবনার দোহাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ হাকিমউদ্দিন শেখ, মাতা রহিমা খাতুন। তার স্ত্রী আনিসা আখতার ২০১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।। তাদের দুই কন্যা হেমন্তী হায়দার ও শাওন্তী হায়দার।
তিনি ১৯৫৯ সালে গোপালগঞ্জ ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬১ সালে পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও ১৯৬৫ সারে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বড় ভাই জিয়া হায়দারের উৎসাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি কাজ শুরু করেন চিত্রালী পত্রিকায়। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের মুখপত্র পরিক্রম পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৯ সালে পরিচালক হিসেবে অবসর নেন। পরে তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় কাজ ১৩ খণ্ডে ‘স্মৃতি : ১৯৭১’। দেশের আনাচে-কানাচে থাকা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে স্মৃতিকথা লিখিয়েছেন তিনি।
রশীদ হায়দার গল্প-উপন্যাস, নাটক, অনুবাদ, নিবন্ধ, স্মৃতিকথা ও সম্পাদনা সব মিলে সত্তরের অধিক বই রচনা করেছেন।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:
খাঁচায়, নষ্ট জোছনায় এ কোন অরণ্য, চিম্বুকের নিচে আলোর প্রভা; তিনটি প্রায়োপন্যাস; বাংলাদেশের খেলাধুলা; মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প; শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষাগ্রন্থ; সামান্য সঞ্চয় (নির্বাচিত গল্পসংকলন); খুঁজে ফিরি; অসম বৃক্ষ; নানকুর বোধি;
পুরস্কার ও সম্মাননা:
তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪); একুশে পদক (২০১৪); হুমায়ুন কাদির পুরস্কার এবং অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
………………..
আড্ডাপত্র ডেস্ক