পরিযায়ী প্রজাপতি
তুমি দৃশ্য থেকে অদৃশ্যে আলো আধাঁরিতে বোকা বানাও বলেই কী
তোমাকে ছুঁতে পারি না ।
অথচ তোমার সকল সত্তা প্রজাপতির মতো;
সুতো ও ঘুড়ির মতো এই বুকে গোঁত মারে
পুরনো ঘড়ির মতো ঢংঢং আওয়াজে বুকের পাঁজর ভেঙে-
ফের উড়ে যাও চোখের ওপার। আকাশের নীল কেটে হলুদে বর্ণিলে।
তারপর ডলফিনের মতো তুমি ভেসে ওঠো সমুদ্রের নোনাজলে
যখন সমুদ্র নাগালের বাইরে
আমার এই দোতলা ঘরে নিভৃতে আমি অলৌকিক দৃশ্যে বুঁদ হয়ে থাকি
পেশাদারি মাতালের মতো।
একদা তুমি চাঁদ হয়ে বুকে বসেছিলে, স্বপ্নের পাখি হয়ে ওম নিতে বুকের;
মায়াবী হরিণের চপলা মুখ গুঁজে
বুকে রাখা সমস্ত আহার রোদজলে চঞ্চুতে তুলে নিতে;
সেই তুমি আজ পলকে উধাও হও
যখন মিলিয়ে যাও শরীররে ঘ্রাণ রেখে হাওয়ার অন্তরালে
আমি কেবল তোমার রেখে যাওয়া শারীরিক ঘ্রাণ
আঁকড়ে ধরে তোমাকেই খুঁজি!
তুমি এসেছিলে এক কুয়াশা ঢাকা শীতে, পরিযায়ী পাখিরা যেমন আসে।
এসেই ওমের সন্ধানে ঝাঁপ দিলে বুকেজমা হাওড়ের উষ্ণতায়
মনে হলো, দীর্ঘপথের ক্লান্তি মুর্হূর্তেই রূপ নিলে কামজ উল্লাসে
মনে হলো প্রস্তুত হয়েই তুমি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসেছো ওমের নেশায়;
তোমার জন্য রাখা সুরম্য ওমশালা
তুমি বনলতার চোখে দেখে নিলে মনোরম ওমের মিউজিয়াম;
আর চোখের পলক পড়বার আগেই তুমি ওমের গুহায় ডুবে গেলে
আহা ওম- কতোকাল ক্ষুধার্ত ছিলে জানি না;
কিন্তু নিখুঁত শিল্পব্যঞ্জনায় তুমি বাজালে ঠুমরি, তছনছ করলে আমাকেই ।
উন্মুক্ত করলে কাঙ্খিত রূপের প্রচ্ছদ;
ঊরুর পাড়ে ঠাসা কাব্যময়ী নগ্নতার ঘ্রাণে ভাসালে নির্জন শীতঘর।
আমি দেখলাম, তোমার দুচোখে অজস্র চোখ; চোখে রতির আয়োজন;
স্পর্শের ফলায় নগ্ন ভূমিতে ফুটছে ওমের আগুন;
কিভাবে! কিভাবে!! কিভাবে রাত শেষ হয়- দিন আসে;
দিন শেষ হয়ে রাত; বুঝবার আগেই
এক নাতীষ্ণ ভোরে তুমি উড়ে গেলে লু-হাওয়ায় অন্য যন্ত্রযানে
আমি পড়ে রইলাম কেবল তোমার স্পপর্শের ঘ্রাণের অপেক্ষার অনলে … অনন্তে…
সার্কাস
এমন সার্কাস আগে কখনো দেখেনি কেউ;
যখন শুরু সবার চোখ কপালের উপর
যাকে এতোকাল ভালোবেসেছিলো, দিয়েছিলো গভীর প্রেম;
এখন দেখছে- তার পশ্চাতে মুখ ও মুখোশের ছবি।
ছিলো না কেনো প্রেম। কোনো ভালোবাসা
দেখছে তার মনের ভেতরের কালো সাপ ফণা তুলে আছে;
গ্রাস করছে লক্ষ তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন; মুখের লালায় পাল্টাচ্ছে অ্যামিবার মুখ;
আহা– সোনা নয়; সোনার মতো র্সাকাসের ভাঁড় উলঙ্গ করে দিলো।
যার সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে নকল সুরধ্বনি; ফানুসি কোরাস; এভাবে
এতোকালের আমাদের বিশ্বাসী ভীত উপড়ে মেতেছে নব উল্লাসে!
আসলে ভালোবাসার অন্ধপুকুরে তার মায়ার বদলে ছিলো
জলহীন মরুদ্যান; প্রেম তার
শূন্য নাট্যকলার আরোপতি অধ্যায়;
অবাস্তবের হামাগুড়ি জন্মান্ধ শিশু; জন্মই যার অসভ্যতার আঁচলে
যাকে সে বেঁধেছে স্বেচ্ছায় কৌতুকি সার্কাসের ভাঁড়
আর বলছে- ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ছেষট্টি হাজার ভূমি!
দুঃখ ও বেদনার অন্তর-বাহিরে বাউল মেলায় বেঁধেছে
তারই সাজানো ভিন্নতর নেশারুর মেলা;
এতোকাল ভালোলাগা পাইনি বলেই কী ছুঁয়ে দেখেনি কে আপন, কে পর !
যদিও উদোম করেছে প্রিয়তমা, তার অন্তর-বাহির;
ক্ষয় করেছে দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন;
প্রেমে পরাজয় মেনেই সব প্রতিদ্বন্দ্বীতার পরাজয় নয়; আলোক দ্যুতি
উদ্ভাসে ভাসছে নান্দনিকতা। আর
তার ঐশ্বর্য মুখের অন্তরাল ফুঁড়ে বেরোচ্ছে লজ্জাহীনার মুখোস;
জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে; ছেষট্টি হাজার বর্গে ঝরে পড়ছে অভিনব সার্কাসের পাপড়ি;
যে সার্কাস কেউ কোনোদিন দেখেনি; আখেরি সার্কাস…
আমাদের সময় এবং গৌরী
আমাদের পথগুলো ক্রমান্নয়ে সংকোচিত হচ্ছে;
আমাদের স্বপ্নগুলো হাওয়ার বেলুনের মতো বুকের
পাঁজর ভেঙে উড়ে যাচ্ছে সীমানার ওপার- অদৃশ্যে
আমাদের চারপাশের মানুষ যেনো প্রতীক; রোবটের মতো তাদের গতি
কোনো এক অলীক নির্দেশে বলছে- পালাও যার যার মতো;
আমরা দৌড়াতে গিয়ে সাদা আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছি, সামনের দাবাননে;
পালানোর কোনো পথ খোলা নেই; সব পথ অবরুদ্ধ।
সবার চৈতন্যে ধাওয়া দিচ্ছে হিংস্র কালো ঘোড়া; ধেয়ে আসছে অশনি ঝড়োমেঘ;
সবগুলো শহর নগ্ন এক মৃত্যুপুর; টালমাটালে নড়ছে;
আমরা বিদ্যুৎ চমকের অপেক্ষায় শ্বাস বন্ধ করে আলো দেখবো বলে
যার যার রোপিত বাগানে গিয়ে দেখি-
এই মাঘেও ফুলগাছে কোনো ফুল নেই; প্রজাপতি উড়াউড়ি নেই;
অথচ এখনই ফুল ফুটবার মৌসুম; প্রজাপতি উড়ার ধুম;
বাগানের পাতায় পাতায় জড়িয়ে আছে কুয়াশার কাফন;
কাফনগুলো কালো তীলক রক্তে ভেজা; তারপরও অলীক নির্দেশে-
আমরা ঋতুস্রাবের মতো ধূসর ও সাদা হিমোগ্লোবিন পথে প্রবেশ করছি-
ভৌতিক চাপা গোঙ্গানির অবচেতন শব্দের জানুতে
আমাদের ভবিতব্য ঘিরে আছে সাপের শরীর;
এরকম ভয়াবহ অবস্থায় আবারো অলীক নির্দেশ- পালাও পালাও;
কোথায় পালাবো তার দিক নির্দেশ নেই; প্রিয় মাটির লতাগুল্মর ভেতর
অসংখ্য লাল পিঁপড়ার দল; রক্ত চোষার জন্য অস্থির হয়ে আছে
এমতাবস্থায়-
মৃত্যু অনিবার্য জেনেও আমরা ছুটছি শূন্যের পরিক্রমায়; শূন্যের হাওয়ায়
সেখানেও ওমহীন অলৌকিক অগ্নি গুহা;
আমরা কাঙ্খিত প্রেমের জন্য তোমাকেই ডাকছি গৌরী গৌরী গৌরী;
গৌরীর কোনো সাড়া নেই; তুমিও কী মৃত্যুর কবচ গলায় ঝুলিয়ে
প্রাণপণ কাতরাচ্ছো বাঁচবার জন্য; বলো-
তুমি ছাড়া আশ্রয়হীনাদের কে দেবে আশ্রয়; কে দেবে তাড়া খাওয়া
হুলিয়া জীবনের অনন্ত আশ্বাস?
কোথায় পাবো গৌরী তোমার সুরক্ষিত গুহা;
যেখানে নাড়ি ছিঁড়ে তোমার প্রেমিকেরা ফেলবে স্বস্থির নিঃশ্বাস;
পাবে বেঁচে থাকার অমোঘ মন্ত্র…
আমরা হাঁটছি অন্ধকার গুহায়
আমরা ক্রমশঃ সূর্য়াস্তের দিকে হাঁটছি;
ক্রমশঃ ডুবে যাচ্ছে আমাদের সমস্ত গর্ব;
ধসে যাচ্ছে নান্দনিক স্বপ্নিল স্বর্গ;
আমরা হাঁটছি গভীর অন্ধকার গুহার পথে-
যেখানে সকল উদ্বেলতা গ্রাস করছে ঐশ্বর্যের সুবর্ণপথ;
আমাদের হাতের বন্ধন আঁটছি যতো; ততোই আলগা হয়ে
যাচ্ছি দুদিকে; আমাদের আবেগঘন প্রার্থনা অবজ্ঞা করে
অলীক ফুঁসেওঠা সামুদ্রিক ঢেউ ভাঙছে আমাদের যৌথ প্রেম;
আমরা সুবর্ণ অতীত ছিঁড়ে ভেসে যাচ্ছি কালো অন্ধকারে জলগভীরে;
অথচ আমরা ভালোবাসার জন্য স্বাধীনচেতা পাখিদের ওম নেবো বলেই
তৈরি করতে চেয়েছিলাম ঋতুময় নিরাপদ কুটির;
পরিযায়ী পাখিরা যেমন শীতকালীন
ভ্রমণে বেরোয়, আমরাও দিনের ভ্রমণ শেষে ফিরতে চেয়েছি যৌথ সংসারে;
আমাদের প্রেমবিলাসী স্বপ্ন করতালিতে স্বাগত জানাবে বন্ধুপ্রতিম প্রজাপতি;
নানা জাতের পাখিদের দল; রাতের নক্ষত্রবীথি;
আমাদের ফিরে পাবার বর্ণিল সময়
একটি একটি করে খুলে পড়ছে অনিয়মের নিজস্ব ক্ষুধার খেরোপাতা;
অথচ দেখো- উল্টোটি হলো;
স্বাধীনচেতা স্বপ্নগুলো ঝলসে গেলো জ্বলন্ত চুলোয়;
আমাদের চলন্ত জাহাজ ডুবে যাচ্ছে টাইটনিক ফর্মে পলির তলায়;
আমাদের উন্মত্ত যৌবনে থাবা বসালো কালো বিড়াল; কুমারী হবার আগেই
কেনো যে ধর্ষিত হয় বালিকারা? এই উষ্ণবোধ প্রগতির ধারক কি না জানি না;
শুধু জানি, আমাদের একীভূত হবার বড় অন্তরায় কথিত স্বাধীন
ব্যবস্থার উন্নয়নিক ফসল;
এই অন্তরায় উপড়ে ফেলবে কেউ না কেউ…
দেখবার জন্য দীর্ঘকাল অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই প্রিয়তমা…
প্রেমকাব্যের গল্প
বুকের ভেতর রঙের স্রোত
তুলছে তুমুল বাঁক
ঘূর্ণির ঝড় জোয়ার তোলে
রাখে না রাখঢাক।
সেই রঙের দোলনা দোলায়
ফুটন্ত ফুল, ঝড়ও
জানে কী কেউ দুলছে তরী
কাঁপছে থরোথরো?
সেই কাঁপনে ঝড়ো নৌকার
মাঝি টলোমলো
টলোমলোর উজান টানে
গল্প শুরু হলো…
ঘর ভাঙলো ঝড় ভাঙলো
কুমার নদের কূল
মাঝ পলিতে ফুটলো হেসে
প্রেম কাব্যের ফুল…